চৌদ্দ – গোরাং ডাক্তার ফিরে এলেন
এলাকার কিংবদন্তিতে কোনো এক কেদার রাজার কথা আছে। আঁরোয়া জঙ্গলের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে পশ্চিমে হিজল বিলের তৃণভূমিতে পেরিয়ে প্রকাণ্ড আলপথ চলে গেছে গোবরহাটির দিকে—স্বর্ণলতার শ্বশুরবাড়ির দালানের নিচে তার শেষ। পাঁচ মাইল লম্বা এই আঁকাবাকা আলপথটা বাঁধের মতো দেখতে। দুপাশে কুল শেয়ালকুল বৈঁচির ঝোপঝাড়; বাবলা শ্যাওড়া ভাঁট হিজল যজ্ঞডুমুর একলাদোকলা দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই পথটার নাম ‘কেদারের আল’। কোনো এক কেদার রাজা রাতারাতি নাকি তৈরি করেছিল।
কেদার রাজা বা তার আলপথের যেমন কিংবদন্তি আছে, তেমনি আছে জ্যোৎস্নার রাতে ওই পথে ঘোড়া ছুটিয়ে যাওয়া এক সাদা পোশাকের সওয়ারের জনকথা। গ্রামবৃদ্ধ বলে, সে সওয়ার মেয়েমানুষ। সে কেদার রাজার মেয়ে। আর, যারা নাকি তাকে দেখেছিল—হাটুরে কিংবা গম খেতে রাতের পাহারা দিতে আসা কোনো চাষা কিংবা হিজলের বিলে নিশিরাতে কাঁধে বিশাল প্রজাপতির ডানার মতন ‘বেসাল’ জাল নিয়ে যেতে যেতে কোন জেলে—জেলেনি—তার কেউ কেউ বলেছিল, ‘হুঁ—মেয়েমানুষ। কিন্তু তার বুকের কাছে বালক ছিল।’
শতকের এই ছয়ের দশকে কর্ণসুবর্ণে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মাটি খোঁড়ার সময় এইসব অলীক উপদ্রবের কাহিনী শুনেছিল আমাদের তরুণ অধ্যাপকটি। সে মনে মনে ভাবে সে ছিল এক জ্যোৎস্নারাত। হিজলের অবাধ তৃণভূমি পেরিয়ে যেতে সত্যি ওরা দেখেছিল এক ঘোড়সওয়ার স্ত্রীলোককে—বুকের কাছে যার ‘বালক’। বালক! বাচ্চা ছেলের প্রতি কোনো কারণে সম্ভ্রম দেখাতে রাঢ়বাংলার এ অঞ্চলে লোকে বলে ‘বালক।’ তা—স্ত্রীলোকটি এবং বালকটি, এবং ঘোড়াটিও পরবর্তী সময়ে অলৌকিকদের গল্পে জায়গা করে নিয়েছিল। তরুণ প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে, এই ভূতের গল্পটির বয়স মাত্র চল্লিশ—পঞ্চাশ বছরের বেশি নয়। অথচ এটি যেন হাজার বছর আগের গন্ধে ভরা। আমাদের বস্তুজ্ঞান এবং যুক্তি অনুসারে বলতে হয়, বস্তুত ঘটনাটি এক রাতে মাত্র একবারই ঘটেছিল ‘কেদারের আলে।’ আর সেই সময় হাওড়া আজিমগঞ্জ লুপ লাইনের বয়স সবে হাঁটিহাঁটি পাপা। ….
