দ্বাদশোহধ্যায় – উপনয়নম্ (১)
অনুবাদ – গর্ভাবস্থা হইতে গণনা করিয়া অষ্টম বর্ষে অথবা ভূমিষ্ঠ হইবার পর হইতে গণনা করিয়া অষ্টম বর্ষে ব্রাহ্মণের উপনয়সংস্কার করণীয়। (২) কোন কারণে ঐ সময়ে না হইলে ষোড়শ বর্ষ পর্যন্ত উপনয়নে অধিকার আছে। তৎপরে সাবিত্রীপতিত হয়, সুতরাং আর উপনয়ন হইতে পারে না। এই সংস্কারে পিতা প্রথমতঃ প্রাতঃকালে কৃতস্নান ও কৃতবৃদ্ধিশ্রাদ্ধ হইয়া স্বয়ং অথবা কোন ব্যক্তিকে আচার্য্যপদে বরণ করিবেন। পিতার অবর্তমানে মাণবকই বরণ করিবেন। সেই আচাৰ্য্য সমুদ্ভবনামা অগ্নিকে স্থাপন করিয়া বিরূপাক্ষজপান্তা কুশণ্ডিকা সমাপন পূর্বক মাণবককে অগ্নির উত্তর দিকে লইয়া শিখাসহ মুণ্ডিত, স্নাপিত, কুণ্ডলাদি দ্বারা অলঙ্কৃত, ক্ষৌমবস্ত্রধারী অথবা তদভাবে শুক্ল অচ্ছিন্ন কার্পাসবস্ত্রাবৃত করত দক্ষিণভাগ্নে রাখিয়া প্রকৃতকর্মারম্ভে প্রাদেশপ্রমাণ ঘৃতাক্ত সমিধ তুষ্ণীভাবে অগ্নিতে আহুতি দিবে। পরে মূলের লিখিত মন্ত্রে ব্যস্তসমস্তমহাব্যাহৃতি হোম করতে হয়। তৎপরে আচাৰ্য্য মূলের লিখিত পঞ্চ মন্ত্রে পাঁচটী আহুতি প্রদান করিবেন অর্থাৎ “হে অগ্নে! হে ব্রতপতে! ( শাস্ত্রীয় নিয়মপালক!) আমি উপনয়ন-ব্রতের অনুষ্ঠান করিব, উহা তোমাকে নিবেদন করিতেছি। আমি তোমার প্রসাদে সুখে ঐ ব্ৰত আচরণ করিতে সমর্থ হইব। এই উপনয়নব্রত দ্বারা আমি অধ্যয়নরূপ সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হইব, আমি অলীকবচন হইতে পৃথক হইয়া সত্যস্বরূপতা লাভ করিব। হে বায়ো! হে ব্রতপতে। আমি উপনয়ন-ব্রতের আচরণ করিব, উহা তোমাকে নিবেদন করিতেছি। আমি তোমার প্রসাদে সুখে ঐ ব্রত আচরণ করিতে সমর্থ হইব। এই উপনয়নব্ৰত দ্বারা আমি অধ্যয়নরূপ সমৃদ্ধি লাভ করি, আমি অনৃতবাক্য হইতে পৃথক হইয়া সত্যস্বরূপ তা প্রাপ্ত হইব। হে সূর্য! হে ব্রতপতে। আমি উপনয়নখ্য ব্রতের অনুষ্ঠান করিব, তাহা তোমার নিকট জানাইতেছি। আমি ত্বৎ-প্রসাদে অনায়াসে ঐ ব্রতানুষ্ঠান করিতে পারিব। এই ব্রত দ্বারা আমি অধ্যয়নরূপ সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হইব, আমি মিথ্যা বচন হইতে পৃথক্ হইব এবং সত্যস্বরূপতা লাভ করিব। হে চন্দ্র! হে ব্রতপতে! আমি উপনয়ন-ব্রতের আচরণ করিব, উহা তোমাকে নিবেদন করিতেছি। আমি তোমার প্রসাদে উহা নিৰ্ব্বিঘ্নে সম্পাদন করিতে সমর্থ হইব। এই