১৫. আদিম স্মৃতি
একদিন সকালে ফ্রাঁসোয়া ও পেরল্টের কাছে কানাডা সরকারের চিঠি এল- ডাকবাহকদের জন্য একটি শিক্ষাকেন্দ্র খুলেছে সরকার, সেইখানে নতুন ডাকবাহকদের তুষার-আচ্ছন্ন দুর্গম পথে কুকুর বাহিত স্লেজ চালানোর শিক্ষা দেওয়ার জন্য ফ্রাঁসোয়া আর পেরকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে।
বাককে ডেকে তার গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল ফ্রাঁসোয়া। তারপর সে আর পেরল্ট অন্য কুকুরদের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল। পরবর্তীকালে কোনোদিন ওই লোকদুটির দেখা পায়নি বাক, তার জীবন থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে গেল পেরল্ট ও ফ্রাঁসোয়া।
সমস্ত দলটা এবার আর একটি ডাকবহনকারী দলের সঙ্গে যুক্ত হল। বারোটা নতুন কুকুরের সঙ্গে বাক ও তার সঙ্গীদের নিয়ে নবগঠিত দলটার নাম হল সল্ট ওয়াটার মেইল। সোনার সন্ধানে যে-সব অভিযাত্রী উত্তরাঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছিল, তাদের কাছ থেকে এবং তাদের উদ্দেশে প্রেরিত চিঠিপত্র নিয়ে পূর্বোক্ত স্লেজবাহী কুকুরের দল যাতায়াত করছিল। কাজটা খুব কষ্টসাধ্য, কুকুরদের পরিশ্রম করতে হত ভীষণভাবে। বাক যদিও ওই কাজ পছন্দ করছিল না, তবু নিপুণভাবে দলটাকে পরিচালনা করে যথাসাধ্য কর্তব্যপালন করছিল সে। কিন্তু একঘেয়ে জীবন তার ভালো লাগছিল না। প্রত্যেকটা দিন ছিল বৈচিত্র্যহীন প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে রাঁধুনিরা আসত, আগুন জ্বালিয়ে খাদ্য তৈরি করা হত, তারপর প্রাতরাশ শেষ করে স্লেজ টেনে ছুটত কুকুরের দল– অন্ধকার ঘনিয়ে এলে তাবু ফেলে নিদ্রার আরাধনা এবং পরের দিন ভোরের আলো ফুটতেই আবার বিরামহীন পথ চলার পালা।
রাত্রে কুকুরদের খাওয়ার জন্য মাছ দেওয়া হত। সেই খাদ্য উদরসাৎ করার পর প্রায় ঘণ্টাখানেক কুকুররা এদিক-ওদিক চলাফেরা করত। ওই দলটায় কুকুরের সংখ্যা ছিল পঞ্চাশ এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল মারামারি আর কামড়াকামড়ি করতে ওস্তাদ। দলের ভিতর সবচেয়ে ভীষণ তিনটি কুকুরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল বাক এবং সব কয়টি লড়াইতেই শত্রুদের পরাজিত করেছিল সে। ফলে, বাক যখন গায়ের নোম ফুলিয়ে সগর্জনে দন্তবিস্তার করত, তখনই অন্য কুকুরগুলো তার সামনে থেকে সরে পড়ত চটপট।
রাতের ভোজনপর্ব ছিল বাক-এর কাছে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাছাড়া আরও একটা ব্যাপার তাকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করত। আগুনের সামনে বসে স্বপ্নাতুর দুই চোখের দৃষ্টি মেলে সে তাকিয়ে থাকত চঞ্চল অগ্নিশিখার দিকে, কিন্তু তার মন ভ্রমণ করত বিস্মৃত অতীতের পটভূমিতে। কখনো কখনো বিচারক মিলারের মস্ত বড় বাড়ি, সাঁতারের জন্য নির্দিষ্ট পুকুর এবং ঘোড়ার আস্তাবল ভেসে উঠত তার স্মৃতির পটে কিন্তু অধিকাংশ সময়েই তার মানসপটে ভেসে উঠত মর্গ্যান, তার প্রথম লড়াই- যখন তাকে মুগুরের আঘাত করা হয়েছিল, কার্লির মৃত্যু এবং স্পিটজের সঙ্গে তার ভয়ংকর মৃত্যুপণ দ্বৈরথ…
