১৬. একটা মুহূর্ত

একটা মুহূর্ত; দীর্ঘ, স্তব্ধ হয়ে যাওয়া একটা নীরব মুহূর্ত অনড় হয়ে রইল তিন গোয়েন্দা। নড়তে পারল না। চোখ আটকে রইল পর্দায়, যেখানে ভ্যাম্পায়ারের সাজে সাজা বেন ডিলন নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। রক্ত শোষণ করছে একের পর এক মানুষের।

 আমি চেয়েছিলাম, রবিন বলল। একটা ভুল করুক ডিলন। মাত্র একটা। তাহলেই ধরতে পারতাম।

করে ফেলেছে, উত্তেজিত কণ্ঠে মুসা বলল। হ্যালোউইনের দিনে আমাদের হেডকোয়ার্টারে ঢুকে। সেরাতে কোথায় ছিল প্রমাণ করতে পারব আমরা। কিডন্যাপারটা আটকে রাখেনি, এটা তো শিওর।

 উত্তেজিত কিশোরও হয়েছে, তবে অনেক বেশি সতর্ক রয়েছে সে। ভিডিও টেপে রেকর্ড করা রয়েছে, চুরি করে আমাদের হেডকোয়ার্টারে ঢুকেছিল একজন। লোক। সেই লোকই যে ডিলন, প্রমাণ করতে পারছি না আমরা। তবে তাড়াহুড়া করলে হয়তো বিশেষ একজনকে ভড়কে দিতে পারব।

কেসটা আবার ভাল লাগতে আরম্ভ করেছে আমার, মুসা বলল।

লাগবেই। কারণ একটা মেজর রোল প্লে করতে হবে তোমাকে।

মুসার মেজর রোলটা হল হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে ভিডিও টেপটা নিয়ে আবার বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে পার্টিতে ফিরে আসা। ছবিটা শেষ হওয়ার আগে।

রকি বীচের দিকে তীব্র গতিতে গাড়ি ছুটিয়েছে মুসা। বুকের মধ্যে কাপন শুরু হয়ে গেছে তার। ব্রেকটা গোলমাল করতে আরম্ভ করেছে, অ্যাকসিলেরেটর পুরোটা না নেমে মাঝপথেই আটকে যাচ্ছে। বিরক্ত লাগে মুসার। এত সময় ব্যয় করে গাড়িটার পেছনে, সব কিছু ঠিকঠাক রাখতে চায়, তারপরেও প্রয়োজনের সময় গোলমাল করতে থাকে। সন্দেহ হতে লাগল তার, পৌঁছতে পারবে তো সময়মত?

ইয়ার্ডে পৌঁছে একলাফে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে। ক্যাসেটটা বের করে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে আবার লুফে নিল। যেন প্রার্থনা করল সৌভাগ্য বয়ে আনার জন্যে।

তারপর বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে ছুটল আবার বেল এয়ারের দিকে।

ভূতুড়ে চেহারার ছমছমে পরিবেশের সেই বাড়িটাতে যখন পৌঁছল, দেখল তখনও ছবি চলছে। নিঃশব্দে স্ক্রিনিং রুমের পেছনে প্রোজেকশন বুদে ঢুকে পড়ল মুসা। ঘরটা খালি। প্লেয়ারে ক্যাসেটটা ভরল সে। কয়েকটা বোতাম টিপতেই বন্ধ হয়ে গেল প্রোজেকটরের ফিল্ম। ছবি চলে গেল পর্দা থেকে। কয়েক সেকেণ্ড পরেই। সেই জায়গা দখল করল ভিডিও প্লেয়ার, কয়েকটা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে আবার ছবি ফোঁটাল পর্দায়।

ক্যাসেটটা চালু করে দিয়েই দৌড়ে স্ক্রিনিং রুমে চলে এল মুসা, রবিন আর কিশোরের পাশে।

হাসাহাসি শুরু করেছে দর্শকরা।

একজন বলল, দারুণ এডিটিং করেছ তো হে জ্যাক। কোত্থেকে তুললে এটা?

