শামীম তিতুনিকে বলল, “আমরা তোমার লাইফ ফর্মে সব রকম টেস্ট করেছি। তুমি যদিও এলিয়েন কিন্তু স্বীকার করতেই হবে তুমি মানুষের নিখুঁত রেপ্লিকা। আমরা এখনো কোনো বিচ্যুতি পাইনি। কাজেই আমরা একজন মানুষের সাথে যেভাবে যোগাযোগ করার কথা তোমার সাথে সেভাবে যোগাযোগ করছি।”
তিতুনি কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। এবারে নাহার বলল, “একজন এলিয়েন হয়ে তুমি যে হুবহু মানুষের একটা ফর্ম নিয়েছ সেটা একদিক দিয়ে আমাদের জন্যে ভালো অন্যদিক দিয়ে আমাদের জন্যে অনেক বড় সমস্যা।”
মাথাভরা পাকা চুল বিদেশিটা ঝুঁকে পড়ে কিছু একটা বলল, নাহার মাথা নাড়ল, তারপর তিতুনির দিকে তাকিয়ে বলল, “এলিয়েন হয়ে তুমি শুধু যে মানুষের ফর্ম নিয়েছ তা নয়, তুমি বারো বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের ফর্ম নিয়েছ, শুধু যে শারীরিক ফর্ম তা নয়, তোমার মানসিক ফর্ম বারো বছরের, বুদ্ধিমত্তা বারো বছরের। তোমার সাথে যোগাযোগ করতে হলে বারো বছরের বাচ্চার সাথে যেভাবে কথা বলার কথা সেভাবে কথা বলতে হয়। এখন পর্যন্ত তোমার ভেতরে এলিয়েনসুলভ ক্ষমতার কোনো চিহ্ন আমরা পাইনি।”
তিতুনি মনে মনে বলল, “কেমন করে পাবে! আমি যদি এলিয়েন হতাম তাহলে না পেতে।” মুখে কোনো কথা না বলে মাছের মতো চোখে সবার দিকে তাকিয়ে রইল।
পাকা চুলের মানুষটা নাহারকে আবার কিছু একটা বলল, নাহার সেটা শুনে তিতুনিকে সেটা বোঝাতে থাকে, “প্রফেসর বব ক্লাইড বলছেন তার ধারণা ছিল একজন এলিয়েন যখন মানুষের ফর্ম নেয় তখন বাইরের ফর্মটা নেয়। ভেতরের ফর্মটা ঠিক থাকে। তোমার বেলা সেটা পাওয়া যাচ্ছে না, তুমি ইউনিভার্সাল ল্যাংগুয়েজ বোঝো না, সাইন ল্যাংগুয়েজ বোঝে না, ইংরেজি কিংবা ফ্রেঞ্চও বোঝো না। তোমার সাথে শুধু বাংলায় কথা বলতে হয়।”
শামীম বলল, “আমরা বাংলাতেই বলব কোনো সমস্যা নেই।”
এবারে ন্যাড়া মাথা মানুষটা কিছু একটা বলল, শামীম সেটা তিতুনিকে অনুবাদ করে শোনাল, “কিন্তু তুমি যেহেতু এলিয়েন, কাজেই এলিয়েনের নীলনকশা তোমার ভেতরে আছে। কোথাও না কোথাও কোড করা আছে। আমাদের সেটা দরকার।”
নাহার বলল, “আমরা তোমার শরীরের বাইরে থেকে স্যাম্পল নিয়েছি, এবারে ভেতর থেকে স্যাম্পল নেব। হার্ট কিডনি লিভার লাংস এবং ব্রেন টিস্যু।”
তিতুনি আঁতকে উঠল, বলে কী এরা? এখন তাকে কেটেকুটে ফেলবে? সে চোখ বড় বড় করে মানুষগুলোর দিকে তাকাল।
বিদেশিগুলো হড়বড় করে আরো কিছুক্ষণ কথা বলল, তারপর নাহার আর শামীম সেগুলো অনুবাদ করে শোনাতে লাগল। তারা বলল, “তোমার মস্তিষ্কের টিস্যু স্যাম্পল নেয়ার জন্যে তোমার খুলিতে ড্রিল করতে হবে, সত্যিকারের মানুষের বেলাতে কখনোই এ রকম একটা কিছু চেষ্টা করা হতো না-কিন্তু তুমি যেহেতু সত্যিকার মানুষ নও, তুমি যেহেতু একটা এলিয়েন, তোমার বেলায় এটা চেষ্টা করতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
