১৬৬তম অধ্যায়
খড়্গোৎপত্তি বিবরণ—অসুরগণের উপদ্রব
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ঐ সময় খড়্গযুদ্ধবিশারদ মহাত্মা নকুল কথা কহিবার অবসর প্রাপ্ত হইয়া শরতল্পশায়ী [শরশয্যায় শয়ান] ভীষ্মদেবকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “পিতামহ! জনসমাজে শরাসনই উৎকৃষ্ট প্রহরণ বলিয়া বিখ্যাত আছে, কিন্তু আমার মতে খড়্গই প্রধান। দেখুন, সংগ্রামে কার্ম্মুক [ধনুক] বিশীর্ণ ও অশ্বসমুদয় ক্ষয় প্রাপ্ত হইলে একমাত্র খড়্গদ্বারা আত্মরক্ষা করিতে পারা যায়। খড়্গধারী বীরপুরুষ একাকীই চাপহস্ত[ধনুর্দ্ধারী] ও গদাশক্তিধারী অসংখ্য বীরকে পরাভূত করিতে সমর্থ হয়েন। এক্ষণে সর্ব্বপ্রকার যুদ্ধে কোন্ অস্ত্রকে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণনা করা যায় এবং খড়্গ কিরূপে কাহার নিমিত্ত কোন্ ব্যক্তিকর্ত্তৃক উৎপন্ন হইল আর কোন্ ব্যক্তিই বা পূৰ্ব্বে ইহার আচাৰ্য্য ছিলেন, এই বিষয় অবগত হইবার নিমিত্ত আমার অতিশয় কৌতুহল উপস্থিত হইতেছে, অতএব আপনি উহা আমার নিকট কীৰ্ত্তন করুন।”
তখন ধনুৰ্ব্বেদবিশারদ শরতল্পশায়ী ধর্ম্মপরায়ণ ভীষ্মদেব দ্রোণশিষ্য সুশিক্ষিত মহাত্মা নকুলের সেই বাক্য শ্রবণ করিয়া তাঁহাকে কৌশল-বিচিত্রার্থসমন্বিত সারবাক্যে কহিতে লাগিলেন, ‘মাদ্রীকুমার! তুমি উত্তম প্রশ্ন করিয়াছ, এক্ষণে আমি ঐ বিষয়ের উত্তর প্রদান করিতেছি, শ্রবণ কর।
“পূৰ্ব্বকালে এই জগৎ একার্ণবময় [জলময়] ছিল। ঐ সময় আকাশমণ্ডল ও মহীতলের কিছুমাত্র নির্দেশ ছিল না, সমুদয় স্থান গম্ভীরদর্শন [গাম্ভীর্য্যযুক্ত] তিমিরজালে সমাচ্ছন্ন, নিঃশব্দ ও অপ্রমেয় ছিল। ঐ সময়ে লোকপিতামহ ভগবান্ ব্রহ্মা জন্মগ্রহণপূর্ব্বক বায়ু, অগ্নি, সূৰ্য্য, আকাশ, উৰ্দ্ধ, অধঃ, ভূমি, দিক্, চন্দ্র, তারা, নক্ষত্র, গ্রহ, সংবৎসর, ঋতু, মাস, পক্ষ, লব ও ক্ষণসমুদয়ের সৃষ্টি করিয়া মরীচি, অত্রি, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, বশিষ্ঠ, অঙ্গিরা ও ভগবান্ রুদ্র এই কয়েকটি পরমতেজস্বী পুত্র উৎপাদিত করিলেন। ঐ সকল বিধাতৃতনয়ের বংশসম্ভূত দক্ষ প্রজাপতি হইতে ষষ্টি কন্যা সমুৎপন্ন হইল। ব্রহ্মর্ষিগণ পুত্রলাভাৰ্থ তাঁহাদিগের পাণিগ্রহণ করিলেন। ঐ সমস্ত কন্যা হইতে দেবতা, পিতৃলোক, গন্ধৰ্ব্ব, অপ্সরা, রাক্ষস, বিহঙ্গম, মৃগ, মীন, শাখামৃগ [বানর], মহাসর্প, জলচরপক্ষী, বিবিধ উদ্ভিদ, স্বেদজ, অণ্ডজ ও জরায়ুজগণের সৃষ্টি হইল। এইরূপে সৃষ্টি ক্রমে ক্রমে সমুদয় স্থাবরজঙ্গমে পরিপূর্ণ হইলে ভগবান্ ব্রহ্মা বেদসম্মত সনাতন ধর্ম্ম উৎপাদন করিলেন। তখন দেবতা, আদিত্য, বসু, রুদ্র, সাধ্য, সিদ্ধ ও মরুদগণ, মহর্ষি ভৃগু, অত্রি, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ, গৌতম, অগস্ত্য, নারদ, পর্ব্বত এবং কাশ্যপ, বালখিল্য, প্রভাস, সিকত, ঘৃতপায়ী, সোমবায়ক, অগ্নিকিরণপায়ী, অকৃষ্ট, হংস, অনলোদ্ভূত প্ৰাশ্নিক ও বানপ্রস্থ মহর্ষিগণ আচার্য্য ও পুরোহিতগণসমভিব্যাহারে সেই ধৰ্ম্ম প্রতিপালন করিতে লাগিলেন। ঐ সময় হিরণ্যকশিপু, হিরণ্যাক্ষ, বিরোচন, শম্বর, বিপ্রচিত্তি, প্রহ্লাদ, নমুচি ও বলি প্রভৃতি ক্রোধলোভসমন্বিত অধাৰ্মিক দানবগণ পিতামহের শাসন অতিক্রম করিয়া অধৰ্ম্মাচরণে প্রবৃত্ত হইল এবং ‘আমাদিগের সহিত দেবগণের কিছুমাত্র ইতরবিশেষ নাই’ এই স্পর্দ্ধা করিয়া প্রাণীগণের প্রতি নিতান্ত নিষ্ঠুর ব্যবহার ও দণ্ডদ্বারা তাহাদিগকে পীড়ন করিতে আরম্ভ করিল।
ব্রহ্মার শাস্তিকারক যজ্ঞে অসিরূপ পুরুষোৎপত্তি
“তখন সৰ্ব্বলোকপিতামহ ভগবান্ ব্রহ্মা ব্রহ্মর্ষিগণ সমভিব্যাহারে শতযোজনবিস্তৃত মণিরত্নখচিত অত্যুচ্চ সুরম্য শৃঙ্গে গমনপূর্ব্বক প্রজাগণের হিতসাধনার্থ তথায় অবস্থান করিতে লাগিলেন। সহস্র বর্ষ অতীত হইলে তিনি ঐ স্থানে বিধানানুসারে এক যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিলেন। ঐ যজ্ঞস্থলে যজ্ঞনিপুণ দীক্ষিত মহর্ষিগণ ও দেবগণ সমুপস্থিত ছিলেন; ব্রহ্মর্ষিগণ উহার সদস্য হইয়াছিলেন এবং বিধিবিহিত সমিৎপ্রদীপ্ত [যজ্ঞডুমুর প্রভৃতি যজ্ঞীয় কাষ্ঠদ্বারা জ্বালিত] হুতাশন ও সমুজ্জ্বল কাঞ্চনময় বিবিধ পাত্র উহার অসাধারণ শোভা সম্পাদন করিয়াছিল। ঐ যজ্ঞ আরম্ভ হইলে ক্ষণকাল পরে প্রদীপ্ত হুতাশন হইতে এক তেজঃপুঞ্জকলেবর দুর্দ্ধর্ষ পুরুষ সমুত্থিত হইল। উহার দেহ সুদীর্ঘ, বর্ণ নীলোৎপলের ন্যায় শ্যামল, দংষ্ট্রা সুতীক্ষ্ণ ও উদর অতিমাত্র কৃশ। ঐ পুরুষ সমুৎপন্ন হইবামাত্র বসুন্ধরা বিচলিত