পঞ্চদিন উভয় সৈন্যের সমাবেশ।
পরস্পর কেহ কারে নাহি করে দ্বেষ।।
শ্রীরাম বলেন, তত্ত্ব জান বিভীষণ।
কি কারণে নাহি রণ করে দশানন।।
বিভীষণ বলে, প্রভু কর অবগতি।
উভয় সৈন্যের শব্দে স্তব্ধ লঙ্কাপতি।।
তেঁই বিপক্ষের প্রতি নাহি দেয় হানা।
নিশ্চয় জানিতে দূত পাঠাও এক জনা।।
বিভীষণ সহ রাম যুক্তি করি সার।
হনুমানে ডাকিয়া কহেন সমাচার।।
এস বাছা হনুমান পবন-নন্দন।
লঙ্কাতে জানিয়া এস কি করে রাবণ।।
সভামধ্যে উঠিয়া বলিছে জাম্ববান।
একবার গিয়াছিল বীর হনুমান।।
যেই যাইবেক হনু লঙ্কার ভিতর।
হনুমানে দেখিয়া কুপিবে লঙ্কেশ্বর।।
মনেতে করিবে এই আসে বারে বার।
ইহা বিনা রামসৈন্যে বীর নাহি আর।।
দক্ষিণ দ্বারেতে আছে অঙ্গদের থানা।
তাহারে আনিতে দূত যাউক এক জনা।।
হনুমান হইতে অঙ্গদ বীর বড়।
তাহারে পাঠাও যে বলিবে দড়বড়।।
রামের আজ্ঞায় চলে সুষেণ সত্বর।
মাথা নোঙাইয়া কহে অঙ্গদ গোচর।।
বলি শুন তোমারে অঙ্গদ যুবরাজ।
রামের আজ্ঞায় চল বানর-সমাজ।।
অঙ্গদ বলেন, আমি যাব কি একাকী।
কিবা থানা সহ যাব তুমি বল দেখি।।
থানা ভাঙ্গিবারে নাহি কোন প্রয়োজন।
একা গিয়া কর তুমি রাম-সম্ভাষণ।।
দূতবাক্যে চলিল অঙ্গদ-যুবরাজ।
আসিয়া মিলিল বীর রামের সমাজ।।
রামেরে প্রণাম করি কহে করপুটে।
আজ্ঞা কর মহারাজ এসেছি নিকটে।।
শ্রীরাম বলেন, শুন হে অঙ্গদ বলী।
রাবণ রাজারে কিছু দিয়ে এস গালি।।
অঙ্গদ বলেন, প্রভু যুক্তি নাহি হয়।
বালিপুত্র আমি যে আমাতে কি প্রত্যয়।।
শ্রীরাম বলেন, সত্য-হেতু বালি বধি।
তোমাতে প্রত্যয় মম আছে তদবধি।।
অঙ্গদ বলেন, প্রভু এবা কোন্ কথা।
নখে ছিঁড়ি আনিব তাহার দশ মাথা।।
বালির বিক্রম তুমি জান ভালে ভালে।
বিক্রম জানিবে মম সংগ্রামের কালে।।
পশিব রাক্ষস মধ্য করিব উঠানি।
রাবণেরে গালি দিয়া আসিব এখনি।।
সুগ্রীব বলেন, বাছা প্রাণের দোসর।
বিক্রমে বিশাল তুমি বাপের সোসর।।
এতকাল পালিলাম যে হাতীর ভোগে।
দেখাও বাহুর বল শ্রীরামের আগে।।
লঙ্কামধ্যে গিয়া তুমি বুঝাও রাবণে।
আসিয়া শরণ লউক রামের চরণে।।
নতুবা সবংশে তারে শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
খণ্ড খণ্ড করিবেন রাখে কোন্ জন।।
অঙ্গদ করিল যাত্রা হয়ে হৃষ্টমন।
হেনকালে উঠিয়া বলিছে বিভীষণ।।
কহিও আমার বাক্য ভাই লঙ্কেশ্বর।
নিজ দুরাচার কর্ম্ম যেন মনে করে।।
সভামধ্যে বলিলাম হিত যে বচন।
তেকারণে হইলাম লাথির ভাজন।।
মূঢ় বিভীষণ নাহি বুঝে কোন কাজ।
ভাল মন্ত্রী লয়ে তিনি হন মহারাজ।।
বংশে রহিলাম মাত্র করিতে তর্পণ।
কহিও এ সব কথা বালি নন্দন।।
বার বার বন্দিয়া সে রামের চরণ।
রাবণে ভৎসিতে যায় বালির নন্দন।।
সুগ্রীব রাজারে বন্দে বাপের সোদর।
আর যত বন্দিলেক প্রধান বানর।।
করিছে মঙ্গলধ্বনি সর্ব্ব কপিগণ।
