যুধিষ্ঠির বলিলেন কর অবধান।
সংক্ষেপে যমের পুর করিলা বাখান।।
কি পাপ করিলে জীব পায় কিবা ফল।
বিস্তার করিয়া কহ শুনি সে সকল।।
ভীষ্ম বলিলেন তাহা শুনহ রাজন।
ব্রাহ্মণেরে বৃত্তি দিয়া হরে যেই জন।।
অন্তে তারে লয়ে যায় যমের কিঙ্কর।
ঊর্দ্ববাহু করি বান্ধে স্তম্ভের উপর।।
তলেতে তুষের ধূম দেয় ভয়ঙ্কর।
ধূমপান করে এক শতেক বৎসর।।
তারপর জন্মে পুনঃ সেই নরাধম।
কীট পতঙ্গাদি হয় চৌরাশী জনম।।
অনন্তরে নরজন্ম পায় দুরাচার।
পুনঃ পুনঃ তাহা ভোগ করয়ে অপার।।
কোপদৃষ্টে ব্রাহ্মণেরে চাহে যেই জন।
তাহার পাপের কথা শুন দিয়া মন।।
সহস্র সহস্র সূচি করিয়া দাহন।
দুই চক্ষু তারায় বিন্ধয়ে দূতগণ।।
মহতের নিন্দা শুনি হাসে যেইজন।
তপ্ত তৈল তার কর্ণে করয়ে সেচন।।
মন্ত্র বেচি খায় যেবা ভোগে বন্ধ হৈয়া।
তার পাপ কহি রাজা শুন মন দিয়া।।
সহস্র সহস্র কল্প কোটি শত শত।
লিখিতে না পারি বিষ্ঠা ভোগ করে যত।।
দশ সহ্স্র পুরুষ সহ সম্বলিত।
কুম্ভীপাকে ভুঞ্জে পাপ জন্ম শত শত।।
অনন্তরে পায় গিয়া স্থাবর জনম।
কৃমি জন্ম হয় তার না ঘুচে সম্ভ্রম।।
তবে যুগ সহস্র জন্ময়ে ম্লেচ্ছজাতি।
অনন্তরে পশু হৈয়া ভুঞ্জয়ে দুর্গতি।।
অনন্তরে বিপ্রজন্ম পায় আকিঞ্চন।
প্রতিগ্রহ হেতু হয় দরিদ্র লক্ষণ।।
শতবংশ সহ সেই নরকে পড়য়।
তদন্তরে গিয়া পুনঃ রৌরবে ভ্রময়।।
তদন্তরে সপ্ত জন্ম হয়থ গর্দ্দভ।
তদন্তরে সপ্ত জন্ম কুক্কুর সম্ভব।।
তদন্তরে শত শত শুকর জনম।
বিষ্ঠা মধ্যে কৃমি হয় না ঘুচে সম্ভ্রম।।
তদন্তরে লক্ষ লক্ষ মুষা জন্ম হয়।
তদন্তরে সপ্ত জন্ম চণ্ডালত্ব পায়।।
তদন্তরে সপ্ত জন্ম হয় হীনজাতি।
এইরূপে ভ্রমে সেই শুনহ নৃপতি।।
এইরূপে পুনঃ পুনঃ জন্ময়ে ভূতলে।
অশেষ যাতনা ভোগ করে কালে কালে।।
বল করি অনাথের ধন যেবা হরে।
অন্তকালে পড়ে সেই নরক ভিতরে।।
পরেতে সহস্র জন্ম হয় পশুজাতি।
অশেষ যাতনা ভোগ করে নীতি নীতি।।
দেবতা উদ্দেশ্য দ্রব্য আনি যেই জন।
কিছুমাত্র নিবেদিয়া করয়ে ভক্ষণ।।
অসিপত্র বনে তার হয়ত গমন।
অনন্তর হয় তার রাক্ষস জনম।।
বিপ্রে দান দিতে বিঘ্ন করে যেইজন।
তার পাপভোগ কহি শুন দিয়া মন।।