নৃত্যচঞ্চল অগ্নিশিখার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে তার মন চলে যেত আরও দূরে, সুদূর অতীতে যেখানে তার সঙ্গে গুহার আগুন জ্বালিয়ে বসে আছে একটি মানুষ এখন যেসব লোক তার আশেপাশে চলাফেরা করে তাদের সঙ্গে গুহায় উপবিষ্ট ওই মানুষটির সাদৃশ্য নেই কিছুমাত্র মনশ্চক্ষে বাক দেখতে পায় ওই বিচিত্র মানুষের পা দুটি ছোটো, তুলনায় হাত দুটি অস্বাভাবিক লম্বা এবং তার মাথার উপর লটপট করছে লম্বা চুলের জটা। ওই আদিম মানুষ গুহার বাইরে জমাট অন্ধকারের দিকে বার বার ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে, তার আচরণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে অন্ধকারকে সে ভয় করে। জ্বলন্তু আগুনের উপর দিয়ে দৃষ্টিকে চালনা করে বাক দেখতে পায় আঁধার সমুদ্র ভেদ করে জ্বলে জ্বলে উঠছে জোড়ায় জোড়ায় প্রদীপ্ত চক্ষু। বাক বুঝতে পারে হিংস্র শ্বাপদের দল অন্ধকারে ওত পেতে বসে আছে। জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের বাধা এড়িয়ে সামনে আসতে তারা সাহস পাচ্ছে না। এইভাবে মনের চোখে বাক দেখতে পেত সুদুর অতীতের দৃশ্য যে দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত ছিল বাক-এর পূর্বপুরুষ, সেই অতীতের দৃশ্য বাস্তবে আর কোনোদিনই চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাবে না বাক। জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের নৃত্যপরায়ণ চঞ্চল শিখাগুলোর ভিতর দিয়ে সুদূর অতীত ভেসে আসত বর্তমানে পৌঁছে দিত বাক-এর কাছে আদিম গুহার বার্তা বর্তমানের তুষার ঢাকা তাবুর মধ্যে…।
.
১৬. পালা বদলের পালা
বাক আর তার দল যখন ডসন ছেড়ে স্ক্যাগওয়ের পথে রওনা হল, তখনই প্রবলবেগে তুষার পড়তে শুরু করল। ফলে, নরম তুষারের উপর স্লেজের রানার ঘষা খেতে লাগল ভীষণ জোরে, কুকুরদের পরিশ্রমও তাই বেড়ে গেল দারুণভাবে। শীতের প্রারম্ভেই তারা আঠারো শো মাইল পার হয়ে এসেছে, এখন নতুন যাত্রাপথে স্লেজ টেনে ছুটতে তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছিল। বিলি নামে শান্ত কুকুরটা প্রতি রাত্রেই অস্ফুট আর্তস্বরে ক্রন্দন করতে লাগল।
ত্রিশ দিন পরে বাক ও তার দলভুক্ত পঞ্চাশটি কুকুর অর্ধমৃত অবস্থায় স্ক্যাগওয়ে নামক স্থানে পৌঁছল। তাদের অবস্থা তখন শোচনীয়, দলপতি বাক-এর শরীরের ওজন একশো ছত্রিশ থেকে নেমে হয়েছে একশো পনেরো! অধিকাংশ কুকুর খোঁড়াচ্ছে, কেউ কেউ আবার টানধরা পেশীর যন্ত্রণায় ভুগছে। প্রত্যেকটি কুকুর এখন ক্লান্তির শেষ সীমায় উপস্থিত, তাদের শরীর আর বইছে না। স্লেজ যখন ঢালু জমি বেয়ে নেমে আসে, তখন কোনোরকমে ধাবমান স্লেজের ধাক্কা থেকে তারা আত্মরক্ষা করে।
স্লেজের চালকরা দীর্ঘ বিশ্রাম পাবে বলে আশা করেছিল কিন্তু চিঠি বিলি করতে হবে যথাসম্ভব শীঘ্র, বিলম্বের অবকাশ নেই অথচ এই শ্রান্ত ক্লান্ত কুকুরদের নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়। অগত্যা চালকরা স্থির করল এই কুকুরের দলটাকে বিক্রি করে নতুন কুকুরদের নিয়ে স্লেজবাহক নতুন দল গঠন করতে হবে। পর পর তিন দিন কাটল, কোন ক্রেতাই কুকুরগুলোকে কিনে নিতে এগিয়ে এল না। অভিজ্ঞ চালকরা এক নজর তাকিয়েই বুঝতে পারছিল কিছুদিন বিশ্রাম না নিলে এই কুকুরগুলো তাদের হৃতশক্তি ফিরে পাবে না– এখন তাদের কিনলে টাকাটা জলে পড়বে।
চতুর্থ দিন সকালে ভার্জিনিয়া থেকে উপস্থিত হল দুটি মানুষ, তারা খুব কম দামে বাক ও তার সঙ্গীদের কিনে নিল সমস্ত সাজ-সরঞ্জাম সমেত। ক্রেতা দুজনের একজন মধ্যবয়স্ক, তার সঙ্গীর বয়স কুড়ির বেশি নয়। মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির নাম চার্লস, তার সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত সঙ্গীর নাম হাল। হালের চওড়া কোমরবন্ধনীতে ঝুলছিল একটা মস্ত ছোরা ও একটা কোল্ট রিভলভার। হাল মনে করছিল অস্ত্র দুটি তার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আসলে ওই অপরূপ সজ্জা তাকে পোড়-খাওয়া মানুষের কাছে হাসির খোরাক করে তুলেছিল। অভিজ্ঞ ব্লেজচালকরা হালকে দেখে অতিকষ্টে হাসি চেপে রাখছিল।
পূর্বোক্ত চার্লস এবং হাল হল বাক-এর নতুন মনিব।
.