আনন্দে দেখেন চেয়ে শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
যায় অন্তরীক্ষেতে অঙ্গদ ডাকাবুকা।
বায়ুভরে উড়ে যেন জ্বলন্ত উল্কা।।
লঙ্কাপুরী গেল বীর ত্বরিত গমন।
পাত্রমিত্র লয়ে যথা বসেছে রাবণ।।
দেবান্তক নারন্তক অতিকায় বীর।
মহোদর মহোল্লাস দুর্জ্জয় শরীর।।
হস্তী-পৃষ্ঠে প্রণাম জানায় অকম্পন।
অশ্ব-পৃষ্ঠে আরোহিয়া সে ধূম্রলোচন।।
রথ সাজাইল দিয়া মণি মুক্তা হীরা।
আসিয়া প্রণাম করে কুমার ত্রিশিরা।।
আইল নিষট্ ষট্ যেন যমদূত।
অজয় বিজয় আদি যুদ্ধে মজবুত।।
কুম্ভকর্ণ-সুত কুম্ভ নিকুম্ভ দুজন।
আর বজ্রদন্ত মাথা নোঙায় তখন।।
আইল খরের পুত্র সত্বরে সভায়।
তপন স্বপন আর বীর মহাকায়।।
যার ভয়ে ত্রিভুবন হয় ত কম্পিত।
পিতারে প্রণাম করে বীর ইন্দ্রজিৎ।।
আইল সামন্ত সৈন্য বীর নানাবর্ণ।
সবে মাত্র না আইল বীর কুম্ভকর্ণ।।
নিদ্রা যায় কুম্ভকর্ণ আপনার মনে।
লঙ্কাতে অনর্থ এত কিছুই না জানে।।
সভামধ্যে বলিছে রাবণ সবাকারে।
কপি নর আসিয়াছে আমা মারিবারে।।
শিশু রাম, শিশু কপি, না জানে আমায়।
তেঁই সে আমার সনে যুঝিবারে চায়।।
বাটা ভরি গুয়া দিব আড়নে-আড়ন।
যেই জন মারিবেক শ্রীরাম-লক্ষ্মণ।।
এতেক বলিল যদি বীর লঙ্কাপতি।
বীরদাপ করি উঠে সব সেনাপতি।।
নর বানর এসেছে তারে ভয় কিসে।
আপনা আপনি নিধি গৃহেতে প্রবেশে।।
বানর খাইতে সাধ ছিল বহুকালে।
হেন ভক্ষ্য মিলিল অনক পুণ্যফলে।।
আজি যদি কুম্ভকর্ণ উঠেন জাগিয়া।
খাইবেন লক্ষ লক্ষ বানর বসিয়া।।
ইন্দ্রজিৎ আছে এক মহাধনুর্দ্ধর।
তার বাণে শত শত মরিবে বানর।।
আগে গিয়া বানরের গলে দিব ফাঁস।
ঘাড়ের রক্ত খাব কামড়ে খাব মাস।।
মনুষ্য দুটার মাংস বড়েই সুস্বাদ।
সবাকার ঘুচাব মাংসের অবসাদ।।
জাঠি ও ঝকড়া শেল মুষল মুদগর।
হাতে করি দর্প করে যত নিশাচর।।
রাজার সম্মুখে কহে যত সেনাপতি।
আমরা থাকিতে তব কিসের দুর্গতি।।
সীতা লয়ে ক্রীড়া কর আনন্দিত মনে।
আমরা বান্ধিয়া দিব শ্রীরাম লক্ষ্মণে।।
ত্রিভুবন সহায় করি যদি রাম আনে।
সীতা নিতে নারিবে আমরা বিদ্যমানে।।
বানরে ভয় করো না সেগুলো বনের পশু।
মুহূর্ত্তেকে মারিব ঘরপোড়া না আসু।।
সেই বেটা প্রধান তার কটকের সার।
সে থাকিতে মহারাজ রক্ষা নাহি আর।।
লঙ্কাদগ্ধ করে গেল রাত্রে এসে পড়ে।
সেই ভয় করে পুনঃ আসে কি বহুড়ে।।
সেই আসি দেখে গেল অশোক বনে সীতা।
সেই করালে রামের সনে সুগ্রীবের মিতা।।
সেই ভুলাল বিভীষণে নানা কথা কয়ে।
সেই সাগর বেঁধে দিল গাছ পাথর বয়ে।।
যত দেখ মহারাজ সব চক্র তারি।
সে থাকিতে রাখিতে নারিবে রামের নারী।।
রাবণ বলে, যা বলিলে মোর মনে তাই মিলে।
জন্মে যে দুঃখ না পাই ঘরপোড়া তা দিলে।।
ধরত মোর বাপ সব কোন্ কালকে আর।
রাম-লক্ষ্মণ থাকুক, আগে ঘরপোড়াকে মার।।
