১৩শ অধ্যায়
ভীমসাহায্যার্থ কৃষ্ণের যাত্রা
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে জনমেজয়! ধনুর্দ্বরাগ্রগণ্য যদুনন্দন বাসুদেব যুধিষ্ঠিরকে এই কথা কহিয়া সর্বায়ুধসম্পন্ন সূৰ্য্যসঙ্কাশ রথে আরোহণ করিলেন। ঐ রথের ধুরকাষ্ঠের দক্ষিণে শৈব্য, বামে সুগ্রীব এবং উহার উভয়পার্শ্বে মেঘপুষ্প ও বলাহক নামে কাম্বোজদেশীয় সুবর্ণমালাভূষিত অশ্ব সংযোজিত ছিল। উহাতে বিশ্বকর্ম্মানির্মিত রত্নখচিত দিব্য ধ্বজযষ্টি মূর্তিমতী মায়ার ন্যায় লক্ষিত হইতে লাগিল। ঐ ধ্বজদণ্ডে প্ৰভাপুঞ্জোদ্ভাসিত [অক্ষয় তেজোরাশি সমুজ্জ্বলিত] পতগরাজ গরুড় অবস্থান করাতে উহার অপূর্ব্ব শোভা হইয়াছিল।
অনন্তর ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ও অর্জুন সেই গরুড়ধ্বজ রথে আরোহণ ও বাসুদেবের উভয় পার্শ্বে অবস্থানপূর্ব্বক দেবরাজ ইন্দ্রের উভয়পাশ্ববর্তী অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের ন্যায় সুশোভিত হইলেন। তখন মহামতি বাসুদেব অশ্বপৃষ্ঠে কশাঘাত করিলে অশ্বগণ মহাবেগে ধাবমান হইল। বিহঙ্গমকুলের গমনকালে নভোমণ্ডলে যেরূপ শব্দ হইয়া থাকে, অশ্বগণের গমনবেগে অবনীমণ্ডলে সেইরূপ ঘোরতর শব্দ হইতে লাগিল। উহারা কিয়ৎক্ষণমধ্যে ভীমের সন্নিহিত হইল।
পাণ্ডবনাশার্থ অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ
তখন বাসুদেবপ্রমুখ বীরত্রয় শত্রুবিনাশে সমুদ্যত ক্রোধাদ্ধত মহাবীর বৃকোদরকে নিবারণ করিতে লাগিলেন; কিন্তু তদ্বিষয়ে কিছুতেই কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। মহাবলপরাক্রান্ত ভীমসেন তাঁহাদের বাক্যে অনাদর প্রকাশপূর্ব্বক দ্রৌপদী তনয়নিহন্তা দ্রোণাত্মজ অশ্বত্থামাকে লক্ষ্য করিয়া ভাগীরথীতীরে সমুপস্থিত হইয়া দেখিলেন, মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন অন্যান্য ঋষিগণের সহিত তথায় অবস্থান করিতেছেন এবং ক্রূরকর্ম্মা অশ্বত্থামা ঘৃতাক্ত কুশচীরধারী [১] ও ধূলিপটল-পরিবৃত হইয়া তাহারই সন্নিধানে উপবিষ্ট আছেন। তখন মহাবীর ভীম দ্রোণপুত্রকে দেখিবামাত্র ক্রোধভরে শর ও শরাসন গ্রহণপূর্ব্বক ‘থাক্ থাক’ বলিয়া তাঁহার প্রতি ধাবমান হইলেন। মহারথ অশ্বত্থামা ভীমবল ভীমসেনকে মহাবেগে আগমন ও তাঁহার ভ্রাতৃদ্বয়কে তাঁহারই পশ্চাদ্ভাগে বাসুদেবের রথে অবস্থান করিতে দেখিয়া অতিশয় ব্যথিত হইলেন এবং পুনরায় যুদ্ধ উপস্থিত হইল অনুমান করিয়া সেই বিপকালে দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করিবার মানসে ঈষিকা [২] গ্রহণ করিলেন। তৎপরে তিনি ক্রোধভরে সেই ঈষিকায় ব্রহ্মশির অস্ত্র সংযোজনপূর্ব্বক ‘পাণ্ডব-বংশ বিনষ্ট হউক’ বলিয়া উহা পরিত্যাগ করিলেন। সেই দিব্যাস্ত্র পরিত্যক্ত হইবামাত্র ত্রিলোক দগ্ধ করিবার নিমিত্তই যেন উহাতে হুতাশন প্রাদুর্ভূত হইল।