১৪. গ্যাব্রিয়েলার মুখের চেহারা দেখে

গ্যাব্রিয়েলার মুখের চেহারা দেখে অর্জুন চোখ ফেরাল। বালির ওপরে নারী-পুরুষেরা হেঁটে যাচ্ছে। ভদ্রমহিলার নজর যার দিকে সে দাঁড়িয়ে আছে পেছন ফিরে। যেন সমুদ্রের ঢেউ দেখতেই ব্যস্ত মানুষটি।

আপনি ওকে চেনেন? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

হ্যাঁ। জিমের কাছে আসত ও। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন গ্যাব্রিয়েলা।

জিমের বন্ধু?

না। জিম ওকে সহ্য করতে পারত না! কারণটা প্রথমে আমাকে বলেনি জিম। তবে ওরা যে একসঙ্গে কাজ করে এটা বুঝতে পারতাম। আর এখন জানি ওরা একসঙ্গে কী কাজ করত। কিন্তু ও এখানে কী করছে?

হয়তো বেড়াতে এসেছে।

অসম্ভব। ধান্দা ছাড়া এরা এক পা-ও বাড়ায় না। আমার খুব ভয় করছে। জ্যাক নিশ্চয়ই জানতে পেরেছে আমি এখানে এসেছি।

ইতিমধ্যে লাঞ্চ এসে গেল। জ্যাক দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের গা ঘেঁষে। ওখান থেকে তার পক্ষে এত উঁচু রেস্টুরেন্টের ভেতরটা দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু ওই ভঙ্গি বলছে রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে ও আদৌ কৌতূহলী নয়। আর তা না হলে গ্যাব্রিয়েলার অস্তিত্ব ও জানে না।

খাবার খেতে মন্দ লাগছে না। সামুদ্রিক চিংড়িকে ঝাল ছাড়া মশলা প্রায় না দিয়ে রান্না করা হয়েছে। কিন্তু খেতে-খেতেও নজর রাখছিল অর্জুন। লোকটা এবার একটু-একটু করে কাঠের ব্রিজের দিকে এগোচ্ছে। তখনই সিদ্ধাকে দেখতে পেল ওরা। সিম্বা তার নৌকো নিয়ে ফিরে আসছে। নৌকোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সিম্বাকে ছিপছিপে কালো বেতের মতো দেখাচ্ছিল। খুশিতে হাসছে সিম্বা। এত দূর থেকেই তার দাঁতগুলো মুক্তোর মতো ঝকঝকে দেখাচ্ছে।

অর্জুন দেখল লোকটা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এখন আর সমুদ্র নয়, তার নজর সিম্বার দিকে। তার মানে লোকটা সিম্বাকে অনুসরণ করে এখানে এসেছে নিউ ইয়র্ক থেকে? না। তা হলে ওদের পেছনেও লোক লেগে যেত। সিম্বাকে ও দেখেছে এখানেই। কিন্তু লোকটার মতলব কী? মিস্টার আলাম্বার ওপর প্রতিশোধ নিতে যদি সিম্বার ক্ষতি করতে চায় তা হলে!

অর্জুন উঠে দাঁড়াল, এক্সকিউজ মি। আমাকে উঠতে হচ্ছে।

কেন? মেজর জানতে চাইলেন।

আমার মনে হচ্ছে সিম্বা এখনই বিপদে পড়বে। জ্যাক মিস গ্যাব্রিয়েলার জন্যে এখানে আসেনি। দেখুন ও কাঠের প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ওই পথেই সি ফিরে আসবে। অর্জুন বলল।

গ্যাব্রিয়েলা বললেন, এত ব্যস্ত হবেন না। আমি তো বলেছি এই শহরটাকে কন্ট্রোল করে মাফিয়ারা। জ্যাকের সাহস হবে না ওই মেয়েটির কোনও ক্ষতি এখানে প্রকাশ্যে করার। উলটে ওখানে গিয়ে আপনি নিজেকে জাহির করে বিপদ ডেকে আনবেন।

কিন্তু রাস্তায় নেমে মেয়েটা তো আমাদের খুঁজবে।

এখানে কাউকে খুঁজে পেতে চাইলে পাঁচ মিনিটেই পাওয়া যায়, অবশ্য, যাকে খুঁজছেন সে যদি সহযোগিতা করে। খাবারটা শেষ করুন, প্লিজ।

খেতে-খেতে অর্জুন দেখল সিম্বা কাঠের প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে হেঁটে আসছে বেশ স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে। এবং তখনই ওর মনে পড়ল নকল লকেটটা যেটা আজই বানানো হয়েছিল সেটা সিম্বার কাছেই রয়ে গেছে। ওই লকেট যদি জামার বাইরে ঝুলিয়ে রাখে তা হলে জ্যাক সহজেই দেখে ফেলবে। এতদূর থেকে লকেটটাকে দেখার কোনও উপায় নেই। অর্জুন ঝটপট জল খেয়ে বলল, আমি যাচ্ছি, আপনারা এখানেই অপেক্ষা করুন। সে দ্রুত রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এল।

