সুড়ঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে লোকটা এবার অর্জুনের দিকে তাকাল। অর্জুন ইশারা করতে সে মাথা নুইয়ে ভেতরে ঢুকল। একটু বাদে তাকে আর দেখা যাচ্ছিল না। যে-কোনও সুড়ঙ্গের মতো এর ভেতরটা বেশ অন্ধকার। কোনওরকম আলোর সাহায্য ছাড়া ওখানে পা বাড়াতে ঠিক সাহস হচ্ছিল না অর্জুনের। সুড়ঙ্গের মুখ যদি ওপাশে কোথাও থাকে তা হলে এই লোকটি, যার নাম মাংরা, স্বচ্ছন্দে এই সুযোগে পালিয়ে যেতে পারবে। অবশ্য ওকে ধরে। রেখেই বা তার কী লাভ!
অর্জুন ইতস্তত করছিল। গুলিগোলা চলছে ওপাশে। অবিরাম শব্দ বাজছে। যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে গিয়েছে নির্জন জঙ্গল। অর্জুন সুড়ঙ্গের দিকে তাকাল। এটা কে বানিয়েছে? এরাই? যেটুকু বোঝা যাচ্ছে তাতে নতুনের চেহারা নেই। হঠাৎ কাছাকাছি মানুষের উত্তেজিত গলা শোনা গেল। লোকগুলো এদিকেই আসছে। কোনও পথ না পেয়ে অর্জুন দ্রুত সুড়ঙ্গে নামল। নেমেই মনে হল লোকগুলো এখানে এলেই সুড়ঙ্গটাকে দেখতে পাবে। ইদুরের মতো অবস্থা না হয় তখন! পেছন থেকে মারার গলা পেল অর্জুন, পাথরটা টেনে আনুন মুখে, জলদি।
অতএব বন্দুক রাখতে হল। সুড়ঙ্গের মুখে রাখা পাথরটাকে কোনও মতে টেনে এনে আড়াল তৈরি করতেই ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল। এক বিঘত দূরের কোনও জিনিস দেখা যাচ্ছে না। অর্জুন হাতড়ে হাতড়ে বন্দুকটাকে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেল। পেতে মনে সামান্য ভরসা এল। সে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথায়?
এখানে বাবু। তৎক্ষণাৎ সাড়া পাওয়া গেল।
আমার দিকে এগোবার চেষ্টা একদম করবে না।
আপনার দিকে যাব কেন? আপনি বরং আমার পেছনে আসুন।
অর্জুন ঢোক গিলল, দাঁড়াও। তোমার পেছনে যাব যে, আমি তো কিছুই। দেখতে পাচ্ছি না। একটা টর্চ যদি সঙ্গে থাকত।
টর্চ কেনার পয়সা কোথায় পাব বাবু। আমার এখানে হাঁটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। একটু অপেক্ষা করুন, আপনার চোখ ঠিক সয়ে নেবে। লোকটা হাসল।
কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না অথচ কথা হচ্ছে। মাটির ওপরে কী ঘটছে। তা এখানে দাঁড়িয়ে বোঝার উপায় নেই। অবশ্য দাঁড়ান শব্দটা বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। কোমর অনেকখানি ভেঙে মাথা নুইয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে এখন। অর্জুন দেখল এখন অন্ধকার যেন আগের চেয়ে অনেক পাতলা কিন্তু দেখে পথ চলার মতো নয়। একটা মানুষের আদল কি তার সামনে ফুটে উঠছে? সে ঠিক নিশ্চিত হতে পারল না। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তুমি এই সুড়ঙ্গটা ভাল চিনতে কী করে?
লোকটা হাসল, এখনকার কথা নাকি? সেই ছেলেবেলা থেকে চিনি। জঙ্গলে খেলা করতে এসে একদিন খুঁজে পেয়েছিলাম।
সুড়ঙ্গটা কোনদিকে গিয়েছে?
