১৪. শাস্তি

১৪. শাস্তি

ব্ল্যাক মার্ডারের সবাই এসে গেছে, কামাল শুধু আসতে পারে নি, কার জন্মদিনে নাকি বেড়াতে গিয়েছে। আমার জন্যে পরোটা আর সবজি কিনে এনে খেলাম আমি, মনে হচ্ছিল বছরখানেক থেকে না খেয়ে আছি। ক্লাসঘরে মিটিং বসেছে। ব্ল্যাক মার্ডারের মিটিং আমি আগে কখনো দেখি নি, তার কায়দাকানুনও জানি না, তাই চুপচাপ বসে আছি। তারিক মনে হয় ব্ল্যাক মার্ডারের দলপতি, উঠে দাঁড়িয়ে মিটিঙের কাজ শুরু করল। গলা কাঁপিয়ে খুব কায়দা করে বলল, কমরেডস। ব্ল্যাক মার্ডারের বীর সদস্যরা, সংগ্রামী অভিনন্দন।

যারা বসে ছিল, তারা হাত তুলে বলল, অভিনন্দন।

আজকে আমরা এসেছি অত্যন্ত জরুরি একটা মিশন নিয়ে। অত্যন্ত, অত্যন্ত জরুরী মিশন। বিসু—যে আজকে আমাদের নূতন সদস্য হবে, তার জীবন আজ বিপন্ন। দুবৃত্তদের হাতে তার প্রাণ আজ কুক্ষিগত। কে তাকে রক্ষা করবে?

সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠল, ব্ল্যাক মার্ডার।

কে দুর্বত্তদের বিষদাঁত ভেঙে দেবে?

সবাই উত্তর দিল, ব্ল্যাক মার্ডার।

আমরা সভার কাজ এক্ষুণি শুরু করছি। কারো কিছু বলার আছে?

সুব্রত দাঁড়িয়ে বলল, আমি বিলু ওরফে নাজমুল করিমকে আমাদের নূতন সদস্য হিসেবে গ্রহণ করার জন্যে প্রস্তাব করছি।

মাহবুব দাঁড়িয়ে বলল, আমি এই প্রস্তাব সর্বান্তকরণে সমর্থন করছি।

তারিক গম্ভীর গলায় বলল, কেউ কি এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য রাখতে চায়?

দেখা গেল কারো কোনো আপত্তি নেই। তারিক বলল, বিলু, রক্ত-শপথ নিতে তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?

আমি কথা বলার জন্যে মাত্র মুখ খুলেছি, ঠিক তখন কে যেন লাথি মেরে ক্লাসরুমের দরজা খুলে ফেলল। সবাই আমরা লাফিয়ে উঠলাম, অবাক হয়ে দেখলাম, দরজায় লাল মুখের কয়েকটা বিদেশি দাঁড়িয়ে আছে। দু’জনের হাতে মেশিনগানের মতো একধরনের অস্ত্র, সোজা আমাদের দিকে তাক করে আছে। লাল মুখের বিদেশিটা হলুদ দীত বের করে বলল, কুনু গুলমাল নায়। গুলমাল হইলে গুল্লি হইবে।

যার অর্থ কাউকে বুঝিয়ে দিতে হল না, কোনো গোলমাল না, একটু গোলমাল করলেই গুলি করে দেবে।

কেউ কোনো গোলমাল করল না। তারিকের মুখ হাঁ হয়ে গেছে। পন্টুর দিকে তাকানো যায় না, মনে হয় এক্ষুণি কেঁদে ফেলবে। সুব্রত একবার মুখ খুলছে, আরেকবার মুখ বন্ধ করছে মাছের মতো।

লাল মুখের বিদেশিটা আমাদের মুখের দিকে এক জন এক জন করে তাকাল। নিশ্চয়ই আমাকে খুঁজছে। আমাকে দেখেও কিন্তু চিনতে পারল না। আমার কাছে যেরকম সব বিদেশিকে দেখতে একরকম মনে হয়, সেরকম তাদেরও নিশ্চয়ই এই বয়সী সব ছেলেদের দেখতে একরকম মনে হয়। বিদেশিগুলো খানিকক্ষণ নিজেদের মাঝে কথা বলল, তারপর আবার আমাদের দিকে তাকাল, হুঙ্কার দিয়ে বলল, বিললু কোথায়?

