৪৮৫*
আলামেডা, ক্যালিফোর্নিয়া
১৮ এপ্রিল, ১৯০০
প্রিয় জো,
এইমাত্র তোমার ও মিসেস বুলের সাদর আহ্বানপত্র পেলাম। এ চিঠি আমি লণ্ডনের ঠিকানায় লিখছি। মিসেস লেগেট নিঃসন্দেহে আরোগ্যের পথে চলেছেন জেনে আমি খুবই সুখী হয়েছি!
মিঃ লেগেটে সভাপতিপদ ত্যাগ করেছেন শুনে বড়ই দুঃখিত হলাম।
আসল কথা—আরও বেশী গোল পাকাবার ভয়ে আমি চুপ করে আছি। তুমি তো জানই—আমার সব ভয়ানক কড়া ব্যবস্থা; একবার যদি আমার খেয়াল চাপে তো এমন চেঁচাতে শুরু করব যে, অ—র মনের শান্তিভঙ্গ হবে। আমি তাকে শুধু এইটুকু লিখে জানিয়েছি যে, মিসেস বুল সম্বন্ধে তার সব ধারণা একেবারে ভুল।
কর্ম করা সব সময়ই কঠিন। আমার জন্য প্রার্থনা কর জো, যেন চিরদিনের তরে আমার কাজ করা ঘুচে যায়; আর আমার সমুদয় মন-প্রাণ যেন মায়ের সত্তায় মিলে একেবারে তন্ময় হয়ে যায়। তাঁর কাজ তিনিই জানেন।
তুমি আবার লণ্ডনে পুরানো বন্ধুদের মধ্যে গিয়ে খুবই সুখী হয়েছ নিশ্চয়। তাদের সকলকে আমার ভালবাসা জানিও। আমি ভালই আছি—মানসিক খুব ভালই। শরীর চেয়ে মনের শান্তি-স্বচ্ছন্দতাই খুব বেশী বোধ করছি। লড়াইয়ে হার-জিত দুই-ই হল—এখন পুঁটলি-পাঁটলা বেঁধে সেই মহান্ মুক্তিদাতার অপেক্ষায় যাত্রা করে বসে আছি। ‘অব শিব পার করো মেরা নেইয়া’—হে শিব, হে শিব, আমার তরী পারে নিয়ে যাও, প্রভু।
যতই যা হোক, জো, আমি এখন সেই আগেকার বালক বৈ আর কেউ নই, যে দক্ষিণেশ্বরের পঞ্চবটীর তলায় রামকৃষ্ণের অপূর্ব বাণী অবাক হয়ে শুনত আর বিভোর হয়ে যেত। ঐ বালক-ভাবাটাই হচ্ছে আমার আসল প্রকৃতি; আর কাজকর্ম, পরোপকার ইত্যাদি যা-কিছু করা গেছে, তা ঐ প্রকৃতিরই উপরে কিছুকালের জন্য আরোপিত একটা উপাধি মাত্র। আহা, আবার তাঁর সেই মধুর বাণী শুনতে পাচ্ছি—সেই চিরপরিচিত কণ্ঠস্বর!—যাতে আমার প্রাণের ভিতরটা পর্যন্ত কণ্টকিত করে তুলছে! বন্ধন সব খসে যাচ্ছে, মানুষের মায়া উড়ে যাচ্ছে, কাজকর্ম বিস্বাদ বোধ হচ্ছে! জীবনের প্রতি আকর্ষণও কোথায় সরে দাঁড়িয়েছে! রয়েছে কেবল তার স্থলে প্রভুর সেই মধুর গম্ভীর আহ্বান!—যাই, প্রভু, যাই! ঐ তিনি বলছেন, ‘মৃতের সৎকার মৃতেরা করুক’২২ (সংসারের ভাল-মন্দ সংসারীরা দেখুক), ‘তুই (ওসব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে) আমার পিছু পিছু চলে আয়!’—যাই, প্রভু, যাই!
হ্যাঁ, এইবার আমি ঠিক যাচ্ছি। আমার সামনে অপার নির্বাণ-সমুদ্র দেখতে পাচ্ছি! সময়ে সময়ে স্পষ্ট প্রত্যক্ষ করি, সেই অসীম অনন্ত শান্তির পারাবার—মায়ার এতটুকু বাতাস বা একটা ঢেউ পর্যন্ত যার শান্তিভঙ্গ করছে না!