ব্রত দ্বারা আমি অধ্যয়নরূপ সমৃদ্ধি লাভ করিব, আমি অলীকবচন হইতে পৃথক হইয়া সত্য স্বরূপতা প্রাপ্ত হইব। হে ইন্দ্র! তুমি যজ্ঞ ও ব্রতসমূহের পতি। আমি উপনয়ন ব্রতের অনুষ্ঠান করিব, তাই তোমার নিকট জানাইতেছি। আমি ত্বৎপ্রসাদে উহা সুখে সমাধা করিতে পারি। এই ব্রত দ্বারা আমি অধ্যয়নরূপ সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হইব, আমি মিথ্যা বাক্য হইতে পৃথক হইয়া সত্যস্বরূপতা লাভ করিব।” এই পাঁচটী মন্ত্রে পাঁচটা আহুতি দিতে হয়। ১-৫।
আচার্য্য এই প্রকারে আজ্যাহুতি দিয়া অগ্নির পশ্চিম দিকে উদগগ্ৰ কুশপরি কৃতাঞ্জলি হইয়া পূৰ্বমুখে অবস্থান করিবেন। মাণবকও অগ্নি ও আচার্য্য উভয়ের মধ্যভাগে করপুটে আচাৰ্য্যাভিমুখ হইয়া উদগঞ্জ কুশোপরি অবস্থিত হইবে। কোন মন্ত্রবান ব্রাহ্মণ মাণবকের দক্ষিণ দিকে থাকিয়া মাণবকের ও আচার্যের অঞ্জলি জল দ্বারা পূরিত করিবেন এবং মাণবক উদকাঞ্জলি গ্রহণ করিলে আচার্য্য তং প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া “হে অগ্নে! হে বায়ো! হে সূৰ্য্য! হে চন্দ্র! হে ইন্দ্রাদি দেবগণ! তোমরা এই সুন্দর মাণবককে আমার সহিত মিলাইয়া দেও। আমরা যেন উভয়ে পরস্পরের সহিত বিনাবিঘ্নে মিলিত হইতে সমর্থ হই। আমাদিগের সহিত এই ব্রহ্মচারী মুখে বিচরণ করুক্।” এই মন্ত্র জপ করিবেন। ৬। (৩)
পরে গৃহীতোদকাঞ্জলি আচার্য্য জলাঞ্জলি হস্ত মাণবককে “আমি ব্রহ্মচারী (মৈথুনেচ্ছারহিত) হইয়া অবস্থান করিতেছি, সুতরাং আমাকে উপনীত করুন, আপনার নিকটে গ্রহণ করুন” এই মন্ত্র পাঠ করাইবেন। ৭। (৪)
তৎপরে আচার্য্য মাণবকের নাম অর্থাৎ “তোমার নাম কি” এই কথা জিজ্ঞাসা করিবেন। তখন মাণবক দেবতাশ্রয়, গোত্রাশয়, নক্ষত্রাশয় অথবা পূৰ্বে আচার্য্য কর্তৃক কল্পিত নাম বলিবে। অর্থাৎ “আমার নাম অমুক” এই কথা বলিবে। ৮।
পরে মাণবক ও আচাৰ্য্য গৃহীত জলাঞ্জলি পরিত্যাগ করিবেন। অনন্তর আচাৰ্য্য স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মাণবকের সাঙ্গুষ্ট দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিবেন। “আমি জগৎ প্রসবিতা সূৰ্য্য, স্বাস্থ্যসাধক অশ্বিনীকুমারদ্বয় এবং পোষণকারী পূষণ দেবতা, ইঁহাদিগের হস্ত দ্বারা তোমাকে ধারণ করিতেছি”, এই মন্ত্রে হস্ত গ্রহণ করিতে হয়। ৯। (৫)