“তুমি যেহেতু বারো বছরের একটা শিশুর ফর্ম নিয়েছ তোমাকে অচেতন করেই আমাদের এই প্রক্রিয়াটা করা উচিত, কিন্তু আমরা তোমাকে অচেতন করব না দুটি কারণে। বিষয়টিতে যদি তুমি বাধা দিতে চাও তাহলে তোমাকে কোনো একধরনের এলিয়েন শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। আমরা সেটি দেখতে চাই, আমরা সেটি রেকর্ড করতে চাই।
“এছাড়াও দ্বিতীয় কারণটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কখনো ভাবিনি তোমাকে আমরা আটকে ফেলতে পারব। কিন্তু আমরা খুবই অবাক হয়ে লক্ষ করেছি আমরা আমাদের যন্ত্রপাতি দিয়ে তোমাকে আটকে ফেলতে পেরেছি। আমাদের আরো কিছু যন্ত্রপাতি আছে, আমরা তোমার উপর সেগুলো ব্যবহার করতে চাই। আশা করছি বিজ্ঞানের গবেষণায় আমরা তোমার সহায়তা পাব।”
কথা শেষ করে শামীম তার মাথায় লাগানো হেলমেটটার দিকে এগিয়ে গেল। তিতুনি হঠাৎ একধরনের আতঙ্ক অনুভব করে। সে ধরেই নিয়েছিল বিপদের সময় এলিয়েন তিতুনি তাকে সাহায্য করবে। কিন্তু এরা তার মাথায় ড্রিল করতে চলে আসছে, এখনো এলিয়েন তিতুনির দেখা নেই, ব্যাপারটা কী? তিতুনি তখন গরম হয়ে বলল, “তুমি খালি আমার মাথায় ড্রিল করার চেষ্টা করে দেখো, আমি যদি তোমাদের ঠ্যাং ভেঙে না দেই!”
তিতুনির কথাটা শেষ হবার আগেই খটাশ করে একটা শব্দ হলো আর ডক্টর শামীম দড়াম করে নিচে পড়ে গেল, নিজের পা ধরে তখন সে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকে। নাহার আর তার সাথে অন্যরাও তার কাছে ছুটে এলো, নাহার জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে? কী হয়েছে?”
“পা, আমার পা!”
“কী হয়েছে তোমার পায়ের?”
“মনে হয় ভেঙে গেছে-মনে হয় এলিয়েনটা আমার পা ভেঙে দিয়েছে!”
তিতুনি অবাক হয়ে বলল, “আমি মোটেও তোমার পা ভাঙিনি-শুধু বলেছি ভেঙে দেব।”
শামীম তখন সাবধানে তার পা নাড়াল, তারপর ভাঙা গলায় বলল, “না ভাঙে নাই। কিন্তু আমার মনে হলো ভেঙে গেছে-খটাশ করে শব্দ হলো।”
বিদেশি দুইজন তখন শামীমের হাত ধরে তাকে দাঁড় করাল। নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে শামীম ভয়ে ভয়ে তিতুনির দিকে তাকাল। বিদেশি দুইজন তখন গলা নামিয়ে নিজেদের ভেতর কিছুক্ষণ কথা বলল, তারপর চোখের কোনা দিয়ে তিতুনিকে দেখল। তারপর নাহারকে বলল, “তুমি একটা সিরিঞ্জে করে দশ মিলিগ্রাম রিটাটিল নিয়ে এসো, আমি দেখতে চাই এই এলিয়েনটাকে অচেতন করা যায় কি না।”
নাহার ইতস্তত করে বলল, “কাজটা কি ঠিক হবে?”
বিদেশিগুলো বলল, “অবশ্যই ঠিক হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাঝে কোনো শর্টকাট নেই।”
তিতুনি বিদেশির কথাগুলো বুঝতে পারেনি কিন্তু তাদের ভাবভঙ্গি দেখে অনুমান করল তাকে নিয়ে তারা কিছু একটা আপত্তিকর কাজ করতে যাচ্ছে। সে চোখ পাকিয়ে বলল, “তোমরা কী করতে চাইছ?”
টিশটাশ ডক্টর নাহারকে এখন খুব টিশটাশ দেখাচ্ছে না, সে একটু ভয়ে ভয়ে বলল, “রিক গার্নার আর বব ক্লাইড তোমাকে অচেতন করার জন্য তোমার শরীরে রিটাটিল পুশ করার কথা চিন্তা করছেন।”
তিতুনি বলল, “তুমি এই বুড়া আর টাক্কুকে বলো কাজটা ভালো হবে না।”
“কেন? কেন ভালো হবে না?”