ঘুমিয়ে ছিলে নাকি তখন? বিরক্ত হয়ে বলল আরেকজন। মনে হচ্ছে ক্যামেরাকে ছেড়ে দিয়ে আরেক জায়গায় চলে গিয়েছিলে? ফোকাসিঙের এই অবস্থা কেন?

ট্রেলারের দরজায় লাথি মারতে দেখা গেল ডিলনকে।

কি ব্যাপার, ডিলন? বলে উঠল এক মহিলা। এরকম করলে কেন? ঢুকতে বাধা দিয়েছিল নাকি কেউ? দেখা তো যাচ্ছে না।

খুশি হয়ে উঠল তিন গোয়েন্দা। ডিলনের নাম বলেছে মহিলা। তার মানে ওরা। সফল হতে চলেছে।

কার কথা বলছেন? গলায় জোর নেই ডিলনের, ওটা আমি নই…

জ্বলে উঠল ঘরের সব আলো। ডিলনের দিকে ঘুরে তাকালেন রিডার। চোখে খুনীর দৃষ্টি। এগুলো কখন তুললে?

নীল একটা স্ফটিক হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে মরিয়া হয়ে বলল ডিলন, আমি নই! ওই লোকটা আমি নই, বলছি না!

তুমি নও মানে? নিশ্চয় তুমি! কানা হয়ে গেছি নাকি আমরা!

আমি নই, দুর্বল কণ্ঠে আবার বলল ডিলন।

তাহলে কে? কোমল গলায় জানতে চাইল অ্যাঞ্জেলা ডোভার। ছবিটা শেষ করার পরেও ওই পোশাক তোমার কাছে রেখে দিয়েছিলে। কেন অস্বীকার করছ?

পার্টিতে পটার বোনহেডকেও দাওয়াত করা হয়েছে। উঠে দাঁড়াল সে। দুহাত দুপাশে ডানার মত ছড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে শান্ত হতে বলল দর্শকদের। বলল, অনেক সময় আমাদেরকে আমাদের মত লাগলেও আসলে আমরা নই।

চমৎকার, বোনহেড, তীব্র ব্যঙ্গ ঝরল মুসার কণ্ঠে। ঠিকই বলেছেন। এই যেমন, এখনও গা থেকে টু-টন টিটানের গন্ধ ধুয়ে ফেলতে পারেননি আপনি।

তাড়াহুড়ো করে আবার চেয়ারে বসে পড়ল বোনহেড।

অস্বস্তিতে কেবলই চেয়ারে উসখুস করছে ডিলন।

 হচ্ছেটা কি কিছুই তো বুঝতে পারছি না! রিডার বললেন।

দ্রুত ঘরের সামনের দিকে চলে এল কিশোর, রবিন আর মুসা, যেখানে ওদেরকে সবাই দেখতে পাবে। পর্দাটার কাছে।

মিস্টার রিডার, বলতে লাগল কিশোর, যে টেপটা দেখলেন ওটা আমাদের। নয় দিন আগে হ্যালোউইনের রাতে ভোলা। রকি বীচে আমাদের ট্রেলারে ঢুকেছিল ডিলন, চুরি করে।

মৃদু গুঞ্জন উঠল দর্শকদের মাঝে। অবিশ্বাসের হাসি হাসল কেউ কেউ।

অসম্ভব, প্রতিবাদ জানাল অ্যাঞ্জেলা। হ্যালোউইনের তিন দিন আগে কিডন্যাপ করা হয়েছে বেনকে।

কোন কিডন্যাপিংই হয়নি, জোর গলায় বলল কিশোর। পুরোটাই ধাপ্পাবাজি।

হঠাৎ ব্রাউন অলিংগারের ঘড়ি অ্যালার্ম দিতে শুরু করল, উঠে দাঁড়ালেন তিনি। এসব ফালতু কথা শোনার কোন মানে হয় না। নিশ্চয় নেশা করে এসেছে ছেলেগুলো। কিডন্যাপ অবশ্যই হয়েছিল। জ্যাক, দেখছ কি? বের করে দাও ওগুলোকে। দরজার দিকে এগোনোর চেষ্টা করলেন তিনি। পথ আটকাল মুসা।