এই যুক্তি রাবণরাজা করিতেছিল বসে।
এমত কালে অঙ্গদ বীর উত্তরিল এসে।।
প্রকাণ্ড শরীর তার মন্দ মন্দ গতি।
পূর্ব্বাচল হৈতে যেন এল দিনপতি।।
আকাশ দেউটি যেন দুই চক্ষু জ্বলে।
মস্তক ঠেকেছে বীরের গগন-মণ্ডলে।।
রাবণের সেনাপতি দ্বারে ছিল যারা।
অঙ্গদের অঙ্গ দেখে ভঙ্গ দিল তারা।।
বড় বড় বীর ছিল রাজার রক্ষক।
তক্ষক দেখিয়া যেন পলায় মূষিক।।
দুয়ারে দুয়ারী ছিল উঠে দিল রড়।
লাথির চোটে কপাট ভেঙ্গে প্রবেশিল গড়।।
যেখানে রাবণরাজা বসেছে দেওয়ানে।
লম্ফ দিয়া বীর গিয়া বৈসে মধ্যখানে।।
বসেছে রাবণরাজা উচ্চ সিংহাসনে।
তাহা দেখি অঙ্গদের বড় দুঃখ মনে।।
কুণ্ডলী করিয়া লেজ বসিল সভাতে।
পুরন্দর বার যেন দিল ঐরাবতে।।
সুমেরু পর্ব্বত যেন অঙ্গদের দেহ।
রাক্ষসেরা বলে, বাপ এটা এলো কেহ।।
বড় বড় বীর ছিল রাবণের কাছে।
অঙ্গদের অঙ্গ দেখে চুপ করে আছে।।
অঙ্গদের দেখে রাবণ ছলে মায়া পাতে।
শত শত রাবণ হয়ে বসিল সভাতে।।
যে দিকে অঙ্গদ চাহে সে দিকে রাবণ।
দশ মুণ্ড কুড়ি বাহু বিংশতি লোচন।।
সবাই রাবণ কোন ভেদ নাই একজনে।
অঙ্গদ বলে কথা কব কোন্ রাবণের সনে।।
সবে মাত্র ইন্দ্রজিৎ ছিল আপন সাজে।
পুত্র হয়ে পিতার মূর্ত্তি ধরিবে কোন্ লাজে।।
নিকুম্ভিলা-যজ্ঞ করে রাবণের বেটা।
কপালে দেখিল তার যজ্ঞ-শেষ ফোঁটা।।
অঙ্গদ বলে, বুঝিলাম এই বেটা মেঘনাদ।
আকার ইঙ্গিতে তারে কহেন সংবাদ।।
অঙ্গদ বলে, সত্য করে কাওরে ইন্দ্রজিতা।
এত যত বসেছে সবাই কি তোর পিতা।।
তারি জন্যে এত তেজ গুরু লঘু না মানিস।
তোর বাপের এত তেজ ইন্দ্র বেঁধে আনিস্।।
ধন্য নারী মন্দোদরী ধন্য তোর মাকে।
এক যুবতী এতেক পতি ভাব কেমনে রাখে।।
কোন্ বাপ তোর দিগ্বিজয় কৈল তিন লোকে।
কোন্ বাপ তোরে কোথা গিয়াছিল পরিচয় দে মোকে।।
কোন্ বাপ তোর বেড়ীর অন্না খাইল পাতালে।
কোন্ বাপ তোর বান্ধা ছিল অর্জ্জুনের অশ্বশালে।।
কোন্ বাপ তোর যম জিনিতে গিয়াছিল দক্ষিণ।
কোন্ বাপ তোর মান্ধাতার বাণে দাঁতে কৈল তৃণ।।
কোন্ বাপ তোর ধনুক ভাঙ্গিতে গিয়াছিল মিথিলা।
কোন্ বাপ তোর কৈলাসগিরি তুলিতে গিয়াছিলা।।
কোন্ বাপ তোর বধূর সনে হইল আসক্ত।
তোর কোন্ বাপের ভগ্নী হরে নিল মধুদৈত্য।।
কোন্ বাপ তোর জব্দ হৈল জামদগ্ন্যের তেজে।
মোর বাপ তোর কোন্ বাপকে বেঁধেছিল লেজে।।
একে একে কহিলাম তোর সকল বাপের কথা।
এ সবাতে কাজ নাই তোর যোগী বাপটি কোথা।।
সূর্পনখা রাণ্ডী যারে করাইল দীক্ষা।
দণ্ডক-বনে যে মাগিয়া খাইল ভিক্ষা।।
শঙ্খের কুণ্ডল কর্ণে রক্ত-বস্ত্র পরে।
ডম্বরু বাজায়ে ভিক্ষা করে ঘরে ঘরে।।
সন্ন্যাসীর বেশ ধরে মুখে মাখে ছাই।
এ সবারে কাজ নাই তোর সেই বাপটি চাই।।
সহিতে না পারে রাবণ অঙ্গদের কথা।
লজ্জা পেয়ে রাবণ ভয়ে হেঁট করিল মাথা।।
দুঃখিত হইয়া রাবণ করিল মায়া ভঙ্গ।