হইতে লাগিল; মহাসাগর সংক্ষুব্ধ হইয়া ভীষণ তরঙ্গমালা ও আবর্ত্তে সমাকীর্ণ হইল; গগনমণ্ডল হইতে অনিষ্টকর উল্কাসমুদয় ও বৃক্ষ হইতে শাখাসমূহ নিপতিত হইতে লাগিল; দিঙ্মণ্ডল অপ্রসন্ন ও বায়ু প্রতিকূল হইয়া উঠিল এবং প্রাণীগণ বারংবার শঙ্কিত ও ব্যথিত হইয়া ইতস্ততঃ বিচরণ করিতে আরম্ভ করিল। তখন সৰ্ব্বলোকপিতামহ ভগবান্ ব্রহ্মা সেই পুরুষকে অনল হইতে সমুত্থিত ও দুর্নিমিত্তসমুদয় প্রাদুর্ভূত দর্শন করিয়া মহর্ষি, পিতৃলোক ও গন্ধৰ্ব্বগণকে কহিলেন, ‘আমি দানবগণের বিনাশ ও লোকরক্ষার নিমিত্ত অসিনামে এই মহাবলপরাক্রান্ত পুরুষকে স্মরণ করিয়াছি।’ কমলযোনি এই কথা কহিবামাত্র সেই পুরুষ পূৰ্ব্বরূপ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক তীক্ষ্ণধার খড়্গ হইয়া কালান্তক যমের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিল। তখন ভগবান্ ব্রহ্মা বৃষভকেতু [বৃষবাহন] মহাত্মা দেবদেব মহাদেবকে অধৰ্ম্মনিবারণ সেই তীক্ষ্ণধার অসি প্রদান করিলেন।
রুদ্রকর্ত্তৃক অসিগ্রহণ—অসুরপীড়ন
“ভগবান্ ভূতনাথ ব্রহ্মার নিকট অসি গ্রহণ করিয়াই রূপান্তর পরিগ্রহণপূৰ্ব্বক চতুর্ভুজ হইলেন। তাঁহার মস্তক সূৰ্য্যকে স্পর্শ করিল, পরিধান কৃষ্ণাজিন সুবর্ণময় তারকাসমুদয়ে সুশোভিত হইল, বদনমণ্ডল হইতে বিবিধবর্ণ অগ্নিজ্বালা নির্গত হইতে লাগিল, এবং ললাটনেত্র দিবাকরের ন্যায় সমুজ্জ্বল ও অন্য নেত্রদ্বয় কৃষ্ণ ও পিঙ্গলবর্ণ হইয়া উঠিল। তখন ভগনেত্রহন্তা [‘ভগ’নামক আদিত্যের নেত্রনাশকারী] শূলপাণি সেই বিধাতৃপ্রদত্ত কালাগ্নিসদৃশ প্রভাসম্পন্ন খড়্গ ও চপলাবিরাজিত জলধরের ন্যায় ভীষণ চৰ্ম্ম উদ্যত করিয়া যুদ্ধ করিবার মানসে ঘোররূপে নানাপ্রকারে বিচরণ করিতে লাগিলেন। তাহার ভীষণ গর্জ্জন ও হাস্যধ্বনিতে দিঙ্মণ্ডল প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল।
“ঐ সময় দানবগণ, রুদ্রদেব যুদ্ধার্থ অতি ভয়ানক রূপ ধারণ করিয়াছেন শ্রবণ করিয়া হৃষ্টচিত্তে জ্বলন্ত অঙ্গার ও লৌহময় অন্যান্য ঘোরতর অস্ত্রসমুদয় বর্ষণ করিতে করিতে তাঁহার প্রতি ধাবমান হইল এবং অচিরাৎ তাঁহার সমীপবর্তী হইয়া তাঁহাকে দর্শন করিবামাত্র সকলেই মুগ্ধ ও বিচলিত হইয়া পড়িল। ঐ সময় ভগবান্ বিরূপাক্ষ অসিহস্তে এরূপ বেগে বিচিত্র গতি প্রদর্শন করিতেছিলেন যে, দানবগণ, তিনি একাকী হইলেও, সহস্ৰসংখ্যক বলিয়া বোধ করিয়াছিল। অনন্তর ভূতভাবন ভবানীপতি সেই দানবদলের মধ্যে প্রবেশপূর্ব্বক কাহাকে ছিন্ন, কাহাকে ভিন্ন, কাহাকে নিপীড়িত এবং কাহাকে বা প্রোথিত করিয়া বিচরণ করিতে লাগিলেন। তাঁহার খড়্গ প্রহারে অসংখ্য দানবের বাহু ছিন্ন, উরু ভগ্ন ও বক্ষঃস্থল বিদীর্ণ হওয়াতে তাহারা প্রায় সকলেই, ভূতলে নিপতিত হইল। হতাবশিষ্ট অসুরগণ খড়্গাঘাতে নিতান্ত, নিপীড়িত হইয়া চীৎকার করিতে করিতে কেহ কেহ ভূগর্ভে, কেহ কেহ পর্ব্বতগহ্বরে ও কেহ কেহ জলমধ্যে এবং কেহ কেহ বা আকাশমার্গে পলায়ন করিল। ঐ সময় সেই ঘোরতর সমরব্যাপার সমুত্থিত হওয়াতে ধরাতল মাংস ও শোণিতপ্রভাবে নিতান্ত ভয়াবহ হইয়া উঠিল। ইতস্ততঃ দানবগণের রুধিরাক্ত কলেবর নিপতিত হওয়াতে বোধ হইতে লাগিল যেন, সমরভূমি কিংশুকবৃক্ষপরিশোভিত পৰ্ব্বতসমুদয়ে সমাকীর্ণ রহিয়াছে।
অসুরনাশাস্তে অসির নিয়োগব্যবস্থা
“ভগবান্ রুদ্রদেব এইরূপে দানবগণকে সংহারপূৰ্ব্বক ভূমণ্ডলে ধর্ম্ম প্রচার করিয়া স্বীয় ভীষণ মূৰ্ত্তি পরিত্যাগপূর্ব্বক শিবদায়ক শিবরূপ ধারণ করিলেন; তখন ঋষি ও দেবগণ সকলে সমবেত হইয়া আহ্লাদিতচিত্তে তাঁহার উদ্দেশে জয়ধ্বনি করিতে লাগিলেন। অনন্তর ভগবান ভূতভাবন সেই দানবশোণিতলিপ্ত ধৰ্ম্মরক্ষার হেতুভূত ভীষণ খড়্গ বিষ্ণুকে অর্পণ করিলে বিষ্ণু মরীচিমুনিকে, মরীচি মহর্ষিগণকে, মহর্ষিগণ পুরন্দরকে এবং পুরন্দর লোকপালদিগকে উহা প্রদান করিলেন। তৎপরে সূৰ্য্যতনয় মনুকে সেই খড়্গ অৰ্পণ করিয়া কহিলেন, তুমি মনুষ্যদিগের অধীশ্বর; অতএব এই ধৰ্ম্মনিদান অসি গ্রহণপূর্ব্বক প্রজাগণকে প্রতিপালন কর। মানবগণ শরীর ও মন এই উভয়ের প্রীতিসাধনার্থ ধর্ম্মসেতু [ধর্ম্মের বাঁধ] অতিক্রম করিলে তুমি ধৰ্ম্মানুসারে যথোপযুক্ত দণ্ডদানদ্বারা তাহাদিগকে রক্ষা করিবে। লোকে অপরাধ করিলে তাহাকে বাক্যদণ্ড বা ধনদণ্ড [অর্থদণ্ড] দ্বারা শাসন করা কৰ্ত্তব্য। অধিক অপরাধ না করিলে কাহারও অঙ্গবৈকল্য [অঙ্গুলি কৰ্ত্তনাদিদ্বারা অঙ্গবিকৃতি] বা বিনাশসাধন করা বিধেয় নহে। বাক্যদণ্ড প্রভৃতি দণ্ডসমুদয়কে অসির প্রকৃতিরূপ বলিয়া গণনা করা উচিত।