…না, এ ভূতের গল্পের জন্মদিন বেশি পুরানো নয়। এখনও তো গ্রীষ্মকাল আসে। এখানে এই চিরোটি বা বর্তমান কর্ণসুবর্ণ রেলস্টেশনে এখনও চারপাশে মাটি ও প্রকৃতির আদিমতায় চিড় ধরাতে পারেনি তিনচারটি পাঁচশালা যোজনা। তেমনি রাতের মতো চাঁদ ওঠে। ধুলোউড়ির মাঠে ধুলো ওড়ে। আঁরোয়া জঙ্গলের পিছনে সেই কেদারের আল চাঁদের আলোয় পথিককে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে আরও চল্লিশ—পঞ্চাশ বছর আগে। দুধারে বিলের জল আর মসৃণ গমের খেত ঝকমক করে ওঠে। কুল শেয়াকুল বৈঁচির ঝোপঝাড়ে পোকামাকড় ডাকে। দূরে বিষণ্ণ কণ্ঠস্বরে হট্টিটি পাখি ডাকতে থাকে—ট্টি ট্টি ট্টি..ট্টি ট্টি ট্টি। প্রজাপতির পাখার মতো বিশাল ‘বেসাল’ জাল কাঁধে নিয়ে বিলের দিকে রাতের রহস্যময় জলজগতে নামতে চলে জেলে কিংবা জেলেনি। তৃণভূমির বয়স্ক রাখালেরা বাথানের খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকে এবং চাঁদের আলোয় নক্ষত্র খোঁজে। বিহারি গোয়ালারা লম্বা লাঠি তুলে কোথাও একবার কী দুবার মোষের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে—ধোঁঃ ধোঁঃ! ফসলের খেতে পাহারা দিতে দিতে অতি সতর্ক কোনো ‘জাগালে’র ভীতু ঘুমজড়ানো কণ্ঠস্বর শোনা যায় হেই—ই—ই! হৌ—ঔ—ঔ—ঔ! তারপর ফের নীরবতা। ফের পুবের রেল লাইনে গয়াপ্যাসেঞ্জার চলে যাওয়ার স্বপ্নময় ধ্বনিপুঞ্জ। স্টেশনের সিগনাল বাতি ফের লাল হলে নীরবতা ফেরে। তারপর শুধু নীরবতা। বাতাসের শব্দও শোনা যায় না। তারপর কোথাও এইসব প্রশান্তি আর মৌন রহস্য ছুঁয়ে শিশিরের ফোঁটার মতন মৃদু উচ্চারণে হ—ট্টি—ট্টি পাখিটি ডেকে ওঠে—ট্টি—ট্টি—ট্টি….ট্টি ট্টি ট্টি।
এবং তখনই, আমাদের ভাবপ্রবণ তরুণ অধ্যাপকটি প্রত্নতাত্ত্বিক তাঁবু থেকে বেরিয়ে কর্ণসুবর্ণ নগরীর কবর স্বরূপ একটি টিলায় দাঁড়িয়ে অনেক দূরের কেদারের আলপথটা খুঁজতে চেষ্টা করেন। তাঁর মনে হয়, গোরাং ডাক্তারের মেয়ে স্বর্ণলতা হেরু বাউরির ছেলেকে নিয়ে এমনি গ্রীষ্মের জোৎস্নারাতে ওইপথ দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে গিয়েছিল শ্বশুরবাড়ি। হতভাগ্য ছেলেটির জন্য কিছুদিনের নিরাপদ আশ্রয় চাইতে গিয়েছিল।
…সহজেই বোঝা যায়, স্বর্ণলতা কী ঝুঁকি নিয়েছিল। দোর্দণ্ডপ্রতাপ ইংরাজরাজত্ব তখন। কিন্তু ইংরাজ সন্ত্রস্ত, সতর্ক। দেশে সন্ত্রাসবাদীদের প্রচণ্ড আত্মপ্রকাশ শুরু হয়েছে। গান্ধীজির ডাকে ছাত্ররা লেখাপড়া ছেড়ে স্বদেশি করতে বেরিয়ে আসছে। মাত্র কয়েক মাইল পূর্বে বেলডাঙা থেকে বহরমপুর শহর স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ারে ভাসছে। ভাসছে কয়েক মাইল পশ্চিমে জমিদারের বড় গ্রাম গোকর্ণও। শুধু রাঙামাটি চাঁদপাড়া চিরোটি আঁরোয়া নিস্পন্দ। নিম্নবর্ণের নিরক্ষর মানুষদের অধ্যুষিত এলাকায় রাজনৈতিক স্পন্দন নেই তখন। তাহলেও সন্ত্রস্ত সতর্ক ইংরেজ প্রশাসকদের পক্ষে স্বর্ণলতার আচরণ যত অরাজনৈতিক মনে হোক, পাদরি সাইমন এই সামান্য ছাই দিয়ে দড়ি পাকাতে পারত। স্বর্ণলতাকে ‘স্বদেশি’ এবং সন্ত্রাসবাদী প্রতিপন্ন করতে পারত।
