১৩১. দ্রোণ-দ্রুপদ-সংবাদ, কৌরব বালকগণের দ্রোণের অস্ত্রনৈপুণ্যপ্রদর্শন, ভীষ্মসমীপে দ্রোণের যুদ্ধবিদ্যাপ্রকাশ, ভীষ্মসমীপে দ্রোণের দৈন্যপ্রকাশ
একত্রিংশদ ধিক শততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন,-তদনন্তর মহাপ্রতাপশালী ভরদ্বাজনন্দন দে, মহারাজ দ্রুপদের সমীপে সমুপস্থিত হইয়া কহিলেন,-রাজন্! আমি তোমার সখা। ঐশ্বৰ্ষনদমত্ত দ্রুপদরাজ দ্রোণের সেই বাক্য শ্রবণ করিয়া তাহাকে কিছুমাত্র আস্থা প্রদর্শন করিলেন না; প্রত্যুত রোসকষায়িত লোচনে ভ্রুকুটি প্রদর্শন করিয়া কহিতে লাগিলেন, ওহে ব্রাহ্মণ! তুমি হঠাৎ আমাকে সব। বলিয়া নিতান্ত নির্বোধের কাৰ্য্য করিতেছ; ঐশ্বর্যশালী ভূপতিগণের সহিত ভবাদৃশ শ্রীহীন নির্ধন লোকের বন্ধু তা হওয়া নিতান্ত অসম্ভব; বাল্যাবস্থায় তোমার সহিত আমার মুখ্য ছিল যথার্থ বটে, কিন্তু এক্ষণে তোমার সহিত সেরূপ বন্ধুত্ব থাকা কোনক্রমেই উচিত নহে; কাহারও সহিত চিরকাল বন্ধুতা থাকে না; হয় সর্বসংহর্তা কৃতান্ত উহা বিলুপ্ত করেন, নয় ক্রোধবশতঃ বিনষ্ট হইয়া যায়; অতএব তুমি সেই পূর্বতন সৌহার্দ এক্ষণে দূরে পরিত্যাগ কর। হে দ্বিজোত্তম! পূৰ্বে তোমার সহিত আমার যে বন্ধুত্র ছিল, তাহা কেবল অর্ধ নিবন্ধনমাত্র; যেমন পণ্ডিতের সহিত মূর্খের ও শূরের সহিত ক্লীবের বন্ধুতা কদাচ হইবার নহে, তদ্রূপ ধনবানের সহিত দরিদ্রের সখ্য হওয়া নিতান্ত অসম্ভব; অতএব তুমি কি নিমিত্ত পূর্বতন বন্ধুত্ব প্রাপ্ত হইতে ইচ্ছুক হইতেছ; হে ব্রাহ্মণ। যাহারা ধনে ও জ্ঞানে আপনার সদৃশ তাহাদিগেরই সহিত বৈবহিক সম্বন্ধ ও সখ্যসংস্থাপন করা কর্তব্য; তদ্ব্যতীত উৎকৃষ্টের সহিত নিকৃষ্টের বা নিকৃষ্টের সহিত উৎকষ্টের মৈত্রী বা বৈবাহিক সম্বন্ধ করা নিতান্ত অনুচিত। হে বিপ্র! যেমন অশ্রোত্রিয়ের সহিত শ্ৰোত্রিয়ের ও অরথীর সহিত রথীর বন্ধুতা হওয়া একান্ত অসম্ভব, সেইরূপ রাজার সহিত দরিদ্রের কখনই সখ্য হয় না; তবে তুমি কি নিমিত্ত অদ্য পূর্বের ন্যায় আমার সহিত সখ্য করিতে অভিলাষী হইতেছ?
