১৪৭তম অধ্যায়
ব্যাধের ধর্ম্মবুদ্ধি—তনুত্যাগে প্রায়শ্চিত্ত সঙ্কল্প
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ। অনন্তর সেই ক্ষুধার্ত্ত লুব্ধক অগ্নিপ্রবিষ্ট কপোতের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া পুনরায় কহিল, ‘হায়! আমি কি করিলাম। আমি যারপরনাই নিষ্ঠুর ও নির্ব্বোধ, আমাকে নিশ্চয়ই অনন্তকাল পাপভোগ করিতে হইবে। আমি শুভকৰ্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া বিহঙ্গমগণের প্রাণনাশে প্রবৃত্ত হইয়াছি, অতএব আমার তুল্য পাপাত্মা আর কেহই নাই। যাহা হউক, আজ মহাত্মা কপোত স্বীয় শরীর দগ্ধ করিয়া আমাকে জ্ঞান প্রদান করিল, সন্দেহ নাই। অতঃপর আমি পুত্ৰকলত্রাদিসমুদয় পরিত্যাগ করিয়া প্রাণত্যাগে কৃতসঙ্কল্প হইব। আজ অবধি আমি শরীরকে সমুদয় ভোগে বঞ্চিত করিয়া গ্রীষ্মকালীন সরোবরের ন্যায় শুষ্ক করিব এবং বিবিধ ক্ষুৎ[ক্ষুধা]পিপাসার ক্লেশ সহ্য করিয়া উপবাসদ্বারা পারলৌকিক ব্রতের অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইব। মহাত্মা কপোত দেহ প্রদান করিয়া অতিথিসেবার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করিয়াছে। অতএব আমি ইহার দৃষ্টান্তানুসারে ধর্ম্মের অনুষ্ঠান করিব। ধৰ্ম্মই মোক্ষসাধনের প্রধান উপায়।
“ক্রূরকর্ম্মা লুব্ধক মনে মনে এইরূপ স্থির করিয়া যষ্টি, শলাকা, পিঞ্জর প্রভৃতি সমুদয় পরিত্যাগপূৰ্ব্বক কপোতীকে মুক্ত করিয়া মহাপ্রস্থানে [মৃত্যুতে] কৃতনিশ্চয় হইয়া তথা হইতে প্রস্থান করিল।”