মন্ত্রমধ্যে যে স্থানে “অসৌ” পদ আছে, তথায় সম্বোধনন্ত মাণবকনাম প্রয়োগ করিবে। অনন্তর আচাৰ্য্য মাণবকের হস্ত ধারণ পূৰ্ব্বক “হে ব্রহ্মচারিন্! আমি তোমার এই যে হস্ত ধারণ করিয়াছি, পূর্বে এই হস্ত অগ্নি, সবিতা ও অর্যমা (পিতৃদেব) ধারণ করিয়রছিলেন; অগ্নিই তোমার আচার্য্য, তুমি গুরু-শুশ্রূষণাদি কর্ম্ম দ্বারা আমার প্রিয় ও হিতকারী মিত্র হও” এই মন্ত্র জপ করিবেন। ১০।
পরে আচার্য্য মাণবককে প্রদক্ষিণ ক্ৰমে ভ্রামিত করিয়া প্রাঙ্মুখভাবে অবস্থিত করাইবেন; তৎকালে “যাবৎ সূর্যদেবের আবর্তন থাকে, তুমি তাবৎ আমাকে পরিবর্তন পূর্বক অবস্থিত হও” এই মন্ত্র পাঠ করিতে হয়। ১১।
এই মন্ত্রের মধ্যে “অসৌ” স্থলে সম্বোধনান্ত মাণবকনাম প্রয়োগ করিবে। তদনন্তর আচার্য্য মাণবকের দক্ষিণ স্কন্ধ স্পর্শ পূৰ্ব্বক অবতারিত দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মাণবকের অব্যবহিত নাভিদেশ (৬) স্পর্শ করিয়া “হে নাভে! তুমি স্বস্থান হইতে বিচলিত হইও না, স্থিরভাবে অবস্থান কর। তুমি দেহধারণ-কারণ-সমূহের গ্রন্থি। হে অন্তক! আমি তোমার হস্তে এই ব্রহ্মচারীকে প্রদান করিলাম” এই মন্ত্র পাঠ করিবে। ১২।
এই মন্ত্রের মধ্যগত “অমুং” স্থলে দ্বিতীয়ান্ত মাণবকনাম প্ৰয়োগ করিবে। পরে আচাৰ্য্য মানবকের নাভির উর্দ্ধভাগ স্পর্শ পূৰ্ব্বক মূলের লিখিত মন্ত্র অর্থাৎ “হে অভূরে! (হে বায়ো!) এইটী আমার, ইহা তোমাকে অৰ্পণ করিলাম” এই কথা বলিবেন। ১৩।
এই মন্ত্রমধ্যগত “অমুং” স্থলে দ্বিতীয়ান্ত মাণবকনাম প্রয়োগ করিতে হয়। তদনন্তর আচার্য্য মণবকের হৃদয়দেশ স্পর্শ পূৰ্ব্বক বলিবেন, “হে কৃশানো! (হে অগ্নে!) এইটী আমার, ইহা তোমাকে প্রদান করিলাম।” ১৪।
এই মন্ত্রমধ্যগত “অমুং” স্থলেও দ্বিতীয়ান্ত মাণবকনাম উচ্চারণ করিতে হয়। অনন্তর আচার্য্য ক্ষিণ হস্ত দ্বারা মাণবকের দক্ষিণ স্কন্ধ স্পর্শ করত কহিবেন, “হে ব্রহ্মচারিণ্! তোমাকে স্রষ্টা প্রজাপতির হস্তে প্রদান করিতেছি।“ ১৫।
এই মন্ত্রমধ্যগত “অসৌ” স্থলে সম্বোধনান্ত মাণবকনাম প্রয়োগ করিবে। পরে আচার্য্য বাম হস্ত দ্বারা মাণবকের বামস্কন্ধ স্পর্শ করিয়া কহিবেন, “আমি তোমাকে বিতৃ-দেবকে প্রদান করিতেছি। ১৬।”
এই মন্ত্রমথ্যগত “অসৌ” স্থলেও সম্বোধনান্ত মাণবকনাম প্রয়োগ করিতে হয়। তদনন্তর আচার্য্য “প্রজাপতিঋষির্জ্জগতীচ্ছন্দো ব্রহ্মচারী দেবতা উপনয়নে ব্রহ্মচারি-সম্বোধনে বিনিয়োগঃ। ওঁ ব্রহ্মচাৰ্য্যসৌ” অর্থাৎ “তুমি ব্রহ্মচারী হইলে” এই মন্ত্রে সম্বোধন করিবেন। ১৭।
