১৪. গোলকধাঁধার ভেতর

গোলকধাঁধার ভেতর একটি অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখা গেল। ইরিনা মীরের বা হাত শক্ত করে ধরে ছোট ছোট পা ফেলছে। দুজনের পাশাপাশি পা ফেলা মুশকিল। কষ্ট করে হাঁটতে হচ্ছে, তবু তারা হাসিখুশি। মীর বলল, সময়টা আমাদের ভালোই কাটছে, কি বল?

হ্যাঁ ভালোই।

খিদে লাগছে না?

উঁহু।

বুঝলে ইরিনা, আমি একটি চমৎকার জিনিস নিয়ে ভাবছি, খুবই চমৎকার।

কী সেই চমৎকার জিনিস?

গুহাটা নিয়ে ভাবছি। কি করে এই গুহাকে আরো জটিল করা যায়। যা করতে হবে, তা হচ্ছে-দিক গুলিয়ে ফেলার ব্যবস্থা। যাতে কিছুক্ষণ পরই দিক নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। যেমন ধর একটি কেন্দ্রবিন্দু না করে যদি কয়েকটি কেন্দ্ৰবিন্দু করা হয়। চক্রাকার পথ থাকবে। কোনো দিকের চক্র ঘুরবে ঘড়ির কাটার মতো, কোনো দিকে তার উল্টো। এতে দিক গুলিয়ে ফেলা খুব সহজ হবে। যে ঢুকবে সে আর বেরুতে পারবে না। হা হা হা।

এটা কি খুব একটা মজার ব্যাপার হল?

তোমার কাছে মজার ব্যাপার বলে মানে হচ্ছে না?

মোটেই না। আপনি যা বলেন, কোনোটাই শুনে আমার ভালো লাগে না।

মীর অবাক হয়ে বলল, আশ্চর্য তো!

ইরিনা বলল, এক কাজ করলে কেমন হয়- এমন কিছু বলুন যা আপনার নিজের কাছে ভালো লাগে না। আপনি মজা পান না।

তাতে কী হবে?

হয়তো সেটা শুনে আমি মজা পাব।

এটা তো মন্দ বল নি। কিছু কিছু জিনিস আছে, যা নিয়ে চিন্তা করতে আমার সত্যি ভালো লাগে না, যেমন ধর নিষিদ্ধ নগরীর অমর মানুষ।

অমর মানুষদের নিয়ে কথা বলতে আপনার ভালো লাগে না?

মোটেই না।

তাহলে ওদের নিয়ে কথা বলুন। হয়তো আমার সেই কথাগুলো শুনতে ভালো লাগবে। আসুন। এক জায়গায় বসি। হাঁটতে হাঁটতে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে।

তারা পাশাপাশি বসল। ইরিনা তার ডান হাত রেখেছে। মীরের কোলে। যেন কাজটা অনিচ্ছাকৃত। হঠাৎ করে রাখা। মীর ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে বলল, অমর মানুষেরা বিরাট এক অন্যায় করেছে, এই জন্যেই ওদের কথা বলতে বা ভাবতে আমার ভালো লাগে না।

কী অন্যায়?

ধ্বংসযজ্ঞের যে ব্যাপারটা ঘটেছে, সেটা ঘটিয়েছে ওরাই। পৃথিবীর সব মানুষ মেরে শেষ করে ফেলেছে। অল্প কিছু মানুষকে ওরা বাঁচিয়ে রেখেছে। নতুন পৃথিবী ওদের ইচ্ছামতো। ওরা তৈরি করেছে। প্রথম শহর, দ্বিতীয় শহর, তৃতীয় শহর।

বুঝলে কী করে?

দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে সব সময় চার হয়। পাঁচ কখনো হয় না। আমি তোমনি একটি ঘটনার সঙ্গে অন্য একটি ঘটনা যোগ করেছি। ইরিনা, আমি তো তোমাকে কতবার বলেছি, আমি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। অগ্রসর হই যুক্তির পথে।

যুক্তি ভুলও হতে পারে।

তা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে হয় নি। জিনিসটা তুমি এভাবে চিন্তা কর। একদল বিজ্ঞানী অমর হবার ওষুধপত্র নিয়ে মাটির নিচে নিজেদের একটা নগর সৃষ্টি করলেন। মৃত্যুহীন এসব মানুষ নানান রকম পরিকল্পনা করতে লাগলেন, কী করে নতুন সমাজ তৈরি করা যায়। স্থায়ী সমাজব্যবস্থার পথে যাওয়া যায়। কোনো পরিকল্পনাই কাজে লাগছে না, কারণ পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ, অসংখ্য মতবাদ। তারা ভাবলেন, সব নষ্ট করে দিয়ে নতুন করে শুরু করা যাক। যা ভাবলেন, তা-ই করলেন। একের পর এক পারমাণবিক বিস্ফোরণ হতে লাগল। পৃথিবীর মানুষ শেষ হয়ে গেল। তাঁদের গায়ে আঁচড়ও লাগল না।

আপনার থিওরি ভুলও হতে পারে। পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয়তো তারা ঘটান নি। অজানা কারণেই ঘটেছে।

মীর গম্ভীর মুখে বলল, আমার থিওরিতে কোনো ভুল নেই। কারণ ইতিহাস বই-এ আমরা পড়েছি, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আমার মানুষরা মাটির নিচ থেকে হাজার হাজার সাহায্যকারী রোবট পাঠান। এসব রোবটরা বিস্ফোরণের পর কী কী করতে হয় সব জানে। তারা মানুষদের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এর মানে কি ইরিনা?

বুঝতে পারছি না। কী মানে?

এর মানে হচ্ছে বিস্ফোরণের জন্যে অমর মানুষরা তৈরি ছিলেন। সব তাদের পরিকল্পনা মতো হয়েছে। তৈরি থাকতে আর অসুবিধা কি?

ইরিনা কোনো কথা বলল না। মীর বলল, এস, অন্যকিছু নিয়ে কথা বলি। কুৎসিত কিছু মানুষকে নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।