বন্ধনে রহিল শাম্ব কৃষ্ণের নন্দন।
বার্ত্তা দিতে চলেন নারদ তপোধন।।
কহেন গোবিন্দ প্রতি গদ গদ কথা।
শুনহ গোবিন্দ, শাম্ব পুত্রের বারতা।।
দুর্য্যোধন-দুহিতার স্বয়ম্বর-কালে।
স্বয়ম্বর-স্থানে তার শাম্ব হরি নিলে।।
যুদ্ধ করি বন্দী তারে কৈল ইন্দ্রজালে।
কতেক কহিব দেব যতেক মারিলে।।
কাটিতে লইয়া গেল দক্ষিণ মশানে।
যুধিষ্ঠির রাখিলেন দিয়া ভীমসেনে।।
অনেক করিল দ্বন্দ্ব তাহার সহিতে।
বদ্ধ করি রাখিয়াছে ভীষ্মের গৃহেতে।।
ক্ষুধায় আকুল শাম্ব আর নানা ক্লেশ।
অস্ত্রাঘাতে আছে প্রাণমাত্র অবশেষ।।
তোমারে যতেক গালি দিল দুর্য্যোধন।
আমি কি কহিব, সব করিবা শ্রবণ।।
শুনি কৃষ্ণ হইলেন ক্রোধেতে অস্থির।
সেইক্ষণে যদু-সৈন্য হইল বাহির।।
এত সব বৃত্তান্ত শুনিয়া হলধর।
দুর্য্যোধন হেতু তাপ করেন বিস্তর।।
ক্রোধে যাইতেছে কৃষ্ণ সাজি সেনাগণে।
সবংশেতে মারিবেন আজি দুর্য্যোধনে।।
এত চিন্তি আপনি রেবতী-পতি গিয়া।
শ্রীপতিরে কহিছেন বিনয় করিয়া।।
তুমি তথাকারে যাবে কিসের কারণ।
আমি গিয়া পুত্রবধূ আনিব এক্ষণ।।
ইত্যাদি অনেকবিধ কৃষ্ণে বুঝাইয়া।
আপনি গেলেন রাম কৃষ্ণেরে রাখিয়া।।
হস্তিনা নগরে রাম হৈয়া উপনীত।
দুর্য্যোধনে দূত পাঠাইলেন ত্বরিত।।
না বুঝিয়া দুর্য্যোধন এ কর্ম্ম তোমার।
বদ্ধ করি রাখ গৃহে কৃষ্ণের কুমার।।
যে হইল দোষ, ক্ষমিলাম সে তোমারে।
পুত্রবধূ আনি দেহ আমার গোচরে।।
এত বলি দুর্য্যোদন দূতের বচন।
ক্রোধে কলেবর কম্পে, করয়ে গর্জ্জন।।
যে বাক্য বলিল, আমি গুরু বলি মানি।
অন্য জন হৈলে সেই দেখিত এখনি।।
পাঠাইল পুত্রে বলি চুরি কর গিয়া।
এবে বলে পুত্রবধূ দেহ পাঠাইয়া।।
কেবা তার পুত্রবধূ তার দিব লৈয়া।
লজ্জা নাই তেঁই হেন পাঠায় কহিয়া।।
যাত দূত কহ দিয়া এ বাক্য আমার।
ভালে ভালে নিজ গৃহে যাহ আপনার।।
দূত গিয়া কহিল সকল বিবরণ।
শুনি ক্রোধে হলধর আরক্ত নয়ন।।
ক্রোধে হলী মুষল নিলেন তুলি হাতে।
লাফ দিয়া রথ হৈতে পড়েন ভূমিতে।।
ক্রোধে থরথর অঙ্গ পদ নাহি চলে।
ধরণীতে লাঙ্গল দিলেন সেই স্থলে।।
রাজা প্রজা পাত্র মিত্র সহিত সকলে।
নগর সহিত যেন পড়ে গঙ্গাজলে।।
হস্তিনানগর পঞ্চ যোজন বিস্তার।
রামের লাঙ্গলে উঠে হইয়া বিদার।।
দেখি হাহাকার শব্দ হইল নগরে।
ঊর্দ্ধশ্বাসে ধায় সবে রামের গোচরে।।
ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ আর বিদুর সংহতি।
শত ভাই দুর্য্যোধন পাণ্ডব প্রভৃতি।।
করযোড়ে করুণ-বচনে করে স্তুতি।
রক্ষা কর বলদেব রেবতীর পতি।।
তুমি ব্রহ্মা তুমি বিষ্ণু তুমি মহেশ্বর।
অনাদি নিদান তুমি ব্যাপ্ত চরাচর।।
তুমি ক্রোধ কৈলে ভস্ম হইবে সংসার।
তব ক্রোধে হইবে হস্তিনা ছারখার।।
যুবা বৃদ্ধ নারী গো ব্রাহ্মণ শিশুগণা।
বিশেষে তোমার বধূ আছয়ে লক্ষ্মণা।।
ক্ষমা কর কৃপাময়, পড়ি যে চরণে।
এইবার রাখ প্রভু দয়া করি মনে।।
এতেক সবার স্তুতি শুনি বলরাম।
রাখিলেন লাঙ্গল, হইল ক্রোধ সম।।
ততক্ষণ দুয্যোধন শাম্বেরে লইয়া।
নানা অলঙ্কার অঙ্গে ভূষণ করিয়া।।
লক্ষ্মণা সহিত নিল দোঁহা করি রথে।
বিবিধ যৌতুক দিল রামের অগ্রেতে।।
দেখিয়া সানন্দ হৈল রেবতীরমণ।
পুত্রবধূ লয়ে শীঘ্র করেন গমন।।
ভারতের পুণ্যকথা শুনে যেইজন।
কাশীরাম কহে, লভে সেই কৃষ্ণধন।।