ব্রহ্মলোক হৈতে গঙ্গা আনে ভগীরথ।
আসিয়া মিলেন গঙ্গা সুমেরু পর্ব্বত।।
সুমেরুর চূড়া ষাটি সহস্র যোজন।
বত্রিশ সহস্র তার গোড়ার পত্তন।।
এই আদি কহিলাম এই তার মূল।
সুমেরু পর্ব্বত যেন ধুতুরায় ফুল।।
তার মধ্যে আছে এক দারুণ গহ্বর।
তাহাতে ভ্রমেন গঙ্গা দ্বাদশ বৎসর।।
না পায় গঙ্গার দেখা, নাহি কোন পথ।
যোড়হাতে স্তুতি করে রাজা ভগীরথ।।
সুমেরুতে হইল তোমার অবতার।
না করিলা গঙ্গা মম বংশের উদ্ধার।।
বলিলেন গঙ্গা শুন বাছা ভগীরথ।
কোন্ দিকে যাব আমি নাহি পাই পথ।।
ঐরাবত হস্তী যদি আনিবারে পার।
তবে ত পর্ব্বত হৈতে পাই যে নিস্তার।।
ঐরাবত পর্ব্বত চিরিয়া দেয় দাঁতে।
তবে ত বাহির হইব আমি সেই পথে।।
গঙ্গার চরণে রাজা করিয়া প্রণতি।
আরবার গেল যথা দেব সুরপতি।।
প্রণাম করিয়া বন্দে যোড় করি হাত।
কহিতে লাগিল কথা ইন্দ্রের সাক্ষাৎ।।
ব্রহ্মলোক হইতে আসিয়া কোন মতে।
পড়িয়া আছেন গঙ্গা সুমেরু পর্ব্বতে।।
ঐরাবত পর্ব্বত চিরিয়া দেয় দাঁতে।
তবে সে বাহির হন গঙ্গা সেই পথে।।
শুনিয়া চলিল ইন্দ্র চাপি ঐরাবতে।
আসিয়া মিলিল সেই সুমেরু পর্ব্বতে।।
হইল যে গর্ব্ব ঐরাবতের অন্তরে।
আমার সম্বাদ গিয়া কহ সে গঙ্গারে।।
মম সঙ্গে গঙ্গা যদি বঞ্চে এক রাতি।
তবেত পর্ব্বত হৈতে করি অব্যাহতি।।
যখন কহিলা ঐরাবত এই কথা।
মলিন করিল মুখ হেঁট করি মাথা।।
মুখে নাহি বাক্য সরে চক্ষে বহে জল।
হিয়া দুরু দুরু করে অত্যন্ত বিকল।।
দশা দেখি দয়াময়ী জিজ্ঞাসেন তায়।
কি হেতু এমন দশা ঘটিল তোমায়।।
আনিতে নারিলা বাছা হস্তী ঐরাবত।
কোন্ দুঃখে কান্দ বাপু আমাকে কহত।।
ভগীরথ বলে, মাতা করি নিবেদন।
সুরমণি মনোবাঞ্ছা করিল পূরণ।।
ঐরাবত যে কহিল আমার গোচরে।
পুত্র হয়ে জননীকে বলিব কি করে।।
জাহ্নবী বলেন তার বুঝিলাম তত্ত্ব।
রাজভোগ ঐরাবত হইয়াছে মত্ত।।
যদ্যপি আড়াই ঢেউ সে সহিতে পারে।
তার ঘরে সপ্ত রাত্রি রব বল তারে।।
এই কথা ভগীরথ কহে হস্তীবরে।
শুনিয়া গঙ্গার কথা আপনা পাসরে।।
চারিখান করিয়া পর্ব্বত চিরে দাঁতে।
চারি ধারা হৈল গঙ্গা সুমেরু পর্ব্বতে।।
বসু ভদ্রা শ্বেতা ও অলকানন্দা আর।
পড়িলেন পর্ব্বত হইতে চারি ধার।।
বসু নামে গঙ্গা মিলে পূরব সাগরে।
ভদ্রা নামে সুরধুনী চলিলা উত্তরে।।
শ্বেতা নামে চলিলেন পশ্চিম সাগরে।
গেলেন অলকানন্দা পৃথিবী উপরে।।
এক ঢেউ মারিলেন ঐরাবতোপরে।
নাকে মুখে জল গেল হাঁসফাঁস করে।।
আর ঢেউ মারিলেন প্রায় গত প্রাণ।
হস্তী বলে গঙ্গামাতা কর পরিত্রাণ।।
মা বলিয়া হস্তী যদি দাঁতে খড় করে।
আর ঢেউ রাখিলেন পর্ব্বত উপরে।।
পলাইল ঐরাবত পাইয়া তরাস।
আদিকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।