একটু দাঁড়ান, মিস্টার অলিংগার, কিশোর বলল, আপনিও জড়িত আছেন

মানে? ভুরু কুঁচকে গেছে রিডারের।

বেন ডিলনকেই জিজ্ঞেস করুন না, মুসা বলল।

উঠে দাঁড়াল ডিলন, যেন বেরিয়ে যাওয়ার জন্যেই। কিন্তু সবগুলো চোখ তার দিকে ঘুরে যাওয়ায় বেরোতে আর পারল না। অলিংগারের দিকে তাকাল। তারপর একে একে কিশোর, মুসা আর রবিনের দিকে। ভঙ্গি আর দৃষ্টি দেখে মনে হলো। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে খেপা জানোয়ার।

এদিক ওদিক তাকিয়ে শেষে বসে পড়তে বাধ্য হলো আবার, তবে চেয়ারে না বসে বসল চেয়ারের হাতলের ওপর। বেশ, স্বীকার করছি, ওটা কিডন্যাপ ছিল না। কিডন্যাপ করা হয়নি আমাকে। জোক। রসিকতা।

জোক! রাগে চিৎকার করে উঠলেন রিডার, আমার ছবিটাকে স্যাবোটাজ করে দিয়ে রসিকতা! এরকম একটা কাজ কি করে করতে পারলে!

বসে পড়লেন অলিংগার। চোখে আগুন। পরিচালকের দিকে তাকিয়ে বললেন, এসব ঝামেলা না করে আসলে তোমাকে খুন করা উচিত ছিল, জ্যাক। যাতে আর কোন দিন কোন ছবি বানানোর পাগলামি করতে না পারো!

বোঝার চেষ্টা করুন, রিডার, ডিলন বলল, ছবির সব চেয়ে ভাল অংশগুলোও কিছু হচ্ছিল না। এ জিনিস পুরোপুরি ফ্লপ হতে বাধ্য। সাফোকেশন টু মুক্তি পেলে হাসাহাসি করত লোকে। বেশি বাজেটের ছবি করার ক্ষমতাই আপনার নেই, এটা মেনে নেয়া উচিত।

কে বলে? আরও রেগে গেলেন রিডার।

ডিলন বলে, আমি বলছি, দুজন তো হয়ে গেল, অলিংগার বললেন। খুঁজলে আরও অনেককে পেয়ে যাবে।

কঠিন হাসি হাসল ডিলন। তাকাল ওর নীল স্ফটিকের দিকে। কি কি গোলমাল হয়েছে, খুলেই বলি, তাহলেই বুঝতে পারবেন। হপ্তা দুই আগে আমি আর ব্রাউন কয়েকটা ডেইলি দেখছিলাম। অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল সে। শেষে ঠিকই, করে ফেলল, এ ছবি করা যাবে না। আফসোস করে বলতে লাগল, অনেক টাকা। ইতিমধ্যেই বেরিয়ে গেছে। ছবি শেষ করতে গেলে আরও অনেক বেশি যাবে। তখন আর মাথার চুল ছেঁড়া ছাড়া গতি থাকবে না। আগেভাগেই বন্ধ করে দেয়া উচিত, নইলে ভ্যাম্পায়ার ইন মাই ক্লোজেটের মতই আলমারিতে পড়ে থাকবে। আমিও বুঝলাম, ওই ছবি মুক্তি পেলে আমারও ক্যারিয়ার শেষ। কাজেই ব্রাউন যখন প্ল্যানটা করল, আমিও তাতে যোগ দিতে রাজি হয়ে গেলাম। মন খারাপ করবেন না, রিডার, আর কোন উপায় ছিল না।

করব না, শীতল কণ্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন রিডার, যখন তুমি আর অলিংগার জেলে যাবে।

জেল? চেয়ার থেকে উঠে পর্দার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ডিলন। কোন সম্ভাবনা। নেই। কাজটা ভাল করিনি, ঠিক, কিন্তু অপরাধ করেছি বলে মনে হয় না। আমিই ভিকটিম, আমিই কিডন্যাপার। আমার বাড়ি আমিই তছনছ করেছি। পুলিশ কাকে ধরবে?