মন্দিরে।
মন্দির মানে শিবের মন্দির? অর্জুনের গলার স্বর প্রতিধ্বনিত হল।
কী জানি। দেবতা-টেবতা কিন্তু নেই ওখানে। লোকটা যেন পিক করে থুতু ফেলল।
এখানে যে সুড়ঙ্গ আছে তা তোমাদের গ্রামের সবাই জানে?
না। আমরা দুই বন্ধু জানতাম।
সে কোথায়? মরে গিয়েছে। সাপের কামড়ে। এখানে আসার সময়ে।
কবে? অর্জুনের শরীর শিরশির করল। এখানে এখনও সাপ থাকা আশ্চর্যের নয়।
সে অনেকদিন আগের কথা। আমি আর কাউকে বলিনি।
কেন?
বললেই তো সবাই জেনে যাবে। এটা আর আমার থাকবে না।
তোমার থাকবে না মানে?
এই গুহাটা এখন আমার একার। এবার লোকটার গলা বেশ গম্ভীর শোনালো।
তুমি এখানে কী কর?
মালপত্তর রাখি।
কীসের মালপত্তর?
সেটা বলা যাবে না। লোকটার হাসি শোনা গেল। তবে এখন তো বন্দুক দেখিয়ে আপনি জেনে গেলেন।
তুমি কি চুরিচামারি করো?
লোকটা কোনও জবাব দিল না। প্রশ্নটা করেই অর্জুনের মনে হল, না করাই ভাল ছিল। লোকটা তাকে ছন্দ করছে না। এর ওপর সে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে বুঝে যদি হঠাৎ আক্রমণ করে বসে তা হলে এই অন্ধকারে সে কিছুই করতে পারবে না।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। অর্জুন একটু হাসার চেষ্টা করল, তুমি এখানে রোজ আস?
না। দরকার পড়লে আসি।
এখানে কিছু বাইরের মানুষ আস্তানা গেড়েছে। তারা তোমাকে বাধা দেয়নি?
দিয়েছিল। আমাকে বলেছে এদিকে না আসতে।
তারপরে?
আমার দরকার পড়ে তাই আসি। ওরা বললেই শুনব কেন?
আজকেও তত বাধা দিতে পারত।
দিলে চলে যেতাম। কালও ফিরে গিয়েছি।
এরা এখানে কতদিন আছে?
এক মাস হয়ে গেল।
তোমাদের গ্রামের সবাই জানে?
জানবে না কেন? মোড়লকে টাকা দেয় কাজ করার জন্য।
ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোকজন জানে? লোকটা হাসল, আপনার পিঠে একটা পিঁপড়ে হাঁটলে আপনি জানবেন না।
অর্জুন বুঝল নোকটা একেবারে বোকা নয়। আর এখানকার চারপাশের মানুষদের হাতে রেখে দলটা কাজ চালাচ্ছে, এটা বোঝা গেল। এবার লোকটা বলল, চলুন, আমি আগুন জ্বালিয়ে নিচ্ছি। এখানে কয়েকটা শুকনো ডাল আমি রেখে গিয়েছিলাম। ফস করে দেশলাই জ্বালল লোকটা। একটু খুঁজতেই বেঁটে-বেঁটে কয়েকটা ডাল পেয়ে গেল। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কাঠি খরচ করে সেগুলো ধরাল, তারপর এগোতে লাগল।
বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে না। নাকে ডালপোড়া গন্ধ ভেসে আসছে। অর্জুন ছায়ামাখা কাঁপা আলোয় লোকটিকে অনুসরণ করছিল। এবড়োখেবড়ো পথ। কুঁজো হয়ে চলার জন্য কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে গেল। মিনিট তিনেক হাঁটার পর লোকটা দাঁড়াল। অর্জুন দেখল সামনে দুটো পথ। সুড়ঙ্গ দুদিকে চলে গিয়েছে। লোকটা বলল, ওইদিকে গেলে মন্দিরের গায়ে পৌঁছে যাওয়া যায়। এদিকটায় আমি মাল রাখি। আপনি কি এবার আমাকে যেতে দেবেন?