“আমি তাহলে তোমাদের সব যন্ত্রপাতি ভেঙে গুঁড়া করে দেব।” তিতুনির কথা শেষ হবার আগেই ঠাস ঠাস শব্দ করে কয়েকটা মনিটর ফেটে গেল। দেওয়ালে লাগানো কয়েকটা যন্ত্র রীতিমতো বিস্ফোরণ করে সত্যি সত্যি খুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল। ট্রেইলারের ভেতরে কালো ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধে ভরে যায়।
ড. নাহার বুকে হাত দিয়ে বলল, “হায় খোদা!”
বিদেশি দুইজন একজন আরেকজনের হাত ধরে বলল, “ও মাই গড!”
মানুষগুলোকে দেখে তিতুনির হাসি পেয়ে যায়, কিন্তু সে হাসল না। মুখ শক্ত করে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। এলিয়েন তিতুনি তাকে ছেড়ে যায়নি-ট্রেইলারের বাইরের থেকেও ভেতরে কী হচ্ছে। সেটা লক্ষ করছে। সে যেটাই বলছে সেটাই করে ফেলছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে তাকে নিয়ে কোনো দুই নম্বরী কাজ করা চলবে না।
সবাই যখন ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন ট্রেইলারের এক কোনা থেকে একজন ইংরেজিতে বলল, “খুব আজব একটা জিনিস হচ্ছে।”
ন্যাড়া মাথা রিক গার্নার শুকনো গলায় জানতে চাইল, “কী হচ্ছে?”
“যন্ত্রপাতিগুলো উল্টাপাল্টা কাজ করছে।”
“কী রকম উল্টাপাল্টা?”
“মনে হচ্ছে কমিউনিকেশান্স মডিউলে কোনো কন্ট্রোল নাই। পুরো ট্রেইলারের সব যন্ত্রপাতি থেকে পাওয়ার নিয়ে যাচ্ছে।”
“পাওয়ার নিয়ে কী করছে?”
“এন্টেনা দিয়ে একটা সিগন্যাল পাঠাচ্ছে।”
“কী রকম সিগন্যাল?”
“মনে হচ্ছে কোনো একধরনের সংখ্যার সিকোয়েন্স।”
ট্রেইলারের সব যন্ত্রপাতি থেকে পাওয়ার নিয়ে নেবার কারণে যন্ত্রপাতিগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। ট্রেইলারের আলোও আস্তে আস্তে কমে কেমন জানি নিবু নিবু হয়ে আসে।
কে যেন জিজ্ঞেস করল, “ক হচ্ছে এখানে?”
মাথা ন্যাড়া বিদেশিটা বলল, “মনে হয় এলিয়েনটা আমাদের এন্টেনা দিয়ে তার মাদারশিপের সাথে যোগাযোগ করছে।”
যদিও বিদেশিদের উচ্চারণ আর কথা বুঝতে তিতুনির সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু এই কথাটা সে বুঝতে পারল এবং বুঝে সে চমকে উঠল। এলিয়েন তিতুনি তার মাদারশিপের সাথে যোগাযোগ করছে, তাহলে কি সে এখন চলে যাবে? আগেই বলেছিল পৃথিবীতে সে যে এসেছে সেটা সে জানাজানি করতে চায় না। এখন সেটা জানাজানি হয়ে গেছে, এখন নিশ্চয়ই আর থাকবে না। নিশ্চয়ই চলে যাবে। কখন চলে যাবে? কীভাবে চলে যাবে? সে চলে যাবার পর তার কী হবে?
ঠিক তখন মনে হলো ট্রেইলারের বাইরে একটা বাজ পড়ল। প্রচণ্ড শব্দে চারিদিক কেঁপে উঠল, বিজলির নীল আলোতে চারপাশ ঝলসে ওঠে। কোনো মেঘ নেই বৃষ্টি নেই কিন্তু তার মাঝে পরিষ্কার বজ্রপাত। বজ্রপাত হলে নীলাভ আলো একবার ঝলসে ওঠার পর শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এবারে শেষ হলো না। নীল আলো ঝলসাতে লাগল আর বিচিত্র একধরনের শব্দ শোনা যেতে লাগল। ট্রেইলারের জানালা দিয়ে ভেতরে সেই আলো খেলা করতে থাকে।
ট্রেইলারের দরজা খুলে সবাই বাইরে তাকায় এবং তিতুনি শুনতে পেল, পাকা চুলের বিদেশিটা চিৎকার করে বলল, “ও মাই গুডনেস!”
