দুর্য্যোধন দূত পাঠাইল ধর্ম্মস্থানে।
সদলে আসিবা মম বিবাহ কারণে।।
শুনিয়া ধর্ম্মের পুত্র বিস্ময় অন্তর।
সহদেবে ডাকি জিজ্ঞাসেন নরবর।।
অর্জ্জুন লিখিল পূর্ব্বে ভদ্রা বিবরণ।
দুর্য্যোধন নিমন্ত্রণ করিল এক্ষণ।।
অনর্থের প্রায় কথা লয় মম মনে।
কহ সহদেব ইহা হইবে কেমনে।।
সহদেব বলেন, শুনহ নরনাথ।
সুভদ্রার বিবাহ হইল দিন সাত।।
সত্যভামা দিলেন বিবাহ লুকাইয়া।
কৃষ্ণের আজ্ঞায় বলরামে না কহিয়া।।
রামের বাসনা ভদ্রা দিতে দুর্য্যোধনে।
দুর্য্যোধন যাইতেছে রামের বচন।।
ইহার উচিত কৃষ্ণ করিবা আপনি।
তার হেতু চিন্তিত না হও নৃপমণি।।
যুধিষ্ঠির বলেন, এ লজ্জার বিষয়।
মোদের যাইতে তথা উচিত না হয়।।
না গেলে হইবে দুঃখী রাজা দুর্য্যোধন।
আপনি সসৈন্যে ভীম করহ গমন।।
পাইয়া রাজার আজ্ঞা বীর বৃকোদর।
পাঁচ অক্ষৌহিণী বলে চলেন সত্বর।।
আনন্দেতে দুর্য্যোধন বরবেশ ধরে।
রত্নময় চতুর্দ্দোলে আরোহণ করে।।
নানা শব্দে বাদ্য বাজে না হয় বর্ণনা।
হয় হস্তী রথ যত কে করে গণনা।।
দুর্য্যোধন-বেশ দেখি ভীমে হৈল ক্রোধ।
ডাকিয়া বলেন, তোরা সবাই অবোধ।।
হেথা হৈতে দ্বারকা আছয়ে দূরবেশ।
এইখানে কি হেতু করিলা বরবেশ।।
দুঃশাসন বলে কহ কি দোষ ইহাতে।
দেখিতে না পার যদি আইস পশ্চাতে।।
ভীম বলে, ভাল মন্দ বুঝিবা হে শেষে।
কোন্ কন্যা বিবাহিতে যাও বরবেশে।।
আমার নিকটে দূত পরশ্ব আইল।
সুভদ্রা বিবাহ আজি সপ্তাহ হইল।।
অকারণে সভামধ্যে গিয়া পাব লাজ।
সেই হেতু বলি বরবেশে নাহি কাজ।।
পাছু কেন যাব আমি যাই তব আগে।
এত বলি সসৈন্যে চলিল বীর বেগে।।
বিস্মিত হইল সবে ভীম-বাক্য শুনি।
ভীষ্ম দ্রোণ বিদুর করেন কানাকানি।।
দুঃশাসন বলে, সে বলিল বৃকোদর।
সত্য হেন লাগে প্রায় সবার অন্তর।।
না জান কি ভীমের যেমত বুদ্ধি খল।
বরবেশ দেখি আত্মা হইল বিকল।।
বাতুলের প্রায় বলে যে আইসে মুখে।
চল শীঘ্র দেখি প্রায় শেল বাজে বুকে।।
কর্ণ দুর্য্যোধন বলে সত্য এই কথা।
এ বৈভব দেখিতে কেমনে রহে হেথা।।
এত বিচারিয়া সবে করিল গমন।
তিন দিনে গেল পথ শতেক যোজন।।
দুর্য্যোধন রাজা তবে করিয়া যুকতি।
পত্র লিখি দূত পাঠাইল দ্বারাবতী।।
রোহিণীণক্ষত্র মেষ অক্ষয় তৃতীয়া।
দ্বিতীয় প্রহরে কল্য উত্তরিব গিয়া।।
করহ কন্যার অধিবাস আজি রাতি।
কালি রাত্রি বিবাহের শ্রেষ্ঠ লগ্ন তিথি।।
দূত গিয়া দিল পথ মূষলীর হাতে।
পত্র পড়ি বলরাম কহেন সভাতে।।
করহ ভদ্রার গন্ধ-অধিবাস আজি।
নিকটে আইল রাজা দুর্য্যোধন সাজি।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম কহে, সদা শুনে পুণ্যবান।।