১৭. আনাড়ির পাল্লায় বাক
নতুন-কেনা কুকুরদের সাহায্যে স্লেজ চার্লিয়ে চার্লস ও হাল তাদের তাঁবুতে ফিরে এল। তাবুর অগোছালো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিনিসপত্র দেখে দস্তুরমতো চমকে গেল বাক। ওই তাবুর ভিতরেই মার্সেডিস নামে মেয়েটিকে সে দেখতে পেল। মার্সেডিস হল চার্লসের স্ত্রী আর হালের ভগ্নী। স্লেজ চালনা সম্পর্কে কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা ছিল না মার্সেডিসের, তবু কেমন করে কীভাবে স্লেজে মালপত্র বোঝাই করতে হবে সে বিষয়ে তার সঙ্গীদের সে বিস্তর উপদেশ দিচ্ছিল, কিন্তু হাতে-নাতে কাজ করে সে তাদের একটুও সাহায্য করছিল না। তার পুরুষ সঙ্গীরা তাবুটাকে তালগোল পাকিয়ে একটা মস্ত পুঁটলি বানাল, টিনের থালাগুলো পরিষ্কার না করেই একসঙ্গে জড়ো করল এবং মার্সেডিসের নির্দেশ অনুসারে তার পোশাক-পরিচ্ছদগুলো বার বার উঠিয়ে নামিয়ে শেষ পর্যন্ত স্লেজ বোঝাই করল।
পাশের তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে তিনটি লোক সকৌতুকে দুটি আনাড়ি পুরুষ ও একটি মেয়ের কাণ্ড দেখছিল আর নিজেদের মধ্যে হাসাহসি করছিল। অবশেষে আর থাকতে না পেরে তাদের মধ্যে একজন নীরবতা ভঙ্গ করল
দেখ বাপু, তোমাদের ব্যাপারে আমি নাক গলাতে চাই না, লোকটি বলে উঠল, তবে আমি হলে ওই তাবুটাকে নিয়ে স্লেজের ভারবৃদ্ধি করতাম না।
লোকটির দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মার্সেডিস বলল, তাবুটা আমার দরকার। অতএব, ওটা সঙ্গে যাবে।
এটা বসন্তকাল, লোকটি জবাব দিল, এখন ঠান্ডা নেই। কাজেই তাবুর দরকার হবে না।
মার্সেডিস লোকটির কথার উত্তর না দিয়ে তার দিকে সম্পূর্ণ পিছন ফিরে সঙ্গীদের মালপত্র বাঁধাবাঁধির কার্য পর্যবেক্ষণ করতে লাগল নিবিষ্টচিত্তে।
আর-একজন মন্তব্য করল, স্লেজটা বড়ো বেশি ভারি হয়ে পড়েছে।
লোকটির দিকে একবার ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল চার্লস। তারপর চাবুক তুলে হাঁক দিল, চলো সামনে এগিয়ে যাও।
বাক এবং তার সঙ্গীরা একসঙ্গে ঝুঁকে পড়ে টান দিল; স্লেজ একটুও নড়ল না! ক্ষণেক বিরতি দিয়ে আবার সবাই মিলে টান মারল; স্লেজ অনড়! আবার টানল সবাই বৃথা চেষ্টা অচল স্লেজ সমবেত চেষ্টাতেও সচল হল না!