আর যে স্বর্ণর নামে এলাকায় নানান কেলেঙ্কারির ঢিঢি, স্বাধিকারপ্রমত্তা সেই স্বর্ণ হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের বালবিধবা—এবং সে গেছে রাতদুপুরে ঘোড়া হাঁকিয়ে শ্বশুরবাড়ি—এতদিন পরে! মুখের ওপর ঝাঁটা খেয়ে তক্ষুনি ফিরে আসবার কথা তার। সে নিশ্চয় জানত, একটা অসম্ভবের কাছে অকারণ জেদে হাত পাততে চলেছে সে। অথচ মানুষ অনেকসময় কেন কী করে বসে, সে নিজেও তা জানে না। মানুষের মন কম্পিউটার নয়। মানুষ ইচ্ছা করেই অমৃতের বদলে বিষ তুলে পান করে। মানুষের চেতনায় এই স্বাধীনতা আছে। এ স্বাধীনতা প্রকৃতি তার নিজের ভাণ্ডার থেকে তাকে দিয়েছে। এ স্বাধীনতাই মানুষের জীবনের নিয়ম এবং চূড়ান্ত—সত্য। একে বাগ মানাতে গিয়েই যা ঘটে আসছে, তার নাম ইতিহাস।
তরুণ অধ্যাপকটি অবাক হয়। স্বর্ণলতাকে সে প্রকৃতির এক স্বাধীন সন্তান বলে মনে করে। এবং এভাবেই আমরা পৃথিবীতে ও ইতিহাসে মানুষের অনেকানেক ঘটনাবলির মীমাংসায় পৌঁছতে পারি। অধ্যাপক মনে মনে একথা বলে সিগ্রেট ধরায়।
তবে আরও বিস্ময়কর ঘটনা—স্বর্ণ প্রত্যাখ্যাত হয়নি। তার এক দেওর কমলাক্ষ যাত্রাদলের রিহার্সল থেকে বাড়ি ফিরেছিল। দরজার কাছে নিশিরাতের ওই অলীক উপদ্রব দেখে থমকে দাঁড়ায়। কমলাক্ষ শিল্পী যুবক—যাত্রাদলের রাজকুমার। মাইনর পাশ করেই যাত্রায় মেতে গেছে। পৃথিবী একদিকে তার—অবহেলিত, অন্যদিকে যাত্রা। কোথায় কী ঘটছে, সে জানতে চায় না। বয়সে স্বর্ণর কাছাকাছি, দুতিন বছর বড় হতে পারে। সে কানেই শুনেছিল তার বিধবা বউদির বিচিত্র সব গল্প। কোনো উৎসাহ ছিল না বউদি সম্পর্কে। আত্মভোলা কমলাক্ষ অবশ্য হেরুর ছেলেকে নিল। কিন্তু অন্য উদ্দেশ্যে। ছোঁড়াটা চমৎকার একানি বালকের পার্ট করবে। বায়েনপাড়ার মতি দলে ঢোলতবলা বাজায়। ওরা মাগমরদ বাঁজা—বাঁজি, ছেলেপুলে নেই। এ তো স্বর্গের সিঁড়ি হল ওদের। মতি বায়েনের ভাগনে হয়ে ডেভিড সুখে ও কতকটা গোপনে বাড়ুক। কমলাক্ষ সে রাতেই সব ব্যবস্থা সেরে বউদিকে কেদারের আলপথে কিছুটা এগিয়ে দিয়ে গেল। অনেকদিন পরে দেখা। সুখদুঃখের কথা নিশ্চয় হল। …’বউদি, যা মনে চায়, করে যাবে। কোন শালাকে পরোয়া! কে তোমাকে খেতে পরতে দ্যায়, বলো। আমি তো মাইরি ওই বুঝি! তোমার ভাসুররা শাসাচ্ছে পৃথকান্ন করে দেবে। দিক না শালারা। আমার অংশে সাত বিঘে মাটি, পাঁচকাঠা জলা, আর তিনটে তালগাছ পড়বে। হিসেব করে দেখেছি। হেসেখেলে চলে যাবে। ভেবো না। ….’ কমলাক্ষ এইসব বলেছে। ফের বলেছে, ‘কাকে পরোয়া? এ শালা ব্রিটিশ গরমেন্টের রাজত্ব। চ্যারাকপোঁ (টুঁশব্দ) করলে দেবে ঘানিকলে জুড়ে। তুমি চালিয়ে যাও।’
কমলাক্ষ ওইরকমই। একটু এঁচোড়ে পাকা টাইপ। স্বর্ণ ফিরে যেতে যেতে ভেবেছে, ডেভিড ছোঁড়াটা তো আশ্চর্য নেমকহারাম! দিব্যি মতি বায়েনের নোংরা মাদুরে গড়িয়ে পড়ে ঘুমোতে লাগল! সকালে ও স্বর্ণকে ভুলেই যাবে। ও একটা অদ্ভুত ছেলে। ও কারও নয়—অথচ সকলেরই। সব ঘর ও সব মানুষই ওর আপনার।…
স্বর্ণ ফিরছিল সদর রাস্তায়। গোকর্ণ চিরোটি কাঁচা সড়ক ধরে—বাঁকী নদী আর হাউলির সোঁতা পেরিয়ে। বাড়ি পৌঁছতে তখন ভোর হয়েছে। …..
