১৩-১৪. নীলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে

১৩.

নীলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তানুস্কা রান্নাঘরে ফিরে এল। রান্নাঘরের ছোট টেবিলটাতে বসে রিটিন তানুস্কা আর নীলের সাথে রাতের খাবার এইমাত্র শেষ করেছে। খাবার শেষ হবার আগেই নীলের চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালের কাজকর্ম শেষ করে ফিরে আসতে আসতে বেশ রাত হয়েছে, নীলকে জাগিয়ে রাখাটাই মোটামুটিভাবে একটা কঠিন ব্যাপার ছিল। সবাই মিলে একসাথে টেবিলে বসে রাতের খাবার খাবে, সেটি আজকে বিকেলেও তানুস্কা কল্পনাও করেনি।

রান্নাঘরে ঢুকে তানুস্কা হাসিমুখে বলল, “আমি তো তোমাকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছি কিন্তু এরকম দায়সারা খাবার খেতে হবে তুমি নিশ্চয়ই কল্পনাও করোনি।”

রিটিনের শরীরে যে ডিস্কটি লাগিয়ে রেখেছে সেটি তার শরীরে পুষ্টির জোগান দিতে পারে, মাঝেমধ্যে এক-দুই গ্লাস পানি খেয়ে সে দুই-এক মাস কাটিয়ে দিতে পারবে, সত্যি কথা বলতে কী, তার কোনো কিছু খাওয়ারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু রিটিন সেটা তানুস্কাকে জানাল না। বলল, “আমাকে রাত কাটানোর জন্যে একটা আশ্রয়, খাওয়ার জন্যে একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজে নিতে হতো। তুমি আমাকে দুটোই দিয়েছ, কাজেই আমার অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া আমার জন্যে এটা মোটেও দায়সারা খাবার ছিল না। আমি বহুঁকাল সত্যিকারের বনমোরগের গোশত খাইনি।”

তানুস্কা বলল, “কাল রাতে আমি তোমাকে ভালো করে খাওয়াব। কথা দিচ্ছি।”

“কথা দিতে হবে না। আমার জন্যে আলাদা করে কোনো খাবারের আয়োজন করতে হবে না! আমি সবকিছু খেতে পারি।”

তানুস্কা বলল, “আমি তোমাকে কী ভাষায় কৃতজ্ঞতা জানাব বুঝতে পারছি না। তুমি না থাকলে কী যে হতো–”

রিটিন বলল, “কী আবার হতো। তুমি নীলকে খুঁজে পেতে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে! তুমি তো দেখেছ তার আঘাত মোটেও গুরুতর ছিল না।”

তানুস্কা বলল, “ডাক্তাররা যাই বলুক আমি জানি ভয়ংকর গুরুতর ছিল। কোনো একটা ম্যাজিক হয়েছে। তুমি স্বীকার করছ না কিন্তু আমি জানি তোমার কারণে সেই ম্যাজিকটা হয়েছে।”

রিটিন হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করে বলল, “ঠিক আছে তুমি যদি এটা ভেবেই শান্তি পেতে চাও আমি বাধা দেব না।”

তানুস্কা টেবিল থেকে খাবার প্লেট চামচ গ্লাস ন্যাপকিন তুলে নিতে নিতে বলল, “একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না।”

“কী জিনিস?”

“তুমি যথেষ্ট সুন্দর ভাষায় কথা বলো কিন্তু তোমার উচ্চারণটা একটু অন্যরকম।”

“কী রকম?”

“মনে হয় তুমি এই ভাষাটা জানো না। এই ভাষাটা শিখছ। মনে মনে অন্য ভাষা থেকে অনুবাদ করে বলছ!”

রিটিন হাসল, বলল, “তুমি ঠিকই অনুমান করছ। আমি ভাষাটা জানি না, শিখছি। আমি এই এলাকার মানুষ নই, একটা কাজে এই এলাকায় এসেছি।”

তানুস্কা রিটিনের দিকে তাকিয়ে রইল, সে আশা করছিল রিটিন আরো কিছু বলবে। রিটিন অবশ্য আর কিছু বলল না।

তানুস্কা দুই মগ কফি তৈরি করে টেবিলে নিয়ে এসে রাখল। রিটিন কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল, “বাহ! কী চমৎকার কফি।”

তানুস্কা বলল, “তুমি আমাকে খুশি করার জন্যে এই কথা বলছ। এটি মোটেও ভালো কফি নয়।”

“আমার জন্যে যথেষ্ট ভালো কফি। আমি যেখান থেকে এসেছি। সেখানে এরকম কফি পাওয়া যায় না।”

তানুস্কা জিজ্ঞেস করল, “সেখানে কী রকম কফি পাওয়া যায়?”

রিটিন বলতে পারল না মানুষ বহুঁকাল আগে জৈবিক কফি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, সব খাবারই এখন সিনথেটিক। সব খাবার কিংবা পানীয় এখন অজৈবিক। রিটিন তানুস্কার দিকে তাকিয়ে বলল, “সেখানকার কফি মুখে দিলে থু থু করে ফেলে দেবে।”

বাইরে তখন হঠাৎ করে কোনো এক ধরনের বুনো পশুর ডাক শোনা গেল। একটা রাতজাগা পাখি বাসার উপর দিয়ে শব্দ করতে করতে উড়ে গেল। রিটিন একধরনের বিস্ময় নিয়ে তানুস্কার দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, “ওটা কিসের ডাক?”

তানুস্কা খিল খিল করে হেসে উঠে বলল, “ওটা শেয়ালের ডাক। তুমি কখনো শেয়ালের ডাক শুনেননি?”

রিটিন বলল, “না। আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে শেয়াল নেই। শেয়ালের ডাক নেই।”

“আর কী কী নেই?”

“আরো অনেক কিছু নেই। বনজঙ্গল নেই! সব ধরনের মানুষ নেই। বনমোরগ নেই। যবের রুটি নেই।”

তানুস্কা হাসল, বলল, “তোমার এলাকাটা একবার গিয়ে দেখে আসতে হবে।”

রিটিন কোনো কথা বলল না, তার এলাকাটা তানুস্কা কখনো গিয়ে দেখে আসতে পারবে না।

তানুস্কা প্রায় অনুচ্চ স্বরে বলল, “আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ভাবতাম বড় হলে আমি পৃথিবীর সব দেশ ঘুরে বেড়াব। এখন বড় হয়েছি এখন এই বাসা আর বাসার বাইরে যবের ক্ষেত ছাড়া আর কোথাও যেতে পারি না!”