দুই জনে বেধে গেল বাক্যের তরঙ্গ।।
রাবণ বলে, শুন ওরে বানরা তোরে বলি।
কোথা হতে মরিবারে লঙ্কাপুরে এলি।।
কে তোরে পাঠায়ে দিল মরিবার তরে।
বনের বানর কেন রাক্ষসের ঘরে।।
কি নাম কাহার বেটা কোন্ দেশে বসিস্।
ভয় কি মারিব নাই সত্য করে কহিস্।।
অঙ্গদ বলে, তোর ভয়েতে থরথরাতে কাঁপি।
এখন এমন ধর্ম্ম কথা মররে বেটা পাপী।।
তুই কোন্ ঠাকুরের বেটা তোরে ভয় কি।
আমি কে জানিস্ নাই শোন্ পরিচয় দি।।
বালি আর সুগ্রীব দুই বীর অবতার।
যারে জিনিতে কিষ্কিন্ধ্যায় গিয়াছিল একবার।।
পড়ে কি না পড়ে মনে হৈল অনেক দিন।
হাত বুলায়ে দেখ গলে আছে লেজের চিন।।
সেই বালির সুত আমি সুগ্রীবের চর।
অঙ্গদ নাম ধরি আমি রামের কিঙ্কর।।
রাম কে জানিস নাই আনিলি সীতা হরে।
এখন দেখি লঙ্কাপুরী রাখিস্ কেমন করে।।
এই তোর লঙ্কাপুরী রাম বেড়িল এসে।
বের না রাবণ কেন ঘরে রৈলি বসে।।
অরুণ নয় বরুণ নয় রামের সঙ্গে বাদ।
বংশে কেহ না থাকিবে না করিস সাধ।।
রাবণ বলে, কি বল্লি, রাম লঙ্কাপুরে এসে।
বুঝি বা রামের ডরে রৈতে নারি দেশে।।
এই কি ভেবেছে গুহক চণ্ডালের মিতা।
বনের বানর সহায় করে উদ্ধারিবে সীতা।।
রামের যোগ্যতা যত সব দেখতে পাই।
নৈলে কেন দেশ থেকে দূর করে দেয় ভাই।।
নারী সঙ্গে লৈয়া সে বনে কেন প্রবেশে।
ভাইকে মেরে রাজ্য লয়ে রয় না কেন দেশে।।
রাম যা করে করুক এসে তোর সনে মোরকি।
সূর্পণখার নাক কাটে বৃথা আমি জী।।
এনেছি রামের সীতা বলগে তার তরে।
করুক এসে রাম তপস্বী প্রাণে যত পারে।।
সুমেরু পর্ব্বত যদি মক্ষিকায় নাড়ে।
সতী যে রমণী যদি নিজ পতি ছাড়ে।।
গরুড়ের ধন যদি হরে লয় কাকে।
খলের শরীরে পাপ যদ্যপি না থাকে।।
খদ্যোত উদয়ে যদি চন্দ্র হয় পাত।
রাবণ জীতে সীতা নিতে নারিবে রঘুনাথ।।
বল গিয়া বানরা রে তোর রঘুনাথে।
সেতুবন্ধ ভেঙ্গে দিউক আপনার হাতে।।
যেখানে পর্ব্বত ছিল সেইখানে তা থোবে।
উপড়িল যত বৃক্ষ পুনর্ব্বার রোবে।।
বিভীষণ এসে মোর পায়ে ধরুক কেঁদে।
ঘরপোড়াকে এনে দিবি হাতে গলে বেঁধে।।
দ্বিতীয় প্রহর যখন রাত্রি নিশাভাগে।
দুয়ারে প্রহরী মোর কেহ নাহি জাগে।।
লঙ্কা গদ্ধ করে গেছে রাত্রে এসে পড়ে।
তার শাস্তি করে লব তবে দিব ছেড়ে।।
ধনুক বাণ ফেলে রাম খত দিউক নাকে।
সর্ব্বদোষ মার্জ্জনা করে কৃপা করি তাকে।।
অঙ্গদ বলিছে, রাবণ আমরা তাই চাই।
কচকচিতে কাজ কি দেশে চলে যাই।।
রামকে ইহা বলি গিয়া না করিলে নয়।
সেতুবন্ধ ভেঙ্গে দিব দণ্ড চারি ছয়।।
যা বলিলে তা করিতে মুস্কিল কি আছে।
যেখানে পর্ব্বত ছিল থোব তার কাছে।।
বিভীষণকে বেঁধে এনে দিব তোর কাছে।
বুঝে পড়ে শাস্তি করো মনে যত আছে।।
নির্ম্মাইয়া দিব লঙ্কা যত গেছে পোড়া।
সূর্পণখার নাক কাণ কিসে যাবে যোড়া।।
অক্ষয়কুমারেরে মেরেছে রামের চরে।
