দু দিনের মধ্যে এসে গেল সন্তু আর জোজো।
এতদিন কর্নেলের গল্প কিছুই বলেননি ওদের। এবার কাকাবাবু বললেন, সন্তু, যা, নীচে গিয়ে একটা লোককে দেখে আয়। সে তোকে খুন করতে চেয়েছিল। আমি তার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছি।
সন্তু বলল, কাকাবাবু, তোমাকে একটা খবর জানানো হয়নি। আমার সেই ব্যথাটা একদম সেরে গিয়েছে। এখন আমি লাফাতে পারি। দৌড়োতেও পারি।
জোজো বলল, আমি উড়তে পারি!
মাটির তলায় বন্দি কর্নেলকে দেখে এসে সন্তু করুণভাবে বলল, কাকাবাবু, সত্যিই লোকটা না খেয়ে মরে যাবে?
কাকাবাবু বললেন, মরুক না, তাতে ক্ষতি কী। ওরকম মানুষরা না বাঁচলে কী হয়?
জোজো বলল, শুধু মাটির নীচে নয়, ওকে নরকে পাঠানো দরকার।
মহা-ডাক্তার বললেন, মুশকিল কী জানো, সন্তুবাবু, আমি চুপিচুপি লোকটাকে ছেড়ে দেব ভেবেছিলাম। রাজাবাবুকে কিছু না জানিয়ে। কিন্তু ছেড়ে দিলে তো ও আবার তোমার কাকাবাবুকে মারবার চেষ্টা করবে। ও তো ছাড়বে না।
কাকাবাবু একবার ঘড়ি দেখে নিয়ে বললেন, এখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলে সন্ধে হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং চা আর মুড়ি-তেলেভাজা খেতে খেতে গল্প করা যাক। ভোপালে এবার কী হল, তা তো তোদের বলিনি।
মহা-ডাক্তার বললেন, এগারো দিন হয়ে গেল। লোকটা কিছু খায়নি। ভাবতেই কেমন লাগছে।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, না খেয়ে মানুষ কতদিন বেঁচে থাকতে পারে?
জোজো সঙ্গে সঙ্গে বলল, একদিনও না। মানে, আমি বাঁচব না।
কাকাবাবু বললেন, যতীন দাস নামে একজন বিপ্লবী ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে তিনি জেলের মধ্যে অনশন করেছিলেন। মারা যান বাষট্টি না তেষট্টি দিন পর।
সন্তু করুণ মুখ করে বলল, মানুষটা সত্যি সত্যি না খেয়ে মরে যাবে? আমাদের চোখের সামনে? ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে।
কাকাবাবু বললেন, ওই লোকটা তোকে খুন করার জন্য গুলি করেছিল। তোর প্রায় বাঁচায় আশা ছিল না। তবু তুই ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছিস?
সন্তু বলল, ওর যথেষ্ট শাস্তি হয়েছে। কাকাবাবু, তুমি এবার ওকে ছেড়ে দাও!
জোজো বলল, ছেড়ে দিলেই তো ও আবার কাকাবাবুর মারার চেষ্টা করবে যে!
কাকাবাবু রাগে গরগর করে বললেন, নাঃ, আমি আর ওর বদমায়েশি সহ্য করব না! এবার ওকে আমি শেষ করে দেবই দেব! ওর আর বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
তারপর কাকাবাবু আবার ঘড়ি দেখে বললেন, চলো। উপরে বসি। কাল সকালে আমি লোকটাকে চরম শাস্তি দেব।