রিটিন কী বলবে বুঝতে না পেরে একটু ইতস্তত করে বলল, “তোমার তো সময় শেষ হয়ে যায়নি। তুমি তো এখনো পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে পারবে।”

তানুস্কা মাথা নাড়ল, বলল, “সব দোষ জিহানের।”

“জিহান?”

“হ্যাঁ। নীলের বাবা জিহান। সে কেন হঠাৎ করে মারা গেল? কেন হঠাৎ করে সব দায়িত্ব আমার ঘাড়ে দিয়ে তাকে মরে যেতে হলো?”

রিটিন কী বলবে বুঝতে পারল না। তানুস্কার স্বামী জিহান কীভাবে মারা গিয়েছে, সেটাও সে জানে না। জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে কি না সেটাও সে বুঝতে পারছিল না। অবশ্য জিজ্ঞেস করতে হলো না, তানুস্কা নিজেই বলল, “গ্রীষ্মকালে সে দক্ষিণের বনাঞ্চলে গেল একটা কাজে। সেখান থেকে ফিরে এসে বলল শরীরটা ভালো লাগছে না। দেখতে দেখতে আকাশ-পাতাল জ্বর। হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, পরীক্ষা করে কিছু খুঁজে পেল না। অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ভোরবেলা জ্ঞান হয়েছে, আমাকে ডাকল, কাছে গেলাম। হাত ধরে বলল, তানুস্কা তুমি নীলকে দেখে রেখো। আমি গেলাম। তারপর সে চোখ বন্ধ করে চলে গেল। ঠিক এইভাবে।”

রিটিন ভাবল তানুস্কা এখন আবার ঝরঝর করে কেঁদে ফেলবে কিন্তু সে কাঁদল না। মুখটা শক্ত করে বসে রইল, তারপর বলল, “আমি খুব দুঃখিত রিটিন। আমার একেবারেই ব্যক্তিগত কথাগুলো কেন আমি তোমাকে বলেছি আমি জানি না। তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর এখনো চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়নি। আমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে।”

রিটিন বলল, “না তানুস্কা, তোমার মাথা খারাপ হয়নি। মানুষ যখন কষ্টে থাকে তখন সেটা অন্য কাউকে বললে তার কষ্টটা একটু কমে। অনেক সময় পরিচিত কাউকে বলার ইচ্ছে করে না, অপরিচিত কাউকে বলা সহজ।”

তানুস্কা বলল, “আমি জানি না কী কারণ। তুমি বিচিত্র একটা উচ্চারণে কথা বলো, তোমাকে দেখতেও ঠিক আমাদের মানুষ বলে মনে হয় না, তোমার আচার-আচরণও কেমন জানি অন্যরকম, কিন্তু তারপরও কেন জানি মনে হয় তোমাকে আমি বহুদিন থেকে চিনি।”

রিটিন বলল, “শুনে আমি খুশি হলাম যে তুমি আমাকে চেনা মানুষ হিসেবে ভাবছ।”

তানুস্কা একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, “চেনা মানুষ হিসেবে ভাবলেও মনে হয় একটু যন্ত্রণা দিয়ে ফেলেছি। কাঁদুনি হিসেবে যা যা বলেছি সব ভুলে যাও। মনে করো কিছু বলিনি।”

রিটিন বলল, “তার প্রয়োজন নেই তানুস্কা। সবারই কথা বলার একজন থাকতে হয়, তুমি না হয় আমাকেই বললে, তা ছাড়া–” রিটিন থেমে গেল।

তানুস্কা জিজ্ঞেস করল, “তা ছাড়া কী?”

“তা ছাড়া তুমি এখনই হতাশ হয়ে যাচ্ছ কেন? তুমি নীলকে বড় করার জন্যে কোনো একজনকে তো পেয়েও যেতে পার। হৃদয়বান সুদর্শন একজন মানুষ। যে তোমাকে ভালোবাসবে, মাথায় তুলে রাখবে। নীলও একজন বাবা পাবে।”

তানুস্কা শব্দ করে হাসল, হাসতে হাসতে বলল, “বোঝাই যাচ্ছে তুমি অন্য জগতের মানুষ। যে মেয়ের চার বছরের ছটফটে একটা ছেলে আছে তার ধারে কাছে কোনো মানুষ আসে না! কয়দিন আগে একজন আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিল।

“সত্যি?”

“হ্যাঁ। প্রস্তাবটি কী ছিল জানো?”

“কী?”

 “প্রস্তাবটি ছিল এরকম, আমি যদি নীলকে একটা অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিই তাহলে সে আমাকে বিয়ে করবে।”

“তুমি কী বললে?”

তানুস্কা হিহি করে হেসে বলল, “সেটা আমি তোমাকে বলতে পারব না। আমি তার শরীরের বিশেষ একটা অংশ সার্জারি করে বিশেষ অন্য একটা অংশে সেটাকে ঢুকিয়ে রাখার কথা বলেছিলাম।”

তানুস্কার কথা বলার ভঙ্গি দেখে রিটিনও হাসতে শুরু করল।

গভীর রাতে রিটিন যখন দেখল তানুস্কার ঘরের বাতি নিভে গেছে তখন সে তার যন্ত্রপাতি নিয়ে সাবধানে ঘর থেকে বের হয়ে এল। বাসার সামনে খোলা জায়গাটাতে বসে সে আকাশের নক্ষত্রের অবস্থানগুলো মাপতে থাকে। কিছুক্ষণের মাঝেই সে পৃথিবীর ঠিক কোন জায়গাটিতে আছে বের করে ফেলল। তাকে নিরাপত্তা ভবনের যে জায়গাটিতে যেতে হবে সেটি ঘটনাক্রমে খুব বেশি দূরে নয়, মাত্র বারো’শ পঞ্চাশ কিলোমিটার। জায়গাটি এখন একটি নির্জন বনভূমি। তাকে সেই বনভূমিতে গিয়ে মাটির নিচে একটা শীতল ঘরে পাঁচশ বছরের জন্যে ঘুমিয়ে যেতে হবে।

.

ভোরবেলা রিটিনের ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হলো। ঘুম ভাঙার পর সে দেখল তার বিছানার কাছে একটা চেয়ারে নীল গম্ভীর হয়ে বসে আছে। নীলের হাতে গতকাল উদ্ধার করে নিয়ে আসা সেই খেলনা ডাইনোসরটি।

রিটিন শুয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার নীল? তুমি এত সকালে এখানে কী মনে করে?”

নীল বলল, “মা বলেছে তোমাকে ধন্যবাদ দিতে।”

“ধন্যবাদ দিতে? আমাকে?”