আমি যে জন্মেছিলুম, তাতে আমি খুশী; এত যে কষ্ট পেয়েছি, তাতেও খুশী; জীবনে যে বড় বড় ভুল করেছি, তাতেও খুশী; আবার এখন যে নির্বাণের শান্তি-সমুদ্রে ডুব দিতে যাচ্ছি, তাতেও খুশী। আমার জন্য সংসারে ফিরতে হবে, এমন বন্ধনে আমি কাউকে ফেলে যাচ্ছি না; অথবা এমন বন্ধন আমিও কারও কাছ থেকে নিয়েও যাচ্ছি না। দেহটা গিয়েই আমার মুক্তি হোক, অথবা দেহ থাকতে থাকতেই মুক্ত হই, সেই পুরানো ‘বিবেকানন্দ’ কিন্তু চলে গেছে, চিরদিনের জন্য চলে গেছে—আর ফিরছে না!
শিক্ষাদাতা, গুরু, নেতা, আচার্য বিবেকানন্দ চলে গেছে—পড়ে আছে কেবল সেই বালক, প্রভুর সেই চিরশিষ্য, চিরপদাশ্রিত দাস!
তুমি বুঝতে পারছ, কেন আমি অভেদানন্দের কাজে হাত দিচ্ছি না।
আমি কে জো, যে কারও কাজে হাত দেব? অনেক দিন হল, নেতৃত্ব আমি ছেড়ে দিয়েছি। কোন বিষয়েই ‘এইটে আমার ইচ্ছা’ বলবার আর অধিকার নেই। এই বৎসরের গোড়া থেকেই আমি ভারতের কাজে কোন আদেশ দেওয়া ছেড়ে দিয়েছি—তা তো তুমি জানই। তুমি ও মিসেস বুল অতীতে আমার জন্য যা করেছ, তার জন্য অজস্র ধন্যবাদ। তোমাদের চির-কল্যাণ—অনন্ত কল্যাণ হোক। তাঁর ইচ্ছাস্রোতে যখন আমি সম্পূর্ণ গা ঢেলে দিয়ে থাকতুম, সেই সময়টাই জীবনের মধ্যে আমার পরম মধুময় মুহূর্ত বলে মনে হয়। এখন আবার সেইরূপে গা ভাসান দিয়েছি। উপরের সূর্য তাঁর নির্মল কিরণ বিস্তার করছেন; পৃথিবী চারিদিকে শস্যসম্পদ-শালিনী হয়ে শোভা পাচ্ছেন, দিনের উত্তাপে সব প্রাণী ও পদার্থ কত নিস্তব্ধ, কত স্থির, শান্ত!—আর আমিও সেই সঙ্গে এখন ধীর-স্থির ভাবে, নিজের ইচ্ছা আর বিন্দুমাত্র না রেখে, প্রভুর ইচ্ছারূপ প্রবাহিণীর সুশীতল বক্ষে ভেসে ভেসে চলেছি! এতটুকু হাত-পা নেড়ে এ প্রবাহের গতি ভাঙতে আমার প্রবৃত্তি বা সাহস হচ্ছে না—পাছে প্রাণের এই অদ্ভুত নিস্তব্ধতা ও শান্তি আবার ভেঙে যায়! প্রাণের এই শান্তি ও নিস্তব্ধতাই জগৎটাকে মায়া বলে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয়! এর আগে আমার কর্মের ভিতর মান-যশের ভাবও উঠত,২৩ আমার ভালবাসার ভিতর ব্যক্তিবিচার আসত, আমার পবিত্রতার পিছনে ফলভোগের আকাঙ্ক্ষা থাকত, আমার নেতৃত্বের ভিতর প্রভুত্বস্পৃহা আসত। এখন সে-সব উড়ে যাচ্ছে; আর আমি সকল বিষয়ে উদাসীন হয়ে তাঁর ইচ্ছায় ঠিক ঠিক গা ভাসান দিয়ে চলেছি। যাই! মা, যাই!—তোমার স্নেহময় বক্ষে ধারণ করে যেখানে তুমি নিয়ে যাচ্ছ, সেই অশব্দ, অস্পর্শ, অজ্ঞাত, অদ্ভুত রাজ্যে—অভিনেতার ভাব সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে কেবলমাত্র দ্রষ্টা বা সাক্ষীর মত ডুবে যেতে আমার দ্বিধা নাই!