হাল চাবুক তুলল, হতচ্ছাড়া অলস জানোয়ারের দল, দাঁড়া তোদের মজা দেখাচ্ছি।
মার্সেডিস চিৎকার করে ভাইকে থামাল, তারপর তার হাত থেকে চাবুক ছিনিয়ে নিল, না, ওদের মারতে পারবে না তুমি। কথা দাও আমাকে ওদের মারবে না।
হাল দাঁত খিঁচিয়ে বলল, কুকুরদের হালচাল তুমি কিছুই জানে না। চাবুক না মারলে ওদের কাছ থেকে কাজ পাওয়া যায় না। আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছে তাদের জিজ্ঞাসা করো।
প্রতিবেশী তিনজনের দিকে তাকাল মার্সেডিস, ওদের কি সত্যিই চাবুক মারা দরকার? আমি আবার এইসব নিষ্ঠুর কাজ দেখতে পারি না।
প্রথম যে লোকটি নীরবতা ভঙ্গ করেছিল সে, বলে উঠল, কুকুরগুলো খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। বেশ কিছুদিন বিশ্রাম না নিলে ওদের চলার ক্ষমতা হবে না। এই দলটাকে কত টাকা দিয়ে তোমরা কিনেছ জানি না। তবে টাকাটা জলে পড়েছে, তোমরা ঠকে গেছ।
তার স্বামী আর ভাই-এর যে ব্যবসাবুদ্ধি নেই, একথা মানতে পারল না মার্সেডিস, সে চটপট মত বদলে ফেলল, চাবুকটা ভাই-এর হাতে ফিরিয়ে দিয়ে সে বলল, তুমি যা ভালো বুঝবে তাই করবে। এই জায়গাটা ছেড়ে যত তাড়াতাড়ি সরে পড়া যায় ততই ভালো।
কথাটা বলেই সে দণ্ডায়মান তিনটি দর্শকের দিকে ঘৃণামিশ্রিত তির্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।
হালের হাতে চাবুক উঠল আর পড়ল, কুকুরগুলো তাদের বক্ষবন্ধনীর উপর ঝুঁকে পড়ে সজোরে টান মারল– তবু স্লেজ নড়তে চাইল না, সে যেন বরফের তলায় নোঙর গেঁথে মাটি কামড়ে ধরেছে! চাবুক পড়তে লাগল শপাশপ, কুকুরদের টানার বিরাম নেই- স্লেজ অচল, অনড়।
তিন দর্শকের মধ্যে যার বয়স বেশি, সে এগিয়ে এসে ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলল, তোমাদের উপর আমার একটুও সহানুভূতি নেই। তোমরা যদি কোনোদিনই গন্তব্যস্থানে পৌঁছতে না পারো, তাহলেও আমি দুঃখিত হব না। কিন্তু বেচারা কুকুরদের বাঁচাতে চাই বলেই বলছি– স্লেজের পিছনে দাঁড়িয়ে চাপ দাও, তাহলেই স্লেজ চলবে। স্লেজের তলায় বরফ জমে গেছে, চাপ দিলেই ওই বরফ ভেঙে স্লেজ চালু হবে।
লোকটির কথামতো কাজ করল চার্লস ও হাল কিন্তু একবারও তাকে ধন্যবাদ জানাল না। স্লেজ চালু হল। ঘন ঘন চাবুকের মার খেয়ে কুকুরগুলো প্রাণপণে গাড়ি টানতে লাগল। রাস্তাটা কিছুদূর গিয়ে স্ক্যাগওয়ে শহরের প্রধান রাজপথে মিশেছে ওইখান দিয়ে যাওয়ার সময়েই স্লেজ উলটে পড়ল, জিনিসপত্র গড়াগড়ি খেতে লাগল বরফ-ঢাকা মাটির উপর।
কুকুরের দল থামল না। অন্যায়ভাবে মার খেয়ে ভীষণ রেগে গিয়েছিল বাক, তার উপর এতক্ষণ বিষম ভারি বোঝা নিয়ে তাকে ছুটতে হয়েছে- এখন বোঝা হালকা হতেই সে স্লেজ তিরবেগে ছুটল। দলের অন্য কুকুরগুলো তাকে অনুসরণ করে ছুটতে লাগল সবেগে। রাজপথের উপর গড়াগড়ি খেতে লাগল মার্সেডিসের সাধের কাপড়-চোপড়ের পুঁটলি আর উচ্ছিষ্ট-মাখা নোংরা বাসনপত্র।
শহরের লোকগুলো ভালো– রাজপথ থেকে কাপড় আর তার বাসন তারা উদ্ধার করল। জিনিসগুলো গাড়িতে ভোলার সময়ে তারা জানাল এত ভারি ওজন কুকুররা টানতে পারবে না। তখন চার্লস এবং হাল আরও ছয়টা কুকুর কিনে আনল। কিন্তু ওই কুকুরগুলো কঠিন পথশ্রম সহ্য করার মতো বলিষ্ঠ ছিল না।
তবে বিপুলসংখ্যক ওই সারমেয় বাহিনীর মালিক হয়ে চার্লস আর হাল খুবই গর্ববোধ করতে লাগল– কারণ, সেখানে কোমো স্লেজেরই বাহক কুকুরের সংখ্যা চোদ্দো ছিল না। কিন্তু ভার্জিনিয়ার তিন আনাড়ি একবারও ভাবল না কেন অন্যান্য স্লেজের বাহকসংখ্যা কম চোদ্দোটা কুকুরের উপযুক্ত যথেষ্ট খাদ্যসামগ্রী একটি স্লেজের পক্ষে যে বহন করা সম্ভব নয়, একথা তাদের মাথায় ঢুকল না।
তিনি আনাড়ি চোদ্দোটা কুকুরবাহিত স্লেজ ছুটিয়ে দিল গন্তব্য অভিমুখে। সেই সারমেয় বাহিনীর অধিনায়ক ছিল বাক।
.
