১৬১তম অধ্যায়
সধৰ্ম্মের মূল তগস্যা—তৎপ্রশংসা
ভীষ্ম কহিলেন, “মহারাজ! পণ্ডিতেরা কহেন যে, তপস্যাই সকলের মূল। যে মূঢ় তপানুষ্ঠান করে নাই, সে কখনই উৎকৃষ্ট ফলভোগ করিতে সমর্থ হয় না। প্রজাপতি ব্রহ্মা তপঃপ্রভাবেই এই সমস্ত সৃষ্টি করিয়াছিলেন এবং মহর্ষিগণ তপোবলে বেদসমুদয় অধিকার করেন। তপোবলে ফলমূল উৎপন্ন হইয়াছে। তপঃপ্রভাবেই সিদ্ধগণ ত্রিলোক নিরীক্ষণ করিতে সমর্থ হয়েন। ঔষধ ও আরোগিতা [আরোগ্য] তপোমূলক। পৃথিবীমধ্যে যে বস্তু নিতান্ত দুর্ল্লভ, তপোবলে তাহাও অধিকার করা যায়। পূৰ্ব্বকালে মহর্ষিগণ যে দুর্ল্লভ ঐশ্বর্য্য লাভ করিয়াছিলেন, তপঃই তাহার কারণ তপঃপ্রভাবে সুরাপান, তস্কর, ভ্রুণহত্যা ও গুরুতল্প[গুরুপত্নী]গমন প্রভৃতি পাপ হইতে বিমুক্ত হওয়া যায়। তপস্যা অনেক প্রকার, তন্মধ্যে অনশন সৰ্ব্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট। অনশন অহিংসা, সত্যবাক্য-প্রয়োগ, দান ও ইন্দ্রিয়নিগ্রহ অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট। বেদজ্ঞ ব্যক্তি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কেহই নাই। দান অপেক্ষা দুষ্কর কৰ্ম্ম, জননীকে প্রতিপালন করা অপেক্ষা সৎকাৰ্য্য এবং সন্ন্যাস অপেক্ষা উৎকৃষ্ট তপস্যা আর কিছুই নাই। ধন-ধান্য ও ধৰ্ম্মরক্ষা করিবার নিমিত্ত ইন্দ্রয়সংযম করা অবশ্য কর্ত্তব্য। ঋষি, পিতৃগণ, দেবতা, মনুষ্য, মৃগ, পক্ষী ও অন্যান্য স্বাবরজঙ্গমাত্মক ভূতসমুদয় তপঃপ্রভাবেই সিদ্ধিলাভ করিয়া থাকেন। তপঃপ্রভাবেই দেবগণ মহত্ত্বলাভ করিয়াছেন। তপঃপ্রভাবে অন্যান্য অভীষ্ট ফলের কথা দূরে থাকুক, দেবত্ব পৰ্য্যন্ত অধিকার করা যাইতে পারে।”