জন আর তিষা তাদের ল্যাপটপের সামনে বসে আছে। গত কয়েকদিন মিশকার সাথে কথা বলে তারা অনেক কিছু ভিডিও করেছে। সেখান থেকে কেটে কেটে বিভিন্ন অংশ জুড়ে দিয়ে তারা দুই মিনিটের একটা ক্লিপ তৈরী করেছে। দুজনে বসে এখন তারা সেটা দেখছে। তিষার কোলে মিশকা বসে আছে যখনই ল্যাপটপে তার ছবি ভেসে ওঠে মিশকা আনন্দে আটখানা হয়ে যায়। সে হাততালি দেয় এবং হাত নেড়ে নেড়ে সাইন ল্যাংগুয়েজে বলতে থাকে, “এটা আমি। এটা আমি।” তারপর খিলখিল করে হাসতে থাকে।
জন তিষাকে বলল, “এটা আমাদের ফাইনাল ভিডিও। আমরা এটা আপলোড করব।”
তিশা বলল, “আরো একবার দেখে নিই। শেষবার। দেখি সবকিছু ঠিক আছে কী না।”
জন বলল, “ঠিক আছে।” তারপর ল্যাপটপের মাউসে একবার ক্লিক করল, সাথে সাথে ভিডিওটা শুরু হয়ে যায়। প্রথমে সেখানে একটা লেখা ভেসে আসে।
“সবার ধারণা এনিমেন কথা বলতে পারে না। এনিমেনের বুদ্ধিমত্তা খুব নিচু পর্যায়ের। কিন্তু এটি কী সত্যি? “সত্যি নয় কারণ এ্যানিম্যানকে আসলে সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখানো সম্ভব। সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখানোর পর আমরা তার চিন্তা ভাবনার কথা তাদের কাছ থেকেই জানতে পারি।”
লেখাটি শেষ হবার সাথে সাথে মিশকাকে দেখা গেল। সে সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলছে। সবাই সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বুঝতে পারে না তাই প্রত্যেকবার মিশকা সাইন ল্যাংগুয়েজে কিছু বলার পর নিচে তার কথাগুলো লিখে দেয়া হয়েছে। মিশকার কথা গুলো এরকম:
“আমি মিশকা। আমি ভালো। তুমি ভালো। আইসক্রিম ভালো। আইসক্রিম ঠাণ্ডা কিন্তু ভালো। কলা ভালো। (হাসি) টেলিভিশন ভালো না। টেলিভিশন খুব বেশী কথা। খুব বেশী রাগ। টেলিভিশন গুলি। টেলিভিশন শব্দ। টেলিভিশন ভালো না। (হাসি) আমি আগে খুব ছোট। এখন বড়। আমি এখন আনন্দ। আমি আগে ছোট। আগে কষ্ট। আমি আগে খুব কষ্ট। আমি ব্যথা। চাবুক। ইলেকট্রিক চাবুক। আমি কাঁদি। আগুন ব্যথা। (হাসি) অনেক ছোট ছোট আমি। অনেক অনেক আমি। আমরা খুব ব্যথা। আমরা খুব কষ্ট। আমরা পালাই। আমরা দৌড়াই। আমরা চাবুক। ব্যথা। কষ্ট। রক্ত। আমরা হাত রক্ত। পিঠ রক্ত। খুব রক্ত। আমরা দুঃখ। (হাসি) আমরা ঘরে বন্ধ। ঘর গরম। ঘর অনেক গরম। আমরা মারামারি। আমরা ধাক্কা ধাক্কি। আমরা চাবুক। ইলেট্রিক চাবুক। অনেক কষ্ট। (হাসি) আমরা ভয়। অনেক ভয়। আমরা। খুব বেশী ভয়। আমরা দৌড়াই। আমরা চোখ বন্ধ। আমরা ভয় পাই। আমরা খুব বেশী ভয় পাই। আমরা চিৎকার। আমরা অনেক চিৎকার। আমি আগে ছোট। আমি ভয়, আমি কষ্ট। আমি ব্যথা। আমি এখন বড়। আমি এখন আনন্দ আমি এখন ভালো। খুব ভালো। আমি ভালো। তুমি ভালো। সব ভাল। (হাসি) আইসক্রিম ভালো।”
মিশকার ভিডিও এখানে শেষ। তারপর দেখা গেল তার হাতে একটা আইসক্রিম কোন এবং মিশকা খুব তৃপ্তি করে সেই আইসক্রিমটা খাচ্ছে। তখন স্ক্রীনে আবার লেখা ফুটে উঠল।
“এই এনিম্যানের কথায় কী এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেনি যে তারা যখন ছোট ছিল তখন তাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে? তারা ভয় পেয়েছ? তারা আতংকিত হয়েছে, প্রাণভয়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে? এনিম্যানের মনের কথা শুনলে এরকম আরো অনেক অজানা কথা বের হয়ে আসবে। আপনি কী আপনার এনিম্যানের মনের ভেতরের অজানা কথা জানতে চান? তাহলে তাকে সাইন ল্যাংগুয়েজ শিখিয়ে দিন। তার সাথে কথা বলুন। আপনি নিজেই দেখুন এনিম্যানের ভেতরে কী আনন্দ, নাকী তার মনের গভীরে এখনো লুকিয়ে আছে দুঃখ বেদনা আর আতংক। তার সুখের হাসিটি কী
সত্যিকারের হাসি নাকী এর পিছনে আছে গভীর যন্ত্রণা। আপনাকে এই ভিডিওটি বিশ্বাস করতে হবে না, আপনি নিজেই আপনার এনিম্যানকে জিজ্ঞেস করুন।” ভিডিওটা এখানেই শেষ। জন আর তিষা দুজনেই ভিডিওটা দেখে মাথা নাড়ল। তারা যেটা বলতে চেয়েছে সেটা বেশ ভালো ভাবেই এর মাঝে প্রকাশ পেয়েছে।
তিশা বলল, “এখন আমরা কী করব?”
“আমরা এটাকে আপলোড করব।”
“কখন?”
জন মাথা চুলকে বলল, “এক দুইদিন দেখি। একটু চিন্তা করি। আগেই তুমি কিছু করো না। ঠিক আছে?”
“ঠিক আছে।”
কিন্তু তিষা অনেকটা না বুঝেই সেই রাতে ভিডিওটা আপলোড করে দিল। জন যখন সেটা জানতে পেরেছে তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।