১৪৫তম অধ্যায়
অতিথিরূপে ব্যাধসেবায় কপোতীর অনুরোধ
ভীষ্ম কহিলেন, “হে ধৰ্ম্মরাজ! দুরাত্মা নিষাদ ইতিপূর্বে যে কপোতীকে স্বীয় পিঞ্জরে নিক্ষেপ করিয়াছিল, সেই কপোতীই ঐ কপোতের পত্নী। কপোতী নিষাদের পিঞ্জরমধ্য হইতে ভর্ত্তার সেই করুণবিলাপ শ্রবণ করিয়া কহিতে লাগিল, ‘আহা! আমি বস্তুতঃ গুণশালিনী হই বা না হই, আমার ভর্ত্তা যখন আমার গুণকীর্ত্তন করিতেছেন, তখন আমার সৌভাগ্যের আর পরিসীমা নাই। স্বামী যে নারীর প্রতি সন্তুষ্ট না থাকেন, তাহাকে নারী বলিয়া নির্দেশ করাও কর্ত্তব্য নহে। যে রমণী ভর্ত্তাকে সন্তুষ্ট করিতে পারে, সমুদয় দেবতা তাহার প্রতি পরিতুষ্ট হয়েন। অগ্নীকে সাক্ষী করিয়া পরিণয়কার্য্য নির্ব্বাহ হয় বলিয়া ভর্ত্তাই স্ত্রীদিগের পরমদেবতাস্বরূপ গণ্য হয়েন। স্বামী যে নারীর প্রতি সন্তুষ্ট না হয়েন, তাহাকে দাবাগ্নিদগ্ধ পুষ্পস্তবকসমন্বিত [পুষ্পগুচ্ছযুক্ত] লতার ন্যায় ভস্মীভূত হইতে হয়।
“পিঞ্জরস্থা, কপোতবনিতা কিয়ৎক্ষণ মনে মনে এইরূপ চিন্তা করিয়া পরিশেষে স্থিরচিত্তে শোকাকুল ভর্ত্তাকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিল, ‘নাথ! আমি এক্ষণে তোমাকে যে হিতকর বাক্য কহিতেছি, তাহা শ্রবণ করিয়া তদনুরূপ কাৰ্য্য করা তোমার অবশ্য কর্ত্তব্য। এই নিষাদ নিতান্ত শীতার্ত্ত ও ক্ষুধাবিষ্ট হইয়া তোমার আবাসে সমুপস্থিত হইয়াছে। ঐ ব্যক্তি তোমার শরণাগত, অতএব উহার রক্ষাবিধান ও সমুচিত সৎকার করা তোমার সৰ্ব্বতোভাবে বিধেয়। গোহত্যা ও ব্রহ্মহত্যা করিলে যে পাপ জন্মে, শরণাগত ব্যক্তিকে নষ্ট করিলেও সেই পাপ জন্মিয়া থাকে। আমরা কপোতকুলে জন্মগ্রহণনিবন্ধন স্বভাবতঃ হীনবল হইয়াছি বটে, তথাপি তোমার মত আত্মতত্ত্বজ্ঞ প্রাণীর সাধ্যানুসারে শরণাগত প্রতিপালনে যত্ন করা কর্ত্তব্য। যে গৃহস্থ যথাশক্তি ধর্ম্মানুষ্ঠান করে, পরলোকে সে অক্ষয়লোক প্রাপ্ত হয়। এক্ষণে তুমি সন্তানসন্ততির মুখাবলোকন করিয়াছ অতএব দেহের মায়া পরিত্যাগপূৰ্ব্বক এই নিষাদকে পূজাদ্বারা পরিতুষ্ট কর। আমার নিমিত্ত আর অনুতাপ করিও না। তুমি জীবিত থাকিলে শরীরযাত্রানির্ব্বাহাৰ্থ অন্য পত্নী গ্রহণ করিতে পারিবে।’ পিঞ্জরস্থা কপোতপত্নী অতিশয় দুঃখাৰ্ত্ত হইয়াও ভর্ত্তাকে নিরীক্ষণপূৰ্ব্বক তাহাকে এইরূপ হিতোপদেশ প্রদান করিল।”