তারিক সবার আগে ব্যাপারটা একটু আঁচ করতে পারে, তারপর খুব একটা সাহসের কাজ করে ফেলল। হাত তুলে বলল, বিলু গন হোম। বাড়ি চলে গেছে।

হোয়াট?

এবারে সবাই মাথা নাড়ল, ইয়েস ইয়েস। গণ হোম।

ঠিক এ সময় লালমুখো বিদেশি দু’জনকে ঠেলে বব কার্লোস এসে ঢুকল। তার পিছনে আরো মানুষ আছে, আমি ভালো কাপড়-পরা কালকের সেই দেশি মানুষটাকেও দেখলাম। বৰ কার্লোস আমাদের দিকে একনজর দেখেই আমাকে বের করে ফেলল। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ইংরেজিতে বলল, ঐ তো বিল।

আমার নামটা পর্যন্ত ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারে না। বব কার্লোসের কথা শুনে মেশিনগান হাতের বিদেশিটা হঠাৎ ভয়ঙ্কর রেগে উঠল। এক পা এগিয়ে এসে তারিকের চুলের মুঠি ধরে প্রায় ঝটকা মেরে উপরে তুলে ফেলে, হুঙ্কার দিয়ে বলে, ইউ লায়ার। ইউ লিটল স্কাউন্ড্রল।

তারিক যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। লালমখো বিদেশিটা হাত তুলে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে প্রচণ্ড জোরে মারল তারিকের মুখে। তারিক একেবারে ছিটকে গিয়ে পড়ল নিচে, আমি দেখলাম ওঠার চেষ্টা করল, কিন্তু উঠতে পারল না।

বিদেশিটা ভয়ঙ্কর মুখ করে এগিয়ে যায় মেশিনগানটা হাতে নিয়ে। গুলি করে দেবে কি? না, গুলি করল না, পা তুলে জোরে লাথি মারল তারিককে—তারিক ছিটকে গিয়ে পড়ল অন্য পাশে।

আমার হঠাৎ মনে হল মাথার মাঝে যেন একটা বোমা ফেটে গেল হঠাৎ। প্রচণ্ড রাগে আমি একেবারে অন্ধ হয়ে গেলাম, মনে হল শুওরের বাচ্চার মাথাটা ছিঁড়ে নিই এক টান দিয়ে। চিৎকার করে বললাম, থাম শুওরের বাচ্চা–

পশুর মতো মানুষটা আমার দিকে তাকাল, বলল, হোয়াট?

শুওরের বাচ্চার ইংরেজি কী হবে? চিন্তা করে পেলাম না, বললাম, ইউ পিগ–

লোকটা মনে হল খুব অবাক হয়ে গেল শুনে। লম্বা-লম্বা পা ফেলে এগিয়ে এল আমার দিকে। আমি ফিসফিস করে বললাম, টুকুনজিল–

টুকুনজিল বলল, আমি আছি। কোনো ভয় নেই তোমার।

জানে মেরো না কিন্তু।

মারব না? জানে মরলে মনে হয় ভালো হবে।

হোক। জানে মারবে না।

ঠিক আছে। তুমি যেটা বল।

মেশিনগান হাতে বিদেশিটা আমার কাছে এসে আমার চুলের ঝুটি ধরার চেষ্টা করছিল, বব কার্লোস প্রচণ্ড ধমক দিল, বিললুকে ধরবে না—

লোকটা থেমে গেল। কিন্তু আমার তো থামলে হবে না। চিৎকার করে বললাম, কত বড় সাহস, তুই আমার বন্ধুর গায়ে হাত দিস! কত বড় সাহস! তোর গায়ের চামড়া যদি আমি খুলে না নিই–

আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম লোকটার উপর, সাথে সাথে পন্টু, মাহবুব, সুব্রত, নান্টু–সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল একসাথে। লোকটা ভাবাচ্যাকা খেয়ে হুঁমড়ি খেয়ে পড়ে গেল, দমাদম কিল-ঘুসি-লাথি পড়তে থাকে, পাথরের মতো শরীর লোকটার, কিছু হয় না, কেমন যেন অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। টুকুনজিল এখনো হাত দেয় নি, যখন দেবে তখন আর বাছাধনকে দেখতে হবে না।

গা-ঝাড়া দিয়ে হঠাৎ উঠে দাঁড়াল লোকটা। হাতের মেশিনগানটা তুলে নিয়ে ট্রিগারটা টেনে দেয় হঠাৎ। ক্যাটক্যাট করে ভয়ঙ্কর শব্দ করে গুলি বের হয়ে আসে, ঝনঝন করে জানালার কাচ ভেঙে পড়ে, ধোঁয়ায় ঘর অন্ধকার হয়ে যায় এক মুহূর্তে। কাউকে কি মেরে ফেলেছে?