“হ্যাঁ।”

“কেন?”

“তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ সে জন্যে।”

“আমি তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছি? কীভাবে?”

“আমি জানি না।”

রিটিন হাসল, বলল, “আমিও জানি না।”

চার বছরের শিশুটিকে একটু বিভ্রান্ত দেখা গেল। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে বলল, “তাহলে কী আমার প্রাণ বাঁচানো হয়নি? আমার কি প্রাণ নেই?”

রিটিন এবারে বিছানায় উঠে বসে বলল, “আছে আছে। নিশ্চয়ই আছে। তোমার প্রাণটা এতই শক্ত যে সেটা কাউকে বাঁচাতে হয় না। নিজে নিজে বেঁচে থাকে।”

নীল কিছুক্ষণ কথাটা নিয়ে চিন্তা করল, তারপর বলল, “তোমাকে ধন্যবাদ।”

“কেন আমাকে ধন্যবাদ।”

“আমি জানি না। মা বলেছে সবসময় সবাইকে ধন্যবাদ দিতে হয়।”

রিটিন বলল, “তোমার মা ঠিকই বলেছে। সবসময় সবাইকে ধন্যবাদ দেয়াটা খুবই ভালো একটা কাজ।”

নীল কোনো কথা না বলে মাথা নাড়ল। রিটিন বলল, “আমি তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছি কিনা সেটা জানি না। কিন্তু আমি তোমার ডাইনোসরটাকে বাঁচিয়েছি।”

নীল তার খেলনা ডাইনোসরটিকে বুকে চেপে ধরে রিটিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার টিটিন রেক্সকে বাঁচানোর জন্যে তোমাকে ধন্যবাদ।”

“এটার নাম টিটিন রেক্স?”

“হ্যাঁ।”

“আমার নাম রিটিন, তোমার ডাইনোসরের নাম টিটিন। আমাদের দুজনের নামের মাঝে মিল আছে।”

নীল ফিক করে হেসে ফেলল।

রিটিন বিছানা থেকে নেমে বলল, “তোমার মা কী করছে?”

“মাঠে ট্রাক্টর চালাচ্ছে।”

“সত্যি?”

“হ্যাঁ।”

রিটিন জানালায় দাঁড়িয়ে দেখল দূরে একটা মাঠে তানুস্কা একটা ট্রাক্টরে বসে মাটি চাষ করছে। পেছনে ধুলা উড়ছে। আকাশে সূর্যটা এর মাঝে উত্তপ্ত হয়ে উঠে তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। রিটিন জানালা থেকে চোখ সরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, পৃথিবীর মানুষ এখনো জানে না পাঁচশ বছর পর পৃথিবী থেকে চাষাবাদ উঠে যাবে। যখন যে খাবার দরকার সিনথেটিক উপায়ে সেটা তৈরি করে নেয়া হবে! মানুষকে আর এত কষ্ট করে মাটি চাষ করে ফসল লাগাতে হবে না।

“তুমি কি নাশতা করেছ, নীল?”

“না, আমি নাশতা করিনি। আমার সকালে নাশতা করতে ভালো লাগে না।”

“নাশতা করতে ভালো না লাগলেও এটা করতে হয়। তোমার মা কি নাশতা করে কাজে বের হয়েছে?”

“না। আমার মা বলেছে ট্রাক্টর দিয়ে পুরো মাঠ চষে তারপর বাসায় এসে নাশতা তৈরি করবে।”

“চলো, আমরা তোমার মায়ের জন্যে নাশতা তৈরি করে ফেলি।”

“তুমি নাশতা তৈরি করতে পারো?”

“একশবার। আমি খুব ভালো ডিম পোচ করতে পারি।”

নীল এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে রিটিনের দিকে তাকাল।

রিটিন রুটি টোস্ট করল। ঝুড়ি থেকে কমলা নিয়ে তার রস বের করল। ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে ডিম পোচ করল। পনির বের করে সেটাকে চিকন করে কাটল। দুধ বের করে গ্লাসে ঢেলে নিল। কফি মেকারে কফি দিয়ে সেটার সুইচ অন করে দিল, কিছুক্ষণেই পুরো রান্নাঘরটা কফির গন্ধে ভরে যায়।

তানুস্কা যখন ধূলি ধূসরিত হয়ে ঘরে ঢুকল, নীল চিৎকার করে বলল, “মা, আমি আর রিটিন মিলে তোমার জন্যে নাশতা তৈরি করেছি।”

তানুস্কা অবাক হয়ে বলল, “সত্যি?”

“হ্যাঁ মা।”

তানুস্কা বলল, “কী আশ্চর্য রিটিন! তুমি জানো নীলের বাবা জিশান আমার জন্যে ঠিক এই কাজটা করত?”

নীল বলল, “মা তাহলে রিটিন কি আমার বাবা হতে পারে না?”

তানুস্কার গাল লাল হয়ে উঠল, লজ্জা পেয়ে বলল, “বোকা ছেলে! শুধু নাশতা তৈরি করলেই বাবা হওয়া যায় না।”

রিটিন হঠাৎ করে বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। তার মনে হতে থাকে নিয়ন্ত্রণ ভবন ধ্বংস করার জন্যে ভবিষ্যতে ফিরে না গিয়ে সত্যি সত্যি সে এখানে নীলের বাবা হয়ে থেকে যায় না কেন?

নাশতা করে তানুস্কা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি মাঠে যাই। আকাশ দেখে মনে হচ্ছে আর কয়েকদিনের মাঝে বৃষ্টি নামবে। যদি এর মাঝে জমিটা প্রস্তুত না করি বীজ লাগাতে পারব না।”

রিটিন বলল, “আমি কি তোমার সাথে আসতে পারি?”

নীল বলল, “আমিও কি আসতে পারি?”

তানুস্কা জানতে চাইল, “কেন? এই বাসার দুজন পুরুষ মানুষ মাঠে যেতে চাইছে কেন?”

রিটিন বলল, “তোমাকে একটু সাহায্য করি।”

নীল বলল, “হ্যাঁ, একটু সাহায্য করি।”

রিটিন বলল, “তা ছাড়া আমি আগে কখনো মাঠে কাজ করিনি। তোমার কাছ থেকে একটু শিখে নিই!”

তানুস্কা বলল, “আমি প্রার্থনা করি যেন কোনো দিন তোমার মাঠে কাজ করার জ্ঞানটুকুর প্রয়োজন না হয়।”

রিটিন বলল, “একজন মানুষের জীবনে কখন কোন জ্ঞানের হঠাৎ করে প্রয়োজন হয়ে যাবে কেউ বলতে পারবে না! আমিই কি কখনো জানতাম যে আমার ডিম পোচ করার জ্ঞানটুকু আজকে এভাবে কাজে লেগে যাবে?”