কী দেখে বিদেশিটা চিৎকার করেছে তিতুনি দেখতে পাচ্ছিল না, তাকে যন্ত্রপাতি বোঝাই চেয়ারটাতে বেঁধে রেখেছে বলে সে নড়তেও পারছিল না। ট্রেইলারের দরজা দিয়ে বাইরের দৃশ্যটি দেখে সবাই আবার ভেতরে এসে তিতুনিকে ঘিরে দাঁড়াল। শামীম হিসহিস করে বলল, “তুমি এলিয়েন না। তুমি মানুষ। তুমি আমাদের ধোকা দিয়েছ।”
ওরা হঠাৎ করে সেটা কেমন করে বুঝতে পারল তিতুনি এখনো জানে না। কিন্তু বিষয়টা যখন জেনেই গিয়েছে তখন সেটা আর গোপন রাখার কোনো অর্থ হয় না। তিতুনি মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ। আমি মানুষ। অন্যজন এলিয়েন।”
“তুমি আমাদের সে কথাটা আগে কেন বলো নাই?”
“কেন বলব? তোমরা এত বড় বড় বৈজ্ঞানিক, তোমরা কেন নিজেরা সেটা বের করতে পারো না?”
নাহার প্রায় হিংস্র গলায় বলল, “তুমি মানুষ হয়ে মানুষের পক্ষে থাকলে না? তুমি মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এলিয়েনের পক্ষে গেলে?”
তিতুনি রেগে গিয়ে বলল, “হ্যাঁ গিয়েছি, আরো একশ’বার যাব।”
“কেন?”
“কারণ সে তোমার কাছে এলিয়েন। আমার কাছে মানুষ। খালি মানুষ না, সে পুরোপুরি আমি। আমি আমার পক্ষে থাকব না কি তোমার পক্ষে থাকব?”
নাহার কী বলবে বুঝতে পারছিল না, তিতুনি বলল, “এখন তো জেনে গেছ কে মানুষ কে এলিয়েন। সমস্যাটা কী?”
“দেরি হয়ে গেছে।”
তিতুনি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল, “সে কি চলে গেছে?”
“না, এখনো যায়নি। কিন্তু সে একটা শক্তিবলয়ের মাঝে ঢুকে গেছে, তাকে আর আমরা ছুঁতে পারব না।”
তিতুনি তার মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “আমাকে ছেড়ে দাও। আমি ওকে দেখব-কথা বলব।”
নাহার বিদেশি দুটোর দিকে তাকিয়ে বলল, “এখন এই মেয়েটাকে শুধু শুধু আটকে রেখে কী হবে? একে ছেড়ে দিই?”
ন্যাড়া মাথা বিদেশিটার মুখটা দেখতে দেখতে কেমন জানি নিষ্ঠুর হয়ে যায়। সে মাথা নাড়ল, বলল, “না। এখন এই মেয়েটা হচ্ছে আমাদের শেষ অস্ত্র। এই মেয়েটাকে ব্যবহার করে আমাদের শেষ চেষ্টা করতে হবে।”
“কীভাবে শেষ চেষ্টা করবে?”
“এটমিক ব্লাস্টার।”
নাহার আর শামীম একসাথে ভয় পাওয়া গলায় চিৎকার করে উঠল, “এটমিক ব্লাস্টার?”
“হ্যাঁ। এখন আর মেপে মেপে স্যাম্পল নেয়ার সময় নেই। এটমিক ব্লাস্টার দিকে এলিয়েনটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিব, তখন তার ছিন্নভিন্ন অংশটা হবে আমাদের স্যাম্পল।”
শামীম আর নাহার এমনভাবে ন্যাড়া মাথা বিদেশিটার দিকে তাকিয়ে রইল যে দেখে মনে হলো তারা তার কথা বুঝতে পারছে না। শামীম খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, “কিন্তু এলিয়েনটা শক্তিবলয়ের ভেতর ঢুকে গেছে, সেখানে যে পরিমাণ এনার্জি তোমার এটমিক ব্লাস্টারের প্লিন্টার তো ভেতরে ঢুকবে না।”
বিদেশিটা হিংস্র মুখে বলল, “তাকে শক্তিবলয়ের বাইরে আনতে হবে।”
“কীভাবে বাইরে আনবে?”
বিদেশিটা তিতুনিকে দেখিয়ে বলল, “এই নির্বোধ মেয়েটাকে দিয়ে।”
নাহার ইতস্তত করে বলল, “কীভাবে?”
