৪৯৫*
নিউ ইয়র্ক
২ জুলাই, ১৯০০
প্রিয় নিবেদিতা.
… ‘মা-ই সব জানেন’—এ কথা আমি প্রায়ই বলি। মায়ের নিকট প্রার্থনা কর। নেতা হওয়া বড় কঠিন। সঙ্ঘের পায়ে যথাসর্বস্ব—এমন কি নিজের সত্তা পর্যন্ত নেতাকে বিসর্জন দিতে হয়।
তোমাদের
বিবেকানন্দ
৪৯৬*
[মিসেস মেরী হেলকে লিখিত]
102 E 58th St., নিউ ইয়র্ক
১১ জুলাই, ১৯০০
প্রিয় ভগিনী,
তোমার চিঠি পেয়ে ও গ্রীনএকার যাচ্ছ জেনে আনন্দিত হয়েছি। আশা করি, তোমার অনেক উপকার হবে। লম্বা চুল কেটে ফেলার জন্য আমি সকলের কাছে তিরস্কৃত হচ্ছি। দুঃখেরই বিষয়; তুমি জোর করেছিলে বলেই আমি তা করেছিলাম।
ডেট্রয়েট গিয়েছিলাম, গতকাল ফিরে এসেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্রান্সে যেতে চেষ্টা করছি, সেখান থেকে ভারতে। এখানকার খবর প্রায় কিছুই নেই; কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আহার ও নিদ্রা নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাচ্ছি—বস্, এই পর্যন্ত।
চিরবিশ্বস্ত ও স্নেহশীল ভ্রাতা
বিবেকানন্দ
পুনঃ—চিকাগোয় আমার নামে কোন চিঠিপত্র এসে থাকলে মেয়েদের লিখো পাঠিয়ে দিতে।
৪৯৭*
102 East 58th St., নিউ ইয়র্ক
১৮ জুলাই, ১৯০০
প্রিয় তুরীয়ানন্দ,
তোমার চিঠি ঠিকানা-বদল হয়ে আমার কাছে এসে পৌঁছেছে। ডেট্রয়েটে মাত্র তিন দিন ছিলাম। নিউ ইয়র্কে এখন ভয়ঙ্কর গরম। গত সপ্তাহে তোমার নামে ভারতের কোন ডাক ছিল না। নিবেদিতার কাছ থেকে এখনও কোন চিঠি পাইনি।
আমাদের সব ব্যাপার একই-ভাবে চলছে। উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। অগষ্ট মাসে মিস মূলার আসতে পারবেন না। তাঁর জন্য আমি অপেক্ষা করব না। পরের ট্রেনটি ধরব। সেটা যাওয়া পর্যন্ত যাওয়া অপেক্ষা কর। মিস বুককে (Miss Boocke) ভালবাসা।
প্রভুসমীপে তোমার
বিবেকানন্দ
পুনঃ—প্রায় এক সপ্তাহ পূর্বে কালী পাহাড়ে চলে গেছে। সেপ্টেম্বরের আগে ফিরতে পারবে না। আমি একেবারে একা … আমি তাই ভালবাসি। আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেছ কি? তাদের আমার ভালবাসা।
বি
৪৯৮*
102 East 58th St., নিউ ইয়র্ক
২০ জুলাই, ১৯০০
প্রিয় জো,
এ চিঠি তোমার কাছে পৌঁছবার আগেই—যে-রকম ষ্টীমার মিলবে সেইমত আমি হয়তো ইওরোপে—লণ্ডনে বা প্যারিসে—পৌঁছে যাব।
এখানে আমার কাজটা সহজ করে নিয়েছি। মিঃ হুইটমার্শের পরামর্শে মিস ওয়াল্ডোর হাতে কাজগুলি দেওয়া হয়েছে।
পাথেয় এবং জাহাজ—দুয়েরই ব্যবস্থা করতে হবে। বাকী ‘মা’ জানেন।
আমার ‘অন্তরঙ্গ’ বন্ধু এখনও অবতীর্ণ হননি। তিনি লিখেছেন, অগষ্টের কোন এক সময়ে তিনি আসবেন; একজন হিন্দুকে দেখবার জন্য তাঁর প্রাণ কণ্ঠায় এসে ঠেকেছে এবং ভারতমাতার জন্য তাঁর আত্মা নিরন্তর পুড়ে খাক হচ্ছে।
তাঁকে লিখেছি, লণ্ডনে তাঁর সঙ্গে দেখা হতে পারে। তাও মা জানেন। মিসেস হাণ্টিংটন মার্গটকে ভালবাসা জানিয়েছেন এবং তার কাছ থেকে সংবাদ আশা করেছেন, অবশ্য সে যদি তার বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী নিয়ে খুব ব্যস্ত না থাকে।
ভারতের ‘পবিত্র গাভী’কে, তোমাকে, লেগেটদের, মিস অমুককে (কি যেন তাঁর নাম?), আমেরিকান রবার গাছকে—সকলকে ভালবাসা।
সতত প্রভুসমীপে তোমার
বিবেকানন্দ
৪৯৯*
102 East 58th St., নিউ ইয়র্ক
২৪ জুলাই, ১৯০০
প্রিয় জো,
সূর্য=জ্ঞান; তরঙ্গায়িত জল=কর্ম; পদ্ম=প্রেম; সর্প=যোগ; হংস=আত্মা; উক্তিটি=হংস (অর্থাৎ পরমাত্মা) আমাদিগকে উহা প্রেরণ করুন।২৭ এটি হৃৎ-সরোবর। কল্পনাটি তোমার কেমন লাগে?২৮ যা হোক, হংস যেন তোমায় এ সমস্ত দিয়ে পরিপূর্ণ করেন।
আগামী বৃহস্পতিবারের ফরাসী জাহাজ ‘লা শ্যাম্পেন’-এ আমার যাত্রা করার কথা আছে।
Waldo and Whitmarsh কোম্পানীর বইগুলি কাছে আছে এবং ছাপার মত প্রায় প্রস্তুত হয়েছে।
আমি ভাল আছি, ক্রমে স্বাস্থ্যলাভ করছি—আগামী সপ্তাহে তোমার সঙ্গে দেখা হওয়া পর্যন্ত ঠিকই থাকব। ইতি
সতত প্রভুপদাশ্রিত
তোমাদের বিবেকানন্দ
৫০০
102 East 58th St., নিউ ইয়র্ক
২৫ জুলাই, ১৯০০
প্রিয় তুরীয়ানন্দ,
মিসেস হ্যান্স্বার্গের একখানি চিঠিতে জানলাম যে, তুমি তাঁদের ওখানে গিয়েছিলে। তাঁরা তোমাকে খুব পছন্দ করেন এবং আমার বিশ্বাস, তুমিও বুঝতে পেরেছ তাঁদের বন্ধুত্ব কত অকৃত্রিম, পবিত্র ও স্বার্থলেশশূন্য। আমি কাল পারি (Paris) যাত্রা করছি, যোগাযোগ সব ঠিক হয়ে এসেছে। কালী এখানে নেই। আমি চলে যাচ্ছি বলে সে একটু ভাবিত হয়ে পড়েছে—কিন্তু এ ছাড়া উপায় কি?
6 Place Des Etats Unis, Paris, France—মিঃ লেগেটের এই ঠিকানায় অতঃপর আমায় পত্র লিখবে। মিসেস ওয়াইকফ্, হ্যান্স্বার্গ ও হেলেনকে আমার ভালবাসা জানাবে। সমিতিগুলির কাজ আবার একটু শুরু করে দাও এবং মিসেস হ্যান্স্বার্গকে বল, তিনি যেন সময়মত সব চাঁদা আদায় করেন, আর টাকা তুলে ভারতে পাঠিয়ে দেন; কারণ সারদা জানিয়েছে, তাদের বড় টানাটানি চলছে। মিস বুলকে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাবে। আমার অসীম ভালবাসা জানবে। ইতি
সতত প্রভুপদাশ্রিত
তোমাদের বিবেকানন্দ
পুনঃ—বলি হাঁস কেমন? ‘তারা পদ্মবনে হংস সনে হংসীরূপে করে রমণ।’২৯
৫০১
[মায়াবতী ‘অদ্বৈত আশ্রমে’র জনৈক সাধুকে লিখিত]
নিউ ইয়র্ক
অগষ্ট, ১৯০০
কল্যাণবরেষু,
তোমার এক পত্র পাইয়াছিলাম। এতদিন জবাব দিতে পারি নাই। তোমার সুখ্যাতি মিঃ সেভিয়ার তাঁর পত্রে করেছেন। তাতে আমি বিশেষ খুশী হলাম।
তোমরা কে কি কর ইত্যাদি পুঙ্খানুপুঙ্খ লিখে আমায় পত্র লিখবে। তোমার মাকে পত্র লিখ না কেন? ও কি কথা? মাতৃভক্তি সকল কল্যাণের কারণ। তোমার ভাই কলিকাতায় পড়ছে-শুনছে কেমন?
তোদের সব আনন্দ-দের নাম মনেও থাকে না—কোন্টাকে কি বলি! সবগুলোকে এক সাঁটে আমার ভালবাসা দিবি। খগেনের শরীর বেশ সেরে গেছে খবর পেয়েছি—বড়ই সুখের কথা। তোদের—সেভিয়াররা যত্ন করে কিনা সব লিখবি। দীনুর শরীরও ভাল আছে—বড় সুখের বিষয়। কালী-ছোকরার একটু মোটা হবার tendency (প্রবণতা) আছে; তার পাহাড় চড়াই-উৎরাইতে সে-সব সেরে যাবে নিশ্চিত। স্বরূপকে বলবি, আমি তার কাগজ চালানোতে বিশেষ খুশী। He is doing splendid work (সে চমৎকার কাজ করছে)।
আর সকলকে আমার আশীর্বাদ ভালবাসা দিবি। আমার শরীর সেরে গেছে—সকলকে বলিস। আমি এখান থেকে ইংলণ্ড হয়ে শীঘ্রই ভারতবর্ষে যাচ্ছি।
সাশীর্বাদং
বিবেকানন্দস্য
৫০২
৬ প্লাস দে-জেতাৎ ইনি
প্যারিস
১৩ অগষ্ট, ১৯০০
হরি ভাই,
তোমার ক্যালিফোর্নিয়া হতে পত্র পেলুম। তিনজনের ভাব হতে লাগল, মন্দ কি? ওতেও অনেক কাজ হয়। শ্রী—মহারাজ জানেন। যা হয় হতে দাও। তাঁর কাজ তিনি জানেন, তুমি আমি চাকর বৈ তো নই!
এ চিঠি সান ফ্রান্সিস্কোতে পাঠাই—মিসেস পানেলের কেয়ারে।
নিউ ইয়র্কের সামান্য সংবাদ পেয়েছি এইমাত্র। তারা আছে ভাল। কালী প্রবাসে। তুমি সান ফ্রান্সিস্কোতে ‘কিমাসীত, প্রভাষেত, ব্রজেত, কিম্’৩০ লিখ। আর মঠে টাকা পাঠাবার কথাটায় গাফিলা হয়ো না। লস্ এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিস্কো হতে যেন অবশ্য অবশ্য টাকা মাসে মাসে যায়।
আমি এক রকম বেশ আছি। শীঘ্রই ইংলণ্ডে যাত্রা। শরতের সংবাদ পাচ্ছি। তার মধ্যে আমাশা হয়েছে। আর সকলে আছে ভাল। ম্যালেরিয়া এবার কাউকে ধরেনি। গঙ্গার উপর বড় ধরেও না। এবার বর্ষা কম হওয়ায় বাঙলাদেশেও আকালের ভয়।