মহাতেজাঃ দ্ৰোণ দ্রুপদের এই কটূক্তি শ্রবণে মুহূৰ্তমাত্র চিন্তা করিয়া ক্রোধে কম্পিতকলেবর হইলেন এবং সেই ক্ষণেই দ্রুপদরাজের প্রতি তাঁহার নিতান্ত বৈরভাব জন্মিল। তিনি তৎক্ষণাৎ তথা হইতে বহির্গত হইয়া হস্তিনানগরে আগমনপূর্বক নিজ শ্যালক কৃপাচার্যের আবাসে প্রচ্ছন্নরূপে বাস করিতে লাগিলেন। যখন কৃপাচাৰ্য বালকগণকে শিক্ষা প্রদান করিয়া বিশ্রাম করিতেন, সেই সময়ে দ্রোণের পুত্র অশ্বথামা কুন্তীনন্দনদিগকে পুনরায় শিক্ষা করাইতেন। কেহই তাঁহাকে দ্রোণপুত্র বলিয়া চিনিতে পারিত না। এইরূপে দ্রোণাচাৰ্য পুত্রের সহিত হস্তিনানগরে গৃঢ়রূপে বাস করিতে লাগিলেন।
একদা হস্তিনাপুরস্থ বালকগণ নগর হইতে বহির্গমনপূর্বক একত্র হইয়া লৌহগুলিকাদ্বারা ক্রীড়া করিতেছিল, দৈবাৎ ঐ গুলিকা এক জলশূন্য কৃপমধ্যে নিপতিত হইল। কুমারগণ কূপ হইতে গুলিকা উদ্ধার করিবার নিমিত্ত প্রাণপণে চেষ্টা করিতে লাগিল, কিন্তু কিছুতেই কৃতকার্য হইল না। তখন তাহারা সাতিশয় উৎকণ্ঠিত ও যৎপরোনাস্তি লজ্জিত হইয়া পরস্পর পরস্পরের মুখাবলোকন করিতে লাগিল। ঐ সময়ে দ্রোণাচাৰ্য তাহাদিগের নিকট দিয়া গমন করিতেছিলেন। তাঁহার অঙ্গ কৃশ ও শ্যামবর্ণ, মস্তক পলিত এবং সমতি ব্যাহারে অগ্নিহোত্র রহিয়াছে। গুলিকোরণে ভগ্নোৎসাহ কুমারগণ ঐ মহাত্মাকে দেখিয়া উহার চতুর্দিকে দণ্ডায়মান হইল। দ্রোণ তাহাদিগকে দেখিয়া ঈষৎ হাস্য করিয়া কহিলেন, হে বালকবৃন্দ! তোমাদিগকে ধিক, তোমাদিগের ক্ষাত্রবলে ধিক্ এবং তোমাদিগের অস্ত্রশিক্ষায়ও ধিক, যেহেতু তোমরা ভরতবংশে জন্মগ্রহণ করিয়াও এই সামান্য কূপ হইতে গুলিকা উদ্ধার করিতে পারিলে না। আমি ঐ লৌহগুলিকা এবং এই অঙ্গুরীয়ক উভয়ই ঈষীকার উদ্ধার করিব, তোমরা আমাকে ভোজন করাও। এই বলিয়া আপনার অঙ্গুলিস্থিত অঙ্গুরীয়ক ঐ নিরুদ কূপমধ্যে নিক্ষেপ করিলেন। তখন যুধিষ্ঠির দ্রোণকে কহিলেন, মহাশয়! যদি আপনি কূপ হইতে গুলি উদ্ধার করিতে পারেন, তাহা হইলে কৃপাচার্য্যের অনুমতিক্রমে আপনি চিরকা ভিক্ষা পাইবেন। দ্রোণ তাহায় বাক্য শ্রবণ করিয়া হাসিতে হাসিতে একমুষ্টি ঈষীকা হস্তে লইয়া কহিলেন, এই যে ঈষীকামুষ্টি দেখিতেছ, ইহার প্রভাব দেখ, ইহার একটি ঈষীকা দ্বারা কূপমধ্যস্থিত সেই গুলিকা বিদ্ধ করিব, সেই ঈষীকা অপর একটি দ্বারা এবং তাহা অন্য একটি দ্বারা বিদ্ধ করিব; এইরূপে ক্রমে ক্রমে একটি দ্বারা অন্য ঈষীকা বিদ্ধ করিয়া ঐ গুলিকা উত্তোলন করিব।
