দিবা অবসান হৈল, সন্ধ্যার সময়।
উঠি গেল যদুগণ যে যার আলয়।।
সত্যভামা জিজ্ঞাসেন গোবিন্দের প্রতি।
বিবাহে বিলম্ব কেন কর প্রাণপতি।।
গোবিন্দ বলেন, সখি কিসের বিবাহ।
পার্থ নাম শুনিয়া রামের জ্বলে দেহ।।
বলেন, যে বর করিয়াছি দুর্য্যোধনে।
দূত পাঠাইলেন তাহার সন্নিধানে।।
শুনি সত্যভামা হৈয়া চমকিত চিতে।
অধোমুখ করিয়া বসিলেন ভূমিতে।।
বলিলেন, কহ দেব কি হৈবে এখন।
অনর্থ হইল এবে সুভদ্রা কারণ।।
অর্জ্জুন শুনিলে পাছে যায় পলাইয়া।
ভগিনীরে দিবে কিহে অন্য বরে বিয়া।।
উপায় না করি কেনে মৌনেতে রহিলে।
হেন বুঝি, কলঙ্ক করিবে যদুকুলে।।
গোবিন্দ বলেন, দেবী কেন কর গোল।
করিব উপায় আমি, নহ উতরোল।।
সত্যভামা বলেন, বিলম্ব কথা নহে।
কেহ যদি এ কথা রামেরে গিয়া কহে।।
এই লজ্জা ভয়ে মম হইতেছে কাঁপ।
না দেখাব মুখ আর, জলে দিব ঝাঁপ।।
স্ত্রীলোকেতে জানে স্ত্রীলোকের যে বেদন।
শাশুড়ীর আগে আমি করি নিবেদন।।
এত বলি উঠি গেল দেবকী সদন।
কহিলেন যতেক সুভদ্রা বিবরণ।।
শুন শুন ঠাকুরাণী, করি নিবেদন।
কুল-লজ্জা-ভয়ে মম স্থির নহে মন।।
সুভদ্রা আসক্তা হৈল বীর ধনঞ্জয়ে।
বলিল, নহিলে প্রাণ ছাড়িব নিশ্চয়ে।।
গান্ধর্ব্ব-বিবাহ আমি দিলাম দোঁহার।
এবে শুনি এখন হইবে বর আর।।
শুনিয়া দৈবকী দেবী হইলা বিস্মিতা।
বলভদ্র-গৃহে যান রোহিনী সহিতা।।
দৈবকী বলেন, তাত শুন হলপাণি।
অর্জ্জুনে না দেহ কেন সুভদ্রা ভগিনী।।
রূপে গুণে কুলে শীলে সকলে বাখান।
কুটুম্বে কুটুম্ব হৈবে, কেন কর আন।।
রাম বলে, জননী না বুঝি কেন কহ।
পাণ্ডবগণের কথা সকল জানহ।।
আমার কুটুম্ব-যোগ্য নহে ধনঞ্জয়।
অযোগ্য-সম্বন্ধে মাতা কুল নষ্ট হয়।।
এই হেতু দুর্য্যোধনে পাঠাইনু দূত।
নিষ্কলঙ্ক সর্ব্ব যোগ্য হয়কুরুসুত।।
তিনলোকে বিখ্যাত পাণ্ডব জারজাত।
হেন জনে দিতে চাহ সুভদ্রা কিমত।।
রোহিণী বলেন, তাত সবার বিচার।
পিতা ভ্রাতা তোমার যতেক জ্ঞাতি আর।।
কি হেতু সবার বাক্য করহ হেলন।
দেহ অর্জ্জুনেরে ভদ্রা, সবাকার মন।।
সাধু ধর্ম্মশীল পার্থ, গুণী সর্ব্ব গুণে।
তারে নাহি দিয়া ভদ্রা দিবা অন্যজনে।।
যে কহ সে কহ তাত ক্রোধ করে তুমি।
কল্য প্রাতে পার্থেরে সুভদ্রা দিব আমি।।
শুনিয়া মায়ের বাক্য কম্পিত অধর।
তাম্রবর্ণ চক্ষু যেন জ্বলে বৈশ্বানর।।
বাতুলের প্রায় মাতা কহিছ বচন।
অন্য হৈলে কোথা তার রহিত জীবন।।
গোবিন্দের কথা যত করিলা স্বীকার।
জাতি কুল গোবিন্দের নাহিক বিচার।।
ভক্তি করি দুই কথা যেই জন কয়।
না বিচারে ভাল মন্দ, সেই বন্ধু হয়।।
কল্য তার পুত্রে দুর্য্যোধন দিল সুতা।
নাহিক তিলেক স্নেহ, নব কুটুম্বিতা।।
শিষ্য বলি তারে অতি স্নেহ আমি করি।
এই হেতু সবে ক্রুদ্ধ তাহারি উপরি।।
কার শক্তি দিতে পারে ভদ্রা অর্জ্জুনেরে।
যাহ মাতা, আর কিছু না বলে আমারে।।
রামের এতেক বাক্য শুনিয়া দুজনে।
উঠি গেল দুই জনে বিষণ্ন বদনে।।
জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল, মুনিরাজ শুন।
কোন্ কৃষ্ণপুত্রে কন্যা দিল দুর্য্যোধন।।
না কহিলা মুনি মোরে ইহার কথন।
কহ শুনি মুনিরাজ বড় ইচ্ছা মন।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীদাস কহে, সদা শুনে পুণ্যবান।।