এই সময় সমুদ্রের ধারের এই উঁচু রাস্তায় কিছু টুরিস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাওয়া বইছে এখন। তাই সমুদ্রের বুক জুড়ে ভাঙা-ভাঙা ঢেউ উঠছে। যেন জলের ওপর আঁচড় কাটছে বাতাস। প্ল্যাটফর্মের যেখানে শুরু সেখানে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাক। সিজারের মূর্তির পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ করছিল অর্জুন। সিম্বা এগিয়ে আসছে। মুখোমুখি হতেই জ্যাক তাকে কিছু বলল। সেটা শুনে সিম্বা হাত নেড়ে হেসে কিছু জবাব দিল। এত দূর থেকে কথা না শোনা গেলেও অর্জুন দেখতে পেল সিম্বার জামার ওপরে লকেটটা নেই। সে স্বস্তি পেল। কিন্তু জ্যাক সিম্বার সঙ্গে কথা বলছে কেন? ওদের ভাবভঙ্গিতে বোঝাই যাচ্ছিল এর আগে কখনও পরিচয় ছিল না।

অর্জুন দেখল ওরা কথা বলতে বলতে রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়াল। এবার সিম্বা ঘাড় নাড়ছে। যেন জ্যাকের কোনও প্রস্তাবে অসম্মতি জানাচ্ছে। সে হাত তুলে ক্যাসিনোগুলো দেখিয়ে দিল। জ্যাক দূরের রেস্টুরেন্টটাকে দেখাল। মরেছে! ওখানে এখনও গ্যাব্রিয়েলা এবং মেজর রয়েছেন!

কিন্তু সিম্বা রাজি হচ্ছে না। ওরা কথা বলতে বলতে হাঁটছিল। সিম্বা খুব কায়দা করে কথা বলছে। বলতে বলতে হঠাৎ তার আঙুল চলে গেল জামার নীচে। এবং অর্জুন আতঙ্কিত হয়ে দেখল কথা বলার সময় অন্যমনস্কভাবে সিম্বা আঙুলে লকেটের চেন ঘোরাচ্ছে। জ্যাক কিছু বলতে গিয়ে মুখ তুলে সেটা দেখতে পেয়েই দাঁড়িয়ে গেল। তারপর একটু ঝুঁকে কিছু বলতেই সিম্বা দ্রুত লকেটটাকে জামার মধ্যে চালান করে দিল।

এর পরেই ওদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। জ্যাক যা বলছে সিম্বা তা শুনতে রাজি নয়। সে কিছুতেই জ্যাকের সঙ্গে যাবে না। রেগেমেগে সিম্বা তাজমহল ক্যাসিনোর সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেল। সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে সেলুলার টেলিফোন বের করে বোতাম টিপে কথা বলতে লাগল জ্যাক।

অর্জুন দৌড়ল। যে করেই হোক জ্যাকের আগে সিম্বার কাছে পৌঁছতে হবে। খবরটা পাঠিয়ে জ্যাক নিশ্চয়ই সিম্বার খোঁজে ক্যাসিনোতে ঢুকবে। ক্যাসিনোতে পৌঁছেই সিম্বাকে দেখতে পেল অর্জুন। কাছে গিয়ে বলল, যত তাড়াতাড়ি পারো পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে রাস্তায় নিয়ে এসো। আমরা ওখানে যাচ্ছি।

কেন? সিম্বা জিজ্ঞেস করল অবাক হয়ে।

খুব বিপদ আসছে। কথা না বলে বাঁ দিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাও। অর্জুনের কথা শেষ হতেই সিম্বা বাধ্য মেয়ের মতো ছুটল। ও চোখের আড়াল হতেই জ্যাক ডান দিকের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে চারপাশে তাকাতে লাগল। অর্জুন দ্রুত একটা স্লট মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখার ভান করতে লাগল।

জ্যাককে একটু বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিল। তার চোখ তন্নতন্ন করে সিদ্ধাকে খুঁজল। একটু-একটু করে জ্যাক এগিয়ে যাচ্ছে ক্যাসিনোর মধ্যে। তারপর পকেট থেকে সেলুলার বের করে কিছু বলল। এখন অর্জুন ওর পেছনে। নিশ্চয়ই জ্যাক দলের লোকদের সাহায্য চাইছে। অর্জুন খুব নিরীহ ভঙ্গিতে ক্যাসিনোর বাইরে চলে এল।