ন্যাড়া মাথা রিক গার্নার বলল, “সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও।” তারপর অন্যদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল, “এটমিক রাস্টার বের করে পজিশান নাও। এলিয়েনটাকে লেজার লক করো। আর এই নির্বোধ মেয়েটাকে খুলে দাও।” কথা শেষ করে সে তার জ্যাকেটের ভেতর হাত ঢুকিয়ে একটা ছোট কালো রিভলবার বের করে আনল। সেটা তিতুনির মাথার দিকে তাক করে বলল, “নির্বোধ মেয়ে, আমি আজকে তোমাকে জন্মের মতো শিক্ষা দিব। তোমার চৌদ্দ গুষ্টি সেটা মনে রাখবে।”
.
তিতুনিদের বাসার সামনে খোলা জায়গাটাতে এলিয়েন তিতুনি দাঁড়িয়ে আছে, তাকে ঘিরে একটা নীল আলো। সেই আলোটা মাটি থেকে শুরু করে একেবারে আকাশের দিকে উঠে গেছে। নীল আলো থেকে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ঝলক বের হয়ে আসছে, একটা ভোঁতা শব্দ মাঝে মাঝে বাড়ছে মাঝে মাঝে কমছে। আলোটা যেখানে মাটিতে এসে নেমেছে সেই জায়গাটি আগুনের মতো গনগনে গরম, একধরনের পোড়া গন্ধে বাতাসটা ভারী হয়ে আছে। নীল আলোটি তীব্র নয়, কেউ বলে দেয়নি কিন্তু সবাই বুঝতে পারছে এই নীল আলোর মাঝে অচিন্তনীয় একধরনের শক্তি আটকা পড়ে আছে, সেই শক্তিটুকু এই এলিয়েন মেয়েটিকে রক্ষা করছে, পৃথিবীর কারো সাধ্যি নেই এখন তাকে স্পর্শ করে।
আবু আর আম্মু হতচকিতের মতো এলিয়েন তিতুনির দিকে তাকিয়ে ছিলেন, টোটন বুঝিয়ে দেবার পরও বুঝতে পারছিলেন না। কেমন করে তাদের মেয়ে হঠাৎ এলিয়েন হয়ে গেল। তাহলে তাদের আসল মেয়ে এখন কোথায়? কেন সে ট্রেইলারের ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে না? আম্মু একবার ট্রেইলারের দরজা দিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করলেন, তারপর এলিয়েন তিতুনির দিকে তাকিয়ে বললেন, “তিতুনি মা, তুই চলে যাচ্ছিস কেন? থেকে যা।”
টোটনও চিৎকার করে বলল, “হ্যাঁ। তিতুনি তুই থেকে যা। এই জীবনে তোকে আর কোনোদিন জ্বালাব না। খোদার কসম।”
আম্মু বললেন, “তুই তো পুরোপুরি তিতুনি। আমার যদি একটা তিতুনি থাকতে পারে তাহলে দুটি তিতুনি কেন থাকতে পারবে না?”
এলিয়েন তিতুনি নীল আলোর শক্তিবলয়ের ভেতর থেকে বলল, “আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে আমার ফিরে যেতে হবে, সেখানে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাছাড়া
এলিয়েন তিতুনি একটু থামল, তারপর বলল, “তাছাড়া পৃথিবীর মানুষ ভালো যন্ত্র খুব বেশি তৈরি করতে পারেনি কিন্তু অনেকগুলি খুব খারাপ খারাপ যন্ত্র তৈরি করেছে। ঐ দেখো একটা খারাপ যন্ত্র বের করে আনছে আমাকে গুলি করার জন্য।”
সবাই মাথা ঘুরিয়ে তাকাল, অবাক হয়ে দেখল, মেশিনগানের মতো একটা যন্ত্র টেনে নামিয়ে আনছে ট্রেইলারের ভেতর থেকে।
আম্মু-আবু চিৎকার করে উঠলেন, বললেন, “সর্বনাশ।”
এলিয়েন তিতুনি বলল, “না, আম্মু-আব্বু কোনো ভয় নেই। এই শক্তিবলয়ের ভেতরে আমাকে কিছু করতে পারবে না।” কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে সে দেখল ট্রেইলারের দরজা দিয়ে মাথা ন্যাড়া রিক গার্নার তিতুনির চুলের মুঠি ধরে তাকে টেনে বের করে আনছে, তার অন্য হাতে কুচকুচে কালো ছোট একটা রিভলবার। রিভলবারটি সে তিতুনির মাথায় ধরে রেখেছে। ট্রেইলারের দরজায় দাঁড়িয়ে সে হিংস্র গলায় চিৎকার করে ইংরেজিতে বলল, “সরে যাও সবাই, খবরদার। খুন করে ফেলব।”
আম্মু একটা আর্তচিৎকার করে ছুটে যেতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু কোথা থেকে সামরিক পোশাক পরা একজন মানুষ এসে প্রথমে আম্মুকে তারপর আব্বকে ধরে ফেলল।