তাকালাম চারদিকে, না, কারো কিছু হয় নি, ভয় পেয়ে সবাই পিছনে সরে গেছে সময়মতো। পিশাচের মতো লোকটা হলুদ দাঁত বের করে ভয়ঙ্কর একটা মুখ করে তাকাল সবার দিকে।

কার্লোস বলল, কুইক। কুইক। তাড়াতাড়ি।

মেশিনগান হাতে লোক দু’টি আমার দিকে এগিয়ে এল। আমি একটু অপেক্ষা করি, আরেকটু কাছে আসতেই লাফিয়ে ঘুরে একটা লাথি মেরে দিলাম বদমাইশটাকে।

টুকুনজিল হাত লাগাল আমার সাথে। লাথি খেয়ে লোকটা ছিটকে উপরে উঠে গেল গুলির মতো। ছাদে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করে লোকটা ঘুরতে ঘুরতে সিলিং ফামের মাঝে বেধে গেল। সেখান থেকে কী ভাবে জানি আবার ছিটকে উপরে উঠে যায়, ছাদে আবার ভয়ঙ্করভাবে ঠুকে গিয়ে পাইপই করে ঘুরতে ঘুরতে নিচে পড়তে থাকে। ক্লাসের পিছনে বেঞ্চটাতে আছাড় খেয়ে পড়ে বদমাইশটা। টুকুনজিল কোনো মায়া দেখায় নি, এত জোরে নিচে আছড়ে পড়ল যে বেঞ্চটা ভেঙে গেল মাঝখানে। লোকটার নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়ে আসে, আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না এখনো।

আমি এবার মেশিনগান হাতে দুই নম্বর লোকটার দিকে তাকালাম। সে হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল, আমি যখন হ্যাচকা টান দিয়ে তার কাছ থেকে মেশিনগানটা কেড়ে নিলাম, সে বাধা দেয়ার সাহসও পেল না। মানুষ যেভাবে পাটখড়ি ভেঙে ফেলে, হাঁটুতে চাপ দিয়ে আমি মেশিনগানটা ভাঙার চেষ্টা করলাম। টুকুনজিল নিশ্চয়ই বুঝতে পারে নি আমি কী করতে চাইছি, প্রথমবার তাই ভাঙতে পারলাম না। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করতেই সেটা মট করে ভেঙে দু টুকরা হয়ে গেল পাটখড়ির মতো। ঘরে টু শব্দ নেই, সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি লোকটার কুলার চেপে ধরার চেষ্টা করলাম, অনেক লম্বা, ভালো করে ধরা গেল না। কিছু আসে-যায় না তাতে, আমি হাত ঘুরিয়ে একটা ঘুসি চালালাম। লোকটা পাঁইপাঁই করে ঘুরতে ঘুরতে ছিটকে উপরে উঠে গেল, ছাদে ঠোকা খেয়ে ধড়াম করে নিচে পড়ল কাটা কলাগাছের মতো। এই লোকটা বেশি কিছু করে নি বলে তার শান্তিও হল কম।

এবারে আমরা সবাই ছুটে গেলাম তারিকের কাছে। তাকে টেনে সোজা করলাম সাবধানে, মেরেই ফেলেছে নাকি কে জানে! তারিক চোখ পিটপিট করে তাকাল, কপালের কাছে কেটে গেছে খানিকটা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারিক-কেমন আছিস

তুই? কেমন আছিস?

তারিক জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করল। শুনলাম টুকুনজিল বলছে, ভালোই আছে এখন।

সত্যি?

হ্যাঁ, একটা ধমনী ছিঁড়ে গিয়েছিল ভেতরে, ঠিক করে দিয়েছি।

তুমি ঠিক করে দিয়েছ? তুমি?

হ্যাঁ। চামড়া ফুটো করে শরীরের ভেতর ঢুকে গেলাম—

শরীরের ভেতর ঢুকে গেলে?

তারিক ফিসফিস করে বলল, কার সাথে কথা বলছিস তুই?

