১৬৮. দ্রুপদরাজ্যে পাণ্ডবগণের যাত্রা
অষ্টষষ্ট্যাধিকশততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন,–মহারাজ! এই বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া কুন্তীপুত্রদিগের হৃদয়ে যেন শল্য বিদ্ধ হইল, তাঁহারা বিষাদসাগরে একান্ত নিমগ্ন ইলেন। অনন্তর সত্যবাদিনী কুন্তী মাতৃভক্তিপরায়ণ সন্তানগণকে আহ্বান করিয়া সর্বজ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠিরকে কহিলেন,-বংস! আমরা এই রমণীয় নগরীমধ্যে ভিক্ষাবৃত অবলম্বনপূর্বক মহাত্মা ব্রাহ্মণের আবাসে বহুকাল বাস করিলাম। এ স্থলে যে সমস্ত কন ও উপবন আছে, তাহা বারম্বার দর্শন করিয়াছি। তাহ দেখিয়া আর তাদৃশ প্রীতি জন্মে না। এক্ষণে ভিক্ষাও অপেক্ষাকৃত অল্প লব্ধ হইয়া থাকে, তদ্বারা দিনপাত হওয়া নিতান্ত সুকঠিন। অতএব যদি তোমাদিগের অভিলাষ হয়, তবে চল, আমরা পরমরণীয় পাঞ্চালদেশে গমন করি। ঐ দেশ অদৃষ্টপূর্ব, দেখিলে অবশ্যই প্রীতিকর হইবে। আর শুনিয়াছি, পাঞ্চলের প্রাণান্তেও ভিক্ষুককে পরাঙ্মুখ করেন না, তথাকার রাজা যজ্ঞসেন অতিশয় ব্রতপরায়ণ। হে বৎস! যদি মত হয় চুল, একস্থলে বহুকাল অতিক্রম করা কদাচ বিধেয় হয় না। অধিক কি, এখানে ক্ষণকাল থাকিতেও আমার আর বাদনা নাই। তখন যুধিষ্ঠির কহিলেন—মাতঃ! আপনি যাহা আদেশ করিতেছেন, তাহা আমাদিগের পক্ষে শ্রেয়ঃকল্প বোধ হয়, কিন্তু অনুজদিগের কিরূপ অভিপ্রায় কিছুই জানি না। তৎপরে কুন্তী, ভীমসেন, অর্জুন ও যমজ নকুল সহদেবকে এই কথা জিজ্ঞাসা করিলেন। তাহারা মাতৃবাক্যে কিছুমাত্র বিবেচনা না করিয়া কহিলেন, মাতঃ! অপিনি যাহা আজ্ঞা করিতেছেন, আমরা কদাচ তাহার অন্যথা করিব না।
অনন্তর কুন্তী পঞ্চপুত্র সমভিব্যাহারে ব্রাহ্মণকে সাদর সম্ভাষণ করিয়া দ্রুপদরাজ্যে যাত্রা করিলেন।