১৪৩. পাণ্ডবগণের বারণাবত যাত্রা
ত্রিচত্বারিংশদধিকশততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন,-অনন্তর অনুজগণসমবেত দুৰ্য্যোধন,ধন ও সমুচিত সম্মান প্রদান দ্বারা ক্রমে ক্রমে সমুদায় প্রজাগণকে বশীভূত করিল। একদা মন্ত্রণাকুশল মন্ত্রিগণ ধৃতরাষ্ট্রের পরামর্শানুসারে সভায় বসিয়া কহিল, বারণাবত নগর অতি মহৎ ও পরম রমণীয়; তাহাতে ভগবান ভূভাবন ভবানীপতি সর্বদা বিরাজমান আছেন। এই সময়ে তাঁহার পূজনাৰ্থে নানাদিদেশ হইতে জনগণ সৰ্বরত্নসমাকীর্ণ সুরম্য বারণাবতে সমুপস্থিত হইয়াছে। দৈবদুর্বিপাক অখণ্ডনীয়। মন্ত্রিগণের মুখে বারণাবত নগরের প্রশংসা শ্রবণে পাণ্ডপুত্রগণের মনে তথায় গমন করিবার সাতিশয় বাসনা জন্মিল। রাজা ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডবগণকে বারণাবত গমনের নিমিত্ত একান্ত কৌতুইলাক্রান্ত জানিয়া কহিতে লাগিলেন, হে বৎসগণ! সকলে প্রত্যহ আমার নিকটে কহে যে, পৃথিবীর মধ্যে যত স্থান আছে, বারণাবত নগর সর্বাপেক্ষা রমণীয়; অতএব যদি তোমাদিগের তথায় গিয়া আমোদপ্রমোদ করিবার বাসনা থাকে, তবে সবান্ধবে ও সপরিবারে গমন করিয়া অমরগণের ন্যায় বিহার এবং ব্রাহ্মণ ও গায়কগণকে যথাভিলষিত অর্থ প্রদান কর। কিছুদিন পরমসুখে তথায় বাস করিয়া পুনর্বার এই হস্তিনানগরে প্রত্যাগমন করিও।
ধীমান্ যুধিষ্ঠির ধৃতরাষ্ট্রের বাক্য শুনিয়া তাহার দুষ্টাভিপ্রায় বুঝিতে পারিলেন; কিন্তু কি করেন, আপনাকে অসহায় ভাবিয়া অগত্যা ‘যে আজ্ঞা মহাশয়’ বলিয়া তাহার আদেশ প্রতিপালনে অঙ্গীকার করিলেন। অনন্তর তিনি শান্তনুনন্দন ভীষ্ম, মহামতি বিদুর, আচাৰ্য দ্রোণ, বাহিক, সোমদত্ত, কৃপাচার্য্য, অশ্বথামা, ভূরিশ্রবাঃ, যশস্বিনী গান্ধারী, মাননীয় অমাত্যগণ, ব্রাহ্মণবর্গ, তপোধন, পুরোহিত ও পৌরবদিগের নিকটে গমন করিয়া দীনভাবে ও মৃদুস্বরে কহিতে লাগিলেন, আমরা পরমপূজ্য পিতৃব্য ধৃতরাষ্ট্রের আজ্ঞানুসারে সপরিবারে জনাকীর্ণ ও পরমরমণীয় বারণাবত নগরে চলিলাম; আপনারা প্রসন্নমনে আশীৰ্বাদ করুন। আপনাদের আশীর্বাদ প্রভাবে কদাচ কোন অমঙ্গল আমাদিগকে স্পর্শ করিতে পারিবে না। তাহারা যুধিষ্ঠিরের বাক্য শ্রবণ করিয়া প্রসন্নবদনে তাহার অনুবর্তী হইলেন এবং কহিতে লাগিলেন, হে পাণ্ডুনন্দন! তোমাদের মঙ্গল হউক, পথে যেন কোন হিংস্র প্রাণী হইতে তোমাদের অমঙ্গল না ঘটে। পাণ্ডুপুত্রের। গুরুজনের এইরূপ আশীর্বাদে পরিতুষ্ট হইয়া রাজ্যপ্রাপ্তির নিমিত্ত যাবতীয় শুভকর্ম সমাধা করিয়া বারণাবত নগরে প্রস্থান করিলেন।