তানুস্কা বলল, “ঠিক আছে তাহলে চলো। ডিম পোচ করার মতো আরেকটা প্রয়োজনীয় জ্ঞান তোমাকে শিখিয়ে দিই।”

নীল বলল, “আমাকেও শেখাবে মা?”

তানুস্কা বলল, “হ্যাঁ তোমাকেও শেখাব। কাজের সময় কীভাবে কাউকে বিরক্ত না করে চুপচাপ বসে থাকতে হয় আজকে আমি তোমাকে সেটা শেখাব।”

.

রিটিন সারাদিন তানুস্কাকে সাহায্য করল, ট্রাক্টর চালিয়ে মাঠ চাষ, সেখান থেকে আগাছা সরিয়ে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সার দিয়ে প্রস্তুত করল। মাঠটিতে মাটি সারি সারি করে বীজ লাগানোর জন্যে প্রস্তুত করল। পানি আনার জন্যে খালটুকু কেটে পরিষ্কার করল। পাহাড়ের উপর আটকে রাখা পানিটুকুর এক পাশের বাঁধ কেটে সেখান থেকে পানিকে মাঠের মাঝে প্রবাহিত হতে দিল। যখন গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পুরো মাঠটিকে ভিজিয়ে দিতে শুরু করেছে তখন মাটির ভেতর থেকে এক ধরনের আদিম ঘ্রাণ বের হতে শুরু করে। রিটিন অনেকটা অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, “কী আশ্চর্য।”

তানুস্কা জানতে চাইল, “কোনটুকু আশ্চর্য?”

রিটিন বলল, “সবকিছু! মাটি থেকে এই যে ঘ্রাণ বের হচ্ছে এটা সবচেয়ে আশ্চর্য!” তারপর তানুস্কার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাকে এই চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা দেয়ার জন্যে তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, তানুস্কা!”

তানুস্কা খিল খিল করে হেসে বলল, “তুমি যদি এরকম চমৎকার অভিজ্ঞতা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাও তাহলে তোমাকে আমি আরো অনেক অভিজ্ঞতা দিতে পারব।”

।তারপর রিটিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমাকেও ধন্যবাদ রিটিন, আমার যে কাজ করতে টানা তিনদিন লাগত তোমার জন্যে সেটা একদিনেই শেষ করে ফেলেছি!”

নীল বলল, “শুধু রিটিন নয় মা, আমিও তোমাকে সাহায্য করেছি। আমাকেও ধন্যবাদ দাও।”

তানুস্কা নিচু হয়ে নীলের গালে চুমু খেয়ে বলল, “হ্যাঁ বাবা তুমিও অনেক সাহায্য করেছ। তোমাকেও ধন্যবাদ। এখন চলো বাসায় গিয়ে কনকনে ঠান্ডা পানিতে গোসল করি। তারপর আজ রাতে আমরা একটা হাঁসের রোস্ট খাব। সাথে স্ট্রবেরি কেক।”

ঠিক কী কারণ জানা নেই, রিটিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

.

১৪.

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেল। এই এক সপ্তাহে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। একদিন তানুস্কা রিটিন আর নীলকে নিয়ে শহরে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গেল। খাওয়ার পর তারা যখন শহরের রাস্তা ধরে ইতস্তত হাঁটছে তখন হঠাৎ তারা একটা ফটো স্টুডিওর সামনে এসে থমকে দাঁড়াল। তানুস্কা হাসি হাসি মুখে বলল, “চলো আজকের দিনটির স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে আমরা একটা ছবি তুলি।”

রিটিন ভেতরে ভেতরে চমকে উঠল, কারণ এটিই নিশ্চয়ই সেই ছবিটি যেটি দেখে ক্যাটাগরি সি মানুষেরা জানতে পারবে সময় পরিভ্রমণ সম্ভব। বাইরে শান্তভাব ধরে রেখে সে বলল, “চলো। ছবি তুলি।”

স্টুডিওর ভেতরে রিটিন নীলকে কোলে তুলে নেয়, তার পাশে তানুস্কা হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রইল। ফ্ল্যাশের সাথে সাথে রিটিন নিজের ভেতরে বিস্ময়কর একধরনের চাপ অনুভব করে। এই ছবিটি তোলা হবে এটুকু পর্যন্ত সে নিশ্চিত ছিল, এরপর কী হবে কেউ জানে না! এই ছবিটি তুলে সে তার পুরো জীবনটি অনিশ্চিত করে তুলেছে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে শীতল ঘরে ঘুমিয়ে যেতে হবে। সেই ঘুম থেকে তাকে জেগে উঠতে হবে পাঁচশ বছর পর।

স্টুডিও থেকে বের হয়ে তারা একটা আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে আইসক্রিম খেলো এবং যখন নীল ক্লান্ত হয়ে বলল তার ঘুম পাচ্ছে। তখন তারা আবার তাদের বাসায় রওনা দিল।

অন্ধকার নির্জন পথে গাড়ি চালিয়ে নিতে নিতে তানুস্কা বলল, “রিটিন, তুমি হঠাৎ করে একটু চুপচাপ হয়ে গেলে।”

রিটিন বলল, “হ্যাঁ, তুমি ঠিকই ধরেছ। আমি নিজেকে নিজে ভুলিয়ে রাখছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছি আর ভুলিয়ে রাখা যাবে না। আমাকে–”

তানুস্কা একধরনের ভয় পাওয়া গলায় বলল, “তোমাকে?”

“আমাকে চলে যেতে হবে তানুস্কা।”

তানুস্কা গাড়ি চালাতে চালাতে একবার মাথা ঘুরিয়ে রিটিনের দিকে তাকাল, তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাসার চেষ্টা করে বলল, “হ্যাঁ রিটিন। আমি অনুমান করছিলাম তুমি নিশ্চয়ই একদিন চলে যাবে। তুমি তো আর একটা শিশুর সাথে খেলার জন্যে কিংবা একটা নিঃসঙ্গ মেয়ের ক্ষেত চষে দেবার জন্যে আসোনি! তোমার নিশ্চয়ই আরো বড় কিছু করার আছে!”