কোথায় যাবে তুমি?
আমার জিনিস নিয়ে বেরিয়ে যাব।
বেরিয়ে যাবে কোথায়? বাইরে গোলাগুলি চলছে।
আমার কিছু হবে না। লোকটা হাসল, আচ্ছা, আপনি কোন দলে?
যারা অন্যায় করে তাদের বিরুদ্ধে।
তার মানে, পুলিশ?
আমি পুলিশ নই।
সেটা অবশ্য আপনাকে দেখেও বোঝা যায়। তা হলে বলি।
তোমার ওই পথটা আমি দেখব।
পথ তো বেশি নেই। একটুখানি। লোকটা ভাবল খানিক, শুনুন আপনি যদি আমাকে বাধা দেন তা হলে আমি ছেড়ে দেব না।
আমি কিছুই করছি না। লোকটা এবার বাঁ দিকে এগোল। তিন-পা যেতেই সুড়ঙ্গ শেষ। সামনে পাথরের পাঁচিল। লোকটা আর একটা ডাল ধরাল। তারপর এক কোণে রাখা একটা বস্তা তুলে নিল। অর্জুন সেটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কী আছে ওর ভেতর?
জিনিস।
কী জিনিস?
লোকটা অস্বস্তিতে পড়ল। তার এক হাতে মশালের মতো ধরা আগুন, অন্য হাতে বস্তাটা। হঠাৎ বেশ কাতর গলায় বলল, মাসখানেক আগে এক জোতদারের ঘর থেকে কিছু বাসন চুরি করে এখানে লুকিয়ে রেখেছিলাম। হাওয়া ঠাণ্ডা হতে নিয়ে যাচ্ছি।
তোমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত।
তারপর?
অর্জুন হকচকিয়ে গেল। আগুনের ছোঁয়ায় লোকটির মুখ কেমন রহস্যময়। অর্জুন বলল, অন্যায় করেছ, তোমার জেল হবে। সেটাই শাস্তি।
তারপর?
মানে?
জেল থেকে একদিন ছাড়া পাব। পেয়ে কী করব?
কাজকর্ম করবে।
সেটা পেলে তো এখনই করতাম। বলে লোকটা সোজা এগিয়ে এল অর্জুনের দিকে। আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মুহূর্তেই তৈরি হয়ে গেল অর্জুন, কিন্তু তার গা ঘেঁষে লোকটা নির্বিকার মুখে বেরিয়ে গেল। আলো এবং বস্তা হাতে কুঁজো হয়ে হেঁটে গেল যে দিক দিয়ে তারা এতক্ষণ এসেছিল সেই পথে। লোকটা অন্যায় করছে। কিন্তু অর্জুন ভেবে পেল না সে কী করতে পারে। ওই অন্যায়ের জন্য গুলি করা যায় না। পেছনে ধাওয়া করে ওকে আটকে যে পুলিশের হাতে তুলে দেবে সে পরিস্থিতি এখন নেই। কিন্তু একটা লোক যে এমন নির্বিকার মুখে অন্যায় করে যেতে পারে একটুও পাপবোধে পীড়িত না হয়ে, তা একে না দেখলে সে ভাবতে পারত না। হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল। অর্জুন ফাঁপরে পড়ল। লোকটার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো চলে গেছে। তার মেরুদণ্ড পর্যন্ত শিরশির করে উঠল। লোকটা তাকে ফাঁদে ফেলে গেল না তো? অন্ধকার সুড়ঙ্গে রেখে দিয়ে ও সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে চলে যেতে পারে। নাকে এখন ডালপোড়া গন্ধ লাগল। তার মানে অক্সিজেন দ্রুত। কমে আসছে। নতুন বাতাস ঢোকার যদি কোনও পথ না থাকে তা হলে এখানে দমবন্ধ হয়ে মরতে হবে। অর্জুন দ্রুত লোকটাকে অনুসরণ করতে চাইল। কিন্তু কয়েক পা