১৪৮তম অধ্যায়
হনূমানের সীতান্বেষণাদি জ্ঞাপন
হনূমান কহিলেন, “এইরূপে মহাত্মা রামের পত্নী অপহৃত হইলে তিনি অনুজ-সমভিব্যাহারে স্বীয় সহধর্ম্মিণীকে অন্বেষণ করিতে করিতে শৈলশিখরে বানরশ্রেষ্ঠ সুগ্ৰীবকে দেখিতে পাইলেন। অনন্তর রামের সহিত সুগ্ৰীবের পরম সখ্য হওয়াতে তিনি বালীকে বধ করিয়া সুগ্ৰীবকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিলেন। সুগ্ৰীব রাজ্যপ্রাপ্ত হইয়া সীতার অন্বেষণের নিমিত্ত সহস্ৰ সহস্ৰ বানর প্রেরণা করিলেন। তখন আমি কোটি কোটি বানারগণে পরিবৃত হইয়া সীতান্বেষনার্থ দক্ষিণদিকে গমন করিলাম।
“পথিমধ্যে পক্ষিবর সম্পাতির সহিত সাক্ষাৎকার হওয়াতে তিনি কহিলেন, ‘সীতা রাবণের নিকেতনে আছেন।” এইরূপে সম্পাতির মুখে সীতার সংবাদশ্রবণে অক্লিষ্টকর্ম্ম রামের কাৰ্য্যসিদ্ধির নিমিত্ত স্ববীৰ্য্য-প্রভাবে শতযোজন-বিস্তীর্ণ সাগর লঙ্ঘন করিয়া রাবণনিকেতনে গমনপূর্ব্বক সুরসূতাসদৃশী জনকদুহিতা সীতাকে দর্শন ও সম্ভাষণ করিলাম; পরে অট্টালিকা, প্রাকার ও তোরণে বিভূষিত সমুদয় লঙ্কাপুরী দগ্ধ করিয়া তথায় স্বীয় নাম প্রকাশপূর্ব্বক পুনরায় রামসমীপে আগমন করিলাম।
“রাজীবলোচন রাম আমার বাক্যে প্রত্যয় করিয়া বুদ্ধিপূর্ব্বক সমুদ্রে সেতুবন্ধন করিয়া তদ্দ্বরা বহুসংখ্যক বানারগণসমভিব্যাহারে সাগর উত্তীর্ণ হইয়া লঙ্কায় গমন করিলেন, তথায় নিশাচরেন্দ্র রাবণ, তাহার ভ্রাতা, পুত্র ও বান্ধববর্গ প্রভৃতি বহুতর রাক্ষসগণকে সংহার করিয়া স্বীয় ভক্ত, পরমধার্ম্মিক অনুগতবৎসল বিভীষণকে লঙ্কারাজ্যে অভিষিক্ত করিলেন। তৎপরে রামচন্দ্ৰ বিনষ্টশ্রুতির [বিস্মৃত বেদজ্ঞানের সহসা স্মৃতি] ন্যায় সহধর্ম্মিণীকে প্রত্যুদ্ধার করিয়া স্বীয় পুরী অযোধ্যায় আগমনপূর্ব্বক রাজ্যে অভিষিক্ত হইলেন। অনন্তর আমি রামের নিকট বরপ্রার্থনা করিলাম যে, “হে শক্রসূদন রাম! এই সংসারে যতকাল আপনার কথা বর্ত্তমান থাকিবে, তাবৎ আমি জীবিত থাকিব।” রাজীবলোচন রাম ‘তথাস্তু’ বলিয়া আমাকে অভিলষিত বর প্রদান করিলেন। সীতার প্ৰসাদে এই স্থানে আমার ইচ্ছানুসারে নানাবিধ দিব্য ভোগসমুদয় উপস্থিত হয়। রামচন্দ্ৰ দশসহস্র ও দশশত বর্ষ রাজ্যপ্রতিপালন করিয়া স্বস্থানে গমন করিয়াছেন। অপ্সরা ও গন্ধর্ব্বগণ এই স্থানে সেই রামের চরিত্র গান করিয়া আমাকে আহ্লাদিত করে। হে কুরুনন্দন! এই পথ মনুষ্যের অগম্য, পাছে তুমি এই পথে গমন করিয়া অভিশপ্ত বা পরাভূত হও, এইরূপ ভাবিয়া আমি এই পথ রুদ্ধ করিয়া আছি, এই পথ দেবমাৰ্গ, ইহাতে কোনমতে মনুষ্যের অধিকার নাই। তুমি যাহার অন্বেষণে আসিয়াছ, সে সরোবর এই স্থানেই আছে।”