রিটিন একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, “আমার জীবনটা যদি আমি নিজে ডিজাইন করতে পারতাম তাহলে আমি সত্যি সত্যি বাকি জীবনটা তোমার খেত চষে কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু তানুস্কা, তুমি বিশ্বাস করো আমার জীবনটা আমার হাতে নেই! আমাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেটি কী, তুমি আমাকে জিজ্ঞেস কোরো না।”

তানুস্কা বলল, “জিজ্ঞেস করব না।”

রিটিন বলল, “আমাকে চলে যেতে হবে তানুস্কা।”

তানুস্কা বলল, “আমি বুঝতে পারছি রিটিন।”

রিটিন বলল, “আমার মনে হচ্ছে আমার যদি চলে যেতে না হতো, আমি যদি তোমার সাথে থাকতে পারতাম-”

তানুস্কা বলল, “আমরা এটা নিয়ে কথা না বলি রিটিন। সত্যিটাকে মেনে নিই। তুমি অল্প কয়েকদিনের জন্যে এসেছ। আমরা এই অল্প কয়টা দিন হাসিখুশিতে কাটিয়েছি। এখন তোমার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে, আমি আর নীল তোমাকে হাসি মুখ করে বিদায় দেব রিটিন। তুমি কোথায় যাবে কী করবে আমি জানি না। কিন্তু যেখানেই যাও তুমি যেন ভালো থাকো। আনন্দে থাকো”

কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে তানুস্কার গলা ধরে এল। তানুস্কা তখন চুপ করে যায়, নির্জন পথ ধরে নিঃশব্দে গাড়ি চালিয়ে যেতে থাকে।

বাসায় পৌঁছানোর পর রিটিন ঘুমন্ত নীলকে কোলে নিয়ে তানুস্কার ঘরে শুইয়ে দিল।

সেদিন সে অনেক রাত পর্যন্ত বাসার বাইরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল, সপ্তর্ষি মণ্ডলকে ধ্রুবতারাকে ঘিরে একটু একটু করে ঘুরে যেতে দেখল। বাতাসের শব্দ শুনল, গাছের পাতার শিরশির শব্দ শুনল, মাথার উপর দিয়ে একটা রাতজাগা পাখিকে করুণ সুরে ডাকতে ডাকতে উড়ে যেতে শুনল।

.

পরের কয়েকদিন রিটিন আর তানুস্কা দুজনেই ভান করতে লাগল যেন সবকিছুই স্বাভাবিক আছে, সবকিছুই আগের মতো আছে, যদিও দুজনেই জানে যে তাদের দুজনের সুন্দর সময়টা হঠাৎ করে শেষ হয়ে যেতে যাচ্ছে। তানুস্কা তার ট্রাক্টরে করে জমি চাষ করে যেতে লাগল, রিটিন ট্রাক্টরের পেছনে সার তুলে দিতে লাগল, পানির প্রবাহ শুরু করার জন্যে পাহাড়ের উপর আটকে থাকা পানির বাঁধে খাল কেটে দিতে লাগল।

রাতে তারা ডাইনিং টেবিলে বসে হইচই করে খেতে লাগল, খেতে খেতে হাসাহাসি করতে লাগল। রিটিন তানুস্কার দিকে তাকিয়ে তার বুকের ভেতর একধরনের তীক্ষ্ণ বেদনা অনুভব করে। তার মনে হতে থাকে, কী হতো যদি সে ক্যাটাগরি সি মানুষকে বাঁচানোর জন্যে নিয়ন্ত্রণ ভবনের জন্যে নির্দিষ্ট করা জায়গাটিতে পাঁচশত বছরের জন্যে শীতল ঘরে আশ্রয় না নেয়? সে যদি পাঁচশ বছর ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে না নিয়ে এই সাদামাটা প্রাচীন পৃথিবীতে তানুস্কা আর নীলকে নিয়ে একটা জীবন কাটিয়ে দেয় তাহলে কী এমন ক্ষতি হবে? কেন তাকেই এত বড় দায়িত্ব নিতে হবে?

রিটিন যখন এরকম এলোমেলো চিন্তা করছিল ঠিক তখন একদিন গভীর রাতে তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটল।

.

নীল ঘুমিয়ে গেছে। তানুস্কা আর রিটিন বাসার সামনে ডেক চেয়ারে আধশোয়া হয়ে গল্প করছে। রিটিন মাত্র আবিষ্কার করেছে তানুস্কার গলাটি খুব মিষ্টি, ইচ্ছে করলেই সে খুব সুন্দর গাইতে পারে। রিটিনের অনুরোধ রক্ষা করে সে প্রথম গানটি শেষ করে মাত্র দ্বিতীয় গানটি শুরু করেছে তখন হঠাৎ করে মাটি কেঁপে উঠল, জানালার কাঁচে ঝনঝন করে শব্দ করে উঠল। তানুস্কা গান থামিয়ে বলল, “ভূমিকম্প!”

।রিটিন ডেক চেয়ারে সোজা হয়ে বসল, সত্যিকারের ভূমিকম্প হয়ে থাকলে পায়ের নিচের মাটি শুধু একবার ঝটকা মেরে কেঁপে উঠবে না, এটি থরথর করে কাঁপতে থাকবে। কিন্তু মাটি আর কাঁপল না, পুরো পৃথিবী স্থির হয়ে রইল।

তানুস্কা বলল, “কী আশ্চর্য!”

রিটিন জিজ্ঞেস করল, “কোনটা আশ্চর্য।”

“এই যে একটা ঝটকা দিয়ে একবার কেঁপে ওঠা। তুমি যেদিন এসেছিলে সেদিনও ঠিক এভাবে মাটি এভাবে ঝটকা মেরে কেঁপে উঠেছিল।”

রিটিন চমকে উঠে তানুস্কার দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, “সত্যি।”

“হ্যাঁ।” তানুস্কা অবাক হয়ে বলল, “তুমি এত অবাক হলে কেন?”

রিটিন উত্তর দিতে পারল না, তানুস্কাকে বলতে পারল না তার টাইম ক্যাপসুল মাটির গহ্বরে আঘাত করায় আশপাশের মাটি কেঁপে উঠেছিল। এখন কি আবার আরেকটি টাইম ক্যাপসুল এসেছে? কেন এসেছে?

রিটিন উঠে দাঁড়াল। তানুস্কা জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাও?”

“আসছি, আমি এক্ষুনি আসছি।”

রিটিনের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল যেটি শুনে তানুস্কা হঠাৎ ভয় পেয়ে যায়। সে কাঁপা গলায় বলল, “কী হয়েছে রিটিন? তুমি কোথা থেকে আসছ?”