এর দুদিন পরে অপ্রত্যাশিতভাবে কমলাক্ষ এসে জানিয়ে গেল, ‘মনাই ভালো আছে।’
মনাই আবার কে? হুঁ—সেই ছেলেটা। সবসময় মনাই—মনাই করে, তাই এই নামে সবাই ডাকছে। মতি বায়েন তাকে শালিখের বাচ্চা এনে দিয়েছে। খাঁচা বানিয়ে দিয়েছে। দুই মনাই বড় সুখে আছে।
স্বর্ণর কথা বলে না? পাদরিবাবার কথা? বলে না—মিট মাংস ব্রেড রুটি বার্ড পাখি বুক বই? কিচ্ছু না—কিচ্ছু না। শুধু বলে—’মনাই’ আর ‘সাধুবাবা!’ আপন মনে খেলতে খেলতে হঠাৎ বলে ওঠে, ‘সাধুবাবা, সাধুবাবা কই?’ কমলাক্ষ বলে গেছে, ‘ছেলেটা জড়ভরত এক্কেবারে।’
আরও দুদিন পরে এক সকালে ট্রেন থেকে নামলেন গোরাং ডাক্তার।
নেমেই থপথপ করে দৌড়ে সোজা স্টেশন ঘরে—তারপর চাঁদঘড়িকে বুকে জড়িয়ে ধরেন, ‘বাবা চাঁদঘড়ি, ভালো আছিস? বউ ভালো? তোর বাচ্চাটার সর্দিকাশি সেরেছে তো? হ্যাঁরে তোদের ঘর দেখছি এখনও করে দিলে না রেল কোম্পানি। ঝাঁটা মার, ঝাঁটা মার শালাদের মুখে!’ তারপর সন্নেসী চেহারার সুধাময়কে চিনতে না পেরে বলেন, ‘আপনি নতুন এস এম? বাঃ, ভালো, ভালো। আমি—আমি এখানকার হোমিয়োপ্যাথ ডাক্তার শ্রীগৌরাঙ্গ গোপাল রায়—ওই যে আমার মেয়ে স্বর্ণলতাকে নিশ্চয় চে—’
‘ডাক্তারবাবু, আমি সুধাময়।’
‘সুধাময়! গোরাংবাবু হাঁ। পা থেকে মাথা দেখে নিয়ে বলেন, ‘এ কেন সুধাময়? দাড়ি রেখেছ কেন? চুল এত লম্বা কেন বাবা?’
‘ও এমনি। আপনার শরীর ভালো?’
‘খুব ভালো বাবা, খুব ভালো। শালারা জেলে খাসা রেখেছিল। বুড়োমানুষ তো—ভদ্রলোক—তারওপর ডাক্তার। হোমিয়োপ্যাথি বাকসো দিয়েছিল। সকলকে ওষুধ দিতুম। জেলার বলো, অফিসার বলো—কয়েদিরা বলো—সব্বাই সব্বাই…হুঁ বাবা সুধাময়, তোমার বড়সায়েব জর্জ হ্যারিসন আছেন তো? কোয়ার্টারে নাকি? একবার যাই, দেখা করে আসি। বড় ভালোলোক—কে বলবে শালা ইং…’
সুধাময় বলে, ‘আমি কাল সকালে বদলি হয়ে যাচ্ছি, ডাক্তারবাবু।’
গোরাংডাক্তার ধমক দিয়ে বলেন, ‘পাগল! কখনো যাবে না। কই, দেখি জর্জসায়েব কোথায়?’
‘জর্জসায়েব জঙ্গলে গেছেন। কদিন থেকে পাগলামিতে পেয়েছে।’
‘জঙ্গলে? কেন, কেন?’
‘বাঘ মারতে। একটা গোরুখেকো বাঘ এসেছে নাকি।’
প্রচণ্ড হাসেন গোরাংডাক্তার। সুধাময়ের মনে হয়, গোরাংবাবুর স্বাস্থ্যটা ভালো হয়েছে আগের তুলনায়। রঙ ফেটে পড়েছে রোদ্দুরে। গোরাংবাবু তারপর লাইন ডিঙিয়ে প্রায় দৌড়ে চলেন। অনর্গল বকবক করেন—’উঃ কতকাল সব দেখিনি! কত মুখ, কত মানুষ! মৌলুবিটাকে খবর দিতে হবে। শালাকে এবার বেদম ঠাঙানি দেব। উহু, হু, আমার এখন পাখির মতো উড়তে ইচ্ছে করছে গো! স্বর্ণ, ওরে স্বর্ণ মা! আমি এসেছি! আমি এসে গেছি রে!’
