১৫১তম অধ্যায়
ভীমকে হনূমানের পদ্মসরোবর প্রদর্শন
বৈশম্পায়ন কহিলেন, অনন্তর মহাবীর হনূমান্ স্বেচ্ছাকৃত সুবিস্তৃত কলেবর উপসংহার করিয়া করযুগল প্রসারণপূর্ব্বক ভীমসেনকে পুনরায় আলিঙ্গন করিবামাত্র তাঁহার সমুদয় শ্রান্তি সুদূরপরাহত ও সমুদয় ঘটনা অনুকুল হইয়া উঠিল। তখন তিনি আপনাকে অদ্বিতীয় বলবান বলিয়া বোধ করিলেন।
অনন্তর কপিরাজ আনন্দভরে গলদশ্রুলোচনে গদ্গদবচনে সৌহার্দ্য প্রদর্শনপূর্ব্বক ভীমসেনকে কহিলেন, “ভ্ৰাতঃ! আপন আবাসে গমন কর; কোন কথা উপস্থিত হইলে আমাকে স্মরণ করিও এবং আমি যে এ স্থানে অবস্থান করিতেছি, তাহা কুত্ৰাপি প্রকাশ করিও না; কারণ, কুবেরের আলয় হইতে দেবগন্ধর্ব্ববোষারা ক্রীড়া করিবার নিমিত্ত এই স্থানে আগমন করিয়া থাকেন। আমিও তোমার মানুষগাত্ৰস্পর্শে সেই হৃদয়নন্দন সীতানন-সরোরুহ ও দশানন তিমিরের সূৰ্য্যস্বরূপ রাঘবকুলতিলক রামচন্দ্রকে স্মৃতিপথে সমুদিত দেখিয়া নয়নযুগলের সার্থকতা লাভ করিলাম; অতএব আমার সহিত সাক্ষাৎকার তোমার পক্ষে অব্যর্থ হউক, তুমি সৌভ্রাত্ৰ-সম্বন্ধানুসারে আমার নিকট বর প্রার্থনা কর। হে মহাবল! যদি তোমার অভিলাষ হয়, তবে অদ্যই আমি হস্তিনানগরে গমনপূর্ব্বক প্রস্তরাঘাতে সমুদয় ধার্ত্তরাষ্ট্রকে বিনষ্ট ও সমস্ত নগর উৎসাদিত করিতে পারি এবং দুৰ্য্যোধনকে বন্ধন করিয়া তোমার সমীপে সমৰ্পণ করি।”
ভীমসেন মহাত্মা হনূমানের বাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “হে বানরপুঙ্গব! তোমা হইতে আমার সমুদয় প্রয়োজন সুসম্পন্ন হইয়াছে, এক্ষণে তোমার মঙ্গল হউক, প্রার্থনা করি, আমার প্রতি প্ৰসন্ন হও। হে নাথ! তোমা হইতে অনাথ পাণ্ডবগণ আজি সনাথ হইল। আমি তোমার তেজঃপ্রভাবেই সমুদয় অরাতিগণকে পরাজয় করিব, তাহাতে সন্দেহ নাই।”
হনূমান কহিলেন, “হে ভ্ৰাতঃ! আমি সৌভ্রাত্র ও সৌহার্দ্দ্যবশতঃ তোমার এই উপকার করিব যে, যখন তুমি অরাতিগণের সেনামধ্যে প্রবেশপূর্ব্বক সিংহনাদ করিবে, তখন আমি আত্মস্বরে তোমার স্বর উচ্চৈস্তর করিব এবং ধনঞ্জয়ের ধ্বজারূঢ় হইয়া এমন ভয়ানক চীৎকার করিব যে, সেই চীৎকারই শক্ৰগণের কালান্তক হইবে ও তোমরা তদ্দ্বরা তাহাদিগকে অক্লেশে সমরশায়ী করিবে।”
হনূমান এইরূপে ভীমের সহিত সম্ভাষণাদি পরিসমাপ্ত করিয়া তাঁহাকে কুবেরসরসীর পথপ্রদর্শনপূর্ব্বক সেই স্থানেই অন্তৰ্হিত হইলেন।