রিটিন বলল, “কিছু হয়নি তানুস্কা। আসলে হয়তো কিছুই হয়নি। কিন্তু আমি একটু সাবধান থাকতে চাই। আমি আমার ঘর থেকে ব্যাগটা নিয়ে আসি। আমার ব্যাগে নিরাপত্তার কিছু যন্ত্রপাতি আছে।”

রিটিন তার ঘর থেকে ব্যাগটা নিয়ে এসে সেখান থেকে তার স্পেস ভিউয়ার বের করে এনে তার ভেতরে তাকাল। তানুস্কা অবাক হয়ে দেখল ভিউয়ারের স্ক্রিনে চারিদিক একেবারে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেখানে বহুদূরে চারজন মানুষকে হেঁটে আসতে দেখা গেল।

তানুস্কা অবাক হয়ে বলল, “এটা কী যন্ত্র? সবকিছু এত স্পষ্ট দেখা যায়! এত রাতে এখানে মানুষ কোথা থেকে আসছে?”

রিটিন তার ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে একটা ভয়ংকর দর্শন অস্ত্র বের করে আনে। অস্ত্রটিতে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে সচল করে চাপা গলায় বলল, “তানুস্কা, তুমি ভেতরে যাও।”

“কেন?”

“এখন আমার কাছে এটা জানতে চেয়ো না তানুস্কা। তুমি ভেতরে যাও, নীলকে বিছানা থেকে নামিয়ে মেঝেতে শুইয়ে রেখো। তুমিও তার পাশে শুয়ে থেকো।”

“তুমি কী বলছ রিটিন?” তানুস্কা ভয় পাওয়া গলায় জিজ্ঞেস করল, “কী হচ্ছে এখানে?”

“আমি তোমাকে এখন সবকিছু বুঝিয়ে বলতে পারব না। শুধু এটুকু বলতে পারি ঐ চারজন মানুষ সম্ভবত আমাকে মেরে ফেলতে আসছে।”

“কেন? তোমাকে মারবে কেন? তুমি কী করেছ?”

রিটিন চাপা গলায় বলল, “সেটা এখন বলতে পারব না, এখনই তুমি ভেতরে যাও। এদের কাছে ভয়ংকর অস্ত্র আছে, একবার লক করে ফেলতে পারলে কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। এখনো অনেক দূরে, লক করতে পারবে না।”

তানুস্কা কাঁপা গলায় বলল, “আমি কিছু বুঝতে পারছি না–”

“তুমি বুঝতে পারবে না। শুধু জেনে রাখো ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলতে পারে তুমি মন খারাপ করবে না। আমি শুধু একটা কথা বলে রাখি–আমি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছি, জ্ঞান হওয়ার পর আমি কারো কাছে ভালোবাসা পাইনি। তুমি প্রথম আমাকে ভালোবাসা দিয়েছ। তোমার জন্যে আমার জীবনটা পরিপূর্ণ হয়েছে–”

তানুস্কা বলল, “না, তুমি এরকম করে কথা বোলো না”

“ঠিক আছে বলব না।”

“ভেতরে যাও তানুস্কা–”

“না। আমি ভেতরে যাব না। আমি তোমার সাথে থাকব।”

“অবুঝ হয়ো না তানুস্কা–”

“আমি অবুঝ হচ্ছি না। আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই।”

“ওরা শুধু আমার জন্যে আসছে। তুমি যদি আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করো তাহলে ওরা তোমাকেও ছাড়বে না।”

“না ছাড়ুক।”

রিটিন আবছা অন্ধকারে তানুস্কার দিকে তাকাল, সে হঠাৎ করে বুঝতে পারল এই মেয়েটি তাকে একা ফেলে রেখে ভেতরে যাবে না। কাজটি অর্থহীন এবং বিপজ্জনক। কিন্তু মেয়েটি এই পুরোপুরি অর্থহীন এবং বিপজ্জনক কাজটাই করবে।

রিটিন বলল, “তুমি যদি ভেতরে না যাবে তাহলে এসো আমরা দুজন এখন ট্রাক্টরটার পেছনে চলে যাই।”

দুইজন গুঁড়ি মেরে ট্রাক্টরের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে যায়। রিটিন স্পেস ভিউয়ারটিতে দূরের মানুষগুলোকে আরো একবার দেখে সেটা বন্ধ করে দিল, এটা চালু থাকলে দূর থেকে এটার সিগন্যাল পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

দুজন নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে থাকে, একসময় তারা মানুষগুলোর পায়ের শব্দ শুনতে পেল। শক্ত মাটিতে ভারী জুতোর শব্দ। কিছুক্ষণের মাঝেই মানুষগুলো বাসার সামনে এসে দাঁড়াল, তারা কিছুক্ষণ সেখানে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর একজন উচ্চ স্বরে বলল, “রিটিন, আমরা জানি তুমি এখানে আছো। তুমি বের হয়ে এসো।”

রিটিন বের হয়ে গেল না, নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে থাকল। মানুষটি বলল, “রিটিন, তুমি যেটা করতে চাইছ সেটা খুবই ভয়ংকর। তুমি সম্ভবত জানো না তুমি এখানে এসে কজালিটি ব্রেক করেছ। তুমি এখানে আসার কারণে বর্তমান পৃথিবীতে যা যা পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো লক্ষ কোটি গুণ এমপ্লিফাইড হয়ে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে। আরো কিছু করার আগে বের হয়ে এসো।”

আরেকজন বলল, “তুমি কোথায়?”

রিটিন এবারেও কোনো উত্তর দিল না।

মানুষটি বলল, “আমরা জানি তুমি আমাদের কথা শুনছ। তুমি যদি এই মুহূর্তে বের না হয়ে আসো আমরা এই বাসাটির ভেতর ঢুকব। এখানে যে কয়টি জীবিত প্রাণী আছে তাদের একজন একজন করে হত্যা করব।”

তানুস্কা আতঙ্কে শিউরে উঠে খপ করে রিটিনের হাত ধরে ফিসফিস করে বলল, “সর্বনাশ! আমার নীল–”

রিটিন বলল, “ভয় পেয়ো না। ওরা আমার জন্যে এসেছে। আমাকে পেলে ওরা কারো কোনো ক্ষতি করবে না। আমি জানিয়ে দিই যে আমি এখানে।”

রিটিন ট্রাক্টরের পাশে দিয়ে মাথা বের করে মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে হাতের অস্ত্রটা তুলে ট্রিগার টেনে ধরল। একটা আলোর ঝলকানির সাথে সাথে একটা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। একজন মানুষ ছিটকে নিচে পড়ে গেল এবং সাথে সাথে অন্য সবাই ঝটকা মেরে ঘুরে গিয়ে ট্রাক্টরটির দিকে তাকাল। মানুষগুলো পেছনে হাত দিয়ে ভয়ংকর দর্শন অস্ত্র পিঠ থেকে তুলে নিয়ে ট্রাক্টরগুলোর দিকে তাক করে, একজন বলল, “রিটিন, তুমি কোথায় আমরা এখন জানি, হাত উপরে তুলে বের হয়ে এসো–”