স্বর্ণ বারান্দায় গাছের মতন দাঁড়িয়ে আছে। এবং সে—গাছ চারদিকে বড়বড় ডালপালা ছড়ানো বিশাল এক বট। নিজেকে প্রশস্ত করে ছায়াপুঞ্জ সমন্বিত গাছের মতন সে প্রতীক্ষা করছে ওই মানুষটার—যে—মানুষটাকে তার উড়ে আশা পাখির মতন লাগে। আর মানুষটাও পাখি হয়ে সেই নীরব বিস্তৃত এবং রহস্যময় গাছের দিকে উড়ে চলে। তার দুটো বাহু ডানার মতন আন্দোলিত হতে থাকে।…
এমনি করে গোরাংবাবু ফিরে এলেন। তাঁর আসার মধ্যে হইচই ছিল। মনে হচ্ছিল, অনেক মতলব মাথায় নিয়ে ফিরেছেন হোমিয়োপ্যাথ ডাক্তারবাবু। কুচুটে ময়রাবুড়ির ভাষায় ‘রাজাউজির মারতে /হাতে মাথা কাটতে’ এবং চাঁদঘড়ি খালাশির বুলিতে ‘হ্যান করেঙ্গা/ত্যান করেঙ্গা’ নিয়ে।
যাকে সামনে পেলেন, যেচে কথা বললেন। অনেককে জড়িয়ে ধরলেন। আদ্যোপান্ত খবরাখবর নিলেন পারিবারিক অসুখবিসুখের। ওষুধ নিয়ে যাবার সুপরামর্শ দিলেন। এমনকি যারা—যারা তাঁর গ্রেফতারের সময় ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বললেন খোলা মনে।
পরের দিনই যথারীতি সুধাময় স্টেশন ছেড়ে চলে যায় আপের দিকে তিন পাহাড়ি। গোরাংবাবু তার বোঁচকাবুঁচকি তুলে দেন গাড়িতে। চোখের জল মোছেন হাতের চেটোয়। এবং জর্জকে বলেন, ‘স্যার, মানবজীবন পান্থশালা। হিউম্যান লাইফ ইজ স্যার সরাইখানা। ডু ইউ নো স্যার হোয়াট ইজ সরাইখানা? ম্যান কামস অ্যান্ড ইটস অ্যান্ড গোজ ফ্রম দ্যাট প্লেস!’
জর্জ শুধু বলেছিল, ‘না ডাকটারবাবু, আমাকে স্যার বলবেন না, অনুগ্রহ।’ একটু পরে হাসতে হাসতে ফের বলেছিল, ‘আমি আপনার ঘোড়ার সহিস ছিল। আপনার মেয়েকে প্রশ্ন করবেন।’
ঘোড়াটা—চৈতক! হ্যাঁ—রীতিমতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অশ্ব এখন। স্বর্ণলতা যেমন বদলেছে, ও ব্যাটাও বদলেছে। তাকে ভীষণ ভদ্রলোক লাগে। গোরাংবাবু এসে অব্দি চালচলন ভাবভঙ্গি দেখে পিঠে চাপতে সাহস পান না। নয়তো এলাকা চষে বেড়াতেন, বাড়ি—বাড়ি ঘুরতেন, মাঠে যেতেন চাষা ও খেতমজুরদের খোঁজখবর নিতে, গোবিন্দপুর পোস্টাপিসে হানা দিতেন, তাহের হরকরার বাড়ি তালরস খেয়ে আসতেন ভোরবেলায়। আরও যেতেন আঁরোয়া জঙ্গলের বাথানে, রাঙামাটির ঝিলে, কোদলার ঘাট পেরিয়ে চাঁইপাড়ায়। কিন্তু হাঁটবার শক্তি জেলেই খতম হয়েছে যেন।
আসলে ভেতরটা ফোঁপরা হয়ে গেছে। নিজেকে ‘পাকা কুমড়ো’ বলে বর্ণনা করেন গোরাংবাবু। চৈতকের পিঠ থেকে পড়লে কুমড়ো ফেটে যাবে। এবং এইসব বলে প্রচণ্ড অট্টহাস্য করেন। স্বর্ণ গম্ভীর—হাসে কম। স্বর্ণ সে স্বর্ণ নেই। সেই প্রগলভ গ্রাম্য বালিকার খোলস ফাটিয়ে বেরিয়ে এসেছে সংহত ব্যক্তিত্ব—একটি নিঃশব্দ সৌন্দর্য। মনে মনে তারিফ করেন বুড়োডাক্তার, মনে মনে ক্রমে অস্থিরও হন।
কিন্তু যে ঝড় হয়ে ফিরেছেন, সেই ঝড় হয়ে বয়ে যেতে চাওয়ার ফলে এবং অনেক মতলবের কামড়ানিতে গোরাংবাবু নিজের সম্পর্কে এত ব্যস্ত যে বাইরের বর্তমান পরিবর্তিত পরিবেশকে খুঁটিয়ে দেখার সময় পান না।
হঠাৎ তাই আঘাত এল। গোরাংবাবুর কানদুটো দিয়ে সেই পরম ঝড়টা ফোঁস করে বেরিয়ে গেল। বেশদিন যায়নি—ফিরে আসার মাত্র কিছুদিন পরেই।
বটতলায় কিছু সওয়ারি গোরুমোষের গাড়ি এসেছিল। চেনা—অচেনা লোকগুলোর সঙ্গে এবং গাড়োয়ানদের সঙ্গেও সোৎসোহে কথা বলছিলেন গোরাংবাবু।
হঠাৎ কানে এল ময়রাবুড়ির আটচালার সামনে জনাকতক লোকের বলাবলি।
‘ছেড়ে দিলে তাহলে?’