অন্তকালে যমদূত লৈয়া সেই জনে।
অধোমুখ করি ফেলে নরক দক্ষিণে।।
অনন্তরে কালানল মহাভয়ঙ্কর।
হাতে পায়ে বান্ধি ফেলে তাহার ভিতর।।
অনন্তর অগ্নি হৈতে তুলিয়া যতনে।
শপ্ত ক্ষার তার অঙ্গে করয়ে সেচনে।।
তদন্তরে ফেলে কৃমি হ্রদের ভিতর।
মাথার উপর মারে লোহার মুদগর।।
পরনারী হরে যেবা বল ছল করি।
তার পাপ কহি শুন ধর্ম্ম অধিকারী।।
লৌহময় দিব্য নারী করিয়া রচন।
তপ্ত করি তার সঙ্গে করায় রমণ।।
স্বামী ছাড়ি যেই নারী ভজে অন্য পতি।
যতেক তাহার শাস্তি শুন মহামতি।।
লৌহের পুরুষ এক করিয়া রচন।
তপ্ত করি তার সঙ্গে করায় রমণ।।
কটাক্ষ মাত্রেতে তারে রতি করাইয়া।
কুম্ভীপাকে ফেলে তারে বন্ধন করিয়া।।
দেবতা প্রমাণে শত সহস্র বৎসর।
তাবৎ থাকয়ে কুম্ভপাকের ভিতর।।
অদন্তরে মর্ত্ত্যলোকে হয় পশুযোনি।
পুনঃ পুনঃ পাপভোগ করয়ে পাপিনী।।
পিতৃশ্রাদ্ধ দিনে যে ব্রাহ্মণে কটু ভাষে।
তাহার পাপের কথা শুনহ বিশেষে।।
মৃত্যুকালে ধরি তারে যমের কিঙ্কর।
বন্ধন করিয়া তোলে পর্ব্বত উপর।।
অধোমুখে আছাড়িয়া ফেলে ভূমিতলে।
হস্ত পদ চূর্ণ হয়ে কান্দে সর্ব্বকাল।।
অনন্তর ঘৃতে অঙ্গ করিয়া দাহন।
অগ্নি দিয়া সর্ব্ব অঙ্গ করয়ে দাহন।।
পরাণে না মারি তারে বহু কষ্ট দিয়া।
অসিপত্র বনে তারে ফেলায় বান্ধিয়া।।
তদন্তরে মর্ত্ত্যপুরে হয় পশুযোনি।
শৃগাল কুক্কুর আদি নকুল শকুনি।।
অদন্তরে জন্ম হয় চণ্ডালের কুলে।
পুনঃ পুনঃ পাপভোগ করয়ে বহুলে।।
পুষ্পোদ্যানে পুষ্প যেই করয়ে হরণ।
তাহার পাপের কথা শুন দিয়া মন।।
শেকুল কন্টক বন অতি ভয়ঙ্কর।
উর্দ্ধমুখ করি ফেলে তাহার উপর।।
এইরূপে শত শত অশেষ যাতনা।
যেন তাপ তেন ভোগ না হয় বর্ণনা।।
স্বহস্তে ব্রাহ্মণ বধ করে যেই জন।
অসংখ্য যাতনা তারে ভুঞ্জায় শমন।।
যাহার যেমন পাপ ভোগে সে তেমন।
সংক্ষেপে জানাই পাপ ভোগের কথন।।
বিস্তারিয়া কহি যদি শতেক বৎসর।
তুব শেষ নাহি হয় ধর্ম্ম নৃপবর।।
অতঃপর শুন ধর্ম্মফলের লক্ষণ।
যাহা হৈতে পাপ ভোগ হয়ত খণ্ডন।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে পরলোক তরি।।
চন্দ্রচূড় চরণে করিয়া নমস্কার।
কাশীদাস কহে শান্তি পর্ব্ব কথা সার।।