১৫৭তম অধ্যায়
বিনয়ে বলবানের রোষশান্তি
“হে বৎস! শাল্মলীবৃক্ষ মনে মনে এইরূপ বিবেচনা করিয়া ক্ষুব্ধচিত্তে স্বয়ং আপনার শাখাপ্রশাখা সমুদয়ের ছেদনপূর্ব্বক কুসুমপল্লবাদিশূন্য হইয়া সমীরণের আগমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। রজনী প্রভাত হইবামাত্র পবন ক্রোধভরে নিশ্বাস পরিত্যাগপূৰ্ব্বক অসংখ্য মহাবৃক্ষ উৎপাটিত করিতে করিতে শাল্মলীর নিকট সমুপস্থিত হইলেন এবং দেখিলেন যে, শাল্মলী, ভীত হইয়া স্বয়ং কুসুম ও শাখাপ্রশাখাদি পরিত্যাগপূৰ্ব্বক অবস্থান করিতেছে। শাল্মলীর দুর্দ্দশাদর্শনে পবনের আনন্দের পরিসীমা রহিল না। তখন তিনি হর্ষোৎফুল্লচিত্তে তাহাকে কহিলেন, ‘শাল্মলে! তুমি স্বয়ং আপনার যেরূপ দুরবস্থা করিয়াছ, আমি তোমাকে এইরূপই দুরবস্থাগ্রস্ত করিতাম। যাহা হউক, আমার পরাক্রমই তোমার দুরবস্থা সম্পাদনের কারণ। তুমি আপনার কুমন্ত্রণাতেই আমার পরাক্রমের বশীভূত হইয়া স্বয়ং শাখাপ্রশাখাবিহীন ও কুসুমশূন্য হইয়াছ।
“সমীরণ এই কথা কহিলে শাল্মলী যারপরনাই লজ্জিত হইয়া অনুতাপ করিতে লাগিল। অতএব যে ব্যক্তি দুর্ব্বল হইয়া দুর্বুদ্ধিনিবন্ধন[দুষ্টবুদ্ধির জন্য] বলবানের সহিত শত্রুতা করে, তাহাকে নিশ্চয়ই সেই শাল্মলীবৃক্ষের ন্যায় অনুতাপ করিতে হয়। বলবানের সহিত শত্রুতা করা দুর্ব্বলদিগের নিতান্ত অকৰ্ত্তব্য। তুল্য পরাক্রম ব্যক্তির সহিতও সহসা শত্রুতা করা বিধেয় নহে। ঐরূপ ব্যক্তির প্রতি ক্রমে ক্রমে বলপ্রকাশ করাই উচিত। বুদ্ধিজীবীর সহিত বিপক্ষতাচরণে প্রবৃত্ত হওয়া নির্ব্বোধের নিতান্ত অকর্ত্তব্য। বুদ্ধিমানের বুদ্ধি তৃণরাশিপ্রবিষ্ট হুতাশনের ন্যায় অরাতিমধ্যে প্রবেশ করে। ইহলোকে বুদ্ধি ও বলের তুল্য উৎকৃষ্ট পদার্থ আর কিছুই নাই। অতএব বালক, জড়, অন্ধ ও বধিরের ন্যায় বলবানের প্রতিও ক্ষমা করা কর্ত্তব্য। বলবানের প্রভাবে যে অনিষ্ট ঘটিয়া থাকে, তোমাতে তাহার প্রমাণ লক্ষিত হইতেছে। দুর্য্যোধনের একাদশ অক্ষৌহিণী সেনা ও পরাক্রম একমাত্র মহাত্মা অৰ্জ্জুনের তুল্য ছিল না। এই নিমিত্ত ধনঞ্জয় সংগ্রামে স্বীয় বলে তাহাদিগকে নিহত ও ভগ্ন করিয়াছে। হে ধৰ্ম্মরাজ! এই আমি তোমার নিকট রাজধৰ্ম্ম ও আপদ্ধৰ্ম্ম সবিস্তর কীৰ্ত্তন করিলাম। অতঃপর আর যাহা যাহা শ্রবণ করিতে অভিলাষ থাকে, প্রকাশ কর।”