বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে যেসব গুণবৈশিষ্ট বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যায় রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে এককভাবে বিদ্যমান ছিলো। তিনি ছিলেন সেগুলো দূরদর্শিতা, সত্যপ্রিয়তা এবং চিন্তাশীলতার এক সুউচ্চ মিনার। চিন্তার পরিচ্ছন্নতা, পরিক্কতা উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যের পবিত্রতা তাঁর মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান ছিলো। দীর্ঘ সময়ের নীরবতায় যিনি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ্যে আল্লাহর সাহায্য পেতেন। পরিচ্ছন্ন, মার্জিত, সুন্দর বিবেক বুদ্ধি, উন্নত স্বভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি মানুষের জীবন, বিশেষত জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে গভীরভাবে ধ্যান করেছিলেন। এ ধ্যানর মাধ্যমে মানুষকে যে সকল পষ্কিলতার নিমজ্জিত দেখলেন, এতে তাঁর মন ঘৃণায় ভরে উঠলো। তিনি গভীরভাবে মর্মাহিত হলেন। পষ্কিলতার আবর্তে নিমজ্জিত মানুষ থেকে তিনি নিজেকে দূরে রাখলেন। মানুষের জীবন সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেয়ার পর মানবকল্যাণে যতোটা সম্ভব অংশগ্রহণ করতেন। বাকি সময় নিজের প্রিয় নির্জতার ভুবনে ফিরে যেতেন। তিনি কখনো মদ স্পর্শ করেন নি, আস্তানায় যবাই করা পশুর গোশত গোশত খাননি,মূর্তির জন্যে আয়োজিত উৎসব, মেলা ইত্যাদিতেও কখনোই অংশগ্রহণ করেননি।
শুরু থেকে মূর্তি নামের বাতিল উপাস্যদের অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। এতো বেশি ঘৃণা অন্য কিছুর প্রতি ছিলো না। এছাড়া লাত এবং ওযযার নামে শপথও সহ্য করেন পারতেন না।
তাকদীর তাঁর ওপর হেফাযতের ছায়া ফেলে রেখেছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই। পার্থিব কোন কিছু পাওয়ার জন্যে যখন মন ব্যাকুল হয়েছে, অথবা অপছন্দনীয় রুসম-রেওয়াজের অনুসরণের জন্যে মনে ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সেসব থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন।
ইবনে আছিরের এক বর্ণনায় রয়েছে, রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জাগেলু যুগের লোকেরা যেসব কাজ করতো, দু’বারের বেশি কখনোই সেসব কাজ করার ইচ্ছে আমার হয়নি। সেই দু’টি কাজেও আল্লাহর পক্ষ থেকে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।
এরপর সে ধরণেই কাজের ইচ্ছা কখনোই আমার মে জাগেনি। ইতিমধ্যে আল্লাহ তায়ালা আমাকে নবুওয়তে গৌরব গৌরবান্বিত করেছেন। মক্কার উপকন্ঠে যে বালক আমার সাথে বকরি চরাতো, একদিন তাকে বললাম, তুমি আমার বকরিগুলোর যদি লক্ষ্য রাখতো, তবে আমি মক্কায় গিয়ে অন্য যুবকদের মতো রাত্রিকালের গল্প-গুজবের আসরে অংশ নিতাম। রাখাল রাযি হলো। আমি মক্কার দিকে রওয়ানা দিলাম। প্রথম ঘরের কাছে গিয়ে বাজনার আওয়ায শুনলাম। জিজ্ঞসা করায় একজন বললো,অমুকের সাথে অমুকের বিবাহ হচ্ছে। আমি শোনার জন্যে বসে পড়লাম। আল্লাহ তায়ালা আমার কান বন্ধ করে দিলেন, আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। রোদে আঁচ গায়ে লাগার পর আমার ঘুম ভাঙ্গলো। আমিতখন মক্কা উপকন্ঠে সেই রাখালের কাছে ফিরে গেলাম। সে জিজ্ঞসা করার পর কথা খুলে বললামঅ আরো একদিন একই রকমের কথা বলে রাখালের কাছ থেকে মক্কায় পৌঁছুলাম এবং প্রথমোক্ত রাতের মতই ঘটনাও সেই দিন ঘটলো। এরপর কখনো ওই ভুল ইচ্ছা আমার মনে জাগ্রত হয়নি।
সহীহ বুখারী শরীফে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, কাবাঘর যখন নির্মাণ করাড হয়েছিলো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আব্বাস পাথর ভাঙ্গছিলেন। হযরত আব্বাস (রা) রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, তহবন্দ খুলে কাঁধে রাখো, পাথরের ধুলোবালি থেকে রক্ষা পাবে। তহবন্দ খোলার সাথে সাথে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। তারপর আকাশের দিকে তাকালেন এবং বেহুঁশ হয়ে গেলেন। খানিক পরেই হুঁশ ফিরে এলে বললেন, আমার তহবন্দ, আমার তহবন্দ। এরপর তাঁর তহবন্দ তাঁকে পরিয়ে দেয়া হয়। এক বর্ণনায় রয়েছে যে, এ ঘটনার পর আর কখনো তাঁর লজ্জাস্থান দেখা যায়নি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রশংসনীয় কাজ, উন্নত কাজ সুন্দর চরিত্র এবং মাধূর্য মন্ডিত স্বভাবের কারণে স্বতন্ত্র্ এবং বিশিষ্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন সকলের চেয়ে অধিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, উন্নতের চরিত্রের অধিকারী, সম্মানিত প্রতিবেশী, সর্বাধিক দূরদর্শিতাসম্পন্ন সকলের চেয়ে অধিক সত্যবাদী, সকলের চেয়ে কোমলপ্রাণ ও সর্বাধিক পবিত্র পরিচ্ছিন্ন মনের অধিকারী। ভালো কাজে ভালো কথায় তিনি ছিলেন সকলেই চেয়ে অগ্রসর এবং প্রশংসিত। অংগীকার পালনে ছিলেন সকলের চেয়ে অগ্রণী, আমানতদারির ক্ষেত্রে ছিলে অতুলনীয়। স্বজাতীর লোকেরা তাঁর নাম রেখেছিলো আল-আমিন। তাঁর মধ্যে ছিলো প্রশংসনীয় গুন বৈশিষ্টের সমন্বয়। হযরত খাদিজা (রা) সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি বিপদগ্রস্তদের বোঝা বহন করতেন, দুঃখী দরিদ্র লোকদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতেন, মেহমানদারী করতেন এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে সাহায্যে করতেন।