মেজর এবং গ্যাব্রিয়েলা ততক্ষণে রেস্টুরেন্ট থেকে রাস্তায় নেমে এসেছেন। অর্জুন ইশারা করল দ্রুত তাকে অনুসরণ করতে। যে পথ দিয়ে তারা সমুদ্রের দিকে এসেছিল সেই পথে সে জোরে হাঁটতে লাগল। মাঝে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছে মেজর তাকে অনুসরণ করছেন, গ্যাব্রিয়েলাও সঙ্গে রয়েছেন।

পার্কিং-এর গেটে পৌঁছনো মাত্র সিম্বা তার গাড়ি নিয়ে চলে এল সামনে। অর্জুন ঝটপট সামনের সিটে উঠে বসে বলল, ঝটপট এখান থেকে বেরিয়ে চলো।

কেন? আমি তো কোনও কারণ বুঝতে পারছি না। সিম্বা খুব অবাক হচ্ছিল।

যে-লোকটার সঙ্গে কথা বলছিলে সে খুব মারাত্মক দলের লোক। তোমার ওই লকেটটার জন্যে খুন করতেও দ্বিধা করবে না। অর্জুন কথা শেষ করা মাত্র মেজররা চলে এলেন। পেছনের সিটে বসে হাঁফাতে হাঁফাতে মেজর জিজ্ঞেস করলেন, কী হল হে? এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছ?

সিম্বা গাড়ি চালাচ্ছিল। অর্জুন সংক্ষেপে বাংলায় ঘটনাটা বলতে মেজর ইংরেজিতে সেটার তর্জমা করলেন। গ্যাব্রিয়েলা বললেন, সর্বনাশ। আমি এই ভয়টাই করছিলাম। আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?

নিউ ইয়র্ক।

অসম্ভব! আমরা পৌঁছতে পারব না।

গাড়ি তখনও ক্যাসিনোগুলোর পেছনের পথ দিয়ে ছুটছিল। গ্যাব্রিয়েলা বললেন, ওই ফাঁকা হাইওয়ে দিয়ে ঘণ্টা দুয়েক যেতে হবে। তার মধ্যেই ওরা আমাদের শেষ করে দেবে। মাই গড!

মেজর বললেন, তা হলে পুলিশস্টেশনে চলো।

গ্যাব্রিয়েলা বললেন, যেতে পারবেন কিন্তু ওখান থেকে যখন বের হবেন তখন কে আপনাকে সিকিউরিটি দেবে? গাড়িটা ডান দিকে ইউ-টার্ন নিলে ভাল হয়।

অর্জুন সিম্বাকে বলল, উনি যা বলছেন তাই করো।

সিম্বা ইউ টার্ন নিতেই রেসিডেন্স এলাকায় গাড়ি ঢুকে পড়ল। দুপাশে ছোট-ছোট কটেজ প্যাটার্নের বাড়ি। সেগুলো ছাড়াতেই রাস্তাটা সমুদ্রের গা ঘেঁষে চলতে থাকল। মাঝে-মাঝে বাংলো বাড়ি চোখে পড়ছে বাঁ দিকে, ডান দিকে সমুদ্র। এরকম একটি বাড়ির গেটে গাড়ি থামালেন গ্যাব্রিয়েলা।

এ বাড়ির সামনে কোনও বাগান নেই। ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত সিঁড়ির মতো লম্বা কতগুলো ধাপ নীচে নেমে এসেছে। গ্যাব্রিয়েলা গাড়ি থেকে নেমে গেটের গায়ে লাগানো একটা বোতাম টিপলেন। তিরিশ সেকেন্ড বাদে সেখান থেকেই আওয়াজ ভেসে এল। বেশ জড়ানো গলায় আমেরিকান ইংরেজি যা অর্জুনের কাছে স্পষ্ট নয় তবে আন্দাজ করা যায়। গ্যাব্রিয়েলা বললেন, আমি গ্যাব্রিয়েলা। আপনার মেয়ের সঙ্গে আমি একবার এই বাড়িতে এসেছিলাম। ও আমার সঙ্গে স্কুলে পড়ত।

কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ। তারপর গেট খুলে গেল। সমস্ত ব্যাপারটি চমকপ্রদ ভারতীয়দের কাছে কিন্তু ইলেকট্রনিক সিস্টেমের কল্যাণে এদের কাছে জলভাত। ডান দিক দিয়ে ওপরের ওঠার রাস্তা ধরে গাড়ি নিয়ে গেল সিম্বা। বাড়িটার সামনে গাড়ি থামতেই একজন স্বাস্থ্যবান লোক বেরিয়ে এল। লোকটার চেহারায় বেশ কাঠখোট্টা ভাব রয়েছে।

গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে লোকটা জিজ্ঞেস করল, গ্যাব্রিয়েলা কে?

