শারদ-কমল-পত্র, অরুন-যুগল নেত্র,
শ্রুতিমূলে মকর-কুণ্ডল।
বিকসিনত মুখপদ্ম, কোটি সুধাকর-সদ্ম,
ওষ্ঠাধর অরুণ-মণ্ডল।।
তনুরুচি নীলাম্বুজ, আজানুলম্বিত ভুজ,
ঘোরতর তিমির বিনাশ।
মস্তকে মুকুট-শোভা, শত দিবাকর-প্রভা,
কনক-বরণ পীতবাস।।
যুগপদ কোকনদ, অখিল-অভয়প্রদ,
স্মরণে হরয়ে ভববাদ।
সেই পদ অহর্নিশ. ধ্যানে ধ্যায় অজ ঈশ,
শুক ধ্রুব নারদ প্রহ্লাদ।।
পাদপদ্ম মোক্ষ নিধি, যাহে জন্মে সুরনদী,
তিনলোক-পবিত্র-কারণ।
যাঁর পদ-চিহ্ন পেয়ে, অন্তরে অভয় হৈয়ে,
কালীয় বিহরে যথা মন।।
অঘা বকা কেশী কংশ, দুষ্ট-জন-দর্প-ধ্বংস,
বৃষ্ণি-বংশে দেবতা জন্মিল।
স্বভক্ত-কুমুদ-ইন্দু, পাণ্ডবগণের বন্ধু,
নিজরূপে সৃজিল অখিল।।
চড়িয়াগরুড় ধ্বজে, অগণিত অশ্ব গজে,
চতুরঙ্গ-দলে যদুবলে।
ধর্ম্মরাজ প্রীতি হেতু, লইয়া রতন-সেতু,
বিবিধ বাজন কোলাহলে।।
পাঞ্চজন্য-নাদ শুনি, নগরে হইল ধ্বনি,
হরি আইলেন ইন্দ্রপ্রস্থে।
শুনি ধর্ম্ম-অধিকারী, পাঠাইল আগুসরি,
ভ্রাতৃ-মন্ত্রিগণ আস্তে-ব্যস্তে।।
ভীম পার্থ অনুব্রজি, গোবিন্দে ষড়ঙ্গে পূজি,
লইয়া গেলেন নিজ ধাম।
ধর্ম্মের নন্দনে দেখি, শ্রীকৃষ্ণ দূরেতে থাকি,
ভূমে লুটি করেন প্রণাম।।
অসংখ্য অমূল্য ধন, করিলেন নিবেদন,
অশ্ব গজ শৃঙ্গী অগণিত।
ধর্ম্ম আনন্দিত হৈয়া, কৃষ্ণে আলিঙ্গন দিয়া,
পূজিলেন যেমত বিহিত।।
পাণ্ডব-নক্ষত্র-মাঝ, কৃষ্ণে আলিঙ্গন দিয়া,
পূজিলেন যেমত বিহিত।।
পাণ্ডব-ন্ক্ষত্র-মাঝ, কৃষ্ণ যেন দ্বিজরাজ,
বসিল সভায় সর্ব্বজন।
বসিয়া গোবিন্দ-পাশে, যুধিষ্ঠির মৃদুভাষে,
কহিছেন বিনয় বচন।।
তব অনুগ্রহ-বলে, এ ভারত-ভূমণ্ডলে,
না রহিল অসাধ্য আমার।
আমি না করিতে যত্ন, মিলিল অনেক রত্ন,
নাহি স্থল থুইতে ভাণ্ডার।।
নিশ্চয় আমাতে যদি, কৃপা আছে গুণনিধি,
সব দ্রব্য রাখি কোন্ স্থলে।
শুনিয়া তোমার মুখে, তুষিব অমর-লোকে,
দ্বিজ-হস্তে সমর্পি সকলে।।
পিতৃ-আজ্ঞা হৈতে তরি, স্বর্গকাম নাহি করি,
তব পদাম্বুজ মাগি ভিক্ষা।
ওহে প্রভু মহাভুজে, শুনি তব মুখাম্বুজে,
লইব যজ্ঞের আমি দীক্ষা।।
যদি লয় তব মন, আজ্ঞা কর জনার্দ্দন,
নিমন্ত্রিয়া আনি নৃপবর।
রাজার বিনয় শুনি, কোমল-গম্ভীর বাণী,
আশ্বাসি কহেন গদাধর।।
এ মহী-মণ্ডল-মাঝ, যত আছে মহারাজ,
তব গুণে বশ হৈল সবে।
আমার পরম ভাগ্য, নিষ্কণ্টকে কর যজ্ঞ,
রাজসূয় তোমারে সম্ভবে।।
আমা হৈতে যেই হয়, আজ্ঞা কর মহাশয়,
আর যত আছে যদুগণ।
ভ্রাতৃ-মন্ত্রী-বন্ধু-মাঝে, যে কর্ম্ম যাহারে সাজে,
স্থানে স্থানে করি নিয়োজন।।
গোবিন্দের আজ্ঞা পেয়ে ভূপতি সানন্দ হয়ে,
কৃতাঞ্জলি করেন স্তবন।
তখনি জানি যে আমি, যখন আইলা তুমি,
মম বাঞ্ছা হইল সাধন।।
তোমাতে যে ভক্তিঋদ্ধি, ভক্তবাঞ্ছাকরেসিদ্ধি,
তুমি ভক্তজনে কৃপাবান।
কাশীদাস বলে যদি, তরিবা এ ভবনদী,
ভজ সাধু দেব ভগবান্ ।।