গান-বোটের উপর দাঁড়িয়ে কিরীটী, রাজু আর গান-বোটের কমাণ্ডার বালকৃষ্ণ। ভোরের আলোয় চারিদিক স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
দিগন্তবিস্তৃত নীল সাগর আথালিপাথালি করছে।
ওদের চোখের সামনে ডাঃ ওয়াংয়ের সাদা জাহাজটা ধীরে ধীরে সমুদ্রের জলের তলে তলিয়ে যাচ্ছে।
ধীরে মাস্তুলটা ড়ুবে গেল ডাঃ ওয়াংয়ের সব রহস্য নিয়ে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিরীটী বললে, বিরাট একটা প্রতিভার অপমৃত্যু!
ঐদিনই বিকেলের দিকে কিরীটী গেল ডিবরাজের গৃহে।
কৃষ্ণা আগেই তার পিতার মৃত্যুসংবাদটা পেয়েছিল।
বাইরের ঘরে একটা চেয়ারে কৃষ্ণা বসেছিল স্তব্ধ হয়ে।
পরনে একটা কালো রংয়ের শাড়ি।
মাথার কেশ অবিন্যস্ত।
দুটি চক্ষু অশ্রুতে ফোলা, পাশে দাঁড়িয়ে আয়া কুট্টি।
কৃষ্ণা!
কিরীটীর ডাকে কৃষ্ণা অশ্রুভেজা দুটি চোখ তুলে ওর দিকে তাকাল।
পারলাম না কৃষ্ণা তোমার ড্যাডিকে বাঁচাতে!
কৃষ্ণা কোন কথা বলে না—কেবল দু-ফোটা অশ্রু তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।
আরও দুদিন পরে।
মিঃ ডিবরাজের পারলারে দুজনে বসে মুখোমুখি—কিরীটী আর কৃষ্ণা।
কৃষ্ণা বললে, তুমি কবে ফিরে যাচ্ছ?
কালকের জাহাজে। তুমি কি এখানেই থাকবে কৃষ্ণা?
কিছুদিন তো থাকতেই হবে-ড্যাডির ব্যবসা, এখানকার ঘরবাড়ির একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে–
তা হবে।
ব্যবসা বন্ধ করে দেব।
কেন?
কে দেখবে—আমার তো কোন ভাই নেই!
সেই ভাল। এই বাড়িটা?
এটা বিক্রী করব না-ড্যাডির স্মৃতি এটার মধ্যে রয়েছে।
তারপর বোধ হয় বম্বেতেই ফিরে যাবে?
হ্যাঁ।
তুমি বম্বেতে পৌঁছে আমাকে একটা কে করো।
করব।
তারপরেই কিরীটী উঠে দাঁড়াল—একটু যেন ইতস্তত করল, তারপর কৃষ্ণার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর কাধে একটা হাত রেখে গভীর স্নেহে ডাকল, কৃষ্ণা!
কৃষ্ণা কোন কথা না বলে তার ডান হাতটা বাড়িয়ে কিরীটীর হাতটা চেপে ধরল।
কৃষ্ণা!
বল?
একটা কথা বলব, যদি অনুমতি কর।
কৃষ্ণা ওর মুখের দিকে তাকাল!
বলতে সাহস হচ্ছে না—
কেন?
যদি তুমি না বলে দাও?
ও-কথা তোমার মনে হল কেন।
কৃষ্ণা-সত্যি-সত্যি বলছ?
কৃষ্ণা মাথাটা নীচু করল।