আহা, কি স্থির প্রশান্তি! চিন্তাগুলি পর্যন্ত বোধ হচ্ছে যেন হৃদয়ের কোন্ এক দূর, অতি দূর অন্তস্তল থেকে মৃদু বাক্যালাপের মত ধীর অস্পষ্টভাবে আমার কাছে এসে পৌঁছচ্ছে। আর শান্তি—মধুর, মধুর শান্তি—যা-কিছু দেখছি শুনছি, সব কিছু ছেয়ে রয়েছে!—মানুষ ঘুমিয়ে পড়বার আগে কয়েক মুহূর্তের জন্য যেমন বোধ করে—যখন সব জিনিষ দেখা যায়, কিন্তু ছায়ার মত অবাস্তব মনে হয়—ভয় থাকে না, তাদের প্রতি একটা ভালবাসা থাকে না, হৃদয়ে তাদের সম্বন্ধে এতটুকু ভাল-মন্দ ভাব পর্যন্ত জাগে না—আমার মনের এখনকার অবস্থা যেন ঠিক সেইরূপ, কেবল শান্তি শান্তি! চারপাশে কতকগুলি পুতুল আর ছবি সাজানো রয়েছে দেখে লোকের মনে যেমন শান্তিভঙ্গের কারণ উপস্থিত হয় না, এ অবস্থায় জগৎটাকে ঠিক তেমনই দেখাচ্ছে; আমার প্রাণের শান্তিরও বিরাম নেই। ঐ আবার সেই আহ্বান!—যাই প্রভু, যাই।
এ অবস্থায় জগৎটা রয়েছে, কিন্তু সেটাকে সুন্দরও মনে হচ্ছে না, কুৎসিতও মনে হচ্ছে না।—ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বিষয়ানুভূতি হচ্ছে, কিন্তু মনে ‘এটা ত্যাজ্য, ওটা গ্রাহ্য’—এমন ভাবের কিছুমাত্র উদয় হচ্ছে না। আহা, জো, এ যে কি আনন্দের অবস্থা, তা তোমায় কি বলব! যা কিছু দেখছি, শুনছি, সবই সমানভাবে ভাল ও সুন্দর বোধ হচ্ছে; কেননা নিজের শরীর থেকে আরম্ভ করে তাদের ভিতর বড়-ছোট, ভাল-মন্দ, উপাদেয় হেয় বলে যে একটা সম্বন্ধ এতকাল ধরে অনুভব করেছি, সেই উচ্চ-নীচ সম্বন্ধটা এখন যেন কোথায় চলে গেছে! আর, সবচেয়ে উপাদেয় বলে এই শরীরটার প্রতি এর আগে যে বোধটা ছিল, সকলের আগে সেইটাই যেন কোথায় লোপ পেয়েছে! ওঁ তৎ সৎ!
আমি আশা করি, তোমরা সকলে লণ্ডনে ও প্যারিসে বহু নূতন অভিজ্ঞতা লাভ করবে—শরীর ও মনের নূতন আনন্দ, নূতন খোরাক পাবে।
তুমি ও মিসেস বুল আমার চিরন্তন ভালবাসা জানবে। ইতি
তোমারই চিরবিশ্বস্ত
বিবেকানন্দ
৪৮৬*
আলামেডা, ক্যালিফোর্নিয়া
২০ এপ্রিল, ১৯০০
প্রিয় জো,
আজ তোমার চিঠি পেলাম। গতকাল তোমাকে চিঠি লিখেছি, কিন্তু তুমি ইংল্যাণ্ডে থাকবে ভেবে চিঠি সেখানের ঠিকানায় পাঠিয়েছি।
মিসেস বেট্স্-কে তোমার বক্তব্য জানিয়েছি। অ—এর সঙ্গে যে ছোটখাট একটা মতান্তর হয়েছে, তার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। তুমি তার যে পত্রখানা পাঠিয়েছ, তাও পেয়েছি। এ পর্যন্ত সে ঠিকই বলেছে, ‘স্বামীজী আমাকে লিখেছেনঃ মিঃ লেগেট বেদান্তে উৎসাহী নন এবং আর সাহায্য করবেন না। তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াও।’ টাকাপয়সার কি করা যাবে, তার এ প্রশ্নের উত্তরে—তোমার ও মিসেস লেগেটের ইচ্ছানুসারে তাকে আমি লস এঞ্জেলেস্ থেকে নিউ ইয়র্কের সংবাদ লিখেছিলাম।