“লোকপালগণ মহাত্মা মনুকে এইরূপে খড়্গ প্রদান করিলে তিনি তাঁহাদের শাসনানুসারে সমুদয় নিয়ম প্রতিপালন করিয়া প্রজাগণের রক্ষণাবেক্ষণে নিরত রহিলেন এবং পরিশেষে বহুকালের পর স্বয়ং রাজকার্য্যবিরত হইয়া জনসমাজের রক্ষাবিধানার্থ স্বীয় পুত্ৰ ক্ষুপকে ঐ খড়্গ প্রদান করিলেন। অনন্তর মহাত্মা ক্ষুপ ইক্ষ্বাকুকে, ইক্ষ্বাকু পুরূরবাকে, পুরূরবা আয়ুকে, আয়ু নহুষকে, নহুষ যযাতিকে, যযাতি পুরুকে, পুরু অমূর্ত্তরয়াকে, অমূর্ত্তরয়া ভূমিশয়কে, ভূমিশয় ভরতকে, ভরত ঐলবিলকে, ঐলবিল ধুন্ধুমারকে, ধুন্ধুমার কম্বোজদেশীয় মুচুকুন্দকে, মুচুকুন্দ মরুত্তকে, মরুত্ত রৈবতকে, রৈবত যুবনাশ্বকে, যুবনাশ্ব রঘুকে, রঘু ইক্ষ্বাকুবংশীয় হরিদশ্বকে, হরিদশ্ব শুনককে, শুনক উশীনরকে, উশীনর ভোজ প্রভৃতি যাদবগণকে, যাদবগণ শিবিকে, শিবি প্রতর্দ্দনকে, প্রতর্দ্দন অষ্টককে, অষ্টক পৃষদশ্বকে, পৃষদশ্ব ভরদ্বাজ তনয় দ্রোণকে এবং দ্রোণ কৃপাচার্য্যকে সেই খড়্গ অর্পণ করিয়াছিলেন। এক্ষণে তুমি ভ্রাতৃগণের সহিত দ্রোণ ও কৃপাচার্য্য হইতে সেই উৎকৃষ্ট খড়্গ লাভ করিয়াছ। কৃত্তিকা ঐ খড়ের নক্ষত্র, অগ্নি উহার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা, রোহিণী উহার উৎপত্তিস্থান এবং রুদ্রদেব উহার গুরু। এক্ষণে ঐ খড়্গের গোপনীয় যে আট নাম উচ্চারণ করিলে যুদ্ধে জয়লাভ হয়, তাহা তোমার নিকট কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। অসি, বিশসন, খড়্গ, তীক্ষ্ণধার, দুরাসদ, শ্ৰীগৰ্ভ, বিজয় ও ধর্ম্মপাল। খঙ্গ সমুদয় অস্ত্র অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। পুরাণে উহা মহেশ্বরের অস্ত্র বলিয়া নির্ণীত হইয়াছে। যুদ্ধিবিশারদ বীরমাত্রেরই এই খড়্গকে পূজা করা কর্ত্তব্য। পূর্ব্বে মহারাজ পৃথু হইতে শরাসনের সৃষ্টি হইয়াছে। তিনি শরাসন প্রভাবেই পৃথিবী হতে বিবিধরত্ন ও প্রভূততর শস্য সংগ্রহ করিয়া ধৰ্ম্মানুসারে ধরামণ্ডল প্রতিপালন করিয়াছিলেন। অতএব শরাসনেরও সম্মান করা অবশ্য কর্ত্তব্য। হে মাদ্রীতনয়! এই আমি তোমার নিকট খড়্গের উৎপত্তিবৃত্তান্ত সবিস্তর কীৰ্ত্তন করিলাম। ইহা শ্রবণ করিলে ইহলোকে মহীয়সী কীৰ্ত্তি ও পরলোকে অনন্ত সুখলাভ হইয়া থাকে।