আমি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, বলব তোদের। আগে এদের টাইট করে নিই।

আমি এবারে বব কার্লোসের মুখের দিকে তাকালাম। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললাম, এবারে তুমি।

বব কার্লোসের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল সাথে সাথে, মাথা নেড়ে বলল, নো, ননা, প্লিজ।

আমি দাঁতে দাঁত ঘষে বললাম, তুমি হচ্ছ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী, সাইন্টিস্ট। তুমি এক শ’ এগারো বিলিওন ডলার খরচ করে এসেছ এখানে, তোমার কাছে মানুষের জানের কোনো দাম নেই–

আমার বাংলা কথা বুঝতে পারছে না সে, মাথা ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে সে এদিকেসেদিকে। আমি হুঙ্কার দিয়ে বললাম, এমন শাস্তি দেব আমি, যে, তুমি জনের মতো সিধে হয়ে যাবে।

পল্টু অনুবাদ করার চেষ্টা করল, স্ট্রেট ফর দা হোল লাইফ।

আমি কার্লোসের দিকে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করতেই সে মাটি থেকে উপরে উঠতে থাকে, ফুট খানেক উপরে উঠে সে স্থির হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি, তাকে দেখাতে থাকে বোকার মতো। কোনো মানুষ যদি শূন্যে ঝুলতে থাকে তার পক্ষে কোনোরকম গাম্ভীর্য দেখানো খুব শক্ত।

ক্লাসঘরের সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে থাকে কার্লোসের দিকে। নিজের চোখকে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না, কিন্তু চোখের সামনে দেখে অবিশ্বাস করবে কেমন করে? আমি সবার দিকে তাকালাম, জিজ্ঞেস করলাম, কি শাস্তি দেয়া যায় বল তো?

তারিক বলল, সারা জীবনের জন্যে ঝুলিয়ে রেখে দে।

পন্টু মাথা নাড়ল, না, না, ক্লাসের ভেতরে না। বাইরে, বাইরে—

সুব্রত বলল, চেহারাটা বাঁদরের মতো করে দে।

নাকটা ঘুরিয়ে দে, নাকের গর্তগুলো উপরে! প্রত্যেক বার নাকঝাড়ার সময় রুমাল দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে—

খারাপ না আইডিয়াটা। হাত আর পাগুলো পাল্টে দে৷ যেখানে হাত সেখানে পা, যেখানে পা সেখানে হাত—

 

বাইরে হঠাৎ অনেক লোকজনের গোলমাল শোনা গেল। গুলির শব্দ শুনে সবাই ছুটে আসছে। আমাদের পালাতে হবে এক্ষুণি, নাহয় ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। আমি বব কার্লোসের দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমি বড় বিজ্ঞানী, কিন্তু তুমি বড় খারাপ মানুষ।

বব কার্লোস অসহায় মুখ করে আমার দিকে তাকাল। আমি ভালো কাপড়-পরা দেশি মানুষটিকে বললাম, কি বলছি বুঝিয়ে দিন।

লোকটা ছুটে কাছে এসে হড়বড় করে বব কার্লোসকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিতে থাকে। আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, বিজ্ঞানী যদি খারাপ হয় সেটা খুব ভয়ঙ্কর, বিজ্ঞানীদের হতে হয় ভালো। কিন্তু তুমি ভালো না, তুমি খারাপ, অনেক খারাপ। তাই তোমার কাছ থেকে সব বিজ্ঞান সরিয়ে নেব আমি। আজ থেকে তুমি আর বিজ্ঞানের একটি কথাও জানবে না—একটি কথাও না তুমি হবে সাধারণ এক জন মানুষ।

বব কার্লোস ফ্যাকাসে মুখে হাতজোড় করে বলল, নো-না-না—

আমি ফিসফিস করে বললাম, টুকুনজিল—

কল।

ব্যাটাকে ঝুলিয়ে রাখতে কোনো কষ্ট হচ্ছে তোমার?

না। কোনো কষ্ট না।

বব কার্লোসের মাথাটা খালি করে দিতে পারবে? না পারলে থাক।

আগে কখনো করি নি। কপাল দিয়ে ঢুকে যাব, মস্তিষ্কের যে নিউরোনগুলোতে তথ্য আছে, সেগুলো খালি করে দিতে হবে। মনে হয় পারব।

দেখ চেষ্টা করে। আর যেন ব্যাটা পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করতে না পারে।

পারবে না।

অনেক মানুষের হৈচৈ শোনা গেল। আমি বললাম, ব্ল্যাক মার্ডার, পালা এখন।

পালাব কেন? নান্টু গরম হয়ে বলল, পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেব না?