১৮. পথের দুর্ভোগ
চার্লস, হাল ও মার্সেডিস উৎসাহে টগবগ করছিল, কিন্তু স্লেজবাহী কুকুরদের অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত- চলমান ডাকঘরের মতো বিপুল চিঠিপত্রের বোঝা সমেত স্লেজ টেনেছে তারা বেশ কিছুদিন, উপযুক্ত বিশ্রামের অভাবে তাদের শরীর এখনও দুর্বল– সুতরাং ক্লান্ত দেহ আর মন নিয়ে তারা নতুন করে যাত্রা করতে আদৌ উৎসাহিত ছিল না।
স্লেজবাহক কুকুরদের প্রভুরা অর্থাৎ চার্লস, হাল ও মার্সেডিস কিন্তু কুকুরদের দৈহিক বা মানসিক অবস্থা নিয়ে মাথা ঘামায়নি একেবারেই। তুষারাচ্ছন্ন পথে স্লেজ-চালনা বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ছিল না কিছুমাত্র। কোনো অবস্থা থেকেই তারা শিক্ষালাভ করতে চাইত না– সবসময় তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতেই ব্যস্ত থাকত। রাত্রে স্লেজ থামিয়ে তাবু ফেলতে এবং সকালে তবু গুটিয়ে যাত্রা শুরু করতে তারা অনর্থক সময় নষ্ট করত, তার উপর পথের মাঝে স্লেজ থামিয়ে অধিকাংশ সময়েই তারা জিনিসপত্র নতুন করে সাজাতে বাধ্য হত। যাত্রা শুরু করার সময়ে প্রথমেই জিনিসপত্র ঠিকমতো না সাজানোর ফলে মাঝপথেই স্লেজের গতিরোধ হওয়ার উপক্রম হত। যে দলটা ইতিপূর্বে দিনে চল্লিশ মাইল পথ পাড়ি দিয়েছে, সেই দলটাই এখন সারা দিনে দশ মাইল বা তার চেয়েও কম দূরত্ব অতিক্রম করে।
কতদিন ধরে পথ চলতে হবে সে বিষয়ে হাল একটা ধারণা করে নিয়েছিল এবং সেই ধারণা অনুসারে স্লেজে বোঝাই করেছিল কুকুরদের প্রয়োজনীয় খাদ্য। একসময়ে প্রমাণ হল হাল-এর ধারণা ভুল যে সময়ের মধ্যে তারা গন্তব্যস্থলে পৌঁছবে বলে ভেবেছিল, বাস্তবে সেই সময়ের ভিতর গন্তব্যস্থলের অর্ধেক পথও অতিক্রম করতে পারল না। অথচ কুকুরদের খাদ্য তখন ফুরিয়ে এসেছে। এবার কুকুরদের খাদ্য কমিয়ে দেওযা হল, প্রত্যেক কুকুরকে নির্ধারিত খাদ্যের অর্ধ অংশ দেওয়া হত। অনাহারে অর্ধাহারে কুকুরদের কাহিল অবস্থা হল আরও কাহিল। স্ক্যাগওয়েতে যে ছয়টি কুকুরকে ক্রয় করা হয়েছিল, দুরন্ত পথশ্রম আর উপযুক্ত খাদ্যের অভাবে তারা পথেই মারা পড়তে লাগল। সঙ্গীদের মৃত্যুদৃশ্য দেখেও বাক তার কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হয়নি–প্রভুদের নির্দেশ অনুসারে সে স্লেজ টানছিল যথাসাধ্য।
কুকুরদের চাইতেও খারাপ অবস্থা হল প্রভুদের প্রথম প্রথম অনাহারক্লিষ্ট কুকুরদের দুরবস্থা দেখে কেঁদে ফেলত মার্সেডিস, গোপনে তাদের খাবারও দিয়েছিল কয়েকদিন কিন্তু পরবর্তীকালে তার ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে সে এমন বিব্রত হয়ে পড়ল যে, কুকুদের দুরবস্থার দিকে তার নজর রইল না।
