অঙ্গদেরে রাবণ দেখায় যত ডর।
রুষিয়া অঙ্গদ বীর করিছে উত্তর।।
আর কপি নহি, আমি বালির তনয়।
তোর ক্রোধে রাবণ আমার কিবা ভয়।।
রাবণ বড়াই না করিস্ মোর আগে।
আমি তোরে মারিলে রামের সত্য ভাঙ্গে।।
রাম সুগ্রীবের যুক্তি আমি ভাল জানি।
তোরে আর কুম্ভকর্ণে বধিবেন তিনি।।
ইন্দ্রজিতে অতিকারে বধিবে লক্ষ্মণ।
আর যত রাক্ষসে বধিবে কপিগণ।।
কোন্ বেটা ধরিবে আসুক ত্বরা করি।
এক চড়ে তাহারে পাঠাব যমপুরী।।
ক্রোধাকুলে চারিদিকে চাহে দশানন।
অঙ্গদের হাতে পায়ে ধরে চারিজন।।
চারি নিশাচরে করে অঙ্গদে প্রহার।
অঙ্গদের দৃঢ় অঙ্গ কি করিবে তার।।
অঙ্গদ সে চারি জনে ধরিল সাপুটে।
এক লাফে প্রাচীরের উপরে সে উঠে।।
প্রাচীরে তুলিয়া বীর মারিল আছাড়।
ভাঙ্গিল মাথার খুলি চূর্ণ হৈল হাড়।।
সে চারি রাক্ষসে মারি ভাঙ্গিল প্রাচীর।
অঙ্গদ বীরের ডরে কেহ নহে স্থির।।
প্রাচীরে উঠিয়া ভাবে বালির কুমার।
কোন্ দ্রব্য লয়ে যাব শ্রীরাম গোচর।।
হনুমান এসেছিল লঙ্কার ভিতর।
দিলেক সীতার মণি রামের গোচর।।
মণি পেয়ে রঘুমণি আনন্দিত অতি।
তদবধি মহাতুষ্ট হনুমান প্রতি।।
এই স্থির করিলেন অঙ্গদ অন্তরে।
রতন-মুকুট আছে রাবণের শিরে।।
এ মুকুট লয়ে যাব রাম-সম্ভাষণে।
প্রসন্ন হবেন রাম ইহা দরশনে।।
প্রাচীরে বসিয়াছিল বালির কোঙর।
এক লাফ দিয়া পড়ে রাবণ উপর।।
সিংহাসনে বসিয়া রাবণ তারে ধরে।
জড়াজড়ি করি পড়ে ভূমির উপরে।।
ধরা টলমল করে উভয়ের ভরে।
ইন্দ্র গরুড়ের যুদ্ধ গগন উপরে।।
দুই সিংহ যুঝে যেন ছাড়ে সিংহনাদ।
দুই জনে মল্লযুদ্ধ হইল প্রমাদ।।
রাবণেরে আছাড়িয়া বালির নন্দন।
মুকুট লইয়া বেগে উঠিল গগন।।
অঙ্গদের বিক্রমে রাবণ কাঁপে ডরে।
অধোমুখে উঠিয়া গায়ের ধূলা ঝাড়ে।।
রাবণের কাছে আছে সব সেনাপতি।
এত বীর থাকিতে তাহার এ দুর্গতি।।
রাবণ বলিছে সবে আছ কোন্ কাজে।
বানরে মুকুট লয় সবাকার মাঝে।।
বীরগণ বলে, শুন লঙ্কা-অধিকারী।
আপনি হারিলে মোরা কি করিতে পারি।।
তব সনে যুদ্ধ করে বালির নন্দন।
মোর ভাবি পাছে লয় সবার জীবন।।
চারি বীর তারে ধরেছিল সাবধানে।
আছাড়িয়া অঙ্গদ মারিল সবে প্রাণে।।
পাত্র মিত্র সহিত চিন্তিত দশানন।
বৈরী কাঁপাইয়া গেল বালির নন্দন।।
এক লাফে পড়ে গিয়া বানর ভিতর।
শ্রীরামে ভেটিল যথা সুগ্রীব বানর।।
শত্রুর মুকুট দিল রাম-বিদ্যমান।
দেখিয়া বানর সব করিছে বাখান।।
মুকুট দেখিয়া রাম সহাস্য বদন।
তুষ্ট হয়ে অঙ্গদেরে দেন আলিঙ্গন।।
চারি দ্বারে শুনি বানরের হুলাহুলি।
অঙ্গদেরে পুষ্প দেয় অঞ্জলি অঞ্জলি।।
শ্রীরাম বলেন বীর কহত কুশল।
কিমতে ভেটিলে গিয়া সেই মহাবল।।
রঘুপতি অনুমতি করিল তৎপর।
অঙ্গদ কহিছে বার্ত্তা যথা পূর্ব্বাপর।।