১৪. রোশন আলী আপনার ছেলে

রোশন আলী আপনার ছেলে? কিরীটী আবার প্রশ্ন করে।

হ্যাঁ।

তিনি তো এখানে থাকেন না?

না—তাকে আমি তাড়িয়ে দিয়েছি—একটা স্কাউনড্রেল। রীতিমত আক্রোশ যেন ফুটে ওঠে কথা বলতে বলতে নবাব সাহেবের কণ্ঠস্বরে।

তিনি কখনো আসেন না এখানে?

না।

কিছু যদি মনে করেন তাঁর সঙ্গে আপনার মনোমালিন্য হল কেন?

তাকে আমি ত্যাজ্যপুত্র করেছি—তার কথা আর বলবেন না।

আমি কিন্তু আপনার ছেলে রোশন আলী সাহেবকে চিনি।

আপনি চেনেন তাকে?

হ্যাঁ—অনেক দিন থেকেই।

আপনি চেনেন রোশনকে? আবার প্রশ্ন করেন নবাব সাহেব।

হ্যাঁ–তাঁর সঙ্গে আমার বিশেষ বন্ধুত্বও আছে।

ওঃ।

আচ্ছা নবাব সাহেব, আর আপনাকে বিরক্ত করব না। আমরা পাশের ঘরে যাচ্ছি, যদি অনুগ্রহ করে পাশের ঘরে মেহেরকে একটিবার পাঠিয়ে দেন—

নবাব সাহেব কিরীটীর মুখের দিকে তাকালেন, তারপর প্রশ্ন করলেন, মেহেরকে?

হ্যাঁ।

তার সঙ্গে আপনাদের কি প্রয়োজন? নবাব সাহেব আবার প্রশ্ন করেন।

তাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।

প্রশ্ন?

হ্যাঁ।

কি প্রশ্ন?

সে তাকেই করব।

ও–বেশ আমি তাকে ডাকছি।

নবাব সাহেব অতঃপর মেহেরকে ডাকলেন। এবং নবাব সাহেবের ডাকে মেহের একটু পরে ঘরে এসে প্রবেশ করল।

মেহের, এঁরা তোমাকে কি জিজ্ঞাসা করতে চান—

মেহের হাঁ বা না কোন সাড়া দিল না। পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল।

আপনার নাম তো মেহেরউন্নিসা? কিরীটী প্রশ্ন করে।

মেহের পূর্ববৎ নীরব। কোন সাড়া নেই।

আপনি কাল রাত্রে আটটা থেকে দুটো পর্যন্ত কোথায় ছিলেন?

মেহের পূর্ববৎ নীরব।

চুপ করে থাকলে চলবে না মেহেরউন্নিসা জবাব দিতে হবে। বলুন—কিরীটী বলে।

কোথায় আর থাকবে, বললেন নবাব সাহেব, নীচের মহলে ছিল।

না।

কিরীটীর তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বরে চকিতে ফিরে তাকান নবাব সাহেব ওর মুখের দিকে।

উনি ছিলেন আপনার ঘরে।

আমার ঘরে!

হ্যাঁ, আপনার ঘরে।

কিন্তু–

হ্যাঁ, শুধু আপনার ঘরেই নয়। কাল রাত্রে কোন এক সময় উন হলঘরেও গিয়েছিলেন আপনি হলঘর থেকে চলে আসবার পর।

হলঘরে গিয়েছিল মেহের কাল রাত্রে আমি চলে যাবার পর! কি বলছেন আপনি যা-তা। ও আগাগোড়া আমার ঘরেই ছিল।

নবাব সাহেব প্রতিবাদ জানান জোরালো গলায়।

না, সব সময় ছিলেন না, আমি বলছি।

আপনি—

এই যে দেখুন বলতে বলতে কিরীটী একটুখানি কালো রেশমী কাপড়ের অংশ পকেট থেকে বের করে নবাব সাহেবের চোখের সামনে তুলে ধরল।