পাকা চুলর মানুষটা এটমিক ব্লাস্টারটা তার তিনটা পায়ের উপর দাঁড় করিয়ে সেটা চালু করে দিয়েছে। ভেতর থেকে একটা চাপা গুঞ্জনের সাথে সাথে লাল রঙের লেজারের আলো এলিয়েন তিতুনিকে আলোকিত করে ফেলে। পাকা চুলের বব ক্লাইড চিৎকার করে বলল, “লক ইন কমপ্লিট। গেট রেডি।”
ন্যাড়া মাথার মানুষটা তিতুনির চুলের মুঠি ধরে ট্রেইলারের সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচে নেমে আসে। তিতুনির চোখে-মুখে একটা অবর্ণনীয় আতঙ্ক। চুলের মুঠি ধরে একটা ঝাঁকুনি দিতেই তার মুখে একটা যন্ত্রণার ছাপ পড়ল। ন্যাড়া মাথা রিক গার্নার হুংকার দিয়ে বলল, “ইউ ব্লাডি এলিয়েন। দ্যাখ তোর মানুষ বন্ধুর কী অবস্থা। তোর সাথে দেখা হয়েছিল বলে সে এখন তোর সামনে খুন হয়ে যাবে।”
আম্মু চিলের মতো একটা চিৎকার করলেন, তাকে ধরে রাখা মানুষটা সাথে সাথে খপ করে আম্মুর মুখ চেপে ধরল।
ন্যাড়া মাথা রিক গার্নার রিভলবারটা ধরে একটা আঁকুনি দিয়ে বলল, “আমি এই নির্বোধ মেয়েকে খুন করে ফেলব, নর্দমার কীট, পারলে তুই তাকে রক্ষা কর।”
নীল আলোর ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা এলিয়েন তিতুনি স্থির দৃষ্টিতে রিক গার্নারের দিকে তাকিয়ে রইল। তিতুনিকে বাঁচানোর জন্যে এই শক্তিবলয় থেকে বের হলেই এটমিক ব্লাস্টার দিয়ে তাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে। পৃথিবীর মানুষ কত যত্ন করে, কত নিখুঁতভাবে ধ্বংস করার জন্যে কত রকম যন্ত্র তৈরি করেছে।
রিক গার্নার চিৎকার করে বলল, “নরকের কীট, আমি তিন পর্যন্ত গুনব, তারপর গুলি করে এই নির্বোধ মেয়ের খুলি উড়িয়ে দেব।” এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে সে চিৎকার করে গুনল, “ওয়ান”, এক সেকেন্ড অপেক্ষা করে বলল, “টু, তারপর দুই সেকেন্ড অপেক্ষা করে বলল, “থ্রি”-তারপর ট্রিগার টেনে তিতুনির মাথায় গুলি করে দিল।
তিতুনির সামনে সবকিছু অদৃশ্য হয়ে যায়, চারপাশে অনেক মানুষ, তাদের চিৎকার, তার চুলের মুঠি ধরে রাখা রিক গার্নার, মাথার মাঝে রিভলবারের কালো নল, একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আম্মু, আলু, টোটন–তাদের আতঙ্কিত দৃষ্টি। বাসার সামনে আকাশ থেকে নেমে আসা নীল আলোর একটা টানেল, সেই টানেলে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এলিয়েন মেয়েটি, বাতাসে তার চুল উড়ছে, তার চোখ দুটো স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষের চিৎকার, কোলাহল, যন্ত্রের ভোঁতা শব্দ, পোড়া গন্ধ, সবকিছু হঠাৎ থেমে গেল। কোথাও এতটুকু শব্দ নেই।
তিতুনি খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাল, চারপাশ পুরোপুরি নৈঃশব্দে ঢেকে যাওয়া একটা পৃথিবী, তার মাঝে সবকিছু একটা ছবির মতো স্থির হয়ে আছে, আর সেই ছবির দৃশ্যের মাঝে ঢেউয়ের মতো ভেসে ভেসে আসছে এলিয়েন মেয়েটি। মনে হচ্ছে যোজন যোজন সময় পরে এলিয়েন মেয়েটি তার কাছে এসে হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করল। তার খুব কাছে এসে তার কপালে কপালে চুঁইয়ে তার চোখের দিকে তাকাল। তিনি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “আমি কী মরে গেছি?”
“না।” এলিয়েন মেয়েটি মাথা নাড়ল, “না তিতুনি, তুমি মরে যাওনি।”
“তাহলে আমার চারপাশে এ রকম কেন? কোনো শব্দ নেই কেন? সবাই ছবির মতো দাঁড়িয়ে আছে কেন?”
