১৪. রুহানের পাশে পাশে হাঁটছে ক্রিটিনা

রুহানের পাশে পাশে হাঁটছে ক্রিটিনা। নদীর তীরে একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রুহান বলল, তুমি এখন যাও।

ক্রিটিনা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তোমাকে একা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না রুহান।।

রুহান শব্দ করে হেসে বলল, পৃথিবীটা এর মধ্যে অন্যরকম হয়ে গেছে ক্রিটিনা। মানুষের এখন অন্য মানুষকে দেখে ভয় পেতে হয় না। তারা একা বের হতে পারে, তাদের অস্ত্র নিয়ে বের হতে হয় না।

সব তোমার জন্যে।

না। আমার জন্যে নয়–আমাদের জন্যে। রুহান গলার স্বর পাল্টে বলল, তোমার কী মনে হয় ক্রিটিনা রিদি ভালো হয়ে উঠবে না?

উঠবে। একটু সময় লাগবে, কিন্তু ভালো হয়ে যাবে।

আর ক্রানা?

ক্রানা খুব হাসিখুশি আছে। একেবারে শিশুর মতোন। কিহি চলে আসার পর কী খুশি হয়েছে তুমি দেখেছ?

দেখেছি। ক্রানার মতো সবাই কিহিকে খুব ভালোবাসে। রুহান বলল, তুমি জান কিহি আমাকে পড়তে শিখিয়েছিল।

ক্রিটিনা বলল, আর তুমি শিখিয়েছ আমাকে।

আমি যদি না শেখাতাম তাহলে কী সর্বনাশ হতো চিন্তা করেছ?

ক্রিটিনা হেসে বলল, খুব ভালো করে শেখাও নি। দেয়ালে তোমার লেখাটা পড়তে আমার অনেকক্ষণ লেগেছিল।

তাতে কিছু আসে যায় না। সেটা পড়েছ, পড়ে যেটা করার কথা সেটা করেছ সেটাই বড় কথা! এখন সবাইকে পড়তে শিখিয়ে দাও, কিহি তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। ক্রিস্টাল রিডারের উপর আর ভরসা করে থাকার দরকার নেই।

রুহান হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, ক্রিটিনা, তুমি এখন যাও।

ক্রিটিনা মাথা নেড়ে বলল, তোমাকে ছাড়তে মন চাইছে না রুহান।

রুহান ক্রিটিনার মুখের দিকে তাকাল, তার চোখের কোণায় পানি চিক চিক করছে। রুহান ক্রিটিনার মাথায় হাত রেখে ফিসফিস করে বলল, আমারও তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না ক্রিটিনা। কিন্তু আমাকে যেতে হবে। কতদিন আমার মাকে দেখিনি। আমার ছোট দুটি বোন আছে, নুবা আর ত্রিনা তাদেরকেও দেখিনি। তারা কোথায় আছে, কেমন আছে আমি জানি না–

তুমি তাহলে কথা দাও আবার তুমি ফিরে আসবে।

আমি আবার আসব ক্রিটিনা।

আমার কাছে আসবে?

তোমার কাছে আসব।

আমি প্রতিদিন বিকেলে এখানে এসে এই পথের দিকে তাকিয়ে থাকব।

রুহান হেসে বলল, পাগলী মেয়ে! প্রতিদিন কেন অপেক্ষা করবে।

আমি করব। বলে ক্রিটিনা ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল।

 

রুহান যখন তার বাসায় পৌঁচেছে তখন গভীর রাত। দরজায় শব্দ শুনে মা জিজ্ঞেস করলেন, কে এসেছে?

আমি মা। আমি রুহান।

মা দরজা খুলে অবাক হয়ে রুহানের দিকে তাকালেন। ফিসফিস কতে বললেন, তুই এসেছিস?

হ্যাঁ মা। আমি এসেছি। মা বললেন, আয় বাবা একটু কাছে আয়।

রুহান এগিয়ে গেল, মা দুই হাতে তাকে শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিস করে বললেন, আমি সৃষ্টিকর্তার হাতে তোকে সপে দিয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তা আবার তোকে আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে।

মা ছেড়ে দেবার পর রুহান জিজ্ঞেস করল, নুবা ত্রিনা কেমন আছে মা?

ভালো আছে।

কোথায় তারা?

ঘুমাচ্ছিল। এখন নিশ্চয়ই উঠেছে।

ঘুম ভাঙ্গা চোখে ততক্ষণে নুবা আর ত্রিনা উঠে এসেছে। অবাক হয়ে তার। তাদের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

রুহান হাত বাড়িয়ে বলল, কাছে আস।

দুজনে দ্বিধান্বিত ভাবে এগিয়ে এসে তাদের ভাইকে স্পর্শ করে। নুবা ফিসফিস করে বলে, তুমি আর চলে যাবে না তো?

রুহান হেসে বলল, ধুর বোকা। আমি কী চলে গিয়েছিলাম? আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল!

তোমাকে আবার কেউ ধরে নিয়ে যাবে না তো?

না। নেবে না।

ত্রিনা নুবার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, মনে নাই নুবা, সবাই বলেছে পৃথিবী আবার আগের মতো হবে। ভালো আর সুন্দর?

হ্যাঁ। ত্রিনা দুই চোখ বড় বড় করে বলল, দুইজন মানুষ এসেছে স্বর্গ থেকে, তারা সারা পৃথিবীটাকে সুন্দর করে দিচ্ছে!

নুবা চোখ বড় বড় করে রুহানের দিকে তাকাল, সেই মানুষ দুইজন নাকি অপূর্ব সুন্দর! তাদের চেহারা নাকী দেবদূতের মতোন। তাদের হাতের অস্ত্র দিয়ে তারা চোখ বন্ধ করে পৃথিবীর সব দুষ্টু মানুষকে শেষ করে দিতে পারে।

ত্রিনা বলল, তাদের মাথায় অনেক বুদ্ধি। তাদের বুকে নাকী সিংহের মতো সাহস।

নুবা বলল, পৃথিবীর সব মানুষ নাকী তাদের ভালোবাসে।

ত্রিনা বলল, আমরাও তাদেরকে ভালোবাসি। আমি আর নুবা প্রতি রাতে তাদের জন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি।

নুবা ছেলেমানুষের মতো বলল, আর তুমি জান। সেই দুজনের একজনের নাম রুহান রুহান! ঠিক তোমার মতোন। কী আশ্চর্য, তাই না?

রুহান ছোট দুটি বোনকে কাছে টেনে এনে ফিসফিস করে বলল, হ্যাঁ খুব আশ্চর্য।

মা একদৃষ্টে তার সন্তানের দিকে তাকিয়েছিলেন হঠাৎ কাঁপা গলায় বললেন, রুহান।

কী মা?

তুই–তুই সেই রুহান। তাই না?

রুহান এক মুহূর্তের জন্যে চিন্তা করল, তারপর বলল, হ্যাঁ মা। আমি সেই রুহান রুহান।

—XOXO—