মার্সেডিসের আদুরে খুকির মতো চালচলন তার স্বামী আর ভাই-এর পক্ষে বেশিদিন সহ্য করা সম্ভব হল না। এতদিন মার্সেডিস তার পুরুষ সঙ্গীদের উপর সব কাজকর্মের দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে অভ্যস্ত ছিল নিতান্ত স্বার্থপরের মতো। সে তাদের সাহায্য তো করতই না, উপরন্তু সামান্য ত্রুটি হলেই ক্রুদ্ধ অভিযোগে মুখর হয়ে উঠত। প্রথম প্রথম চার্লস ও হাল মার্সেডিসের অন্যায় আচরণ সহ্য করলেও পরে তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল, তারাও প্রতিবাদ করতে শুরু করল। পুরুষ সঙ্গীদের রূঢ় ব্যবহার মার্সেডিসকে আরও অবুঝ, আরও স্বার্থপর করে তুলল। সে এবার স্লেজের সঙ্গে না হেঁটে স্লেজের উপর চড়ে বসল। তার স্বামী আর ভাই প্রতিবাদ জানিয়ে বলল, অনাহারে দুর্বল কুকুরদের পক্ষে এখন মার্সেডিসের একশো কুড়ি পাউন্ডের বাড়তি ওজন সমেত স্লেজ টানা সম্ভব নয়। কথাটা যুক্তিসঙ্গত হলেও মার্সেডিস স্লেজের উপর থেকে নেমে মাটিতে পদার্পণ করতে রাজি হল না।
ফলে যা হওয়ার তাই হল। বহু চেষ্টাতেও কয়েকদিন পর কুকুরের দল অচল স্লেজটাকে সচল করতে পারল না। তখন হাল আর চার্লস দুজনে মিলে স্লেজের উপর থেকে তুলে এনে মাটির উপর দাঁড় করিয়ে দিল মাসের্ভিসকে। মেয়েটি এবার বসে পড়ল বরফের উপর, সে হাঁটতে রাজি নয়। চালর্স আর হাল তাকে ফেলে রেখেই অগ্রসর হল। প্রায় তিন মাইল পথ পেরিয়ে আসার পরেও তারা যখন পিছন ফিরে মার্সেডিসকে দেখতে পেল না, তখন বাধ্য হয়েই ফিরে এসে মেয়েটিকে তারা আবার স্লেজের উপর তুলে নিল।
অবশেষে ফুরিয়ে গেল খাদ্য। সেই অবস্থাতেও বাক স্লেজ টানতে চেষ্টা করছিল প্রাণপণে। তার শরীরের চামড়া ঝুলে পড়ল, পাঁজরের হাড়গুলো ঠেলে বেরিয়ে এল, লোমগুলো ঝুলে পড়ল অথবা হাল-এর মগুরের আঘাতে রক্তাক্ত স্থানগুলিতে শুষ্ক রক্তের সঙ্গে জট বেঁধে ঝুলতে লাগল। দলের অন্য কুকুরগুলোর অবস্থাও ভালো নয়, তাদের দিকে এক নজর তাকালেই মনে হত অনেকগুলো কঙ্কাল হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলেছে। একজনের পর একজন তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়তে লাগল। যন্ত্রণা থেকে অব্যাহতি দিতে ধরাশায়ী কুকুরগুলোকে গুলি করতে বাধ্য হল হাল।
হতাবশিষ্ট দলটার মধ্যে ছিল বাক আর চারটি কুকুর। হোয়াইট রিভার নামে একটা নদীর ধারে এসে দলটা থামল। সেটা বসন্তকাল, গাছগুলো বরফের চাপে নুয়ে পড়ছিল, ফাঁক হয়ে যাচ্ছিল মাটির উপর বরফের চাঙড়, কখনো বা মাটিতে পড়ে থাকা বরফের আবরণ সশব্দে ফেটে গিয়ে আত্মপ্রকাশ করছিল মারাত্মক মৃত্যুফঁদের মতো সুগভীর গহ্বর।
যে তাঁবুটার পাশে কুকুরের দল নিয়ে স্লেজ থামাল হাল ও চার্লস, সেই তাবুর অধিকারী ছিল একটি মাত্র মানুষ। ওই মানুষটি একটি গাছের গুঁড়ির উপর বসে কুঠারের হাতল তৈরি করছিল নিবিষ্টচিত্তে। কুকুররা শুয়ে পড়ল মড়ার মতো। মার্সেডিস যা করতে অভ্যস্ত তাই করছিল অর্থাৎ কাঁদছিল। তার দুই পুরুষ সঙ্গী পথশ্রমের ক্লান্তিতে টলছিল। বাক তার ক্লান্ত মাথাটা তুলে কুঠার তৈরিতে নিবিষ্টচিত্তে মানুষটির দিকে তাকাল এবং জীবনে সর্বপ্রথম জন থনৰ্টন নামে মানুষটিকে দেখতে পেল।
.