হ্যাঁ, কাজ তার নিজের রূপ নেবেই, কিন্তু মনে হচ্ছে তোমার ও মিসেস বুলের মনে ধারণা যে, এ ব্যাপারে আমার কিছু করা উচিত। কিন্তু প্রথমতঃ অসুবিধা সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না। সেটা যে কি নিয়ে সে কথা তোমরা কেউই আমাকে কিছু লেখনি। অন্যের মনের কথা জেনে নেবার বিদ্যা আমার নেই।
তুমি শুধু সাধারণভাবে লিখেছ যে, অ—নিজের হাতে সব কিছু রাখতে চায়। এ থেকে আমি কি বুঝব? অসুবিধাগুলি কি কি? প্রলয়ের সঠিক তারিখটি সম্বন্ধে আমি যেমন অন্ধকারে, তোমার মতভেদের কারণ সম্বন্ধেও আমি তেমনই অন্ধকারে। অথচ মিসেস বুলের ও তোমার চিঠিগুলিতে যথেষ্ট বিরক্তিভাব। এই সব জিনিষ আমরা না চাইলেও কখনও কখনও জটিল হয়ে পড়ে। এগুলি স্বাভাবিক পরিণতি লাভ করুক।
মিসেস বুলের ইচ্ছানুসারে উইল তৈরী করে মিঃ লেগেটকে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার শরীর একরূপ চলে যাচ্ছে, কখনও ভাল আছি, কখনও মন্দ। মিসেস মিল্টনের চিকিৎসায় আমি কিছুমাত্র উপকৃত হয়েছি, এ-কথা ঠিক বলতে পারি না। তিনি আমায় ভাল করতে চেয়েছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। তাঁকে আমার প্রীতি জানাচ্ছি। আশা করি, তিনি অন্য লোকের উপকার করতে পারবেন।
এই কথাগুলি মিসেস বুলকে লেখার জন্য তাঁর কাছ থেকে চার-পাতার এক চিঠি পেয়েছি; তাতে কিভাবে আমার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, কিভাবে ধন্যবাদ জানান উচিত, সেই সব সম্বন্ধে লম্বা উপদেশ।
অ—এর ব্যাপার থেকে নিশ্চয়ই এ-সবের উৎপত্তি!
স্টার্ডি ও মিসেস জনসন মার্গটের জন্য বিচলিত হয়ে আমার কঠোর সমালোচনা করেছে। এখন আবার অ—মিসেস বুলকে বিচলিত করেছে এবং তার ধাক্কাও আমাকে সামলাতে হচ্ছে। এই হল জীবন!
তুমি ও মিসেস লেগেট চেয়েছিলে আমি তাকে স্বাধীন ও আত্মনির্ভর হতে লিখি—এ-কথা লিখি যে, মিঃ লেগেট তাকে আর সাহায্য করবেন না। আমি তাই লিখেছি। এখন আমি আর কি করতে পারি?
যদি কেউ (John and Jack) তোমার কথা না শোনে, তা হলে তার জন্য কি আমাকে ফাঁসি যেতে হবে? এই বেদান্ত সোসাইটি সম্বন্ধে আমি কি জানি? আমি কি সেটা আরম্ভ করেছিলাম? তাতে কি আমার কোন হাত ছিল? তদুপরি, ব্যাপারটা যে কি, সে সম্বন্ধে দু-কলম লেখবার মনও কারও হয়নি।
বাস্তবিক, এ দুনিয়া খুব একটা মজা!
মিসেস লেগেট দ্রত আরোগ্যলাভ করছেন জেনে আনন্দিত। তাঁর সম্পূর্ণ রোগমুক্তির জন্য আমি নিরন্তর প্রার্থনা করি। সোমবার চিকাগো যাত্রা করব। এক সহৃদয় মহিলা নিউ ইয়র্কের এমন একখানা পাস (Railway pass) আমাকে দিয়েছেন, যা তিনমাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। ‘মা’-ই আমাকে দেখবেন। সারা জীবন আগলে থাকার পরে তিনি নিশ্চয়ই এখন আমাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দেবেন না। ইতি
তোমাদের চিরকৃতজ্ঞ
বিবেকানন্দ
৪৮৭*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
২৩ এপ্রিল, ১৯০০
প্রিয় মেরী,
আজই আমার যাত্রা করা উচিত ছিল, কিন্তু ঘটনাচক্রে যাত্রার পূর্বে ক্যালিফোর্নিয়ার বিশাল রেড-উড বৃক্ষরাশির নীচে তাঁবুতে বাস করার লোভ আমি সংবরণ করতে পারলাম না। তাই তিন-চার দিনের জন্য যাত্রা স্থগিত রাখলাম। তা ছাড়া অবিরাম কাজের পরে এবং চারদিনের হাড়ভাঙা ভ্রমণে বেরোবার আগে ঈশ্বরের মুক্ত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন আমার ছিল।
‘মেরী-পিসী’র সঙ্গে পনর দিনের মধ্যে দেখা করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা রাখবার জন্য তাগিদ দিয়ে মার্গট চিঠি লিখেছে। কথা আমি রাখব, তবে পনর দিনের জায়গায় বিশ দিন হবে, এই যা। এতে চিকাগোয় এখন যে বিশ্রী তুষার-ঝড় চলছে, তার হাত এড়াতে পারব, অধিকন্তু কিছু শক্তিসঞ্চয় করে নেব।
মার্গট দেখা যাচ্ছে মেরী-পিসীর দারুণ অনুরাগী।
আগামী কাল বনের দিকে যাত্রা করছি। উফ্! চিকাগো যাবার আগে ফুসফুস ওজোন (ozone)-এ ভরে নেব। ইতোমধ্যে চিকাগোয় আমার নামে ডাক এলে রেখে দিও, লক্ষ্মী-মেয়েটির মত সেগুলি যেন আবার এখানে পাঠিয়ে দিও না।
কাজ শেষ করে ফেলেছি। রেলভ্রমণের ধকলের আগে শুধু কয়েকদিনের—তিন কি চার দিনের—বিশ্রামের জন্য বন্ধুরা পীড়াপীড়ি করছেন।
এখান থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত তিন মাস মেয়াদের একটি ফ্রী পাস (Free pass) পেয়েছি; ঘুমের কামরার খরচা ছাড়া আর কিছু খরচা নেই; অতএব, বুঝতেই পারছ—মুক্ত, মুক্ত (Free, free)!
তোমাদের স্নেহশীল
বিবেকানন্দ
৪৮৮*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
৩০ এপ্রিল, ১৯০০
প্রিয় মেরী,
আকস্মিক অসুস্থতা ও জ্বরের জন্য এখনও চিকাগো যাত্রা করতে পারিনি। দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল সহ্য করার মত বল পেলেই রওনা হব। মার্গটের কাছ থেকে সেদিন একখানা চিঠি পেয়েছি। তাকে আমার ভালবাসা দিও। তুমি আমার চিরন্তন ভালবাসা নিও। হ্যারিয়েট কোথায়? এখনও কি চিকাগোতেই? আর ম্যাক্কিণ্ডলি বোনেরা? সকলকে আমার ভালবাসা।
বিবেকানন্দ
৪৮৯*
[মিসেস ব্লজেটকে লিখিত]২৪
২ মে, ১৯০০
আপনার অত্যন্ত সহৃদয় পত্রখানি পেয়েছি। ছ-মাসের কঠোর পরিশ্রমের জন্য আবার স্নায়ুরোগে ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শয্যাগত আছি। যা হোক, দেখলাম আমার কিডনি ও হার্ট আগের মতই ভাল আছে। কয়েকদিনের জন্য গ্রামাঞ্চলে বিশ্রাম নিতে যাচ্ছি, তারপরই চিকাগো রওনা হব।
মিসেস মিলওয়ার্ড এডাম্স্কে (Mrs. Milward Adams) এইমাত্র চিঠি লিখেছি এবং আমার কন্যা মিস নোবল্কেও একখানা পরিচয়পত্র দিয়েছি, যাতে সে মিস এডাম্স্-এর সঙ্গে গিয়ে দেখা করে এবং কাজ সম্বন্ধে তাঁকে যাবতীয় জ্ঞাতব্য তথ্য জানায়।