“তোমাকে বাঁচানোর জন্যে আমি সময়কে স্থির করে দিয়েছি।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ সত্যি।” এলিয়েন মেয়েটি তার চুল ধরে থাকা ড, মর্গানের হাতটা সরিয়ে তাকে মুক্ত করে। রিভলবারের নল থেকে তাঁর মাথাটা সরিয়ে আনে। তারপর বলল, “এই দেখো রিভলবার থেকে বুলেট বের হয়ে তোমার মাথায় আঘাত করতে যাচ্ছিল, মাঝপথে থেমে গেছে।”
তিতুনি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, কী অবাক লাগছে দেখতে।
এলিয়েন তিতুনি সাবধানে শূন্যে ঝুলে থাকা বুলেটটা ধরে তিতুনির হাতে দেয়, বলল, “নাও। দেখো এখনো গরম হয়ে আছে। আরেকটু হলে এটা তোমার মাথায় ঢুকে যেত।”
তিতুনি এলিয়েনের দিকে তাকিয়ে বলল, “থ্যাংকু, আমাকে বাঁচানোর জন্যে।”
এলিয়েন মেয়েটি হাসল, বলল, “যখন আমি থাকব না, তখন নিজেকে দেখে-শুনে রেখো।”
“রাখব।”
তিতুনি অবাক হয়ে চারিদিকে তাকাল, চারপাশে সবাই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মুর মুখে অবর্ণনীয় আতঙ্ক, আব্বু ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন, টোটনের চোখে-মুখে অবিশ্বাস। সবাই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।
রিক গার্নারের মুখে হিংস্র একটা ভঙ্গি, চোখগুলো লাল, মুখের ফাঁক দিয়ে জিভ বের হয়ে আছে। বব ক্লাইডের মুখ কুঁচকে আছে, এটমিক ব্লাস্টারটা দুই হাতে ধরে রেখেছে। এদিকে-সেদিকে অনেক মানুষ, সবাই বিচিত্র ভঙ্গিতে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এলিয়েন মেয়েটি চারিদিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমার এখন যেতে হবে তিতুনি।”
তিতুনির চোখে হঠাৎ পানি এসে গেল, বলল, “তুমি চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে।”
এলিয়েন বলল, “হবে না। যাবার আগে আমি তোমার স্মৃতি মুছে দিয়ে যাব। সবার স্মৃতি মুছে দিয়ে যাব।”
তিতুনি বলল, “না, প্লিজ না। আমার স্মৃতি মুছে দিও না। আমি তোমাকে মনে রাখতে চাই।”
এলিয়েন মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, “না, তিতুনি এটা হয় না। আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে কখনো কোনোদিন এই নিয়ম ভাঙা হয়নি, তুমি আমাকে এই অনুরোধ করো না। আমাকে সবার সব স্মৃতি মুছে দিতে হবে।”
তিতুনি প্রায় হাহাকারের মতো শব্দ করে বলল, “প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ-তুমি আমার স্মৃতি মুছে দিও না। আমি তোমাকে মনে রাখতে চাই।”
এলিয়েন মেয়েটি তিতুনির হাত ধরে বলল, “আমাকে বিদায় দাও তিতুনি। আমি যাই।”
তিতুনি মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে ধরল। গালে ঠোঁট স্পর্শ করল, চুলে হাত বুলিয়ে দিল, তারপর চোখ মুছে বলল, “বিদায়। তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো।”
এলিয়েন মেয়েটি তিতুনির হাত ছেড়ে দিয়ে নীল আলোটার দিকে এগিয়ে যায়। কাছাকাছি পৌঁছে সে একবার ঘুরে তাকাল, হাত নাড়ল। তিতুনি অবাক হয়ে দেখল এলিয়েন মেয়েটির চোখের নিচে চিকচিক করছে পানি।
এলিয়েন মেয়েটি তারপর নীল আলোর বলয়ের ভেতরে ঢুকে গেল। সেখানে দাঁড়িয়ে দুই হাত ধীরে ধীরে দুই পাশে ছড়িয়ে দেয়-তার শরীর তখন ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে শরীরটা হঠাৎ উপরে উঠতে থাকে, দেখতে দেখতে সেটি নীল আলোর টানেলের ভেতর দিয়ে আকাশের দিকে ছুটে যেতে থাকে। দেখতে দেখতে সেটি অদৃশ্য হয়ে যায়। তিতুনি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে-তাকিয়েই থাকে।
.