১৯. উদ্ধার পেল বাক
ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে তিনটি নরনারীকে জরিপ করে নিল থর্নটন। একনজর তাকিয়েই সে বুঝতে পেরেছিল নবাগতরা নিতান্তই আনাড়ি ও অনভিজ্ঞ, কিন্তু অতিশয় উদ্ধতা হাল যখন বরফের অবস্থা কেমন জানতে চাইল, থর্নটন সংক্ষেপে জবাব দিল, খুব খারাপ।
হাল-এর ওষ্ঠাধারে ফুটল তাচ্ছিল্যের হাসি, দুদিন আগেও লোকের মুখে ওই কথা শুনেছি। পথের উপর বরফ নাকি ধসে যাচ্ছে বসে যাচ্ছে। কয়েকটা লোক বলেছিল আমরা এই রাস্তা ধরে এগোলে হোয়াইট রিভার পর্যন্ত পৌঁছতে পারব না। যত বাজে কথা- এই তো আমরা জমাট বরফের উপর দিয়ে এখানে পৌঁছে গেছি।
লোকগুলো ঠিকই বলেছিল, থর্নটন গম্ভীরভাবে বলল, যে-কোনো সময়ে বরফ ভেঙে পড়তে পারত। মুখ ও নির্বোধকে মাঝে মাঝে ভাগ্য কৃপা করে সেই ভাগ্যের কৃপাতেই মত্যকে ফাঁকি দিয়ে তোমরা এখানে উপস্থিত হতে পেরেছ। কিন্তু এই ধরনের ঝুঁকি নেওয়া উচিত। নয়। তোমরা আর এগিও না, বিপদ ঘটতে পারে যে-কোনো মুহূর্তে। আলাস্কার সমস্ত সোনা আমাকে ঢেলে দিলেও আমি ওই পথে পা বাড়াব না।
আমাদের নিয়ে তোমায় মাথা ঘামাতে হবে না, হাল-এর কণ্ঠে বিদ্রুপের আভাস, কিছু কিছু লোকের সাহস একটু বেশি বিপদের মুখে এগিয়ে যেতে তারা ভয় পায় না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো আমরা নির্ঘাত ডসনে পৌঁছে যাব নিরাপদে।
এবার চাবুক উঁচিয়ে সে স্লেজবাহক কুকুরদের ছুটতে আদেশ করল। ধরাশয্যা ত্যাগ করে কেউ উঠে দাঁড়াতে রাজি হল না। হাল সজোরে চাবুক হাঁকাতে লাগল কুকুরদের উপর। প্রথমে উঠে দাঁড়াল সোল-লেকস– অতিকষ্টে। জো দুবার উঠতে চেষ্টা করেও সফল হল না, তৃতীয় বারের চেষ্টায় সে উঠে দাঁড়াল। বাক ওঠার চেষ্টা করল না, পড়ে পড়ে মার খেতে লাগল। একটি অপরিচিত মানুষের সামনে বাক-এর অবাধ্য আচরণ হালকে ক্ষিপ্ত করে তুলল, চাবুক ছেড়ে সে ধরল মুগুর! কিন্তু মুগুরের প্রচণ্ড আঘাতকেও অগ্রাহ্য করে বাক শুয়ে রইল, উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করল না একবারও। খুব দুর্বল হয়ে পড়লেও বাক অন্য কুকুরদের মতো স্লেজ টানতে পারত। তবু সে উঠে দাঁড়ায়নি, তার কারণ, তীব্র অনুভূতি দিয়ে বুঝেছিল তুষারে ঢাকা ওই পথ মৃত্যুর পথ, ওই পথে পা দিলে মৃত্যু নিশ্চিত তাই মুগুরের প্রচণ্ড আঘাত উপেক্ষা করেও সে শুয়ে রইল, উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করল না।
হাল-এর মুগুর পড়তে লাগল সর্বাঙ্গে, ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে এল বাক-এর দৃষ্টি, শরীর এমন অবশ ও অসাড় হয়ে গেল যে, আঘাতের যন্ত্রণাও সে আর বোধ করতে পারছিল না— বাক বুঝতে পাল তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে…
আচম্বিতে এক তীব্র জান্তব ধ্বনি সকলকে চমকে দিল- ওই ভীষণ অমানুষিক চিৎকার বেরিয়ে এসেছে থর্নটনের গলা থেকে এক লাফে এগিয়ে এসে এক প্রচণ্ড ঘুসি বসাল সে হাল-এর মুখের উপর ছিটকে ধরাপৃষ্ঠে লম্ববান হল হাল।