এই মন্ত্রমধ্যগত “অসৌ” স্কুলে সম্বোধন মাণবকনাম প্রয়োগ করিবে। তৎপরে আচার্য্য “তুমি সমিধ আহরণ কর” এই মন্ত্রে সম্বোধিত মাণবককে প্রেরণ করিয়া পুনরায় কহিবেন, “আপোশান কর্ম্ম করিও, দিবাভাগে নিদ্রিত হইও না।” ব্রহ্মচারীও সকল বাক্যে, “বাঢ়ং” শব্দে ঐ সমস্ত প্রতিজ্ঞা পালনে স্বীকার করিবেন। ১৮।
অনন্তর আচারানুসারে ব্রহ্মচারী কৌপীন অর্থাৎ ব্রহ্মচারীবেশ পরিগ্রহ করিবেন। তৎপরে আচার্য্য অগ্নির উত্তর দিকে গিয়া উদগগ্র কুশোপরি প্রাঙ্মুখভাবে উপবেশন করিবেন। মাণবককেও দক্ষিণ জানু পাতিয়া উদগগ্ৰ কুশোপরি আচাৰ্য্যাভিমুখে উপবেশন করিবে। পরে আচার্য্য মাণবককে ত্রিপ্রদক্ষিণবৃতা মুঞ্জমেখলা ধারণ করাইয়া তাহাকে মূলের লিখিত দুইটা মন্ত্র পাঠ করাইবেন অর্থাৎ মাণবক কহিবে, এই প্রত্যক্ষ মেখলা আমাদিগের নিকট আগমন করুন। এই মেখলা সম্বন্ধ প্রলাপাদি হইতে নিবারিত করেন, ইনি ব্রাহ্মণাদি বর্ণ পবিত্র হইলেও অধিকতর পবিত্র করিয়া থাকেন, ইনি প্রাণ ও অপানবায়ুর বলবিধান করিয়া দেন; ইনি পূজ্যা, সৰ্ব্ব-লোকবাঞ্ছিতা ও ভগিনীর ন্যায়। হে শোভনে মেখলে! তুমি ব্রহ্মচারী সমন্ধীয় মন্ত্রের রক্ষয়িত্রী, তপস্যার বিধাত্রী, রাক্ষসাদি-বিঘ্নবিনাশিনী ও শত্রুকুলের পরাভবকর্ত্রী; তুমি সমন্তাৎ আগমন কর অর্থাৎ বেষ্টন কর। তোমাকে ধারণ করিলে কেহই যেন আমাদিগকে হিংসা করিতে না পারে। ১৯-২০।
অনন্তর আচাৰ্য্য মূলের লিখিত মন্ত্র পাঠ পূৰ্ব্বক মাণবককে কৃষ্ণসারাজিন সহিত যজ্ঞোপবীত ধারণ করাইবেন। পরে মাণবক আচার্য্যের সন্নিহিত হইলে আচার্য্য কহিবেন, “ভো মাণবক! তুমি অধ্যয়ন কর।” তখন মাণবক কহিবে, আপনি আমাকে সাবিত্রী উপদেশ দিউন্।” ২১।
তদনন্তর আচার্য্য উপসন্ন মাধবককে প্রথমে এক পাদ এক পাদ, পরে অর্দ্ধ অর্দ্ধ পাদ, তৎপরে সমগ্র সাবিত্রী অধ্যাপন করিবেন। ঐ সমস্ত পদের ঋষ্যাদি একরূপ। ২২।
তৎপরে তিনবার সমস্ত গায়ত্রী পাঠ করাইবেন। অনন্ত আচার্য্য মহাব্যাহৃতি পৃথক পৃথক করিয়া মাণবককে ওঙ্কার পূর্ব্বিকা, ওঙ্কারান্তা অথবা ওঙ্কারপুটিতা করিয়া অধ্যয়ন করাইবেন এবং পরে প্রণব ও ব্যাহৃতিসহিত প্রণবান্ত গায়ত্রী অধ্যয়ন করাইবেন। যেরূপে অধ্যয়ন করাইতে হয়, তাহা মূলে স্পষ্টীকৃত আছে। তদনন্তর