১৫. মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ

মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ একটা সেমি অটোমেটিক রাইফেল হাতে নিয়ে তার ম্যাগাজিনটা পরীক্ষা করল। তারপর সেটা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে হাতে তুলে দিল, বলল, “রালফ, এই যে তোমার রাইফেল।”

রালফ নামের মানুষটার মাথায় নোংরা হলুদ চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। তার চোখ লাল, চোখের দৃষ্টি অপ্রকৃতস্থ। মানুষটা তার হলুদ দাঁত বের করে হেসে বলল, “অনেক ধন্যবাদ বস।”

“এখন কী করতে হবে জান?”

“জানি।”

“আবার বলি। তুমি স্কুলের পার্কিং লটে আপেক্ষা করবে। দেখবে নীল রঙের একটা ভলবো গাড়ী করে একটা মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে আসবে। মেয়েকে নামিয়ে মহিলা চলে যাবে। তখন তুমি এগিয়ে যাবে। মেয়েটাকে গুলী করবে।”

“ঠিক আছে।”

“মনে থাকবে?”

“থাকবে।”

“যাও রালফ। তোমার উপরে যে অবিচার করা হয়েছে তার প্রতিশোধ নিয়ে এস।”

“ঠিক আছে বস।”

রালফ ঘর থেকে বের হয়ে গেল এবং একটু পরেই গাড়ীর শব্দ শোনা গেল রালফ তার প্রতি অবিচারের প্রতিশোধ নিতে গেছে।

ঠিক তখন মধ্য বয়স্ক মানুষটির টেলিফোন বেজে উঠল। মানুষটি ফোনটি কানে লাগালো, “হ্যালো।”

সে শুনতে পেলো অন্য দিক থেকে লিডিয়া জিজ্ঞেস করছে, “তোমার হিটম্যান কী রওনা দিয়েছে?”

“হ্যাঁ।”

“তাকে থামাও। এই মুহূর্তে থামাও।”

“কেন?”

“এখন আমাকে প্রশ্ন করো না, যে কোনো মূল্যে তাকে থামাও।”

“কিন্তু–”

“এই মেয়ে একটা ভিডিও আপলোড করেছে। সারা পৃথিবীর সবাইকে সে আমাদের এনিম্যানের গোপন কথা বলে দিয়েছে। এখন যদি তুমি এই মেয়েকে খুন করো তাহলে তুমি আমি কেউ রক্ষা পাব না। এই মেয়েকে এখন খুন করা যাবে না। কিছুতেই না।”

“তুমি এতো দেরী করে আমাকে বললে?”

লিডিয়া অধৈর্য হয়ে বলল, “আমি এই মুহূর্তে জানতে পেরেছি। তোমার হিট ম্যানকে থামাও।”

“মনে হয় থামানো যাবে না।”

“থামাতে হবে।”

“দেখি কী করা যায়।”

ফোন রেখে মধ্যবয়স্ক মানুষটা কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করল, তারপর ফোনটা আবার হাতে তুলে নিল।

দশ মিনিট পর মানুষটি লিডিয়াকে ফোন করল, “হ্যালো।”

“বল।”

“হিটম্যানকে থামিয়েছি।”

“কীভাবে থামালে?”

“টেলিভিশনে দেখ। ডাউন টাউন দিয়ে যাবার সময় পুলিশের সাথে ক্রস ফায়ার হলো। আমার হিটম্যান শেষ।”

“চমৎকার।”

“এখন তুমি কী করবে।”

লিডিয়া একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমাদের সোজা সমাধান আর নেই। এখন একটা মাত্র সমাধান, সেটা অনেক কঠিন, অনেক জটিল। কিন্তু আমাদের আর কিছু করার নেই।”

“সমাধানটা কী?”

“তোমাকে টেলিফোনে বলা যাবে না। তবে তোমার একটা কাজ করে দিতে হবে।”

“কী কাজ?”

“তিষা নামের মেয়েটি, তার শ্রবণ প্রতিবন্ধী বন্ধু জন আর তার এনিম্যান মিশকাকে ধরে নিয়ে আসতে হবে।”

মধ্যবয়স্ক মানুষটা অবাক হয়ে বলল, “ধরে নিয়ে আসতে হবে?”