কাচ, বলে উঠল মুসা। মনে হচ্ছে, আবার দম আটকে আসছে। কাচগুলো ভাঙল কে? এল কোত্থেকে?

ওটা ভাঙতেই হলো। স্ফটিকগুলো ছাড়া নড়ি না আমি। সাথে করে নিতে হল। ওগুলো একটা কাচের বাক্সে রাখতাম। কিডন্যাপের খবর জানাজানি হলে পুলিশ আসবে, বাক্সটা দেখে সন্দেহ করবে কি ছিল ওটাতে। জেনে যাবে স্ফটিক রাখা হত। আরও সন্দেহ হবে। স্কটিকগুলো গেল কোথায়? আমাকে নিশ্চয় নিয়ে যেতে দেবে না কিডন্যাপাররা?

কাজেই সন্দেহের অবকাশই রাখলেন না আপনি, কিশোর বলল, বাক্সটা ভেঙে রেখে গেলেন। পুরো দৃশ্যটা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে, ওদিকে সন্দেহ থেকে মুক্তি পাবেন আপনি। বুদ্ধিটা মন্দ না।

এই কিডন্যাপিঙের বুদ্ধিটা ভাল হয়নি, যাই বল, মুখ বাঁকাল ডিলন। র‍্যানসমের টাকা আনতে প্লে গ্রাউণ্ডে যেতে হল। সত্যিই ওটা কিডন্যাপিং এটা বোঝানর জন্যে করতে হয়েছিল এসব। ঠিকঠাক মতই সব করে বেরিয়ে আসতে পারতাম, বাগড়া দিয়ে বসলে তোমরা। পিছু নিলে। ঠেকানোর জন্যে মারামারিটা করতেই হলো। বাড়ি মেরে বসলাম সুটকেস দিয়ে কাকে যেন।

হ্যাঁ, আমাকেই মেরেছেন, মুসা বলল।

তা নাহয় হলো, কিশোর বলল। কিন্তু হ্যালোউইনের রাতে আমাদের হেডকোয়ার্টারে কেন ঢুকেছিলেন? কেসটা হাতে নিয়েছি তখনও কয়েক ঘণ্টাও হয়নি।

ব্রাউন বলেছে তোমাদের কথা। ঘাবড়ে গেলাম। কারণ তোমাদের নাম শুনেছি আমি। শুনেছি, তিন গোয়েন্দা কারও পিছু নিলে শেষ না দেখে ছাড়ে না। কাজেই শুরুতেই তোমাদের ভয় দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম।

তখনই মানা করেছি! রাগে খেঁকিয়ে উঠলেন অলিংগার। এটা করতে গিয়েই ধরাটা পড়লে! সব সময়ই বাড়াবাড়ি করে বসো তুমি!

করেছি, ভুল করেছি, কি আর করব। তবে অপরাধ করিনি। একটা ছবি মুক্তি না পেলে হলিউডের ক্ষতি হবে না, দর্শকরা পাগল হয়ে যাবে না। বরং ছবিটা বন্ধ করে দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার আর কয়েক কোটি টাকা বাঁচালাম।

র‍্যানসমের টাকাগুলো কোথায়? মুসার প্রশ্ন।

 আমার কাছে। ইনসিওরেন্স কোম্পানি ব্রাউনকে যত টাকা পে করেছে ওটা তার অর্ধেক। ফিরিয়ে দিলেই হবে এখন।