দ্রোণাচাৰ্য তাহাদিগকে এই কথা বলিয়া তৎক্ষণাৎ সেই ঈষীকামুষ্টি দ্বারা স্বীয় প্রতিজ্ঞানুরূপ কূপ হইতে গুলিকা উত্তোলন করিলেন। বালকের তদ্দর্শনে চমৎকৃত হইয়া কহিল, বিপ্রর্ষে! আপনার অঙ্গুরীয়কটিও শীঘ্র উত্তোলন করুন। তখন মহাযশাঃ দ্রোণাচাৰ্য হস্তে ধনুঃশর লইয়া কৃপমধ্যে বাণ নিক্ষেপ করিলেন এবং তারা সেই অঙ্গুরীয়ক বিদ্ধ করিয়া ঊর্দ্ধে উত্তোলন করিয়া কুমারগণের সম্মুখে আনিয়া দিলেন। তাহারা অঙ্গুরীয়ক দর্শনে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর বিস্ময়াপন্ন হইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে কহিতে লাগিল, হে ব্ৰহ্মন। আপনাকে অভিবাদন করি; আপনি যেরূপ ক্ষমতা প্রকাশ করিলেন, ইহা অন্যের সাধ্য নহে, অতএব মহাশয় আপনার পরিচয় প্রদান ও কর্তব্যবিষয়ে আদেশ করিয়া আমাদিগকে চরিতার্থ করুন। দ্রোণাচাৰ্য কুমারদিগের বচন শ্রবণ করিয়া কহিলেন, হে বালকগণ! তোমরা ভীষ্মের নিকটে যাইয়া আমার রূপ ও গুণ বিশেষরূপে বর্ণন করিয়া তাহাকে কহিবে যে, সেই মহাতেজাঃ এ স্থানে সমুপস্থিত হইয়াছেন। কুমারগণ দ্রোণের আদেশানুসারে ভীষ্মের নিকটে গমন করিয়া দ্রোণের রূপ ও আশ্চর্য্য কর্ম সবিশেষ বর্ণন করিল। মহাত্মা ভীম কুমারগণের বাক্য শ্রবণ করিবামাত্র বুঝিতে পারিলেন যে, দ্রোণাচাৰ্য আগমন করিয়াছেন। ইতিপূৰ্বেই তিনি একজন সুশিক্ষকের হস্তে কুমারগণকে সমর্পণ করিবার মানস করিয়াছিলেন, এক্ষণে ধনুর্বিদ্যাবিশারদ দ্রোণাচার্য্য স্বেচ্ছা ক্রমে তাহাদিগের অধিকারে আগমন করিয়াছেন শুনিয়া সৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট হইলেন। তিনি স্বয়ং দ্রোণসমীপে গমন করিয়া তাঁহাকে স্বীয় ভবনে আনয়নপুর্বক যথোচিত সংকার করিয়া সাদর সম্ভাষণে কুশল প্রশ্ন ও গমনের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন।
দ্রোণ ভীষ্মের বচনাবসানে কহিতে লাগিলেন,–হে মহাত্মন্। পূর্বে আমি ধনুর্বেদ শিক্ষার্থে মহর্ষি অগ্নিবেশের নিকটে গমন করিয়াছিলাম। তথায় গিয়া ব্রহ্মচর্য গ্রহণ, আত্মসংযম ও জটাধারণ পূর্বক সেবায় নিযুক্ত হয়। বহুবৎসর বমি করিয়াছিলাম। হে ভীগ! ঐ সময়ে পাঞ্চালদেশীয় রাজপুত্র, মহাবল দ্রুপদ ঐ অগ্নিবেশের নিকটে অস্ত্রবিদ্যাভ্যাসার্থ তদীয় আশ্রমে বাল করিত। এইরূপে বাল্যকালাবধি একত্র বাস ও এক গুরুর নিকটে বিদ্যাভ্যাস করাতে দ্রুপদ ক্রমে ক্রমে আমার পরমোপকারী প্রিয় সখা হইয়া উঠিল। সে সর্বদা আমাকে প্রিয়বাক্য কলিত ও আমার প্রিয়কার্য করিত। একদা আমাকে কহিল, হে দ্রোণ! আমি পিতার প্রিয়তম পুত্র। তিনি যখন আমাকে পাঞ্চালরাজ্যে অভিষিক্ত করিবেন, আমি শপথ করিতেছি, তৎকালে আমার যাবতীয় ভোগ, সম্পত্তি ও সুখ,সমস্তই তোমার অধীন হইবে। পদ আমাকে এই কথা কহিয়া কিয়দ্দিনমধ্যে কৃতবিদ্য হইয়া আপনার নিকেতনে গমন করিল। গমনকালে আমি তাহাকে সমুচিত সম্মান প্রদর্শন করিয়া বিদার দিলাম। কিন্তু তদধি তাহার ঐ বাক্য আমার হৃদয়মন্দিরে সর্বদা জাগরূক রহিল।
