১৫৭তম অধ্যায়
ধৃতরাষ্ট্রের কুরুপাণ্ডব-প্রশ্নে সঞ্জয়ের উক্তি
জনমেজয় কহিলেন, হে তপোধন!! কৌরবগণ কালপ্রেরিত হইয়া কুরুক্ষেত্রে ব্যূহিত [বৃহমধ্যে রক্ষিত] বিপুল সৈন্যমণ্ডলীমধ্যে কি করিয়াছিলেন? বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! সৈন্যগণ যুদ্ধার্থ যত্নবান হইলে রাজা ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “হে সঞ্জয়! কুরু ও পাণ্ডবগণের সেনানিবেশমধ্যে যেসকল বিষয় অনুষ্ঠিত হইয়াছে, তাহা আনুপূর্ব্বিক কীর্ত্তন কর। আমার মতে অদৃষ্টই বলবান ও পুরুষকার নিরর্থক; দেখ, আমি বিনাশফল [পরিণামবিনাশকর] যুদ্ধদোষসমুদয় অবগত হইলেও কপটপর দ্যূতবেদী [ছলনাপূর্ণ পাশাক্রীড়ারত] দুৰ্য্যোধনকে নিবারণ ও আপনার হিতানুষ্ঠান করিতে সমর্থ হইলাম না। আমার বুদ্ধি সততই দোষানুদৰ্শনী [দোষদর্শনকারিণী] হয় বটে, কিন্তু দুৰ্য্যোধনকে প্রাপ্ত হইয়া পুনরায় প্রতিনিবৃত্ত হয়। এইরূপে বোধ হয়, যাহা ঘটিবার, তাহা অবশ্যই ঘটিবে। ফলতঃ রণস্থলে দেহত্যাগ এক প্রশংসনীয় ক্ষত্ৰিয়ধর্ম্ম বলিয়া পরিগণিত হইয়া থাকে।”
সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! আপনি যেরূপ কহিতেছেন ও যেপ্রকার অভিলাষ করিতেছেন, ইহা আপনার সমুচিত হইয়াছে এবং এই দোষ রাজা দুৰ্য্যোধনের প্রতি আরোপ করাও আপনার কর্ত্তব্য হইতেছে না। এক্ষণে আমি যে কথার উল্লেখ করি, আপনি তাহা আদ্যোপান্ত শ্রবণ করুন। যে ব্যক্তি আপনার দুশ্চরিতদ্বারা অশুভ লাভ করে, সে কাল বা দৈবকে তাহার কারণ বলিয়া নির্দ্দেশ করিতে কদাচ সমর্থ হয় না। যে ব্যক্তি মনুষ্যমধ্যে গৰ্হিত কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করে, সে সকল লোকেরই বধ্য হইয়া থাকে। পাণ্ডবগণ কেবল আপনার নিমিত্ত দূতক্রীড়াকালে অমাত্যগণের সহিত সেই সমস্ত কপটাচার সহ্য করিয়াছেন। এক্ষণে আপনি স্থিরভাবে সর্ব্বলোকক্ষয় এবং অশ্ব, গজ ও রাজগণের বিনাশসংবাদ শ্রবণ করিয়া একমানাঃ হইয়া অবস্থিতি করুন। পুরুষ স্বয়ং শুভাশুভ কাৰ্য্যে অনুষ্ঠান করে না; দারুযন্ত্রের [কাঠের যন্ত্রসদৃশ] ন্যায় অস্বতন্ত্র [অবশ] হইয়া কাৰ্য্যে নিয়োজিত হয়। কেহ ঈশ্বরের নির্দ্দেশে, কেহ স্বেচ্ছানুসারে, কেহ বা পূর্ব্বকৰ্মফলে কাৰ্য্যানুষ্ঠান করিয়া থাকে। এই তিনপ্রকার ভিন্ন আর কিছু নয়নগোচর হয় না, অতএব আপনি এক্ষণে বিপদাপন্ন হইয়াও স্থিরচিত্তে সমরবৃত্তান্ত শ্রবণ করুন।’