স্নেহময়ী মা আমার, ভগবানের আশীর্বাদ ও শান্তি আপনি লাভ করুন। আমিও একটু শান্তি চাই, খুবই চাই, আমার জন্য প্রার্থনা করুন। কেটকে ভালবাসা।
বিবেকানন্দ
পুঃ—মিস স্পেন্সার প্রভৃতি বন্ধুদের ভালবাসা। ট্রিকসের মাথায় রাশি রাশি আদরের চাপড়।
বি
৪৯০*
২ মে, ১৯০০
স্নেহের নিবেদিতা,
আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম—মাসখানেক ধরে কঠোর পরিশ্রমের ফলে আবার রোগের আক্রমণ হয়েছিল। যাই হোক, এতে আমি এইটুকু বুঝতে পেরেছি যে, আমার হার্ট বা কিডনিতে কোন রোগ নাই, শুধু অতিরিক্ত পরিশ্রমে স্নায়ুগুলি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সুতরাং আজ কিছু দিনের জন্য পল্লী অঞ্চলে যাচ্ছি এবং শরীর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ওখানেই থাকব; আশা করি, শীঘ্রই শরীর সুস্থ হয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে প্লেগের খবর ইত্যাদিতে ভরা কোন ভারতীয় চিঠি আমি পড়তে চাই না। আমার সব ডাক (mail) মেরীর কাছে যাচ্ছে। আমি যতক্ষণ ফিরে না আসছি, ততক্ষণ মেরীর অথবা মেরী চলে গেলে তোমারই কাছে ঐসব থাকুক। আমি সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে চাই। জয় মা!
মিসেস হাণ্টিংটন নামে একজন প্রচুর বিত্তশালিনী মহিলা আমায় কিছু সাহায্য করেছিলেন; তিনি তোমার সঙ্গে দেখা করতে ও তোমায় সাহায্য করতে চান। তিনি ১ জুনের মধ্যেই নিউ ইয়র্কে আসবেন। তাঁর সঙ্গে দেখা না করে চলে যেও না যেন। আমি যদি সময়মত উপস্থিত থাকতে না পারি, তাঁর নামে তোমাকে একখানি পরিচয়পত্র পাঠিয়ে দেব।
মেরীকে আমার ভালবাসা জানিও। আমি দিন-কয়েকের মধ্যেই যাচ্ছি। ইতি
সতত শুভানুধ্যায়ী
তোমাদের বিবেকানন্দ
পুঃ—সঙ্গের চিঠিখানি তোমাকে মিসেস এডাম্সের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য লিখলাম। তিনি জজ এডাম্সের স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করবে। এর ফলে হয়তো অনেক কাজ হবে। তিনি খুব পরিচিতা—তাঁর ঠিকানা খুঁজে বের কর। ইতি
বি
৪৯১*
সান ফ্রান্সিস্কো
২৬ মে, ১৯০০
স্নেহের নিবেদিতা,
আমার অনন্ত আশীর্বাদ জেনো এবং কিছুমাত্র নিরাশ হয়ো না। শ্রী ওয়া গুরু, শ্রী ওয়া গুরু। ক্ষত্রিয়-শোণিতে তোমার জন্ম। আমাদের অঙ্গের গৈরিক বাস তো যুদ্ধক্ষেত্রের মৃত্যুসজ্জা! ব্রত-উদ্যাপনে প্রাণপাত করাই আমাদের আদর্শ, সিদ্ধির জন্য ব্যস্ত হওয়া নয়। শ্রী ওয়া গুরু।
অশুভ অদৃষ্টের আবরণ তো দুর্ভেদ্য কালো। কিন্তু আমিই সর্বময় প্রভু! যে মুহূর্তে আমি ঊর্ধ্বে হাত তুলি—সেই মুহূর্তেই ঐ তমসা অন্তর্হিত হয়ে যায়। এসবই অর্থহীন, এবং ভীতিই এদের জনক। আমি ভয়েরও ভয়, রুদ্রেরও রুদ্র। আমি অভীঃ, অদ্বিতীয়, এক। আমি অদৃষ্টের নিয়ামক, আমি কপালমোচন। শ্রী ওয়া গুরু। দৃঢ় হও, মা! কাঞ্চন কিম্বা অন্য কিছুর দাস হয়ো না, তবেই সিদ্ধি আমাদের সুনিশ্চিত।
বিবেকানন্দ
৪৯২*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
1921 W 21 Street
লস এঞ্জেলেস্
১৭ জুন, ১৯০০
প্রিয় মেরী,
সত্যি আমি অনেকটা ভাল, কিন্তু সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করিনি। যাই হোক না কেন, যারা ব্যারামে ভোগে, তাদের প্রত্যেকেরই মানসিক অবস্থা এরূপ হয়।