তার স্ত্রী বিধবা হৈয়া আছে তোর ঘরে।।
যে তোর দরুণ পণ এমন করে কে।
কবে বলবি আমার বধূর স্বামী এনে দে।।
এক জনকে এনে দিলে তোর মনে না লবে।
মনের মত না হইলে তাও ফিরে দিবে।।
ঘরপোড়াকে এনে দিতে বল্লি বটে হয়।
সেইদিন তারে দূর করেছেন খুড়া মহাশয়।।
অঙ্গদের কথা শুনে রাবণরাজা হাসে।
ঘরপোড়াকে দূর করিল তার কোন্ দোষে।।
অঙ্গদ বলে, হনু যখন আসিতেছিল হেথা।
বলেছিলেন খুড়া তারে গোটাচারেক কথা।।
যাও লঙ্কায় হনুমান পবন-কুমার।
পালন করিয়া কথা আসিহ আমার।।
কুম্ভকর্ণের মাথাটা আনিবে নখে ছিঁড়ে।
সাগরের জলে লঙ্কা ফেলিবে উপাড়ে।।
অশোবনসহ সীতা আনিবে মাথায় করে।
বাম হস্তে আনিবে রাবণের জটে ধরে।।
পাঠায়েছিলেন খুড়া তারে চারি কার্য্যের তরে।
চারি কার্য্যের এক কার্য্য কিছুই না করে।।
কোপেতে সুগ্রীব রাজা কাটিতে গেলেন তায়।
আমরা সকল বানর ধরে রেখেছি তাঁর পায়।।
অনাথের নাথ রাম গুণের সাগর।
সুগ্রীবেরে আজ্ঞা দিলা না মার বানর।।
না মারিল সুগ্রীব শুনিয়া রামের কথা।
দূর করে দিল তারে মুড়াইয়া মাথা।।
কোন্ দেশে পলায়েছে আছে কিবা নাই।
তার তত্ত্ব করি মোরা ফিরি ঠাঁই ঠাঁই।।
অঙ্গদের কথা শুনি রাক্ষসেরা চায়।
সে করি নাই চারি কর্ম্ম, এই বা করে যায়।।
অঙ্গদ বলে, বুঝিলাম তোর এসব কিছু নয়।
রঘুনাথের হাতে তোর মরণ নিশ্চয়।।
যে থাকে বাসনা তোর এই বেলা তা কর।
রাজ-আভরণ লয়ে তুই সর্ব্বাঙ্গেতে পর।।
তুই মারিলে এ সব আর ভোগ করিবে কে।
ভাণ্ডার ভাঙ্গিয়া ধন দরিদ্রকে দে।।
হস্তী হয় রথ আদি মহিষ গো-ধন।
নয়ন মুদিলে সব হবে অকারণ।।
স্বপ্নগত লোকে যেন নিধি পায় হাতে।
আঁখি কচলাইয়া উঠে রজনী প্রভাতে।।
এ সব সম্পদ তোর দেখি সেই মত।
চৈতন্য থাকিতে কর আপনার পথ।।
স্ত্রী সকলে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা কর কথা।
কেবা যাবে তোর সনে হয়ে অনুমৃতা।।
আপনি কুঠার মারি আপনার পায়।
অহঙ্কার করি ডিঙ্গা ডুবালি দরিয়ায়।।
বুদ্ধিমান হয়ে জ্ঞান হারালি অভাগা।
শিরে কৈল সর্পাঘাত, কোথা বাঁধবি তাগা।।
বিভীষণের কথা তুই না শুনিলে কানে।
সুখে শয্যা কর গিয়া শ্রীরামের বাণে।।
সর্ব্ব শাস্ত্র পড়ে বেটা হলি হতমূর্খ।
বল্লে কথা শুনিস্ নাক, এইত বড় দুঃখ।।
পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণ রাম রঘুমণি।
দুষ্টেরে করিতে নষ্ট জন্মিলা অবনী।।
রে উন্মত্ত নিশাচর পাপিষ্ঠ রাবণ।
মজিবি সবংশে তার উঠেছে লক্ষণ।।
রাম বিষ্ণু সীতা লক্ষ্মী না শুনিলি কানে।
দশরথের ঘরে জন্ম দুষ্টের দমনে।।
মত্ত হয়ে ধরিলি বেটা জানকীর কেশে।
সেই অপরাধে তুই মজিলি সবংশে।।
বিধাতা বিমুখ তোরে শুন রে অভাগে।
আনিলি রামের সীতা মরিবারে লেগে।।
দশ হাজার দেবকন্যা ভজে রাত্রিদিনে।
