[১৯০০ খ্রীঃ, ১৮ জানুআরী ক্যালিফর্নিয়ার অন্তর্গত প্যাসাডেনায় শেক্সপীয়র ক্লাব হাউসে প্রদত্ত বক্তৃতা।]
স্বামী বিবেকানন্দঃ কেহ কেহ আমার বক্তৃতার পূর্বে হিন্দুদর্শন সম্বন্ধে, আবার কেহ কেহ বক্তৃতার পরে ভারতবর্ষ সম্বন্ধে সাধারণভাবে প্রশ্ন করিতে চান। কিন্তু আমার প্রধান অসুবিধা এই যে, আমি জানি না—আজ আমাকে কি বিষয়ে বক্তৃতা দিতে হইবে। তবে হিন্দুদর্শন, হিন্দুজাতি, হিন্দুদের ইতিহাস বা সাহিত্য-সংক্রান্ত যে-কোন বিষয়ে ভাষণ দিতে আমি প্রস্তুত। মহিলা ও মহোদয়গণ, আপনারা কোন একটি বিষয় প্রস্তাব করিলে আমি বিশেষ সন্তুষ্ট হইব।
প্রশ্নঃ স্বামীজী, আমেরিকাবাসীরা অত্যন্ত প্রয়োগকুশল জাতি, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি জিজ্ঞাসা করি, হিন্দুদর্শনের কোন্ বিশেষ নীতি বা মতবাদটি আমরা জীবনে কাজে লাগাইব, আর খ্রীষ্টধর্ম আমাদের জন্য যাহা করিয়াছে, তাহা অপেক্ষা ঐ নীতি আর কতটুকু বেশী কী করিবে?
স্বামীজীঃ ইহা নির্ণয় করিয়া দেওয়া আমার পক্ষে কঠিন। ইহা আপনাদের উপর নির্ভর করে। হিন্দুদর্শনের ভিতর গ্রহণযোগ্য এবং জীবনগঠনের সহায়ক কিছু যদি পান, তবে তাহা আপনাদের গ্রহণ করা উচিত। আপনারা দেখিতেছেন, আমি মিশনারী নই এবং কাহাকেও আমার ভাবানুযায়ী মত পরিবর্তন করিতে বলি না। আমার নীতি এই—সব ভাবই ভাল এবং মহান্। আপনাদের কোন কোন ভাব ভারতবর্ষের কিছু লোকের উপযোগী হইতে পারে, আবার আমাদের কতকগুলি ভাব এই দেশের কিছু লোকের উপযোগী হইতে পারে; সুতরাং ভাবগুলি সারা পৃথিবীতে অবশ্যই ছড়াইতে হইবে।
প্রশ্নঃ আপনাদের দর্শনের ফলাফল আমরা জানিতে চাই। আপনাদের ধর্ম ও দর্শন কি আপনাদের নারীজাতিকে আমাদের নারীজাতি অপেক্ষা উন্নততর করিয়াছে?
স্বামীজীঃ ইহা বড়ই ঈর্ষাসূচক প্রশ্ন। আমি আমাদের মেয়েদের ভাল মনে করি এবং এদেশের মেয়েদেরও ভাল মনে করি।
প্রশ্নঃ বেশ তো, আপনি কি আপনার দেশের মেয়েদের কথা—তাহাদের রীতিনীতি, শিক্ষা এবং পরিবারে তাহাদের স্থান সম্বন্ধে বলিবেন?
স্বামীজীঃ নিশ্চয়ই, এগুলি সম্বন্ধে আমি খুব আনন্দের সহিত বলিব। তাহা হইলে আজ আপনারা ‘ভারতীয় নারী’ সম্বন্ধেই জানিতে ইচ্ছুক, দর্শন বা অন্য বিষয় নয়, ঠিক তো?