কালী-উপাসনা ধর্মের কোন অপরিহার্য সোপান নয়। ধর্মের যাবতীয় তত্ত্বই উপনিষদ্ থেকে পাওয়া যায়। কালী-উপাসনা আমার বিশেষ খেয়াল; আমাকে এর প্রচার করতে তুমি কোন দিন শোননি, বা ভারতেও তা প্রচার করেছি বলে পড়নি। সকল মানবের পক্ষে যা কল্যাণকর, আমি তাই প্রচার করি। যদি কোন অদ্ভুত প্রণালী থাকে, যা শুধু আমার পক্ষেই খাটে, তা আমি গোপন রেখে দিই এবং সেখানেই তার ইতি। কালী-উপাসনা কি বস্তু, সে তোমার কাছে কোন মতেই ব্যাখ্যা করব না, কারণ কখনও কারও কাছে তা করিনি।
তুমি যদি মনে করে থাক যে হিন্দুরা ‘বসু’দের২৫ পরিত্যাগ করেছে, তা হলে সম্পূর্ণ ভুল করেছ। ইংরেজ শাসকগণ তাঁকে কোণঠাসা করতে চায়। ভারতীয়দের মধ্যে ঐ ধরনের উন্নতি তারা কোন মতেই চায় না। তারা তাঁর পক্ষে জায়গাটা অসহ্য করে তুলেছে, সে জন্য তিনি অন্যত্র যেতে চাইছেন।
‘অ্যাংগ্লিসাইজ্ড’ (anglicised) কথাটার দ্বারা সেই সকল লোকদেরই বোঝায়, যারা তাদের স্বভাব ও আচরণের দ্বারা দেখিয়ে দেয় যে, তারা আমাদের—দরিদ্র ও সেকেলে হিন্দুদের—জন্য লজ্জিত। আমি আমার জন্ম, জাতি বা জাতীয় চরিত্রের জন্য লজ্জিত নই। এ-ধরনের লোককে যে হিন্দুরা পছন্দ করবে না, এতে আমি আশ্চর্য নই।
খাঁটি উপনিষদের তত্ত্ব ও নীতিই আমাদের ধর্ম, তাতে আচার-অনুষ্ঠান, প্রতীক ইত্যাদির কোন স্থান নেই। অনেকে মনে করে, আচার-অনুষ্ঠানাদি তাদের ধর্মানুভূতির সহায়তা করে। তাতে আমার আপত্তি নেই।
শাস্ত্র, আচার্য, প্রত্যাদিষ্ট পুরুষ অথবা ত্রাণকর্তাদের উপর ধর্ম নির্ভর করে না। এই ধর্ম ইহজীবনে বা অন্য কোন জীবনে অপরের উপর আমাদের নির্ভরশীল করে তোলে না। এই অর্থে উপনিষদের অদ্বৈতবাদই একমাত্র ধর্ম। তবে শাস্ত্র, অনুষ্ঠান, প্রেরিত পুরুষ বা ত্রাণকর্তাদেরও স্থান আছে। সেগুলি অনেককে সাহায্য করতে পারে, যেমন কালী-উপাসনা আমাকে আমার ‘ঐহিক কাজে’ সাহায্য করে। এগুলি স্বাগত।
তবে ‘গুরু’ একটি স্বতন্ত্র ভাব। শক্তির সঞ্চারক ও গ্রহীতার মধ্যে যে সম্বন্ধ, এ হল তাই, এখানে তা আত্মিক শক্তি ও জ্ঞান। শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রত্যেক জাতির একটি নির্দিষ্ট আদর্শ আছে। প্রত্যেক জাতিই অন্য জাতির ভাবধারা প্রতিনিয়ত নিজের ধাঁচের মধ্যে অর্থাৎ তার জাতীয় স্বভাবের মধ্যে গ্রহণ করে তাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছে। কোন জাতির নির্দিষ্ট আদর্শ ধ্বংস করার সময় এখনও হয়নি। শিক্ষা যে-কোন সূত্র থেকেই আসুক না কেন, যে-কোন দেশের শিক্ষাদর্শের সঙ্গে তার ভাবসামঞ্জস্য আছে; কেবল তাকে গ্রহণ করবার সময়ে জাতীয় ভাবাপন্ন করে নিতে হবে অর্থাৎ সে শিক্ষা যেন জাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের অনুগামী হয়।
ত্যাগই হল প্রত্যেক জাতির চিরন্তন আদর্শ। অন্য জাতিগুলি কেবল জানে না যে, প্রকৃতি অজান্তে তাদের দ্বারা কি করিয়ে নিচ্ছে। যুগ যুগ ধরে এই একই উদ্দেশ্য নিশ্চিতভাবে কাজ করে চলেছে। এ পৃথিবী ও সূর্যের ধ্বংসের সঙ্গেই এই উদ্দেশ্যেরও শেষ হবে! আর পৃথিবীর নিত্য প্রগতি হচ্ছে বটে, না! আর অসীম জগতের কোথাও কেউই এ যাবৎ উন্নত হয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা আদানপ্রদান করছে না! বাজে কথা! তারা জন্মায়, একই বাহ্যরূপ দেখায় এবং একভাবেই মরে! ক্রমবর্ধমান উদ্দেশ্য বটে! শিশুগণ, তোমরা স্বপ্নরাজ্যে বাস কর!