‘দিলে তো দেখছি।’
‘আবার কার বুকে হন্তা দেবে কে জানে!’
‘দেবে কী করে? আর তো হেরু বাউরি নাই!’
‘হেরু নাই, হেরুর চেলা তো ঘরে আছে। উরে ব্বাস! অমন মাল যার ঘরে শালা রাজ্যের হেরু এসে বলবে—হুকুম করুন হুজুর! কে জানে—অ্যাদিন কে জুটেছে তলেতলে। সাঁওতাপাড়ায় অতবড়ো ডাকাতিটা হল সেদিন—’
‘আর, এবার তো আরও মজা। জেলেখানা থেকে পেকে এসেছে।’
‘তাইতো বলছি রে বাবা! লেডিডাক্তার সেজে গেরস্থবাড়ির খোঁজখবর নিয়ে আসে। সাঁওতাপাড়ার যে বাড়িতে ডাকাতি হল—মা কালীর দিব্যি এক হপ্তা আগে মাগি ও বাড়ির ছোটবউয়ের ছেলেকে দেখতে গিয়েছিল। আমার দাদার মেয়েটার ওখানে বিয়ে হয়েছে।’
গোরাংবাবু ওদের অলক্ষ্যে একটা করে পা বাড়ান। নিজেও জানেন না যে ওদিকে তাঁর পা এগোচ্ছে। সামনে টাপর দেওয়া দুটো গাড়ি মাত্র।
‘মাইরি! হিসেব মিলে যাচ্ছে একেবারে।’
সেই সময় ময়রাবুড়ি বলে, বুড়ো কি কম নাকি? তোমরা জানো না—নিজের হাতে বউকে খুন করেছিল। যাও গোকর্ণে—জেনে এসো। আবাগি মেয়েটার বয়স তখন দুই কী তিন। বাবুবাড়ির কেলেঙ্কারি—তাঁর ওপর জ্ঞাতিরা কেউ জমিদার। পুলিশকে থামিয়ে দিলে। আমি তখনও বিধবা হইনি। সেবারই তো পেত্থম কান্দির রাজার হাওয়াগাড়ি আনলে কলকাতা থেকে। আমার ভাসুরপোও দুচাকার গাড়ি এনেছে—টিপগাড়ি নাম—নাকি সারকেল…’
‘শালা সায়েবদের মাথা আছে বটে।’
‘হুঁ—সে মাথাও তো হাত করেছে মেয়েটা! অষ্টপহর দেখছি বাবা, কী ঢলাঢলি, গলাগলি। গোরাটা আজ চার—পাঁচবছর এসেছে, যাবার নাম করছে দেখছ?’
‘চুপ। বুড়ো আসছে।’
‘আসবে বইকি। লজ্জাঘেন্না আছে? এককান কাটা যায় গাঁয়ের বাইরে—দুকান কাটা যায় গাঁয়ের ভেতরে। ভেবেছিলাম, লিদুষী যদি হোস, পেঁচার মতো লজ্জায় কোটরে লুকিয়ে থাকবি। মুখ দেখাবিনা কাকপক্ষীকে। তা ওরে বাবারে বাবা! যেন কী অক্ষর পুণ্যি করে এল—একশোআট তীত্থোধম্মো সেরে ঘরে ফিরল। ধিক, ধিক, শত ধিক!
‘ও ময়রামাসি চুপ চুপ!’
তাহলে লোকেরা এইরকম চেয়েছিল! ফিরে এসে চুপচাপ ঘরে বসে থাকবে। কাকেও মুখ দেখাতে লজ্জা করবে। বাকি দিনগুলো ধর্মে প্রায়শ্চিত্ত—কর্মে কাটিয়ে দেবে! বাঃ বাঃ! ওরে শালা—শালিরা! তোদের অসুখবিসুখের কথা ভেবে পাঁচটি বছর গারদঘরে ঘুমোতে পারিনি। তোদের প্রত্যেকটা সুখের সঙ্গে কথা বলেছি। ওষুধ দিয়েছি মনে মনে। ভেবেছি—তোদের ঘরে ঘরে বড় অশিক্ষা, কুসংস্কার, অজ্ঞানতা, মূঢ়তা। তাই ফিরে গিয়ে তোদের ছেলেপুলেদের জন্যে পাঠশালা করব এখানটায়। সবাই বলবি, গোরাং ডাক্তারের পাঠশালা।
…ওরে গুখেকোর ব্যাটারা! তেরশো বছর আগে তোদের পূর্বপুরুষ ছিল দেশের সেরা জায়গা একটা রাজধানীর মানুষ! এইমাত্র পৌনে দুশো বছর আগেও তাদের বাড়ির কাছে নদী পেরোলে সুবে বাংলা বেহার উড়িষ্যার রাজধানী ছিল মুরশিদাবাদ। লর্ড ক্লাইভ বলেছিল—লন্ডনের চেয়ে সমৃদ্ধিশালী শহর!