ধরাতে পারবি না। পুলিশের বাবা ওরা কিনে রেখেছে। সময় থাকতে পালা। না হলে উল্টো ঝামেলায় পড়ে যাবি। আমার কথা শোন।

তাই বলে এত বড় বদমাইশ—

আর বদমাইশি করতে পারবে না। জীবনেও করতে পারবে না।

আমি তারিককে তুলে বললাম, টতে পারবি, তারিক?

পারব যত ব্যথা পেয়েছিলাম এখন আর সেরকম ব্যথা লাগছে না।

অনেক লোকজন দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল, অনেকে লাঠি হাতে এসেছে, কাকে ধরে দু’এক ঘা লাগাবে বুঝতে পারছে না। অনেক ভিড় হৈচৈ, তার মাঝে আমরা বের হয়ে গেলাম, কেউ লক্ষ করল না! কেমন করে লক্ষ করবে? ঘরের মাঝখানে একটা মানুষ শূন্যে ঝুলে আছে, তখন কেউ কি আর অন্যকিছু লক্ষ করতে পারে?

 

আমরা রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলাম, পন্টু বলল, বিলু, তুই কেমন করে এতসব করলি? একেবারে যেন ম্যাজিক–

বলব, সব বলব। আগে তারিককে বাসায় পৌঁছে দে কেউ-এক জন। আর শোন্, আজ স্কুলে যা দেখেছিস ভুলেও কাউকে বলিস না। একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে কিন্তু। বব কার্লোসের দলবল ভীষণ ভয়ঙ্কর, আমাদের সবাইকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবে, তবু কেউ কিছু করতে পারবে না।

সত্যি?

হ্যাঁ, সত্যি। আজ সবাই বাসায় যা। আমি বলব।

 

আমি বাসায় ফিরে যেতে যেতে ডাকলাম, টুকুনজিল।

বল।

বব কার্লোসের কী অবস্থা হল?

এখনো ঝুলিয়ে রেখেছি।

সে কী? কেমন করে? তুমি তো আমার সাথে কথা বলছ!

হ্যাঁ, তোমার সাথে একটু কথা বলি আবার ওখানে যাই—খুব তাড়াতাড়ি করতে পারি আমি। মাইক্রোসেকেন্ডে দু’বার ঘুরে আসি।

তাই তো, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কী হচ্ছে এখন?

অনেক মজা হচ্ছে এখন। হা হা হা।

কি মজা হচ্ছে?

পুলিশ এসেছে। সবাই মিলে পা ধরে টানছে নামানোর জন্য।

নামাতে পারছে না?

না। কেমন করে পারবে? একটু তোমার সাথে কথা বলি, আবার ওখানে গিয়ে ধরে রাখি।

কতক্ষণ ধরে রাখবে।

বেশিক্ষণ না। খবরের কাগজ থেকে লোক আসছে। তারা আসার আগেই ছেড়ে দেব-বেশি জানাজানি না হওয়াই ভালো, কি বল?

হ্যাঁ।

খানিকক্ষণ পর টুকুনজিল বলল, ভারি মজা হচ্ছে এখন।

কি মজা?

প্যান্ট ধরে টানতেই প্যান্টটা খুলে এসেছে। লাল রঙের একটা আন্ডারঅয়ার পরে ঝুলে আছে এখন। ভারি মজা হচ্ছে। হা হা হা।

লোকজন কি অবাক হচ্ছে?

ভারি অবাক হচ্ছে। ছেড়ে দেব এখন?

দাও।

বিদেশিগুলো এখন টানছে। ছেড়ে দিচ্ছি।

দাও।

হা হা হা।

কি হল?

সবাই মিলে হুঁড়মুড় করে পড়েছে নিচে। ভারি মজা হল আজকে।

এখন কী হচ্ছে?

বব কর্লোস এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। তাকে এক জন জিজ্ঞেস করছে দুই-এর সাথে দুই যোগ করলে কত হয়, ভেবে বের করতে পারছে না। আবার তাকে সব শিখতে হবে। একেবারে গোড়া থেকে।

উচিত শিক্ষা হল। কি বল?