মাথা নাড়ল মুসা, না, হবে না। অপরাধ যা করার করে ফেলেছেন। শাস্তি ভোগ করতেই হবে। টেলিভিশনেও লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে, রিপোর্টার আর পুলিশের সামনে মিথ্যে কথা বলেছেন। পুলিশ আপনাকে ছাড়বে ভেবেছেন? ইনসিওরেন্সকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টার অপরাধে অলিংগারও পার পাবেন না।

অলিংগারের দিকে ঘুরে গেল রিডারের চোখ। প্রযোজকদের বিশ্বাস নেই যে বলে লোকে, এমনি এমনি বলে না। সব সময় ঠকানর চেষ্টা করে, দরকারের সময় টাকা দিতে চায় না, অথচ ছবি কেন শেষ হয় না সেটা নিয়ে চাপাচাপির সীমা নেই। অ্যাকটরগুলোও সব ফাঁকিবাজ। কিছুতেই কথা রাখবে না।

আর পরিচালকগুলো সব পাগল, তিক্তকণ্ঠে বলল ডিলন।

নীরব হয়ে ছিল ঘরটা। হঠাৎ একজন লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে।

অ্যাঞ্জেলা, কোথায় যাও? ডেকে জিজ্ঞেস করল ডিলন।

প্রায় দরজার কাছে চলে গেছে অ্যাঞ্জেলা। ফিরে তাকিয়ে বলল, এখানে আর একটা সেকেণ্ড থাকতে চাই না। এরপর কি হবে জানি। পুলিশ আসবে, অপরাধীদের হাতকড়া দিয়ে নিয়ে চলে যাবে। সব ভজঘট করে দিয়েছ, বেন। সিনেমার লোক তুমি, সিনেমাতে থাকলেই ভাল করতে।

অ্যাঞ্জেলা বেরিয়ে যেতে অন্যেরাও উঠে পড়তে লাগল। বেরিয়ে যেতে লাগল দ্রুত। পার্টি ভেঙে গেল। চিৎকার করে সবাইকে থামানোর চেষ্টা করলেন অলিংগার, তার কথা শুনে যেতে বললেন। কেউ থাকল না। তার কৈফিয়ত শোনার আগ্রহ নেই কারও।

আর কেউ না শুনলেও আপনার কথা পুলিশ শুনবে, মিস্টার অলিংগার, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। ঘড়ি দেখল। ফোন করে দিয়েছি। চলে আসবে।

সব কথা বলতে অনেক সময় লেগে গেল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জিজ্ঞেস করল পুলিশ, জবাব লিখে নিল। ভূতুড়ে চেহারার বাড়িটা থেকে যখন বেরোল তিন গোয়েন্দা, পুবের আকাশে তখন সূর্য উঁকি দিয়েছে। রকি বীচে ফিরে চলল ওরা। কয়েক ঘণ্টা বাদেই স্কুল শুরু হবে। স্কুলের শেষে জরুরী কাজ আছে মুসা আর রবিনের।

.

কয়েকদিন পর ব্রাউন অলিংগারের একটা চিঠি নিয়ে হেড-কোয়ার্টারে ঢুকল মুসা। ডেস্কের ওপর বিছিয়ে দিল, যাতে রবিন আর কিশোর পড়তে পারে। লেখা রয়েছেঃ