…ঝাঁটা মারো, ঝাঁটা মারো সব! এদের কথা ভাবতে আছে? শুয়োরের বাচ্চারা অন্ধকারে থাকতে থাকতে অন্ধকারের জীব হয়ে গেছে পুরো। শালাদের পায়ের নীচে ইতিহাস—শালারা শ্মশানের পোড়াকাঠের ওপর ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
‘চুপব ক্যানে বাছা?’ ময়রাবুড়ি গলা চড়িয়েই বলে। …’কার সাতপাঁচ ধারি যে চুপব?’ মগজ পাকিয়ে ফিরেছে—এবার কোন বেলা দেখবে, আমিও মরে পড়ে রয়েছি। ঘরের পাশে যার চোরডাকাতের বাসা, তার আবার পেরানের দাম? মারুক না গুলি—বন্দুকধারী সাগরদের তো অভাব নাই। …এই যে ডাক্তোরবাবু, আসুন, আসুন। বলছিলাম, যে দিনকাল পড়েছে—একা বুড়োমানুষ টিশিন জায়গা, কতরকম বিদিশি ভালোমন্দ লোকজন নামছে উঠছে—কখন কে এসে বুকে হন্তা দ্যায় কে বলতে পারে! তা দাদাকে দেখে ভরসা হয়েছে—হ্যাঁ, সেটা পষ্টাপষ্টি বলব বইকি। আপনি এই নিরালা ফাঁকা জায়গায় এসে না বসলে এই কুড়ানির সাধ্যি ছিল বটতলায় এসে দোকান দিই? ওরে বাবা, শুনেছি—এল লাইন হবার আগে এটা নাকি ছিল মানসুড়েতলা। রাঢ় থেকে ব্যবসা করে লোকে এখান দিয়েই বাড়ি ফিরত, আর পেরান খোয়াত। ওরে বাছা, বসতে দে দাদাকে।’ ময়রাবুড়ি সহাস্যে ফের বলে—’বলুন না দাদা, পেত্থম এসে ওই বটের কোটরে কতগুলো মড়ার মাথা দেখেছিলেন?’
গোরাংবাবু থরথর করে কাঁপছেন। ফ্যাকাসে বড়োবড়ো চোখ নিষ্পলক। তারপর আচমকা চেঁচিয়ে ওঠেন—’খবরদার!’
পরক্ষণে ফের গর্জে ওঠেন—’খবরদার শালাশালিরা।’ কণ্ঠস্বর ফেটে ছেৎরে যায়। গাড়োয়ান, সওয়ারি, পুরুষস্ত্রীলোক ও শিশুরা যে—যেখানে ছিল থেমে যায় এবং মুখ ঘোরায় এদিকে। ময়রাবুড়ির বেসনমাখানো হাতে ঘটিটা ধরা থাকে নিশ্চল। কালো গরম তেলের কড়াইও স্থির হয়ে যায়—বুদবুদবিহীন।
গোরাবাবু প্রচণ্ড আওয়াজ করে হাঁফাতে হাঁফাতে বলেন—’আমি ডাকাত নই। আমি বদমাশ নই। খবরদার, কেউ আমাকে ডাকাত বলবিনে! সব শালার মুণ্ডু কড়মড় করে চিবিয়ে খাব। কোনো শালাকে ছেড়ে দেব না। বল, আরেকবার বল আমি ডাকাত। বল শালারা, আমার মেয়েটা গোরা মাস্টারের সঙ্গে নষ্ট হয়েছে। বল, দেখি শালাদের কত মুখের জোর! আমি ডাকাত? আমার মেয়ে নষ্টা? আমি বউকে খুন করেছিলাম? খবরদার!’
