১৫. মাইক্রোফোনের সুইচটি অন করে

মাইক্রোফোনের সুইচটি অন করে লাল চুলের মেয়েটি বলল, তুমি কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?

মস্তিষ্কটি ভারী গলায় বলল, হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।

লাল চুলের মেয়েটি বলল, আজকে খুব একটা বিশেষ দিন। আজকে তোমার সাথে অবশ্যই কথা বলতে হবে।

মস্তিষ্কটি কোনো উত্তর দিল না। মেয়েটি বলল, কী হল তুমি কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন?

তুমি জান, আমি তোমার উচ্ছাসে অংশ নিতে পারি না। যেটি তোমার বিশেষ দিন পৃথিবীর মানুষের জন্যে সেটি নিশ্চয়ই খুব অশুভ একটি দিন।

লাল চুলের মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল, তুমি ঠিকই অনুমান করেছ! তুমি শুনতে চাও না কেন এটি মানুষের জন্যে অশুভ?

না। আমি শুনতে চাই না।

না চাইলেই হবে না। তোমাকে শুনতে হবে। এগুলো গোপন কথা। ভয়ংকর গোপন কথা। সারা পৃথিবীতে এখন আমরা মাত্র কয়েকজন রবোমানব এটি জানি। এটা কাউকেই বলার কথা না। কিন্তু আমি নিশ্চিন্তে তোমাকে সবকিছু বলতে পারি! তোমার মতো নিরাপদ শ্রোতা সারা পৃথিবীতে আর একটিও নেই।

আমি শুনতে চাই না।

তোমাকে শুনতে হবে। লাল চুলের মেয়েটি কঠিন মুখে বলল, তোমাকে অবশ্যই শুনতে হবে। আমার যা ইচ্ছে হয় আমি তোমাকে বলব তোমার তার সবকিছু শুনতে হবে!

লাল চুলের মেয়েটি তার পানীয়ের গ্লাসে খানিকটা উত্তেজক পানীয় ভরে এনে জানালায় পা ভাঁজ করে বসে বলল, তুমি শুনে নিশ্চয়ই আতংকিত হবে, আমরা আমাদের কাউন্ট ডাউন শুরু করেছি। আগামীকাল বিকেল তিনটা হচ্ছে আমাদের আক্রমণের সময়। পৃথিবীর সব বড়বড় আক্রমণ হয় ভোর রাতে। আমরা ঠিক করেছি আমাদের আক্রমণটি হবে দিনের আলোতে। সন্ধ্যেবেলা সব মানুষ যখন সারাদিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে নিশ্চিন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে বিশ্রাম নেবে তখন আমরা আমাদের ঘোষণাটি প্রচার করব। ঘোষণায় কী বলা হবে শুনতে চাও?

মস্তিষ্কটি নিচু গলায় বলল, না শুনতে চাই না।

তুমি শুনতে চাও কি না চাও তাতে কিছু আসে যায় না। ঘোষণাটি হবে এরকম, বলা হবে, পৃথিবীর রবোমানবেরা। তোমরা যে ঘোষণাটির জন্য দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষা করছিলে, আমরা এখন সেই ঘোষণাটি করতে চাই। আজ থেকে পৃথিবীতে সকল বৈষম্য সকল অবিচারের অবসান হয়েছে। এই পৃথিবীতে যে সম্প্রদায়ের বুদ্ধিমত্তা বেশি, যে সম্প্রদায়ের মেধা বেশি, ক্ষমতা বেশি সেই সম্প্রদায়ের অধিকারও বেশি। মানুষের যে অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে পৃথিবীতে সভ্যতা গড়ে উঠতে পারছে না, সেই নেতৃত্বকে অপসারণ করা হয়েছে। প্রিয় রবোমানব এবং মানুষেরা তোমরা শুনে খুশি হবে যে নেতৃত্বের কারণে পৃথিবীতে আমাদের অত্যাচার নির্যাতন অবিচার আর বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে সেই নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।

মস্তিষ্কটি আর্ত চিৎকার করে উঠল, না! লাল চুলের মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে বলল, না? কেন না? এটা হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না।

মেয়েটি তার পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। এটি আসলেই হতে পারে না। এটি আসলে একটা মিথ্যা ঘোষণা। বিজ্ঞান আকাদেমীর এগারোজন সদস্যকে বিচার করা হবে সেই ঘোষণাটি আসলে সত্যি নয়। কেন সত্যি নয় জান?

না। জানি না।

তার কারণ, আগামীকাল বিকেল তিনটার সময় সবার আগে তাদের বাসায় গিয়ে তাদের হত্যা করা হবে। কে কাকে হত্যা করবে সেটাও ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের সর্বাধিনায়ক হত্যা করবে তোমাদের মহামান্য থুলকে! নিজের হাতে। সেই দৃশ্যটি দেখার জন্যে আমার সমস্ত শরীর আকুলি বিকুলি করছে! মেয়েটি অপ্রকৃতস্থের মতো একটা শব্দ করে বলল, আহ্! সেই দৃশ্যটি কী অভূতপূর্ব হবে তুমি চিন্তা করতে পার?

মস্তিষ্কটি কাতর গলায় বলল, আমি চিন্তা করতে চাই না। আমি শুনতে চাই। তোমার দোহাই লাগে–

মেয়েটির শরীরে উত্তেজক পানীয় কাজ করতে শুরু করেছে। সে মাটিতে পা দাপিয়ে বলল, তোমাকে শুনতে হবে হতভাগা মস্তিষ্ক! তোমাকে সব শুনতে হবে। নেটওয়ার্ক দখল করে আমরা কীভাবে সব রবোমানবকে নির্দেশ পাঠাব তোমাকে সেটা শুনতে হবে। কীভাবে অস্ত্রাগারের দরজা খুলে দেয়া হবে সেটা শুনতে হবে। কীভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দখল হবে শুনতে হবে, কীভাবে শস্যভাণ্ডার দখল হবে শুনতে হবে, কীভাবে সুস্থ সবল মানুষের মাথায় ইমপ্লান্ট বসিয়ে রবোমান তৈরি করব শুনতে হবে।

মস্তিষ্কটি আর্ত চিৎকার করে বলল, শুনতে চাই না! আমি কিছুই শুনতে চাই–দোহাই তোমার–

লাল চুলের মেয়েটি অপ্রকৃতস্থের মতো হাসতে থাকে। কিছুতেই হাসি থামাতে পারে না।