আচার্য্য মাণবককে তৎপরিমিত বিশ্বদণ্ড বা পালাশদণ্ড প্রদান পূৰ্ব্বক তাহাকে এই মন্ত্র পাঠ করা ইবেন যে, “হে শোভনকীৰ্তে দণ্ড! তুমি যেমন বেদধারণার্থ জ্ঞানাদি দ্বারা লোকে প্রখ্যাতষশাঃ হইয়াছ, আমাকেও সেইরূপ শোভনকীৰ্ত্তি কর। হে অগ্নে! তুমি যেমন দেবগণমধ্যে বিদিত যশা, সেইরূপ আমিও যেন মনুষ্যমধ্যে শোভনকীৰ্ত্তি হই। ২৩।
তৎপরে গৃহীতদণ্ড ব্রহ্মচারী প্রথমতঃ “ভবতি ভিক্ষাং দেহি” এই বাক্যে মাতার নিকট ভিক্ষা প্রার্থনা করিবে এবং লব্ধভিক্ষ হইয়া “ওঁ স্বস্তি” বলিবে। তদনন্তর মাতৃবন্ধু স্ত্রীগণের নিকট ভিক্ষা লইয়া “ভবন ভিক্ষাং দেহি” বাক্যে পিতার নিকট প্রার্থনা করিবে। অনন্তর ব্রহ্মচারী লব্ধভিক্ষ হইয়া “ওঁ স্বস্তি” এই বাক্য বলিবে। পরে অন্যান্য ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করিবে সমস্ত ভিক্ষালব্ধ দ্রব্য আচাৰ্য্যকে নিবেদন করিবে। অনন্তর আচার্য্য পূৰ্ব্ববৎ ব্যস্তসমস্তমহাব্যাহৃতিহেম করিয়া প্রাদেশ প্রমাণ ঘৃতাক্ত সমিধ তূষ্ণীভাবে অগ্নিতে আহুতি দিয়া প্রকৃর কৰ্ম্ম সমাপন করত সৰ্ব্বকর্ম্মসাধারণ শাট্যায়ন-হোমাদি বাস দেব্যগানান্ত উদীচ্য কৰ্ম্ম সমাপন করিবে। তদনন্তর যদি পিতাই আচাৰ্য্য হইয়া থাকেন, তাহা হইলে কর্ম্মকারয়িতৃ ব্রাহ্মণকে দক্ষিণ প্রদান করিবেন। যদি অন্য ব্যক্তি বৃত হইয়া থাকে, তাহা হইলে তাহাকে দক্ষিণা দিতে হইবে। ব্রহ্মচারী সেই স্থানেই দিনান্ত যাবৎ বাগযত হইয়া অবস্থান করিবে। অনন্তর সন্ধ্যা আগত হইলে সন্ধ্যোপাসনা করিয়া কুশণ্ডিকোক্ত বিধানে শিখিনামা অগ্নি স্থাপন পূর্বক “ও ইহৈবায়মিতরো জাতবেদা দেবেভ্যো হবং বহতু প্রজানন” এই মন্ত্র জপ করিয়া দক্ষিণ জানু ভূমিতে পাতিয়া দক্ষিণ-পশ্চিমোত্তরক্রমে উদকাঞ্জলিসেক, অগ্নিপর্য্যুক্ষণ ও সমিদ্ধোম করিবে। “মহান জাত-প্রজ্ঞান অগ্নির নিমিত্ত সমিধ্ আহৃত হইয়াছে। হে অগ্নে! তুমি যেমন সমিধ দ্বারা দীপিত হইতেছ, এইরূপ আমি যেন আয়ু, মেধা, তেজঃ, পুত্র-পৌত্রাদিরূপ প্রজা, গবাদি পশু, ব্রাহ্মণতেজঃ, ধন ও অন্নাদি দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হই” এই মন্ত্রে সমিদ্ধৈাম করিবে। ২৪। তদনন্তর কৰ্ম্ম শেষোক্তবিধানে পুনরায় অগ্নি পর্য্যুক্ষণ ও দক্ষিণপশ্চিমোত্তরক্ৰমে উদকাঞ্জলিসেক করিবে। পরে যথাযথ মন্ত্রে অগ্নি অভিবাদন ও অগ্নি বিসৰ্জন করিয়া সন্ধ্যা অতীত হইলে ক্ষারলবণবর্জ্জিত সবৃত চরুশেষ জল দ্বারা অভুক্ষণ করত “হে গণ্ডূষরূপ জল! তুমি পঞ্চযজ্ঞাবশিষ্ট অন্নের শয্যাস্বরূপ” এই মন্ত্রে অপোশান করিবে। ২৫।