হে শান্তনুতনয়! কিছুদিন পরে আমি পিতৃনিয়োগানুসারে পুত্রলাভাকাঙক্ষায় গোতমনন্দিনী কৃপীকে বিবাহ করিলাম। ঐ কামিনী অনতিদীর্ঘকেশা, পরমপ্রজ্ঞ, মহাব্রতা এবং অগ্নিহোত্র, যজ্ঞ ও দমগুণে সর্বদা নির। কিয়দ্দিনান্তর কৃপীর গর্ভে আমার অশ্বত্থামা নামে মহাবিক্রমশালী আদিত্যসমতেজা এক পুত্র জন্মিল। পিতা যেমন আমাকে পাইয়া প্রীত হইয়াছিলেন, আমিও অশ্বত্থামাকে প্রাপ্ত হইয়া সেইরূপ অতীব আনন্দিত হইলাম। একদা অশ্বথামা ধনিকদিগের পুত্রগণকে দুগ্ধপান করিতে দেখিয়া আমার নিকটে আসিয়া রোদন করিতে লাগিল; তদ্দর্শনে আমার মন নিতান্ত চঞ্চল হইল। তখন আমি ধর্মানপেত প্রতি গ্ৰহ করিবার বাসনায় বহুতর স্থলে ভ্রমণ করিলাম, কিন্তু কুত্রাপি দুগ্ধবতী গাবী দেখিতে পাইলাম না, পরিশেষে বিষণ্ণমনে নিজ নিকেতনে প্রত্যাবর্তন করিলাম। তথায় আসিয়া দেখিলাম, বালকগণ পিষ্টোদক অনিয়ন করিয়া “এই দুগ্ধ, ইহা পান কর” বলিয়া অশ্বত্থামাকে লোভ দেখাইতেছে। বালম্বভাব অশ্বত্থামাও উহা পান করিয়া দুগ্ধপান করিলাম বলিয়া পরমানন্দে নৃত্য করিতেছে। বালকগণ “ধনহীন দ্রোণকে ধিক্, যাহার সন্তান পিষ্টোদক পান করিয়া দুগ্ধ খাইলাম বলিয়া নৃত্য করিতেছে” এই বলিয়া তাহাকে বারংবার উপহাস করিতেছে। হে গাঙ্গেয়! স্বীয় সন্তানের সেই দুরবস্থা দর্শনে এবং অন্যান্য বালকগণের ঐ পরিহাসবাক্য শ্রবণে আমার মন দুঃখনিলে একবারে দগ্ধ হইয়া গেল। আমি মনে মনে আপনাকে তিরস্কার করিয়া চিন্তা করিলাম, আমি ইতিপূর্বে নিধনতাজন ব্রাহ্মণগণ কর্তৃক নিন্দিত ও পরিত্যক্ত হইয়া উপবাসে কালক্ষেপ করিয়াছি, তথাপি ধনলিপ্সায় কখন পাপজনক পরসেবায় আসক্ত হই নাই। হে ভীষ্ম! মনে মনে এইরূপ চিন্তা করিয়া দ্রুপদের পূর্বঘ্নেহানুসারে পুত্রকলত্ৰসমভিব্যাহারে পাঞ্চালরাজ্যে গমন করিলাম। পথিমধ্যে শুনিলাম, দ্রুপদ পিতৃরাজ্যে অভিষিক্ত হইয়াছেন। তংশ্রবণে প্রিয় বান্ধবের সহবাস ও প্রতিশ্রুত বাক্য স্মরণ করিয়া আমি কৃতার্থম্মন্য হইলাম। পরে অবিলম্বে তাহার সমীপে গমন পূর্বক, পূর্বতন সখ্য স্মরণ করিয়া কহিলাম,—হে পুরুষশ্রেষ্ঠ! আমি তোমার সখা, তুমি পূৰ্বে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলে যে, আমার সহিত, একত্র রাজ্যভোগ করিবে, আমি তদনুসারে তোমার নিকটে আসিয়াছি। দ্রুপদ আমার সেই কথায় কিছুমাত্র