হঠাৎ করে তিতুনি শুনতে পেল টোটন তাকে জিজ্ঞেস করল, “এই তিতুনি, তুই এ রকম হাঁ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
তিতুনি মাথা নামিয়ে আনে। একটু আগে মূর্তির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো নড়তে শুরু করেছে। আম্মু আর আব্বু তার দিকে এগিয়ে এসেছেন, আম্মু চারিদিকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো দেখিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞেস করলেন, “এখানে এত মানুষ কেন?”
তাদের কারো কিছু মনে নেই। আব্বু বললেন, “বুঝতে পারছি না। দেখি কাউকে জিজ্ঞেস করে।”
তিতুনি দেখল আব্বু শামীমের কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এখানে কী হয়েছে? এত মানুষ কেন? এত যন্ত্রপাতি কেন?”
শামীম মাথা চুলকে বলল, “ঠিক বলতে পারছি না। আমরা এলিয়েন লাইফ ফর্ম খুঁজি, হয়তো এখানে সে রকম সিগন্যাল ছিল। দেখি আমি আমাদের টিম লিডারকে জিজ্ঞেস করি।”
তিতুনি দেখল শামীম রিক গার্নারের কাছে গিয়ে তাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করল। রিক গার্নার শূন্য দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ শামীমের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর হঠাৎ মুখ বিকৃত করে একটা হিংস্র পশুর মতো শব্দ করল।
শামীম লাফ দিয়ে পিছনে সরে গিয়ে ভয় পাওয়া গলায় বলল, “নাহার, প্রফেসর গার্নারের কী হয়েছে? এ রকম করছে কেন?”
নাহার বলল, “বুঝতে পারছি না। প্রফেসর ক্লাইডও খুব বিচিত্র ব্যবহার করছেন। কথা না বলে কেমন জানি শব্দ করছেন। জম্ভর মতো শব্দ।”
তিতুনি দেখল আব্বু তাদের কাছ থেকে সরে আসছেন, সবাই মিলে রিক গার্নার আর বব ক্লাইডকে ধরে ট্রেইলারের ভিতর নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ দুটো হিংস্র পশুর মতো শব্দ করে যাচ্ছে।
এলিয়েন মেয়েটি যাবার সময় রিক গার্নার আর বব ক্লাইডের সব স্মৃতি শুধু মুছে দেয়নি, তাদের মস্তিষ্কটি তাদের উপযুক্ত করে সাজিয়ে দিয়েছে, হিংস্র পশুর মতো। তাদের যে রকম হবার কথা।
তিতুনি চারিদিকে তাকায়, কারো মাথায় এলিয়েনের কোনো স্মৃতি নেই, শুধু তার মাথায় আছে। এলিয়েন মেয়েটি তার অনুরোধ রেখেছে। অন্য সবার স্মৃতি মুছে দিলেও তার স্মৃতিটি মুছেনি। তিতুনিকে সে তার স্মৃতিটি উপহার দিয়ে গেছে।
আম্মু একটু অবাক হয়ে তিতুনির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন, তারপর বললেন, “আচ্ছা তিতুনি, তুই কি কিছু জানিস এখানে কী হচ্ছে?”
তিতুনি আম্মুর দিকে তাকাল, আম্মু বললেন, “তোকে দেখে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুই কিছু একটা জানিস!”
তিতুনি মাথা নাড়ল, বলল, “না আম্মু। আমি কিছু জানি না।” তারপর চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল, “খোদা, আমি আম্মুর সাথে মিছে কথা বলেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দিও।”
.
১৫.
অন্ধকার রাতে যখন আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা ওঠে তখন তিতুনি তাদের ছাদে একটা মাদুর পেতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আব্বু জিজ্ঞেস করেন, “তুই কী দেখিস তিতুনি?”
তিতুনি বলে, “আকাশের তারা দেখি।”
আম্মু বললেন, “তারার মাঝে আবার দেখার কী আছে?”
তিতুনি বলে, “এই আকাশের বহু দূরে একটার পর একটা গ্যালাক্সি আছে, সেই গ্যালাক্সিতে হয়তো কোথাও কোনো প্রাণী থাকে, তারা হয়তো সেখানে থেকে আমাদের কথা ভাবছে-এটা চিন্তা করতে আমার খুব ভালো লাগে।”
টোটন হি হি করে হেসে বলে, “আমাদের তিতুনি ফিলোসফার হয়ে গেছে আম্মু! দেখেছ?”
তিতুনি কিছু বলে না, সে আকাশের নক্ষত্রের দিকে তাকিয়েই থাকে। না সে ফিলোসফার হয়নি। সে কী হয়েছে সে নিজেও জানে না।