চতুর্দ্দশ অধ্যায়
অশ্বত্থামার অস্ত্রনাশার্থ অর্জুনের ব্রহ্মাস্ত্রত্যাগ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ! মহাবাহু মধুসূদন অশ্বত্থামার আকার দর্শনে তাঁহার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া ধনঞ্জয়কে কহিলেন, “সখে! তোমার নিকট যে দ্রোণোপদিষ্ট দিব্যাস্ত্র বিদ্যমান রহিয়াছে, এক্ষণে ঐ অস্ত্রত্যাগের সময় সমুপস্থিত হইয়াছে। তুমি ভ্রাতৃগণ ও আপনার পরিত্রাণার্থ সেই অস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া অশ্বত্থামার অস্ত্র নিবারণ কর।” তখন অরাতিনিপাতন অর্জুন বাসুদেবের বাক্য শ্রবণ করিয়া সশরশরাসন গ্রহণপূর্ব্বক রথ হইতে অবতীর্ণ হইলেন এবং সর্বাগ্রে অশ্বত্থামার ও তৎপরে আপনার ও ভ্রাতৃগণের নিমিত্ত স্বস্তিবাচন এবং গুরু ও দেবগণকে নমস্কারপূর্ব্বক ‘এই অস্ত্রপ্রভাবে অশ্বত্থামার অস্ত্র নিরাকৃত হউক’ বলিয়া সেই দিব্যাস্ত্র পরিত্যাগ করিলেন। তখন দ্রোণপুত্র ও অর্জুনের সেই তেজোমণ্ডলমণ্ডিত অস্ত্রদ্বয় সহসা যুগান্তকালীন অনলের ন্যায় প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। ঐ সময় সহস্র সহস্র উল্কাপাত হইতে লাগিল; সমুদয় জীবজন্তু ভয়ে কম্পিত হইল; আকাশমণ্ডলে ভীষণ শব্দ ও বিদ্যুৎপাত হইতে লাগিল এবং গিরিকানন-পরিপূর্ণা সসাগরা ধরিত্রী কম্পিত হইয়া উঠিল।
অনন্তর সর্ব্বভূতাত্মা নারদ ও ভরতকুলপিতামহ ব্যাসদেব সেই দিব্যাস্ত্রদ্বয়ের তেজঃপ্রভাবে সমুদয় লোককে তাপিত দেখিয়া অশ্বত্থামা ও ধনঞ্জয়কে সান্ত্বনা ও তাঁহাদের অস্ত্ৰতেজ নিবারণ করিবার মানসে সেই প্রদীপ্ত দিব্য অস্ত্রদ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থানপূর্ব্বক প্রজ্বলিত পাবকের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিলেন এবং কহিলেন, “পূর্বে অনেক বিবিধাস্ত্রবেত্তা মহারথ ছিলেন। তাঁহারা মনুষ্যের উপর কদাপি এরূপ অস্ত্র পরিত্যাগ করেন নাই। এক্ষণে ইহারা দুইজনে এই অস্ত্র প্রয়োগ করিয়া নিতান্ত সাহস প্রকাশ করিয়াছেন।”