মুসা,
প্রথমেই স্বীকার করে নিই, তোমাদের অবহেলা করে ভুল করেছিলাম। অন্যায় যে করেছি সেটাও স্বীকার করছি। তোমরা শুনলে হয়ত খুশিই হবে, উকিলকে দিয়ে বীমা কোম্পানির সঙ্গে একটা মিটমাটে আসতে পেরেছি আমি। রিডারের সঙ্গেও রফা করে নিয়েছি। আগামী তিন-চার মাস আর কোন কাজ করতে পারব না, তবে আশার কথা, ফিল্ম ইণ্ডাস্ট্রিতে কেলেঙ্কারির কথা বেশিদিন মনে রাখে না লোকে। আগামী বসন্ত থেকেই আবার কাজ শুরু করতে পারব। চিঠিটা সে কারণেই লেখা। অবশ্যই ছবি তৈরি করতে হবে আমাকে, এটাই যখন ব্যবসা। ঠিক করেছি, পরের ছবিটা করব তিন গোয়েন্দার গল্প নিয়ে। রহস্য গল্প। কিডন্যাপিঙের গল্প। সত্যি ঘটনা যেটা এবার আমরা ঘটালাম। ছবিটার কি নাম দেয়া যায়, বল তো? টেরর ইন দা গ্রেভইয়ার্ড? ভালই হয়, কি বলো? হ্যাঁ, একটা দাওয়াত দিচ্ছি। আগামী সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসপেটোতে চলে এস, লাঞ্চ খাওয়াব। বিশ্বাস কর, এবার আর ওষুধ মেশান মিল্ক শেক খাওয়াব না।
—ব্রাউন অলিংগার।

চিঠি পড়া শেষ করে বলল রবিন, ওই লোককে আমি আর বিশ্বাস করি না।

 আমিও না, চিঠিটা তুলে নিয়ে ছিঁড়ে ঝুড়িতে ফেলে দিল মুসা।

কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না সে। আবার শুরু হয়েছে দম আটকে আসার ব্যাপারটা। ওফ, শ্বাস নিতে পারছি না! যতবারই এই কেসটা নিয়ে। বেভাবতে যাই, এরকম হয়। দম আটকে আসতে চায়।

শান্ত হও, শরীর চিল করে দেয়ার চেষ্টা করো, কিশোর বলল। কেন এরকম হয়, বুঝতে পারবে এখনই।

কি, কিশোর? জলদি বলো! হিপনোটিক সাজেশন? স্ফটিকের কারসাজি?, বোনহেড জিন চালান দিতে জানে? কেন হয়?

ডেস্কের ভেতর থেকে একটা খবরের কাগজের কাটিং বের করল কিশোর। তুলে দিল মুসার হাতে। এটা পড়েই রহস্যটার সমাধান করে ফেলেছি। তুমিও পারবে। পড়ো।

হেডলাইন পড়ল, নিচের লেখাটাও পড়ল মুসা। ঝুলে পড়ল চোয়াল। বিড়বিড় করল, বাতাসে পোলেন বেশি! অনেককেই ধরেছে!

হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর, বলছে তো পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এত বেশি আক্রান্ত আর হয়নি লোকে।

তার মানে জিনটিন কিছু না! হে-ফিভারে ধরেছে! আমাদের ভয় দেখিয়ে ঠেকানোর জন্যেই বোনহেড পাথর দিয়েছে, হুমকি দিয়েছে, গোরস্থানে মাটি চাপা দেয়ার ভান করেছে?

আবার মাথা ঝাঁকাল কিশোর।

 তাহলে যখনই কেসটার কথা ভাবি তখনই দম আটকানো ভাবটা হয় কেন?

সব সময় হয় না। আবার যখন না ভেবেছ তখনও হয়েছে এই অসুবিধে। ভালমত খেয়াল রাখলেই মনে থাকত।

স্ফটিকটা ধরলে তাহলে হাতে গরম লাগত কেন?

ওটাও বেশির ভাগই কল্পনা। আরেকটা ব্যাপার অবশ্য আছে। ওরকম পাথর। পকেটে রেখে দিলে গায়ের গরমে গরম হয়ে থাকে। হাত দিয়ে চেপে ধরলে আরও গরম হয়ে যায়। মনে হয়, অলৌকিক ক্ষমতাই আছে ওটার। আর যদি কেউ মাথায়। ঢুকিয়ে দেয়, আছে, তাহলে তো কথাই নেই।

হু! বলতে বলতেই গলা চেপে ধরল মুসা, হাঁসফাঁস করতে লাগল।

 কি, আবার আটকাচ্ছে?

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল মুসা।

তাহলেই বোঝো।