আস্থা প্রদর্শন করিল না, প্রত্যুত আমাকে হীনলোকের ন্যায় অবজ্ঞা করিয়া কহিল, হে ব্ৰহ্মন্! তুমি আসিয়া হঠাৎ আমাকে সখা বলিয়া সুবুদ্ধির কাৰ্য্য কর নাই; পূৰ্বে তোমর সহিত আমার সখ্য ছিল যথার্থ বটে, কিন্তু এক্ষণে আর তুমি আমার বন্ধুর উপযুক্ত নও; অশ্ৰোত্ৰিয় কখন শ্রোত্রিযের সখা হইতে পারে না; অরথীর সহিত রথীর সখ্য হওয়া নিতান্ত অসম্ভব; সমানে সমানে বন্ধুতা হওয়াই উচিত; অসমানের সহিত বন্ধুতা করা অবিধেয়। সখ্য চিরকাল সমভাবে থাকিবার নহে। হয় কাল, নতুবা পরস্পরের ক্রোধ উহাকে বিনাশ করে। তুমি সেই পুরাতন বন্ধু রে পরিত্যাগ কর। পূর্বে তোমার সহিত আমার যে সখ্য ছিল, সে কেবল সামর্থ্যনিবন্ধনমাত্র। যেমন মুখের সহিত বিদ্বানের ও ক্লীবের সহিত শুরের সখ্য হয় না, তদ্রূপ নিধনের সহিত ধনবানের বন্ধু হওয়া নিতান্ত দুর্ঘট। অতএব কেন তুমি আমার সহিত পূর্বের ন্যায় বন্ধু করিতে আসিয়াছ? হে মাত্মন! ভবাদৃশ ধনবিহীন হীনলোকের সহিত অতুলধনসম্পত্তিসম্পন্ন মহারাজদিগের বন্ধু হওয়া, যে নিতান্ত অসম্ভব তাহা কি তুমি জান না? তবে তুমি কি নিমিত্ত পূর্বের ন্যায় আমার সৃহিত বন্ধুত্ব করিতে বাসনা করিতেছ? তুমি কহিতেছ, আমি তোমার সহিত একত্র রাজভোগ করিব বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিয়াছি, কিন্তু তাহার বিন্দুমাত্রও আমার স্মরণ হইতেছে না, এক্ষণে কেবল এক রাত্রির নিমিত্ত তোমাকে ভোজন প্রদান করিতে পারি।
হে শান্তনুতনয়! দ্রুপদের মুখে এই প্রকার কটূক্তি শ্রবণে আমার মন ক্রোধানলে দগ্ধ হইতে লাগিল। আমি অবিলম্বে তথা হইতে প্রস্থান করিলাম। হে ভীষ্ম! আগমনকালে আমি যেরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়াছি, তাহা অতি ত্বরায় সম্পন্ন করিব, এই মানসে গুণবান্ শিষ্যগণ সমভিব্যাহারে কুরুদিগের অধিকারে আসিলাম। এক্ষণে তোমাকে সম্বর্ধন করিতে এই সুরম্য হস্তিনানগরে আসিয়াছি। বল, তোমার কি প্রিয়কাৰ্য্য করিতে হইবে? মহাত্মা ভীষ্ম দ্রোণের এই বাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন,-হে মহাত্মন! শাসনের গুণ মোচন করুন। আপনি অনুগ্ৰহ করিয়া বালকগণকে সম্যক্রূপে অস্ত্রশিক্ষা করান এবং সতত পূজিত হইয়া প্রীতি প্রসন্নমনে পরম সুখভোগ করুন। কুরুদিগের যাবতীয় ধন ও রাজ্য সমস্তই আপনার অধীন হইবে। আপনিই রাজা, কুরুগণ আপনারই আজ্ঞাবহ হইনে। হে ব্ৰহ্মন্! আপনি যখন যাহা চাহিবেন, তৎক্ষণাৎ তাহা প্রাপ্ত হইবেন। হে বিপর্যে! আপনি আমাদিগের সৌভাগ্যবশতঃ যদৃঙ্গক্রমে এস্থানে আগমন করিয়া যৎপরোনাস্তি অনুগ্রহ প্রকাশ করিয়াছেন।