হায় ধর্ম্ম বৃকোদর, ধনঞ্জয় বীরবর,
সহদেব নকুল কুমার।
দ্রৌপদী পাঞ্চাল-সুতা, সতীসাধ্বী পতিব্রতা,
চরিতে লক্ষ্মীর অবতার।।
দ্রুপদ তোমার তাত, পাঞ্চালের নরনাথ,
তোমা কন্যা হৈতে হৈল সুখী।
তব স্বয়ম্বর-কালে, পৃথিবীর মহীপালে,
তোমারে দেখিল শশিমুখী।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন সহোদর, অতুল বিক্রমধর,
যজ্ঞেতে জন্মিল দুই জন।
সবে বলে মহাতেজা, এল এক লক্ষ রাজা,
দ্রুপদ ভাবেন মনে মন।।
এ কন্যার যোগ্য পতি, অন্য নাহি দেখি ক্ষিতি,
পাণ্ডুর তনয় বিনা আর।
অপূর্ব্ব ভাগ্যের বশে, উপনীত সেই দেশে,
কুন্তীসহ পাণ্ডুর কুমার।।
সভামধ্যে লক্ষ্য হানি, তোমারে লইল জিনি,
দ্বিজরূপে ইন্দ্রের তনয়।
অনাথ দেখিয়া তারে, দুষ্ট যত নৃপবরে,
বেড়িল লইয়া অস্ত্রচয়।।
এক লক্ষ নরপতি, সবে হৈল একমতি,
প্রহারয়ে নানা অস্ত্রগণ।
ভীম পার্থ দুই বীরে, জিনিলেক সবাকারে,
তোমা লয়ে করিল গমন।।
তুমি এলে পাণ্ডুকুলে, তোমার আশ্রয়ফলে,
পাণ্ডবের সম্পদ অপার।
জিনিল সকল পৃথ্বী, রাখিল অনেক কীর্ত্তি,
সখ্য-বল করিয়া তোমার।।
দুর্য্যোধন নরপতি, পাশায় জিনিল তথি,
সভামধ্যে আনিল তোমায়।
তাহে লজ্জা নিরারণ, করিলেন নারায়ণ,
সর্ব্বজন দেখিল সভায়।।
সেই অপরাধে যত, গান্ধারী-তনয় শত,
একে একে হইল সংহার।
তুমি সর্ব্ব গুণবতী, সাধ্বী পতিব্রতা সতী,
জননী সমান মো সবার।।
প্রত্যক্ষ সকলে জানে, তোমার এ সুলক্ষণে,
দয়াময়ী জননী- রূপিণী।
তুমি লক্ষ্মী সরস্বতী, স্বাহা স্বধা শচী রতি,
সাবিত্রী পার্ব্বতী কাত্যায়নী।।
তুমি ত জগৎ-মাতা, সবে জানে তব কথা,
বিষ্ণুর প্রেয়সী সহচরী।
স্বামীগণ সঙ্গে করি, ত্যজিয়া হস্তিনাপুরী,
কোন্ স্থানে চলেছ সুন্দরী।।
প্রায় হেন লয় মন, পুনরপি দুর্য্যোধন,
কপটে আনিয়া পাশা-সারি।
জিনিলেক রাজ্যধন, তোমা সব যাহ বন,
আমা সবাকারে পরিহরি।।
না ত্যজ না ত্যজ মাই, তোমা বিনা গতি নাই,
আমরা চলিব সর্ব্বজন।
ওহে ধর্ম্ম-মহারাজা, ভীম পার্থ মহাতেজা,
ওহে দুই মাদ্রীর নন্দন।।
তোমা বিনা গৃহবাস, আর যত অভিলাষ,
ছাড়ি পাপ জীবনের সাধ।
মহারাজ তোমা হৈতে, সদা সুখ পৃথিবীতে,
আজ কেন এতেক প্রমাদ।।
বাহুড় বাহুড় রায়, তোমারে এ না যুয়ায়,
নির্দ্দয় হৈতে কদাচিৎ।
তুমি ধর্ম্ম-অধিকারী, কৃপাময় অবতরি,
তুমি সর্ব্ব জগতে বিদিত।।
তোমার এমন কাজ, যুক্তি নহে মহারাজ,
শোকবংশ ত্যজহ সংসার।
পূর্ব্বে মহাশোক করি, তপস্বীর বেশ ধরি,
বনে যেতে করিলে বিচার।।
দেববেদ চক্রপাণি, ভীষ্মদেব ব্যাসমুনি,
প্রবোধ দিলেন যে প্রকার।
এবে শোক নিবারণ, করাইবে কোন্ জন,
কেহ আর নাহিক তোমার।।
ওহে ভীম ধনঞ্জয়, মাদ্রীর তনয়দ্বয়,
প্রবোধ করহ নৃপবরে।
সবে হৈল শোকান্তর, শুন বীর বৃকোদর,
শোক ত্যজি বুঝাহ সবারে।।
এইমত প্রজাগণ পাত্র মিত্র পুরজন,
সর্ব্বলোক কান্দিয়া কাতর।
দেখিয়া এমন কাজ, সদ পাণ্ডবরাজ,
প্রবোধেন বাক্যে বহুতর।।
ক্ষমা দেহ সর্ব্বলোক, আর না করিহ শোক,
মায়াময় এই ত সংসার।
বুঝিয়া কার্য্যের গতি, সবে স্থির কর মতি,
অসার সংসার, কৃষ্ণ সার।।
পাণ্ডবের ইষ্ট বন্ধু, সেই কৃষ্ণ কৃপাসিন্ধু,
ত্যজিলেন দ্বারকা-নিবাস।
সে হেন বান্ধব বিনু, নিষ্ফল হইল তনু,
বিফল সকল অভিলাষ।।
মাহভারতের কথা, ব্যাসের রচিত গাথা,
শ্রবণে কলুষ বিনাশন।
শিরেতে বন্দিয়া নিজ, দ্বিজগণ পদরজঃ,
কাশীরাম দাস বিরচন।।