আমি।

কেন এসেছেন?

মিস্টার মরিসন আমার বন্ধুর বাবা, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই।

কিন্তু কেন?

সেটা ওঁকেই বলব।

নো ম্যাডাম, আপনাকে এখনই বলতে হবে।

গ্যাব্রিয়েলা ইতস্তত করলেন, আমরা একটা বিপদে পড়েছি।

কীরকম বিপদ?

কিছু লোক আমাদের চেজ করছে।

কারা?

তাদের আমরা জানি না।

এঁরা কারা?

আমার বন্ধু।

লোকটা কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, তোমার বন্ধুদের নেমে আসতে বলো।

গ্যাব্রিয়েলা ইশারা করতে ওরা গাড়ি থেকে নামল। লোকটা জিজ্ঞেস করল, তোমাদের কারও কাছে কোনও ধরনের অস্ত্র আছে?

মেজর বললেন, অস্ত্র থাকবে কেন?

লোকটা এগিয়ে গিয়ে মেজরের কোমর এবং পকেট ওর থেকে হাতড়ে দেখে অর্জুনের কাছে গেল। তারপর সন্তুষ্ট হয়ে বলল, আশা করি মহিলারা আমার সঙ্গে মিথ্যে কথা বলছে না। এবার ভেতরে এসো। মেজর চাপা গলায় বললেন, ইনসাল্টিং।

ওরা যে-ঘরে বসল তার চারপাশে কাচের দেওয়াল। লোকটি চলে গেলে মেজর জিজ্ঞেস করলেন, আপনার বন্ধুর বাবা কী করেন?

আমি ঠিক জানি না। এর আগেরবার যখন এসেছিলাম তখন এমন কড়াকড়ি ছিল না। এর মধ্যে বেশ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনার বন্ধু এখন কোথায়?

অনেকদিন তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।

এই সময় পাশের দরজা খুলে গেল। সিল্কের পোশাক পরা এক বৃদ্ধ এগিয়ে আসতেই ওরা উঠে দাঁড়াল। গ্যাব্রিয়েলার দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ বললেন, হ্যাঁ। আমি তোমাকে আগে একবার দেখেছি। বোসো।

ওরা বসতেই দেখল সেই লোকটা পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সতর্ক ভঙ্গিতে। উলটোদিকের চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলেন, কারা চেজ করছে?

গ্যাব্রিয়েলা অর্জুনের দিকে তাকালেন। অর্জুন চুপচাপ বসে ছিল। গ্যাব্রিয়েলা যতটুকু পারলেন গুছিয়ে ঘটনাটা বললেন।

বৃদ্ধ চুপচাপ শুনছিলেন। ওঁর সাদা চুল, চুপসে যাওয়া গাল সত্ত্বেও একটা ঋজু ব্যাপার বসার ভঙ্গিতে ছিল।

কথা শোনার পর বৃদ্ধ বললেন, লকেটটা দেখি।

সিম্বা গলায় হাত দিল। লকেটটাকে খুলে সে গ্যাব্রিয়েলাকে দিল।

গ্যাব্রিয়েলা ওটা বৃদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়ার আগেই সেই লোকটা এগিয়ে এসে ওটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে বৃদ্ধের হাতে তুলে দিল।

লকেটটাকে দেখতে-দেখতে বৃদ্ধ বললেন, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে। এটি মহামূল্যবান বস্তু। এটা থাকার কথা এই ইন্ডিয়ান ছেলেটির কাছে। কিন্তু তা না থেকে এই আফ্রিকান মেয়েটির গলায় ছিল কেন?

সিম্বা বলল, আমি দেখতে নিয়েছিলাম।

দেখতে নিয়েছিলে, দেখে ফেরত দাওনি কেন?

মনে ছিল না। পরে ছিলাম—!

তোমার মনে না থাকতে পারে কিন্তু যার জিনিস তার তো এটাকে হাতছাড়া করার কথা নয়। তাই না?

অর্জুন বলল, আমি ভেবেছিলাম ওর কাছে থাকলে কেউ ওকে সন্দেহ করবে না। এখান থেকে যাওয়ার আগে আমি ফেরত নিয়ে নিতাম।

কিন্তু ও যদি না দিত।

তার মানে?

ও একজন আফ্রিকান মেয়ে, ওর সমর্থন স্বদেশিদের ওপর থাকবেই। অবশ্য এটা যদি ওরিজিন্যাল লকেট না হয় তা হলে এমন ঝুঁকি নেওয়াই চলে। যাকগে, আমার মেয়ের বন্ধু তুমি। কিন্তু তুমি কি জানো আমার মেয়ে মরে গেছে? বৃদ্ধের কথায় হতভম্ব হয়ে গেলেন গ্যাব্রিয়েলা।