রহিতে নারিস্ বেটা পরদার বিনে।।
কামরসে মত্ত হয়ে পড়ে গেলি ফাঁদে।
বামন হইয়া হাত বাড়াইলি চাঁদে।।
সূর্য্যবংশ-চূড়ামণি দশরথ রাজা।
দেবতা গন্ধর্ব্ব আদি করে যাঁর পূজা।।
তাঁর ঘরে রঘুনাথ জন্মিল আপনে।
নির্ব্বংশ হলি রে দশানন এতদিনে।।
কামরসে মজে গেলি বিষয় আস্বাদে।
তক্ষকে দংশিল তোরে কি করে ঔষধে।।
যে রাম তাড়কা বধে পঞ্চ-বর্ষকালে।
হরের ধনুক যিনি ভাঙ্গে অবহেলে।।
তাহার বনিতা সীতা আনলি বেটা হরে।
কালকূট বিষ খাইলি ডান হাতে করে।।
অহল্যা পাষাণী হয়ে ছিল দৈবদোষে।
মুক্ত হয়ে গেল রামের চরণ পরশে।।
কার্ত্তবীর্য্যার্জ্জুন তৃণ করায়ে ছিল দাঁতে।
তার দর্প চূর্ণ হলো পরশুরামের হাতে।।
পরশুরামের পরাভব প্রভু রামের ঠাঁই।
তাঁর সঙ্গে তোর দ্বন্দ্ব, আর রক্ষা নাই।।
গেলি রে রাবণ তুই গেলি এতদিনে।
উপায় না দেখি তোর রামনাম বিনে।।
যদি জীতে বাসনা থাকে গলবস্ত্র হয়ে।
কান্ধে দোলা করে সীতা বয়ে দিবি লয়ে।।
তবে যদি জানকীনাথ তোরে করে রোষ।
শ্রীচরণে ধরি মোরা মেলে লব দোষ।।
রাবণ বলে, বানরা তোর মুখে পড়ুক ছাই।
আমার জন্য দুঃখ পেয়ে মরবি কেন ভাই।।
আমার তরে তোরা কেন ধরবি রামের পায়।
যুদ্ধ করে মরিব আমি তোর বাপের কি দায়।।
অঙ্গদ বলে, যত বুঝাই তোর মনে না লয়।
রঘুনাথের হাতে তোর মরণ নিশ্চয়।।
হিতোপদেশ কি বুঝিবি শোন্ বেটা গরু।
তুই বাঁচিলে আমার বাপের কীর্ত্তি-কল্পতরু।।
নৈলে তোরে বেঁচে থাকতে সাধ করে কি বলি।
লোকে বলবে এই বেটাকে বেঁধেছিল বালি।।
নিত্য ঘুষিবে আমার বাপের কীর্ত্তি জগন্ময়।
অতএব বলি দিন কত বাঁচলে ভাল হয়।।
রাবণ বলে, শোন্ বানরা ধিক্ জীবনে তোর।
রাজার বেটা হয়ে হলি মানুষের নফর।।
পুত্র হয়ে পরশুরাম শুধিতে পিতার ধার।
নিঃক্ষত্রিয়া কৈল ধরা তিন সপ্তবার।।
পুত্র হয়ে তুই তার কোন্ কর্ম্ম কৈলি।
বাপকে মারিয়া তোর মাকে বিলাইলি।।
ধিক্ ধিক্ জীবনে তোর মা যার কুলটা।
লোকের ঘৃণিত হয়ে বাঁচে কেন সেটা।।
অঙ্গদ বলে, বটে রাবণ মোর মা কুলটা।
সত্য করি বল দেখি তুই কার বেটা।।
জন্ম তোর ব্রহ্মবংশে ত্রিভুবনে খ্যাতি।
বিশ্বশ্রবার বেটা তুই পৌলস্ত্যের নাতি।।
বিশ্বশ্রবা যে মহাতপা বিশ্বে যাঁর যশ।
তুই যদি তাঁর বেটা তবে কেন রে রাক্ষস।।
মা তোর রাক্ষসী রে ব্রাহ্মণ তোর পিতা।
তুই বিভা কৈলি বেটা দানব-দুহিতা।।
কুম্ভনশী ভগ্নী তোর দৈত্য নিল হরে।
কয় জেতে তুই বেটা দেখ মনে করে।।
রম্ভাবতী সতী সে শ্বশুর বলে তোরে।
বলাৎকার কৈলি তারে পর্ব্বতের ঝোরে।।
আত্মছিদ্র না জানিস্ পরকে দিস্ খোঁটা।
বারে বারে কহিস্ কথা মররে অধম বেটা।।
তার আগে বড়াই কর যে না তোরে জানে।
দাঁতে কুটা করে এলি পরশুরামের স্থানে।।
অঙ্গদের কথা শুনি রাবণ উঠে জ্বলে।
জ্বলন্ত অনলে যেন ঘৃত দিল ঢেলে।।
দশানন বলে, রোষে করিস কিরে দূত।
