বাইয়াতের শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর উপস্থিত লোকেরা নবী করিম হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে বাইয়াতের ইচ্ছে করলেন। এ সময় দু’জন মুসলমান উঠে দাড়ালেন। এরা নবুয়তের একাদশ ও দ্বাদশ বছরের মাঝামাঝির হজ্বের মৌসুমে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তারা নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিত ভালোভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করতে চাইলেন। তারা চাচ্ছিলেন যে, বিষয়টির সবদিআক যথাযথভাবে তুলে ধরে তারপর বাইয়াত করবেন। তারা এটাই জানতে ও বুঝতে চাচ্ছিলেন যে, কওমের লোকের কতটা আত্মত্যাগে প্রস্তুত রয়েছে।
ইবনে ইসহাক লিখেছেন, লোকেরা বাইয়াতের জন্য সমবেত হওয়ার পর হযরত আব্বাস ইবনে ওবাদা ইবনে নাযালা বললেন, তোমরা নিশ্চয় জানো যে, তাঁর সাথে কিসের ব্যাপারে বাইয়াত করছো ? সবাই বললেন, হ্যাঁ জানি। হযরত আব্বাস বললেন, তোমরা কালো এবং লাল লোকদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে তাঁর হাতে বাইয়াত করছো। যদি তোমরা এরুপ মনে করে থাকো যে, তোমাদের ধন-সম্পত্তি ব্যয়িত হলে এবং তোমাদের নেতৃস্থানীয় লোকেরা নিহত হলে তোমরা তাঁকে পরিত্যাগ করবে তাহলে এখনই তাঁ!কে পরিত্যাগ করো। কেননা তাঁকে নিয়ে যাবার পর নিঃসঙ্গ অবস্থায় পরিত্যাগ করা দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য অবমাননাকর হবে। যদি তোমরা মনে করো যে, ধন-সম্পদ কোরবানী দেয়ার পর নেতৃস্থানীয় লোকেরা নিহত হবার পরও তাঁর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি পালন করবে, যেদিকে তোমাদের ডাকা হচ্ছে সেদিকে যাবে, তবে তোমরা তাঁকে নিয়ে নাও। আল্লাহর শপথ এতে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে।
এসব কথা বলার পর সবাই সমস্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, ধন-সম্পদ কোরবানী করবো এবং নেতৃস্থানীয় লোকদের নিহত হবার ঝুঁকি নেবো বিনিময়ে আমরা কি পাবো ? আমরা অঙ্গিকার যথাযথভাবে পালন করবো, কিন্ত আমাদের বিনিময় কি হবে ? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জান্নাত। সবাই তখন হাত বাড়ালেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হাত বাড়ালেন। বাইয়াত হয়ে গেল।
হযরত জাবের (রা) বলেন, সমবেত লোকদের মধ্য আসআদ ইবনে যোরারা ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সের, আসআদ তখন রসুল এর হাত ধরে বললেন, মদীনাবাসিরা একটু থামো। আমরা তাঁর কাছে উটের বুক শুকানো দুরত্ব অতিক্রম করে এ কারনেই হাযির হয়েছি, যেহেতু তিনি আল্লাহর রসুল। আজ তাঁকে মক্কা থেকে নিয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে সমগ্র আরবের সাথে শত্রুতা, তোমাদের বিশিষ্ট নেতাদের নিহত হওয়া তলোয়ারের ঝনঝনানি। কাজেই এসব যদি সহ্য করতে পারো তবেই তাঁকে নিয়ে যাও। তোমাদের এ কাজের বিনিময় আল্লাহর কাছে রয়েছে। আর যদি নিজেদের প্রাণ তোমাদের কাছে প্রিয় হয়ে থাকে, তকে তাঁকে এখানেই ছেড়ে দাও। এটা হবে আল্লাহর কাছে গ্রহণয্রগ্য ওযর।