যেতেই অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে ছিটকে পড়ল একপাশে। হাতের বন্দুকটা সশব্দে আছাড় খেল পাথরে। উঠে বসল সে। হাঁটুতে বেশ চোট লেগেছে পড়ার সময়। তার মাথায় এখন একমাত্র চিন্তা, এই সুড়ঙ্গ থেকে বের হতে হবে। সাপ দূরের কথা, একটা বিছে যদি এই অন্ধকারে তাকে কামড়ায় তা হলেও সে কিছুই দেখতে পাবে না। মিনিটখানেক হাতড়ে-হাতড়ে সে বন্দুকটাকে খুঁজে পেল। পড়ে যাওয়ার পর এটি কী অবস্থায় আছে তা বোঝা যাচ্ছে না। অর্জুন স্থির করল সে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। অতটা পথ অন্ধকারে হাতড়ে-হাতড়ে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। লোকটা বলেছিল তারা সুড়ঙ্গের এই মুখের কাছেই চলে এসেছে আর একটু হাঁটলে মন্দিরের গায়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে। অন্তত লোকটা সেইরকমই বলেছিল।
বন্দুকটাকে লাঠির মতো ব্যবহার করল অর্জুন। এতে পথ চলতে বেশ সুবিধে হচ্ছে। তার বুকে একটা ভয় চাপা ছিলই। যদি সুড়ঙ্গের দুটো মুখই বন্ধ করে দেওয়া হয় তা হলে এখানে সারাজীবন যক্ষের মতো বন্দি হয়ে থাকতে হবে। এই ভয়টাই যেন ঊর্ধ্বশ্বাসে নিয়ে চলেছিল অর্জুনকে। ইতিমধ্যে দু-দুবার আছাড় খেতে হয়েছে তাকে। মুখে মাকড়সার জাল জাতীয় কিছু জড়িয়েছে। অদ্ভুত এক ধরনের পচা গন্ধ নাকে আসছে। যে লোকগুলো কালাপাহাড়ের সম্পদ অন্বেষণে এখানে এমন পাকা ব্যবস্থা করে জাঁকিয়ে বসেছে তারা যে এই সুড়ঙ্গের সন্ধান এখনও পর্যন্ত পায়নি সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। পেলে এইরকম আদিম গন্ধ এখানে থাকত না। কিন্তু পেল না কেন এইটে ভাবতে অবাক লাগছে। আছাড় খেয়ে হাঁটুতে বেশ ব্যথা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। অর্জুন খুব ধীর সতর্ক হয়ে হাঁটছিল। এবং হঠাৎ তার চোখে একফালি আলো স্নিগ্ধতা ছড়াল। খানিকটা দূরে একটা ফাঁক গলে সুড়ঙ্গের মধ্যে সেই আলো এসে পড়েছে। পায়ের তলায় টুকরো পাথর। সহজভাবে হাঁটা যাচ্ছে না। মাথার ছাদ ক্রমশ আরও নীচে নেমে এসেছে। তারই মধ্যে দ্রুত জায়গাটা অতিক্রম করতে গিয়ে অর্জুন আচমকা পাথর হয়ে গেল। একেবারে কাছ থেকেই ফোঁসফোঁস আওয়াজ আসছে। প্রচণ্ড রেগে যাওয়া সেই প্রাণী সাপ ছাড়া কিছু নয় এটুকু বুঝতে সময় লাগল না। এই অবস্থায় সামান্য নড়াচড়া মানে সাপটির ছোবল শরীরে নেওয়া। আবার দাঁড়িয়ে থাকলেই যে সাপটি নির্লিপ্ত হয়ে ছেড়ে দেবে এমন ভরসা কোথায়? অর্জুন মুখ ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করল। আলোর ফালি আর দূরে নয়। তাই এখানে অন্ধকার তেমন জমাট বেঁধে নেই। চোখ শব্দ অনুসরণ করতেই বিশাল ফণাটাকে