বাককে আড়াল করে দাঁড়াল থর্নটন, ক্রুদ্ধস্বরে বলল, আর-একবার যদি কুকুরটাকে তুমি আঘাত করো, তাহলে আমি তোমাকে খুন করব।
এটা আমার কুকুর, নাক থেকে রক্ত মুছে ফেলে উঠে দাঁড়াল হাল, সরে যাও আমার সামনে থেকে। আমি এখনই ডসনের পথে রওনা দেব।
তবুও বাককে আড়াল করে দাঁড়িয়ে রইল থর্নটন। ক্রোধে ক্ষিপ্ত হাল এইবার খাপ থেকে টেনে নিল ছুরি। যে-গাছের ডাল থেকে কুঠারের হাতল তৈরি করছিল থর্নটন, সেটা তার হাতেই ছিল- কবজির ক্ষিপ্র সঞ্চালনে সেই হাতলটা দিয়ে হাল-এর মুঠিতে আঘাত করে সে ছুরিটা মাটিতে ফেলে দিল। তৎক্ষণাৎ ছুরিটা কুড়িয়ে নিয়ে আবার হাল আঘাত হানতে চেষ্টা করল। কুঠারের হাতল এবার মুঠির উপর এত জোরে পড়ল যে, যন্ত্রণায় হাল-এর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল এবং অবশ হাতের মুঠি থেকে আবার ছিটকে পড়ল ছুরি। এবার ছুরিটাকে হস্তগত করল থর্নটন, তারপর বাক-এর শরীর থেকে সাজ-সরঞ্জাম কেটে ফেলে আবার ছুরিটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিল মাটিতে।
হাল-এর আর লড়াই করার মতো উৎসাহ বা ক্ষমতা ছিল না। নিঃশব্দে ছুরি, চাবুক আর মুগুর কুড়িয়ে নিয়ে সে স্লেজটাকে চার্লিয়ে দিল। কুকুরগুলো স্লেজ টানতে ইচ্ছুক ছিল না; বাধ্য হয়েই নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুর্বল শরীরে অতিকষ্টে স্লেজ টানতে লাগল নদীর বুকে জমাট বরফের উপর দিয়ে।
স্লেজ চলার শব্দে মুখ তুলে তাকাল বাক– দলটাকে নেতৃত্ব দিয়ে সকলের আগে এগিয়ে চলেছে পাইক, সকলের পিছনে রয়েছে সোল-লেকস এবং ওই দুজনের মাঝখানে অবস্থান করছে জোর আর টিক– সব কয়টা কুকুরই টলছে আর খোঁড়াচ্ছে। তাদের দুরবস্থা দেখেও হাঁটতে সম্মত হয়নি মাসের্ডিস। চেপে বসেছে স্লেজের উপর। স্লেজের পিছনে গী-পোল নামে যে বক্রাকার বস্তুটি অবস্থান করে, সেই বস্তুটির সাহায্যে স্লেজগাড়িটিকে চালনা করছে হাল সকলের পিছনে স্খলিতচরণে এগিয়ে চলেছে চার্লস।
আচম্বিতে বিদীর্ণ হয়ে গেল জমাট বরফ, মার্সেডিসের আর্তস্বর শোনা গেল একবার পরক্ষণেই স্লেজসমেত দুটি নরনারী ও চারটি কুকুরকে নিঃশেষে গ্রাস করে আত্মপ্রকাশ করল এক সুগভীর গহ্বর!
নদীবক্ষ থেকে পিছন ফিরে নদীতীরে ফিরে আসতে সচেষ্ট হল চার্লস- তার চেষ্টা সফল হল না, অনেকটা জায়গা নিয়ে ভেঙে পড়ল জমাট বরফ- সেই ভেঙে পড়া জমাট বরফের ফাঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল চার্লস! যেখানে এক মুহূর্ত আগেও ছিল জমাট বরফের নিরেট পথ, এখন সেখানে অবস্থান করছে তরল জলধার!
জন থর্নটন আর বাক পরস্পরের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করল। থর্নটন বলল, আহা বেচারা! খুব বেঁচে গেছ তুমি!
বাক তার নতুন বন্ধুর হাত চেটে দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাল।