নিবিদ্
হ্রস্ব-কলেবর নিবিদ মন্ত্রগুলি আদিতে গদ্যে রচিত হয়েছিল ব’লে যে অনুমান করা হয় তার কারণ, সাধারণ ঋগ্বেদীয় সূক্তগুলির মতো এগুলি ছন্দোবদ্ধ বচনা নয়। তবু এদের মধ্যে অদ্ভুত তাল ও লয়ের প্রবাহ রয়েছে। কোন কোন গবেষকের মতে ঋগ্বেদে নিবিদগুলি প্রয়োগিক কারণে ব্যবহৃত হয়েছে। অবেস্তা গ্রন্থে আমরা ‘নিবেদয়েম’ শব্দটি পেয়েছি। কিন্তু সেখানে তার অর্থ অবশ্য আলাদা। ব্রাহ্মণগ্রন্থ অনুযায়ী নিবিদ সূক্তে সেই সব দেবতাদের আহ্বান করা হয় যারা যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হয়ে সোমযাগে হবি গ্রহণ করেন। নিবিদসূক্তে কোন শ্বাসাঘাত নেই এবং উচ্চােবচতাহীন সুরে অর্থাৎ একশ্রেশ্নতির মধ্যদিয়ে এদের আবৃত্তি করা হয় ; সম্ভবত এ ধরনের উচ্চারণে এদের ঐন্দ্ৰজালিক গাভীর্য বধিত হয়। নিবিদের মধ্যে মাত্র একজন পুরোহিত অর্থাৎ হােতাই উল্লিখিত হয়েছেন। আহুতির মধ্যে সোমকে উপাদানরূপেই গ্রহণ করা হয়েছে, দেবতাররূপে নয়, এতে নিবিদের প্রাচীনত্বই প্রমাণিত অর্থাৎ সোম দেবত্বে উপনীত হবার পূর্বেই নিবিদগুলি রচিত হয়েছিল। সম্ভবত যাযাবর আর্যজাতির ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আদিম পর্যায়ের যজ্ঞে এগুলি প্ৰযুক্ত হত। তাছাড়া ভাষা বিশ্লেষণ করে নিবিদগুলির বিশেষ প্রাচীনতা, এমন কি ইন্দো-ইয়োরোপীয় পর্যায়ের নিকটবতী অবস্থােনই প্রমাণ করা যায়। প্ৰাথমিকস্তরে নিবিদ সংক্ষিপ্ত ঐন্দ্ৰজালিক সূত্ররূপে থাকলেও ক্রমশ এগুলিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ প্রার্থনা সূক্ত রচিত হতে থাকে। সম্ভবত অসংখ্য নিবিদ বৈদিক যুগে প্রচলিত ছিল, কিন্তু আমাদের কালে এর সমস্ত অংশ এসে পৌঁছয় নি।