দেখতে অসুবিধে হল না। সাপটা মাটি ছেড়ে প্রায় সুড়ঙ্গের ছাদ পর্যন্ত ফণা তুলে দুলছে। ছোবল মারার ঠিক আগের ভঙ্গি এটা। মাথার ভেতর বিদ্যুৎ চলে যাওয়াব মতো দ্রুত কেউ বলল আক্রমণ কর এবং একইসঙ্গে বন্দুক ধরে রাখা হাতটা সচল হল। ট্রিগার নয়, লাঠির মতোই ব্যবহার করল অর্জুন এবং সেই একইসঙ্গে সাপটা ছোবল বসাল। বন্দুকের যেখানে তার মুখ ঘষটে গেল তার আধ ইঞ্চি দূরেই অর্জুনের আঙুল ছিল। যত দ্রুতই হোক অর্জুনের আগেই। সাপটা দ্রুততম হতে পেরেছিল।
সাপটাকে ছিটকে সুড়ঙ্গের অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল বন্দুকের আঘাত। সমস্ত শরীরে বরফের কাপুনি নিয়ে অর্জুন কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করল। ওই আঘাত সামলে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না বলেই বোধহয় ফোঁসফোঁস আওয়াজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অর্জুন দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সুড়ঙ্গের মুখের কাছে উবু হয়ে বসল। তার চোখ সুড়ঙ্গের ভেতর দিকে, এবার বন্দুকের ট্রিগারে আঙুল। সাপটা যদি এগিয়ে আসতে চায় তা হলে সে সরাসরি গুলি করবে। এখন অনেকখানি জায়গা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।
প্রায় মিনিট তিনেকের অপেক্ষা বিফলে গেল। সাপটার ফিরে আসার কোনও লক্ষণই দেখা গেল না। অর্জুন এবার সুড়ঙ্গের মুখের দিকে তাকাল। ওপাশে কী আছে বোঝা যাচ্ছে না। সে আলো আসার পথটা ধরে চাপ দিল। একটুও নড়ল না জায়গাটা। লোকটা বলেছিল মন্দিরের পাশে গিয়ে উঠেছে এই সুড়ঙ্গ। ওপাশে যুদ্ধের ফল কী হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না। যদি লোকগুলো জিতে থাকে প্রথম রাউন্ডে, তা হলে শিবমন্দির তো তাদের দখলেই থাকবে। কিন্তু এখানে অনন্তকাল এভাবে বসে থাকা যায় না। বন্দুকের বাঁট দিয়ে আলো আসার পথটাকে আঘাত করতে লাগল অর্জুন। একটু-একটু করে ফাঁকটা বড় হচ্ছে। অর্জুনের শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছিল। ওপাশে একটা বড় পাথর রয়েছে। সেটাকে কিছুতেই সরান সম্ভব হচ্ছে না। দ্বিতীয় দফায় চেষ্টা করার পর যেটুকু ফাঁক হল তাতে কোনওমতে বেরিয়ে যাওয়া যায়। ওপাশে কী আছে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে-অর্জুন এগিয়ে যেতেই কানে মানুষের গলা ভেসে এল। আওয়াজটা আসছে সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে। সে চটপট শরীরটাকে তুলে বাইরে নিয়ে আসতেই পাথরটা নড়ে আবার সুড়ঙ্গের মুখে সরে এসে আটকে গেল। ওঠার সময় ওটি ফিরে এলে আর দেখতে হত না। এবং তখনই অর্জুনের খেয়াল হল তা বন্দুক সুড়ঙ্গের মধ্যেই পড়ে আছে।