মহা-ডাক্তার তো মহা অবাক। কোনও খবর না দিয়ে ফিরে এসেছেন কাকাবাবু, সঙ্গে একজন বন্দি!
কাকাবাবু বললেন, একে রাখতে হবে মাটির তলার ঘরে। কী ব্যাপার পরে বলল। আজ আমার শরীর ও মনের উপর অনেক চাপ পড়েছে। আজ আমি তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে ঘুমোব।
ঘোড়া থেকে নামিয়ে কর্নেলকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সে কাতরভাবে বলল, মিস্টার রায়চৌধুরী, আমি হার মেনে নিচ্ছি। আমার অনুরোধ, একটা গুলি চালিয়ে আমাকে শেষ করে দাও। আমাকে আর অপমান কোরো না।
কাকাবাবু বললেন, তোমার অনুরোধ আমি শুনব কেন? তুমিও তো আমাকে গুলি করে মারার বদলে গড়িয়ে দিয়ে মারতে চেয়েছিলে। আমার চুলের মুঠি চেপে ধরেছিলে। আমি তোমাকে আপাতত একটা লোহার দরজা দেওয়া ঘরে আটকে রাখব জন্তুর মত। অপমানই তোমার আসল শাস্তি।
মাটির তলায় একটা ঘরের দরজা খুলে কর্নেলকে ছুড়ে দেওয়া হল।
পরদিন সকালবেলা কাকাবাবু অনেকটা সুস্থ, স্বাভাবিক বোধ করলেন। একেবারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলে অসম্ভব চাপ পড়ে মনের উপর। কয়েকদিন ভাল করে নিশ্বাসও ফেলতে কষ্ট হয়।
কফি খেতে খেতে কাকাবাবু মহা-ডাক্তারকে কর্নেলের সব ঘটনা খুলে বললেন।
সব শোনার পর মহা-ডাক্তার বললেন, ছি ছি ছি ছি। আপনি আমাকে আগে কেন বলেননি, যদি উলটো কিছু হয়ে যেত! এ তো সাংঘাতিক লোক! এত গোয়ার। আপনি ওর ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী নন, তবু আপনাকে মারবেই মারবে! রাজাবাবু, এখন এই লোকটাকে নিয়ে কী করবেন? ওকে
তো পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াই উচিত!
কাকাবাবু বললেন, পুলিশের হাতে দিলে অনেক কিছুই প্রমাণ করা যাবে না। ওর ঠিক শাস্তি হবে না। ওর শাস্তি আমিই দেব। এখন ওই ঘরেই
ও থাকবে। কেউ যেন ওর সঙ্গে কোনও কথা না বলে।
দুপুরবেলা মহা-ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, রাজাবাবু, আপনার বন্দিকে কিছু খাবার দিতে হবে তো? কী দেব?
কাকাবাবু বললেন, খাবার দিতেও পারো, না দিতেও পারো। একই কথা।
মহা-ডাক্তার বললেন, সে কী, সব জেলখানাতেই বন্দিদের খাবার দেয়!
কাকাবাবু বললেন, তুমি কয়েকখানা রুটি-তরকারি দিয়ে দেখতে পারো। বোধহয় খাবে না। ওর হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ো। ও আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইবে। কেউ যেন কোনও উত্তর না দেয়। আমি কয়েকদিন ওর মুখ দেখতেও চাই না।
পরদিন মহা-ডাক্তার বললেন, খাবার দেওয়া হয়েছিল, ও তো কিছুই খায়নি। দিনের পর-দিন যদি না খেয়ে থাকে, কতদিন ওকে আটকে রাখবেন? আমারও যে একটা দায়িত্ব এসে যাচ্ছে।
কাকাবাবু বললেন, তোমার তো কোনও দায়িত্ব নেই। ও যদি কিছু না খেয়ে মরেই যায়, তা হলে তো ভালই হয়। ওকে আমরা মারধর করছি না, ওকে ছুরি দিয়ে কিংবা গুলি করে মারছি না। ও না খেয়ে মরলে কিন্তু আমাদের কোনও দোষ হবে না। পুলিশ কিছুই বলবে না।
মহা-ডাক্তার কাচুমাচুভাবে বললেন, আপনি সত্যিই ওকে না খাইয়ে মারতে চান?
কাকাবাবু বললেন, ইয়েস! চিড়িয়াখানার একটা জন্তুকে কিছু না খেতে দিলে যেমন হয়, ওর ঠিক সেই অবস্থা হবে।
সন্তুর সঙ্গে একদিন টেলিফোনে কথা হল। সন্তুর পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। জোজোকে নিয়ে সে বেড়াতে আসতে চায়, ডাক্তার অনুমতি দিয়েছে। কাকাবাবু সেই ডাক্তারকেও ফোন করলেন। সত্যি, তাঁর আপত্তি নেই।