“হ্যাঁ। শুধু লক্ষ্য রাখবে যেন এটাকে কিডন্যাপের মতো মনে না হয়।”

“দুইজন মানুষকে তুলে নিয়ে যাব আর সেটাকে কিডন্যাপের মতো মনে হতে পারবে না? কী বলছ তুমি?”

“না মনে হতে পারবে না।”

“তাহলে কী মনে হবে?”

“মনে হতে হবে যে এই মেয়েটা আর ছেলেটা পালিয়ে গেছে?”

“আর তাদের এনিম্যান?”

“সেটাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।”

মধ্যবয়স্ক মানুষ কিছুক্ষণ চিন্তা করল তারপর হতাশ ভাবে মাথা নেড়ে বলল, “লিডিয়া তুমি একটু পর পর অত্যন্ত বিচিত্র বিচিত্র আদেশ দাও! তোমার এই সব আদেশের কোনো মাথা মুণ্ডু নেই।”

“না থাকলে নেই। কিন্তু আমি যেটা বলি তোমাকে সেটা করতে হবে।”

“করা এতা সহজ নয়।”

“না হলে নেই, কিন্তু তোমাকে করতে হবে। খামোকা তোমাকে এতো বেতন দিয়ে আমাদের পে-রোলে রাখা হয়নি।”

“ঠি আছে। ঠিক আছে।” মধ্যবয়স্ক মানুষটি শুনল অন্যপাশে লিডিয়া ফোন রেখে দিল।

বিকেলে তিষা তার স্কুল বাস থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে বাসায় এসেছে, অন্যান্য দিন দরজা খোলা মাত্র মিশকা ছুটে এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, আজকে কেউ ছুটে এল না। তিষা অবাক হয়ে ডাকল, “মিশকা।”

কোনো সাড়া নেই। তিষা দরজা খুলে ভিতরে পা দিয়েই পাথরের মতো স্থির হয়ে গেল। ঘরের সোফায় মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ বসে আছে, মানুষটিকে সে আগে কখনো দেখেনি। মানুষটির সামনে মিশকা শুয়ে আছে, তার হাত পা বাঁধা। মুখে একটা টেপ লাগানো, তাই কোনো শব্দ করতে পারছে না।

মানুষটি তিষার দিকে তাকল, তিষা দেখল তার কোলে একটা বেঢপ রিভলবার। মানুষটি রিভলবারটা হাতে নিয়ে বলল, “তোমার ভয় পাবার কিছু নেই, আমি তোমাকে এখন গুলী করব না। কিন্তু এই রিভলভারের বাট দিয়ে তোমার ঘাড়ে মারতে পারি, তখন তুমি অচেতন হয়ে যাবে। আমি তখন তোমাকে ঘাড়ে করে আমার গাড়ীতে তুলে নেব। কিংবা তুমি নিজেই হেঁটে হেঁটে ঐ বাইরে পার্ক করে রাখা ফোর্ড এস. ইউ. ভি.-টাতে উঠতে পার তাহলে আমার রিভলভারের বাট দিয়ে তোমার ঘাড়ে মারতে হবে না।”

তিষা হতবুদ্ধি হয়ে মধ্যবয়সী মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইল। মানুষটা বলল, “অন্যকিছু করার চেষ্টা করো না মেয়ে। আমি কিন্তু প্রফেশনাল।”

তিষা অন্যকিছু করার চেষ্টা করল না। হেঁটে হেঁটে বাসার বাইরে পার্ক করে রাখা সিলভার কালারের ফোর্ডের এস. ইউ. ভি-টাতে গিয়ে উঠল। তিষা অবাক হয়ে দেখল পিছনের সিটে জন বসে আছে। তার হাত পা বাঁধা। মুখে টেপ লাগানো। তিষার মুখেও টেপ লাগানো হল, হাত পা গুলো বেঁধে নেয়া হল। তারপর এস. ইউ. ভি-টা চলতে শুরু করল।

জন কিংবা তিষা নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টা করল না, তারা জানে চেষ্টা করে লাভ নেই। মিশকা জানে না, তাই সে মুক্ত হবার জন্যে ছটফট করতে লাগল।