যুধিষ্ঠিরের মনঃশান্তি—রাজ্যপালন
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ভগবান কৃষ্ণ, বেদব্যাস, দেবস্থান, নারদ, ভীম, দ্রৌপদী, সহদেব, অর্জ্জুন ও অন্যান্য শাস্ত্রজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিগণ এইরূপ আশ্বাস প্রদান করিলে ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির এককালে বন্ধুবিয়োগজনিত শোক পরিত্যাগ করিলেন। অনন্তর তিনি পুনরায় আত্মীয়-স্বজনদিগের ঔর্দ্ধদেহিক কাৰ্য্য অনুষ্ঠান এবং দেবতা ও ব্রাহ্মণগণের যথোচিত সৎকার করিয়া প্রশান্ত মনে পৃথিবী শাসন করিতে কৃতনিশ্চয় হইলেন। পরে একদা তিনি মহর্ষি ব্যাস, নারদ ও অন্যান্য মহর্ষিগণকে সম্বোধনপুৰ্ব্বক কহিলেন, “হে তপোধনগণ! আমি আপনাদিগের বিবিধ উপদেশপ্রভাবে সম্পূর্ণ আশ্বাস লাভ করিয়াছি; এক্ষণে আমার আর অণুমাত্রও দুঃখ নাই। হে পিতামহ বেদব্যাস! আপনি আমাকে প্রভূত অর্থপ্রাপ্তির উপায় নির্দ্দেশ করিয়াছেন। আমি অচিরাৎ ঐ অর্থ লাভ করিয়া উহাদ্বারা যজ্ঞানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইব। অতঃপর আমরা আপনার প্রভাবে পরিক্ষিত হইয়া অবিলম্বে বিবিধ অদ্ভূত পদার্থপরিপূর্ণ হিমালয়ে গমন করিব। আপনি, দেবর্ষি নারদ ও দেবস্থান, আপনারা আমাকে বহুবিধ শুভবিষয়ে উপদেশ প্রদান করিয়াছেন। যে ব্যক্তির অদৃষ্ট মন্দ, সে দুঃখে নিপতিত হইলে কদাচ এইরূপ সদ্গুরুলাভে সমর্থ হয় না।”
মহাত্মা যুধিষ্ঠির অনুনয়সহকারে এই কথা কহিলে, তাঁহারা কৃষ্ণের ও অর্জ্জুনের অনুজ্ঞালাভপূৰ্ব্বক তাঁহাদিগের সমক্ষেই অন্তর্হিত হইলেন। তখন ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ভীষ্ম, কর্ণ প্রভৃতি বীরগণের পারলৌকিক শুভসাধনোদ্দেশে ব্রাহ্মণগণকে প্রচুর পরিমাণে অর্থদান ও শৌচকার্য্যের অনুষ্ঠানপূর্ব্বক ধৃতরাষ্ট্রকে অগ্রবর্ত্তী করিয়া হস্তিনাপুরে প্রবেশ করিলেন এবং তথায় সেই প্রজ্ঞাচক্ষু মহাত্মাকে সান্ত্বনা করিয়া ভ্রাতৃগণসমভিব্যাহারে পৃথিবী শাসন করিতে লাগিলেন।