এইরূপে অপোশান করিয়া মধ্যমা, অনামা ও অঙ্গুষ্ঠ এই অঙ্গুলীত্রয়ের ত্রিপর্ব্ব দ্বারা গৃহীত অন্ন দ্বারা “ওঁ প্রাণায় স্বাহা” ইত্যাদি। মন্ত্রে পঞ্চ প্রাণাহুতি দিবে। ২৬।
পরে প্রাণাহুতিশেষ ভূমিতে নিক্ষেপ পূৰ্ব্বক বামহস্তে ভোজনপাত্র ধারণ করত বাগযত হইয়া ভোজন করিবে। ভোজনাবসানে “হে গণ্ডূষরূপ জল! তুমি পঞ্চযজ্ঞাবশিষ্ট অন্নের আচ্ছাদনস্বরূপ” এই মন্ত্রে পুনরায় আপোশান কৰ্ম্ম করিবে। ২৭।
এই প্রকারে আপোশান করিয়া আচমন করিতে হয়। এই অগ্নিক্রিয়া সমাবর্ত্তনযাবৎ প্রত্যহ সায়ংকালে ও প্রাতঃকালে কৰ্ত্তব্য। উক্ত নিয়মেই যাব যাবজ্জীবন ভোজন করিবে।
ইতি উপনয়ন কর্ম্ম সমাপ্ত।
————-
১. প্রকৃত পক্ষে উপনয়নই কৈশোর সংস্কার বলিয়া অভিহিত। এই সংস্কার দ্বারা বিপ্রবালক জ্ঞানশিক্ষার অভিপ্রায়ে শিক্ষাচার্যের নিকটে নীত হইয়া থাকেন। শূদ্র ভিন্ন অপর বর্ণত্রয়ই এই সংস্কারে অধিকারী। সত্য জ্ঞান ও সদাচার প্রাপ্তি অর্থাৎ মানবজীবনের সারাৎসায় পদার্থ লাভই এই সংস্কারের উদ্দেশ্য। আৰ্যশাস্ত্র সেই বিষয়ের যেরূপ পরিষ্কার পথ দেখাইয়া দিয়াছেন, এই সংস্কারের মন্ত্রগুলির তাৎপৰ্য মনোযোগিতার সহিত দেখিলেই সহজে তাহা উপলব্ধি হইবে সন্দেহ নাই।
২. মতান্তরে পঞ্চম বর্ষেও উপনয়নের বিধি আছে। অর্থাৎ বিপ্রশিশু পঞ্চম বর্ষ হইতে ষোড়শবর্ষ বয়ঃক্রম পর্যন্ত, ক্ষত্রিয় ষষ্ঠ হইতে দ্বাদশ বর্ষ পর্যন্ত এবং বৈশ্য অষ্টম বর্ষ হইতে চতুর্বিংশ বর্ষ বয়ঃক্রম পৰ্যন্তু এই সংস্কার অধিকারী।
৩. এই মন্ত্রটীর তাৎপৰ্য্যে স্পষ্টই বোধগম্য হইতেছে যে, গুরু ও শিষ্য উভয়ের পরস্পর সম্যক্ মিলনই শিক্ষাকার্য্যের প্রধান ও প্রথম অনুষ্ঠান।
৪. শিক্ষাকালে যে মৈথুনরাহিত্য অতীব আবশ্যক, তাহাই স্পষ্ট অভিব্যক্ত হইল; সুতরাং উপনয়ন সংস্কারে কৈশেরবস্থাতেই যে হৃদয়ে মহৎ পবিত্রভাবের অঙ্কুরোদয় হয়, তাহা বলা বাহুল্যমাত্র।
৫. এই মন্ত্র দ্বারা স্পষ্টই প্রতীত হইতেছে যে, এইরূপ করিলে শিষ্যের হৃদয়ে ঈদৃশ জ্ঞানের সঞ্চার হয় যে, আচার্য্যই তাহার পক্ষে জনয়িতা, স্বাস্থ্য সাধক ও পোষণকারীস্বরূপ।
৬. নাভিদেশ–জীবমৰ্ম্মস্থল।