পলাবে বানর বেটা ধরতো মোর পুত।।
অঙ্গদ বীর স্থির বড় দর্প করে কয়।
আর কে ধরিবে আপনি আইস নয়।।
কুপিল অঙ্গদ দশাননের বচনে।
কোপে গালি দেয় স রাবণ তাহা শুনে।।
অঙ্গদ বলিল, মর পাগল রাবণ।
কিসের বড়াই তুই করিস্ এখন।।
তোর যত বিক্রম বিদিত মম স্থানে।
তোরে ভয় করিবে যে তোকে নাহি জানে।।
কার্ত্তবীর্য্য যখন সে কেলি করে জলে।
তার আগে গেলি তুই নর্ম্মদার কূলে।।
এই মত বীরদর্প করিলি সে স্থলে।
লুকায়ে থুইল তোরে বাম কক্ষতলে।।
চক্ষে নীর বহে তোর ঘন বহে শ্বাস।
তাঁর ঠাঁই প্রায় তুই হইলি বিনাশ।।
আসিয়া পৌলস্ত্য মুনি করি স্তব স্তুতি।
তোরে মুক্ত করিয়া দিলেন অব্যাহতি।।
তাঁর ঠাঁই হয়েছিল সংশয় জীবন।
ভাগ্যে প্রাণরক্ষা তোর মুনির কারণ।।
আরবার গিয়াছিলি পিতার নিকট।
শঠতা করিলি বহু তুই বেটা শঠ।।
সন্ধ্যা হেতু মম পিতা না করেন রণ।
যত্র অস্ত্র ছিল তোর কৈলি বরিষণ।।
সন্ধ্যা সাঙ্গ করি পিতা তোরে বান্ধি লেজে।
ডুবাইল তোরে চারি সাগরের মাঝে।।
লেজে বান্ধি ডুবাইল জলের ভিতর।
জল খেয়ে রাবণা রে হইলি ফাঁপর।।
আমার পিতার লেজ যোজন পঞ্চাশ।
জলমধ্যে রাখি তোরে উঠিল আকাশ।।
স্বীকার করিলি তুই নিজ পরাজয়।
তবে সে পিতারে ঠাঁই পাইলি বিদায়।।।
লেজের বন্ধন তোর কিষ্কিন্ধ্যায় ঘোষে।
বন্দিয়া পিতাকে মোর আইলি তরাসে।।
বহু দিন গিয়াছে, না জানে কোন জন।
বুঝিনু বড়াই তোর এই সে কারণ।।
মনে কর রাবণা তোরে হারায় অর্জ্জুন।
বলির দ্বারে চেড়ীর এঁটো খেয়ে হলি খুন।।
অন্য কে, আমার পিতা বান্ধিলেন লেজে।
পরিচয় দেহ কিবা আছে এর মাঝে।।
যদ্যপি রাবণা নাহি দিলি পরিচয়।
সেই সে রাবণ তুই, বুঝিনু নিশ্চয়।।
সেই সব কাল গেল হাস্য পরিহাসে।
এখন সময় এল ধন প্রাণ নাশে।।
সিংহ প্রতি শৃগালের নাহি ভারি ভুরি।
রামে ঘাঁটাইয়া রে মজালি লঙ্কাপুরী।।
কুপিল রাবণ রাজা অঙ্গদের বোলে।
কুড়ি চক্ষু রক্ত করি অগ্নি হেন জ্বলে।।
দূতেরে কাটিতে নাই রাজ-ব্যবহার।
তেকারণে সহি আমি তোর অহঙ্কার।।
জিনিলাম দেব দৈত্য যক্ষ বিদ্যাধর।
অনারণ্য মান্ধাতা প্রভৃতি নরেশ্বর।।
বালি অর্জ্জুনের সনে তুল্য গেল রণে।
কি করিতে পারে রাম মনুষ্য-পরাণে।।
অঙ্গদ বলিছে, মর পাগল রাবণ।
ভাগ্যে তোরে বর্জ্জিল রাক্ষস বিভীষণ।।
রামের বাণের সনে নাহি তোর দেখা।
নাক কাণ কাটা দেখ ঘরে সূর্পণখা।।
ঘরে আছে ভগিনী সে তোর নহে ভিন্ন।
বিদ্যমান দেখহ রামের বাণ-চিহ্ন।।
রামের বাণের সনে হইলে দর্শন।
এক বাণে সবংশেতে মরিবি রাবণ।।
যত বাণ ধরেন শ্রীরাম গুণধাম।
অবোধ রাবণ শুন সে সবার নাম।।
অমর্ত্ত সমর্থ বাণ, বলে মহাবল।
বিষ্ণুজাল ইন্দ্রজাল কালান্ত অনল।।
উল্কামুখ বরুণ বিদ্যুৎ খরশান।
গ্রহপতি নক্ষত্র গগন রুদ্রবাণ।।
সূচীমুখ শিলীমুখ ঘোর দরশন।
সিংহদন্ত বজ্রদন্ত বাণ বিরোচন।।
