ধৃতরাষ্ট্রের যথেচ্ছ ধনদান
বৈশম্পায়ন বলিলেন, মহাত্মা বিদুর এই কথা কহিলে অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠির ও অৰ্জ্জুনের প্রতি সাতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া সেইদিন অবধি কার্ত্তিকী পূর্ণিমা পৰ্য্যন্ত ধনদান করিয়া বনগমন করিতে অভিলাষ করিলেন। অনন্তর তিনি ভীষ্ম, দ্রোণ, সোমদত্ত, বাহ্লীক এবং দুৰ্য্যোধন প্রভৃতি পুত্রগণ ও জয়দ্রথ প্রভৃতি সুহৃগণের প্রত্যেকের নাম উল্লেখপূৰ্ব্বক অন্ন, পান, যান, আচ্ছাদন, মণিমুক্তাদি বিবিধ রত্ন, সুবর্ণ, দাস, দাসী, মেষ, ছাগ, কম্বল, গ্রাম, ক্ষেত্র, অলঙ্কৃত অশ্ব, হস্তী ও বারাঙ্গনাসমুদয় প্রদান করিতে লাগিলেন। ঐ সময় যুধিষ্ঠিরের আদেশানুসারে সেই ধৃতরাষ্ট্রানুষ্ঠিত শ্রাদ্ধযজ্ঞ এককালে ধনরত্নে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। গণক ও লেখকগণ দিবারাত্রি যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞানুসারে ‘মহারাজ! এই যাচক ব্রাহ্মণগণকে কি প্রদান করিতে হইবে, আজ্ঞা করুন’ বলিয়া ধৃতরাষ্ট্রকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল এবং অন্ধরাজ তাঁহাকে শত মুদ্রা প্রদান করিতে কহিলেন, তাহারা যুধিষ্ঠিরের আদেশানুসারে তাঁহাকে সহস্র মুদ্রা এবং যাঁহাকে সহস্র মুদ্রা অর্পণ করিতে আদেশ করিলেন, তাঁহাকে দশসহস্র মুদ্রা প্রদান করিতে আরম্ভ করিল।
এইরূপে রাজা ধৃতরাষ্ট্র সলিলবর্ষী জলধরের ন্যায় ধনবৰ্ষণপূর্ব্বক ব্রাহ্মণগণের তৃপ্তিসাধন করিয়া পরিশেষে প্রচুর পরিমিত বিবিধ মিষ্টান্নদ্বারা সমুদয় বর্ণের ব্যক্তিগণকে আহার করাইয়া পুত্র, পৌত্র ও পিতৃগণের ঔর্দ্ধদেহিক কাৰ্য্য সম্পাদন করিলেন। তৎপরে তিনি আপনার ও গান্ধারীর পারলৌকিক হিতসাধনার্থ পুনরায় ব্রাহ্মণগণকে ধনদানে প্রবৃত্ত হইলেন। মহামতি অন্ধরাজ এইরূপে ক্রমাগত দশদিন অনবরত অর্থদান করিয়া পরিশেষে নিতান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া দানযজ্ঞ সমাপনপূর্ব্বক বন্ধুবান্ধবগণের আনৃণ্য [ঋণমুক্তি] লাভ করিলেন। তিনি যে কয়েক দিন ধনদানে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, সেই কয়েক দিন তাঁহার ভবনে সৰ্ব্বদা নট ও নর্ত্তকগণ নৃত্য করিয়াছিল।