তখন আকাশ গনগনে নীল। দক্ষিণে একজায়গায় মেঘের একটা সরপড়া ভাব আছে মাত্র। দশটার ডাউন আসতে দেরি আছে। বাঁজা ডাঙায় সেকেলে কাছারি বাডিরü ভাঙা পোড়া দেয়ালের ওপর একটা ট্যাসকোনা পাখি এসে বসল, কিন্তু ডাকল না। একটা নেড়ি কুত্তা যেতে যেতে থেমে লেজ নাড়তে লাগল। দূরের জঙ্গল থেকে হোসেন কাঠুরে টাঙি কাঁধে আসছিল, গামছায় কয়েকটুকরো কাঠ পিঠের দিকে ঝোলানো, কয়েতবেলতলার কাঁকুরে খোলা মাটিতে এসে দাঁড়িয়ে রইল। সেরাজুল হাজির বড়ছেলে ওসমান লুঙি—পানজাবি পরে হাতে পাম্পসুজোড়া নিয়ে আস্তে আস্তে ডাবকই—এর দিক থেকে এগিয়ে আসছিল।
রেললাইন পেরিয়ে বটতলায় এল, দাঁড়াল না, জড়ভরতের মতন সবার দিকে তাকাতে তাকাতে গাঁয়ের দিকে চলল। সে নির্ঘাৎ মেয়ে বাড়ি চলেছে। মেয়েটাকে নাকি তালাক দেবে। সেই ভাবনায় সে অস্থির।
গোরাংবাবু পাগলা ঘোড়ার মতন সমানে লাফাচ্ছেন। আর যা খুশি বলে যাচ্ছেন। কখনও তেড়ে যাচ্ছেন মুড়ি তেলেভাজা খাওয়া লোকগুলোর দিকে, কখনও গাড়িগুলোর দিকে ঘুরে মুঠো তুলছেন। গাড়োয়ানদের একজন ফের মুড়ি চিবোনো শুরু করে। এই লোকগুলোও তেলেভাজায় কামড় দেয়। যেন তারা—বটতলায় সমাগত মানুষরা কেউই গোরাংবাবুর অকথ্যভাষণের লক্ষস্থল নয়। যেন ওঁকে সায় দেবার ভঙ্গিতেই ওরা ভোজনরত থাকে। যেন বলতে চায়—ঠিক, ঠিক।
গোরাংবাবুর ঠোঁটের দুপাশে ফেনা জমেছে। চোখের ঘোলাটে ভাব কেটে লালচে রক্তের ছিটে ফুটেছে।
কেবল সোলেমান নামে বুড়ো গাড়োয়ানটা চাপা গলায় এতক্ষণে বলল, ‘লোকটাকে কেউ ধরো—সামলাও! তৌবা, তৌবা! মানুষের ই কী ছাস্তি গো!’
কেউ ধরতে আসে না। আর গোরাংবাবু এবার মাটিতে খোঁজেন—’মারব! মারব! সব শালাকে ফাটাব আমি! বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিঃক্ষত্রিয় করে ফেলব!’
স্বর্ণ ভোরে ঘোড়া নিয়ে বেরিয়েছিল গোবরহাটি। হেরুর ছেলের খবর জানতে। ইচ্ছেমতো সাঁতার কেটে ছেলেটার সর্দিজ্বর মতো হয়েছিল। লেডি ডাক্তার চিকিৎসা করে এল মতিবায়েনের অনাথ ভাগনেটার। কিন্তু বেশিদিন ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া কি যাবে?
তার ঘোড়া আঁরোয়া গ্রামের শেষ বাড়িটির পর কিছু পথ এসে বাঁক ঘুরেই থমকে দাঁড়ায়। ঘোড়া দাঁড়ায় না—স্বর্ণলতাই লাগাম টানে। চৈতক হ্রেষাধ্বনি করে। তারপর একলাফে নেমে আসে স্বর্ণ। ঘোড়াটা চলে যায় ডাক্তারখানার দিকে। সে বাইরের বারান্দার ধারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে!
স্বর্ণ গোরাংবাবুকে ধরে ফেলতেই উনি পড়ে যান মাটিতে। অজ্ঞান হয়ে গেছেন। স্বর্ণ অতবড়ো ভারী শরীরটা তুলতে পারে না। বিব্রতমুখে একবার স্টেশনের দিকে তাকায়। এখানে লোকগুলো দ্বিধায় পড়ে গেছে। সাহায্য করা উচিত কিনা ভেবে ঠিক পারে না। বাবু যাত্রীদের জনাচার ব্যক্তি কয়েকমিনিট ধুতি সামলে এগিয়ে আসেন। স্বর্ণ তাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে—’থাক’।
ময়রাবুড়ি মিনমিনে গলায় টাট থেকে বলে—’জল দেব? মুখে মাথায় দেবে।’
স্বর্ণ বলে—’থাক।’
কিন্তু যাত্রী ভদ্রলোকেরা শুনবেন কেন? একরকম জোর করে ধরাধরি করে ঘরে পৌঁছে দেন।