রিটিন চিৎকার করে বলল, “তুমি জাহান্নামে যাও! তোমার চোদ্দগুষ্ঠি জাহান্নামে যাক–” কথা শেষ না করেই সে আবার ট্রিগার টেনে ধরল, আবার প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দের সাথে আলোর ঝলকানি বের হয়ে আসে। আরো একজন মানুষ ছিটকে পড়ল।

রিটিন ট্রিগার থেকে হতে সরিয়ে আবার মানুষগুলোর দিকে তাকাল। যে দুজন মানুষ ছিটকে পড়েছিল তাদের দুজনেই উঠে দাঁড়িয়েছে। তারাও অন্যদের সাথে এগিয়ে আসছে। এগুলো মানুষ নয়। এগুলো রোবট।

সবার সামনে যে মানুষটি ছিল সে তার অস্ত্রটা ট্রাক্টরের দিকে তাক করে শান্ত গলায় বলল, “রিটিন। তুমি নির্বোধের মতো ব্যবহার করো না। তুমি জানো আমরা প্রস্তুতি ছাড়া আসিনি। তুমি আমাদের কিছু করতে পারবে না। আমি একা এই পুরো এলাকা উড়িয়ে দিতে পারি। ট্রিগার টেনে ধরলে এই ট্রাক্টর আর তার পেছনে ঘাপটি মেরে থাকা তুমি সবকিছু মুহূর্তে ভস্মীভূত হয়ে যাবে।”

রিটিন বলল, “কিন্তু আমি জানি তোমার সেটা করার অনুমতি নেই। কজালিটি ব্রেক হলে কী হবে কেউ জানে না–তুমি কজালিটি ব্রেক করার সাহস পাবে না। শুধু তুমি না তোমার বাপ দাদা চোদ্দগুষ্ঠি সেই সাহস পাবে না”

কথা শেষ করে রিটিন আবার এক পশলা গুলি করল, প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ এবং আলোর ঝলকানিতে জায়গাটা নারকীয় হয়ে ওঠে। কিছু ধোঁয়া সরে গেলে দেখা গেল মানুষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে, সবাই ধীরে ধীরে নড়তে শুরু করল, তারপর টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল। হাতের অস্ত্রগুলো আবার ট্রাক্টরটির দিকে তাক করে মানুষগুলো আরো কয়েক পা এগিয়ে আসে।

একজন খসখসে ভাঙা গলায় বলল, “রিটিন, আমরা জানি ট্রাক্টরের পেছনে তুমি একা নও, তোমার সাথে আরেকজন আছে। একটি মেয়ে। তুমি দুই হাত উপরে তুলে বের হয়ে এসো, তা না হলে আমরা এই মেয়েটাকে খুন করে ফেলব।”

কাছে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন বলল, “আমাদের সময়ের অভাব নেই, কিন্তু ধৈর্যের অভাব আছে। আমি তিন পর্যন্ত গুনব, তার ভেতরে যদি তুমি বের হয়ে না আসে তাহলে আমরা এই মেয়েটাকে গুলি করব। মেগাওয়াট এক্সরে লেজার তোমার ট্রাক্টর ফুটো করে পেছনের মেয়েটাকে টুকরো টুকরো করে দেবে।”

খসখসে গলায় মানুষটা বলল, “আমি গুনতে শুরু করছি। এক।”

তানুস্কা খপ করে রিটিনের হাত ধরে বলল, “রিটিন! এখন কী হবে?”

“যেটা হওয়ার সেটা হয়ে আছে। আমি দেখি সেটা কী।”

“তুমি কী বলছ আমি বুঝতে পারছি না।”

“তোমার বোক্সর প্রয়োজন নেই তানুস্কা। শুধু জেনে রাখো। তোমাকে আমাদের ব্যাপারে জড়ানো যাবে না।”

খসখসে গলার মানুষটি বলল, “দুই”।

রিটিন চিৎকার করে বলল, “ঠিক আছে আমি আসছি।”

খসখসে গলার মানুষটা বলল, “চমৎকার।”

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা বলল, “দুই হাত উপরে তুলে বের হবে যেন আমরা তোমার অস্ত্রটা দেখতে পাই। যদিও তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তোমার অস্ত্রটা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”

রিটিন তানুস্কার দিকে তাকিয়ে বলল, “বিদায় তানুস্কা।” তারপর তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুই হাত উপরে তুলে বের হয়ে এল।

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা এগিয়ে এসে রিটিনের হাতের অস্ত্রটা ছিনিয়ে নেয়। তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে তাদের অস্ত্রগুলো তার দিকে তাক করল। রিটিন হাত উপরে তুলে বলল, “এক সেকেন্ড।”

খসখসে গলার মানুষটা বলল, “কী হয়েছে?”

রিটিন বলল, “খোলা মাঠে যখন সারি সারি টিউলিপ লাগানো

খসখসে গলার মানুষটা বলল, “খবরদার-খবরদার”

“তার মাঝে যখন একটা শিশু হেঁটে যায়। নেচে নেচে বলে-”

“খবরদার খবরদার–চুপ করো–”

“নেচে নেচে বলে আমি ফুলের সুবাস খাই আমি চাঁদের আলো খাই”

মানুষগুলো থর থর করে কাঁপতে থাকে, কাঁপতে কাঁপতে বিকৃত গলায় বলে, “চুপ করো, চু-চু-চুপ করো। চু-চু-চু-”

রিটিন বলল, “বলো। আমার সাথে বলো, আমি ফুলের রেণু মেখে স্নান করি, চাঁদের আলো খাই”

মানুষগুলো বলল, “ফুলের রেণু-মে-খে স্নান করি। চাঁদের আলো খাই।”

“বলো, কুয়াশার মাঝে ডুবে যাই মেঘের মাঝে ভেসে যাই–”

মানুষগুলো বলল, “কুয়াশার মাঝে ডুবে যাই–মেঘের মাঝে ভেসে যাই”

রিটিন তখন সাবধানে উঠে দাঁড়াল। তানুস্কা ট্রাক্টরের পেছন থেকে বের হয়ে রিটিনের কাছে এসে বলল, “কী হচ্ছে এখানে?”

“মেটাকোড।”

“মেটাকোড কী?”