কাজ করে যাও, ভায়া, মায়ের কৃপায়; মা জানেন, তুমি জান—আমি। খালাস! আমি এখন জিরেন নিতে চললুম। ইতি
স্নেহাবদ্ধ
বিবেকানন্দ
৫০৩*
[জন ফক্সকে লিখিত]
ব্যুলেভার হ্যান্স সুয়ান্
প্যারিস
১৪ অগষ্ট, ১৯০০
অনুগ্রহপূর্বক মহিমকে লিখে জানাবেন যে, সে যা-ই করুক না কেন, আমার আশীর্বাদ সে সর্বদাই পাবে। বর্তমানে সে যা করছে, তা নিশ্চয়ই ওকালতি ইত্যাদির চেয়ে ঢের ভাল।আমি বীরত্ব ও সাহসিকতা পছন্দ করি, আর আমার জাতির পক্ষে ঐরূপ তেজস্বিতার বিশেষ প্রয়োজন। তবে আমার স্বাস্থ্য ভেঙে যাচ্ছে এবং আমি বেশী দিন বাঁচবার আশা রাখি না; সুতরাং সে যেন মা ও সমস্ত পরিবারের ভার নেবার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। যে কোন মুহূর্তে আমি চোখ বুজতে পারি। আমি তার জন্য এখন খুব গর্ব অনুভব করছি।
ইতি
আপনার স্নেহাবদ্ধ
বিবেকানন্দ
৫০৪
৬ প্লাস দে-জেতাৎ ইনি
প্যারিস
অগষ্ট, ১৯০০
হরিভাই,
এক্ষণে ফ্রান্স দেশের সমুদ্রতটে অবস্থান করছি। Congress of History of Religions (ধর্মেতিহাস সম্বেলন) হয়ে গেছে। সে কিছুই নয়, জন কুড়ি পণ্ডিতে পড়ে শালগ্রামের উৎপত্তি, যিহোবার উৎপত্তি ইত্যাদি বক্বাদ করেছে। আমিও খানিক বক্বাদ তায় করেছি।
আমার শরীর-মন ভেঙে গেছে। বিশ্রাম অত্যাবশ্যক। তার উপর একে নির্ভর করবার লোক কেউ নেই, তায় আমি যতক্ষণ থাকব, আমার উপর ভরসা করে সকলে অত্যন্ত স্বার্থপর হয়ে যাবে।
… লোকের সঙ্গে ব্যবহার করতে গেলে দিনরাত মনঃকষ্ট। কাজেই … সব লিখে-পড়ে আলাদা হয়ে গেছি। এখন আমি লিখে দিচ্ছি যে, কারও একাধিপত্য থাকবে না। সমস্ত কাজ majority-র (অধিকাংশের) হুকুমে হবে … সেই মত ট্রাষ্ট ডীড্ করিয়ে নিলেই আমি বাঁচি।
এ বৃত্তান্ত ঐ পর্যন্ত। এখন তোমরা যা হয় কর। আমার কাজ আমি করে দিয়েছি বস্। গুরুমহারাজের কাছে ঋণী ছিলাম—প্রাণ বার করে আমি শোধ দিয়েছি। সে কথা তোমায় কি বলব? … দলিল করে পাঠিয়েছে সর্বেসর্বা কত্তাত্তির! কত্তাত্তি ছাড়া বাকী সব সই করে দিয়েছি!
গঙ্গাধর, তুমি, কালী, শশী, নূতন ছেলেরা—এদের ঠেলে ঐ রাখাল ও বাবুরামকে কত্তা করে দিচ্ছি। গুরুদেব বড় বলতেন। এ তাঁর কাজ। … প্রাণ ধরে সই করে দিয়েছি। এখন থেকে যা করব, সে আমার কাজ।
আমি এখন আমার কাজ করতে চললুম। গুরুমহারাজের ঋণ৩১ প্রাণ বার করে শুধে দিয়েছি। তাঁর আর দাবী-দাওয়া নেই।
তোমরা যা করছ, ও গুরুমহারাজের কাজ, করে যাও। আমার যা করবার করে দিয়েছি, বস্। ও-সব সম্বন্ধে আমায় আর কিছু লিখো না, বল না, ওতে আমার মতামত একদম নেই। … এখন থেকে অন্য রকম। … ইতি
নরেন্দ্র
পুঃ—সকলকে আমার ভালবাসা।