কালদন্ত ঐষিক দেখহ কর্ণিকার।
চন্দ্রমুখ অশ্বমুখ দেখ সপ্তসার।।
বিকট সঙ্কট বাণ সপ্ত ধারাধার।
অর্দ্ধচন্দ্র খুরপা আশুগ ক্ষুরধার।।
পশু পক্ষী অগ্নি আর অগ্নিমুখ-বাণ।
কুবেরাস্ত্র রাজহংস বাণ বর্দ্ধমান।।
যমজ দুর্জ্জয় বাণ অঙ্গ যে বিহঙ্গ।
ত্রিশূল অঙ্কুশ বাণ রণে নাভি ভঙ্গ।।
বজ্র-বাণ গরুড় মধুর সুসন্ধান।
কাকমুখ ভেকমুখ কপোতক বাণ।।
বিষ্ণুচক্র ষট্চক্র বাণ হুতাশন।
সন্তাপন বিলাশন সংগ্রামে শমন।।
গজাঙ্ক সন্ধান-বাণ চারিদিকে আঁটা।
সিংহ শার্দ্দূল তার চারিদিকে কাঁটা।।
এত বাণ রঘুনাথ করেন সন্ধান।
যাঁর এক বাণে বালি ত্যজিলেক প্রাণ।।
যে বালির নিকটেতে তোর পরাজয়।
সে বালিকে মারিলেন রাম মহাশয়।।
বাল্যক্রীড়া যাঁহার শিবের ধনুর্ভঙ্গ।
কি সাহসে তাঁর সঙ্গে যুদ্ধের প্রসঙ্গ।।
ভেদিলেন সপ্ততাল রাম এক শরে।
তাঁর তুল্য বীর কি আছয়ে চরাচরে।।
কি হেতু দেখিস্ রে পাকল করি আঁখি।
মাকড়ের ডিম্ব হেন তোর লঙ্কা দেখি।।
তোর কাছে আসি, তোরে নাহি করি শঙ্কা।
উপাড়িয়া লইতে পারি স্বর্ণপুরী লঙ্কা।।
হের মুণ্ড দেখ মোর সুমেরুর চূড়া।
হের পদ দেখ মোর কৈলাসের গোড়া।।
হের হস্ত দেখ মোর বজ্রের সমান।
একই চাপড়ে তোর লইব পরাণ।।
অপমানে রাবণ করিল হেঁট মাথা।
পাত্র মিত্র সহিত না কহে কোন কথা।।
রাবণ অঙ্গদে বলে, গঞ্জিলি বিস্তর।
এক বার্ত্তা জিজ্ঞাসিরে অবগতি কর।।
যে বানর পোড়াইল মোর লঙ্কাপুরী।
অক্ষয়কুমার যে মারিল বলে ধরি।।
ভাঙ্গিল অশোক-বন অতি সুশোভন।
তার মত বীর আছে কহ কত জন।।
অঙ্গদ বলিছে, তারে ভৎসিয়া বচনে।
তোর বল বিক্রম বুঝিনু এতদিনে।।
সেবকের সনে যদি পাইলি পরাজয়।
কেমনে রাখিবি লঙ্কা কহ রে নিশ্চয়।।
তার ছোট বীর নাই বানর-কটকে।
নির্ব্বল বলিয়া তারে কেহ নাহি ডাকে।।
সে মরিলে দুঃখ শোক নাহিক বানরে।
তেঁই পাঠাইলাম তারে লঙ্কার ভিতরে।।
বীর মধ্যে তাহারে না গণে কোন জন।
ঘরের সেবক বেটা পবন-নন্দন।।
হনুমানে বান্ধিয়া বেড়েছে অহঙ্কার।
পড়িলি আমার হাতে যাবি যমদ্বার।।
লইয়া যাইব তোরে গলে দিয়া দড়ি।
দশ মাথা ভাঙ্গিব মারিয়া লেজের বাড়ি।।
তোর সর্ব্বনাশ হেতু উৎপত্তি সীতার।
নির্ব্বংশ করিতে তোরে রাম-অবতার।।
কোথায় বৈসেন রাম অযোধ্যানগরী।
কোথা আইলেন তিনি এই লঙ্কাপুরী।।
এত দূর আসি রাম বান্ধিলা সাগর।
সে রামের সনে দুষ্ট তোর মনান্তর।।
দেবতা জিনিয়া তোর বাড়িয়াছে আশ।
এক সীতা জন্যে তোর হবে সর্ব্বনাশ।।
বংশে কেহ না রহিবে না করিহ সাধ।
আপনা আপনি তুই পাড়িলি প্রমাদ।।
খাটে পাটে শুয়ে থাক দিন দুই চারি।
হাস্য পরিহাস কর লয়ে দিব্য নারী।।
পরিবারগণে দেখ দিনে দুইবার।
বিশ্বকর্ম্মার নির্ম্মাণ দেখহ ঘর দ্বার।।
স্বর্ণপুরী লঙ্কা দেখ এ ঘর নির্ম্মাণ।
অঙ্গদ-বিক্রম যত কৃত্তিবাস গান।।