পশ্চিম দিকেতে তবে গেলেন নকুল।
গজ বাজী রথ রথী পদাতি বহুল।।
সিংহনাদ শঙ্খনাদ ধনুক-টঙ্কার।
রথের নির্ঘোষে স্তব্দ সকল সংসার।।
রোহিতক-দেশে রাজা যে ছিল নৃপতি।
প্রথমেতে যুদ্ধ হৈল তাহার সংহতি।।
রাজার পরম-সখা ময়ূর বাহন।
তাহার যতেক সৈন্য সব শিখিগণ।।
অপ্রমিত যুদ্ধ কৈল নকুলের সঙ্গে।
যেমত সংগ্রাম হয় নকুল-ভুজঙ্গে।।
বায়ু-অবতার অস্ত্র নকুল এড়িল।
মহা-বাতাঘাতে শিখি সব উড়াইল।।
অনল-অস্ত্রেতে বীর পোড়াইল পাখা।
ভঙ্গ দিল সব শিখি, রাজা হৈল একা।।
ভয় পেয়ে কর আনি দিলেন রাজন।
তথা হৈতে বীরবর করিল গমন।।
মালব শৈরীষ শিবি বর্ব্বর পুষ্কর।
এ সব দেশেতে যত ছিল নৃপবর।।
একে একে সব তবে জিনিল নকুল।
দিগন্তে গেলেন বীর সিন্ধু-নদী-কূল।।
সরস্বতী-তটে আছে যতেক রাজন।
সবারে জিনিল বীর মাদ্রীর নন্দন।।
খরক কণ্টক আর পঞ্চনদ দেশ।
জিনিয়া সৌতিক-পুর করিল প্রবেশ।।
বৃন্দারক দ্বারপাল আদি নরপতি।
প্রতিবিন্ধ্য রাজা আদি সকল নৃপতি।।
যেখানে যে নরপতি যত জন বৈসে।
আনাইল দূত পাঠাইয়া দেশে দেশে।।
দ্বারকা-নগরে তবে পাঠাইলা দূত।
শুনিয়া হলেন হৃষ্ট দেবকীর সুত।।
ধর্ম্ম-আজ্ঞা পেয়ে কৃষ্ণ শিরোপর করি।
কর পাঠাইলেন শকটে সব পূরি।।
একে একে সর্ব্বদেশ জিনিয়া নকুল।
মদ্রদেশে গেল যথা আপন মাতুল।।
শল্য নরপতি তবে শুনি সমাচার।
ভাগিনেয়ে আনি দেয় বহু পুরস্কার।।
প্রীতি প্রকাশিয়া তিনি আসিলেন বশে।
সমুদ্রের তীরে তবে গেল ম্লেচ্ছ-দেশে।।
দারুণ দুর্দ্দান্ত তথা নিবসে যবন।
সবারে জিনিয়া বীর লইলেক ধন।।
বড় বড় রাজগণ যথা যথা বৈসে।
সবারে জিনিল বীর চক্ষুর নিমিষে।।
একে একে জিনিল সকল নৃপবর।
করদাতা করিয়া চলিল নিজ ঘর।।
বহু ধন জিনিয়া লইল মহামতি।
বহয়ে বহুত ধন যত মত্ত হাতী।।
জয় জয় শব্দ করি বীর কোলাহলে।
পশিলেন গিয়া বীর চতুরঙ্গ-দলে।।
দেশে দেশে জিনিয়া আনিল যত ধন।
ধর্ম্মের নন্দনে আসি কৈল নিবেদন।।
আজ্ঞা লৈয়া গেল বীর আপন আলয়।
যত ধন-রত্ন ভাণ্ডারেতে সমর্পয়।।
পাণ্ডব-বিজয় কথা যেই জন শুনে।
তার জয় হৈয়া থাকে সর্ব্বত্র গমনে।।
সভাপর্ব্ব সুধারস ব্যাস-বিরচিত।
কাশীরাম দাস কহে রচিয়া সংগীত।।