“রোবটকে অচল করার কোড। আমি রিভিক ভাষা জানি, তাই যেকোনো বরোটকে অচল করতে পারি।”

“রোবট? এরা রোবট।”

“হ্যাঁ। এরা রোবট।”

“কী আশ্চর্য!”

তানুস্কা অবাক হয়ে বলল, “এরা কোথা থেকে এসেছে?”

“বলছি। তার আগে এগুলোকে পাকাঁপাকিভাবে অচল করে দিই। তা না হলে কিছুক্ষণের মাঝে আবার রিবুট করে চালু হয়ে যাবে।”

রিটিন তার অস্ত্রটা নিয়ে রোবটগুলোর খুব কাছাকাছি গিয়ে পাঁজরের নিচে গুলি করল। ঝনঝন শব্দ করে একটা একটা করে রোবট টুকরো টুকরো হয়ে গেল। রোবটদের মাথাগুলো শরীর থেকে আলাদা হয়ে গড়িয়ে যায় এবং সেভাবে সেগুলো ফাস ফাস করে বলতে থাকে, “ফুলের রেণু মেখে চাঁদের আলোতে স্নান করি”

তানুস্কা বলল, “কী ভয়ানক!”

রিটিন চুল ধরে একটা মাথা তুলে এনে তার কানের নিচে চাপ দিল, মাথাটি সাথে সাথে বিড়বিড় করে কথা বলা বন্ধ করে চোখ পিটপিট করে তাকাল। রিটিন রোবটের মাথাটার দিকে তাকিয়ে বলল, “কাজটা ঠিক হয়নি।”

রোবটের মাথাটা ফাস ফঁসে গলায় বলল, “কোন কাজটা?”

“এই যে আমাকে মারার জন্যে চারটা মানুষ না পাঠিয়ে চারটা নির্বোধ রোবট পাঠিয়ে দিল। আমি রোবটকে খুব ঘৃণা করি, তোমরা

জানো না?”

“মানুষ রোবটকে বানিয়েছে। রোবটকে ঘৃণা করা ঠিক না।”

রিটিন রোবটের মাথাটাকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “ব্যস অনেক হয়েছে। আমাকে তোমার জ্ঞান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”

“ঠিক আছে।”

“তোমাদের কেন পাঠানো হয়েছে?”

“তোমাকে খুন করার জন্যে।”

“আমাকে খুন করতে হবে, সেটা কেমন করে জানতে পারল? আর আমাকে এখানে পাবে সেটা কেমন করে বুঝতে পারলে?”

রোবটের মাথাটা চুপ করে রইল। রিটিন বলল, “বলো। কথা বলো। আমি তোমাদের সিকিউরিটি ভেঙেছি। আমার কাছে তোমার গোপন করার ক্ষমতা নেই।”

“না, নেই।”

“বলো কেমন করে নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল জানতে পারল আমাকে খুন করতে হবে?”

“তোমাদের ক্লিওনের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে সবকিছু জেনে গেছে।”

“আর এখানে পাঠানোর জন্যে টাইম ক্যাপসুল কেমন করে তৈরি করা হয়েছে?”

“প্রফেসর রাইখের মস্তিষ্ক স্ক্যান করেছে।”

“তার মানে আমি এখানে কী করতে এসেছি সেটা জানাজানি হয়ে গেছে।”

রোবটের মাথাটা বলল, “মনে হয়। আমি তুচ্ছ পি ফরটিটু রোবট, আমি খুঁটিনাটি জানি না। ভাসা ভাসা জানি।”

রিটিন রোবটের মাথাটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে গিয়ে থামল, জিজ্ঞেস করল, “আমাকে মারতে পেরেছ কি পারনি সেই তথ্যটা কীভাবে পাঠাবে?”

রোবটের মাথাটা চুপ করে রইল। রিটিন ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “কথা বলো।”

“বলছি। আমাদের কাছে একটা রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসের এম্পুল আছে। হাফ লাইভ একশ বছরের মতো। সেই এন্ডুলটা কন্ট্রোল করার একটা অ্যাকটিভ সার্কিট আছে। তোমাকে হত্যা করার পর তোমার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত সেই সার্কিটের কন্ট্রোলে দিতে হবে। এটা তাহলে পাঁচশ বছর পরে নির্দিষ্ট সময়ে খুলে যাবে। বাতাসে রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসটা মিশে যাবে। পৃথিবীর মানুষ যখন দেখবে হঠাৎ করে বাতাসে এই রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেছে বুঝে নেবে মিশন সফল হয়েছে। তোমাকে খুন করা হয়েছে।”

রিটিন বলল, “এই তথ্যটা দেয়ার জন্যে আমার তোমাকে একবার চুমু খাওয়া দরকার, কিন্তু তোমার মাথাটা দেখে আমার এত ঘেন্না করছে যে আমার পক্ষে চুমু খাওয়া সম্ভব নয়।”

“আমাকে চুমু খেতে হবে না।”

“এখন চট করে আমাকে বলো রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসের এলটা কোথায়।”

“আমাকে আমার শরীরের কাছে নিয়ে যাও। আমি দেখাই।”

“রিটিন বলল, তোমার শরীর টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।”

“তাতে সমস্যা নেই। আমি চিনতে পারব।”

রিটিন রোবটের মাথাটি নিয়ে তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া শরীরের অংশগুলোর ভেতর খুঁজে রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসের এম্পুলটি বের করল। রোবটের মাথাটি ছুঁড়ে দেবার আগে মাথাটি কাতর গলায় বলল, “রিটিন। তোমাকে একটা অনুরোধ করতে পারি?”

“কী অনুরোধ?”

“আমার সার্কিটটা অফ করে ব্যাটারিটা খুলে নিতে পারবে? আমি এভাবে বেঁচে থাকতে চাই না।”

রিটিন বলল, “ঠিক আছে।”

সে রোবটের মাথায় কানের নিচে হাত দিয়ে সুইচটা অফ করে ব্যাটারিটা খুলে নিল।

তানুস্কা এতক্ষণ একটা কথাও বলেনি। এবারে রিটিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখানে কী হচ্ছে তুমি আমাকে বলবে?”

“বলব। তোমাকে বলতেই হবে, কারণ তোমার সাহায্য দরকার।”

“তার আগে আমাকে একটু সময় দাও, আমি দেখে আসি নীল কী করছে! এখানে এত খুনোখুনি হয়ে গেল সে কি কিছু টের পায়নি।”

রিটিন বলল, “মনে হয় পায়নি। জেগে উঠলে এতক্ষণে বাইরে চলে আসত।”

তানুস্কা বাসার দিকে ছুটে যেতে লাগল।