এবার নিজের কথা। হ্যারিয়েট যাতে প্রতি মাসে আমাকে কয়েক ডলার করে দেয়, তুমি নিশ্চয়ই সে বিষয়ে তাকে রাজী করাবে, এবং অন্য কয়েকজন বন্ধুর দ্বারাও তাকে রাজী করাবার চেষ্টা করব, যদি সফল হই, তাহলে ভারতে চলে যাচ্ছি। জীবিকার জন্য এইসব মঞ্চ-বক্তৃতার কাজ করে করে আমি একেবারে ক্লান্ত। এ কাজ আমার আর ভাল লাগছে না। অবসর নিয়ে লেখবার ইচ্ছা, দেখি যদি কিছু গভীর চিন্তার কাজ করতে পারি।
শীঘ্রই চিকাগো যাচ্ছি, কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে পৌঁছব, আশা করি।
মেরী, আশাবাদে এমন মেতে উঠছি যে, যদি ডানা থাকত হিমালয়ে উড়ে যেতাম!
মেরী, সারা জীবন আমি জগতের জন্য খেটেছি, কিন্তু সে জগৎ আমার দেহের এক খাবলা মাংস কেটে না নেওয়া পর্যন্ত এক টুকরো রুটিও আমাকে ছুঁড়ে দেয়নি।
দিনে এক টুকরো রুটি জুটলেই আমি পরিপূর্ণ অবসর নিই; কিন্তু তা অসম্ভব—।
সতত প্রভুসমীপে তোমার
বিবেকানন্দ
পুনঃ—বস্তুর অসারতা যদি কারও কাছে ধরা পড়ে থাকে, সে মানুষ এখন আমি। এইতো জগতের চেহারা—একটা কদর্য পশুর মৃতদেহ। যে মনে করে, এ জগতের উপকার করব, সে একটা আহাম্মক। তবে ভাল হোক, মন্দ হোক, কাজ আমাদের করে যেতে হবে—আমাদের বন্ধন ঘোচাবার জন্য। আশা করি, সে কাজ আমি করেছি। এখন প্রভু আমাকে অপর পারে নিয়ে চলুন। তাই হোক, প্রভু তাই হোক। ভারত বা অন্য কোন দেশের জন্য চিন্তা আমি ত্যাগ করেছি। এখন আমি স্বার্থপর, নিজের মুক্তি চাই।
‘যিনি ব্রহ্মাকে প্রথম সৃষ্টি করেছেন, এবং তাঁর কাছে বেদসকল প্রকাশ করেছেন, যিনি সকলের হৃদয়ে বিরাজমান, বন্ধনমুক্তির আশা করে তাঁর কাছে আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি।’২৬
৪৯৩*
নিউ ইয়র্ক
২০ জুন, ১৯০০
প্রিয় নিবেদিতা,
… মহামায়া আবার সদয় হয়েছেন বলে বোধ হয়, আর চক্র ধীরে ধীরে উপর দিকে উঠছে।
তোমাদের
বিবেকানন্দ
৪৯৪*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
বেদান্ত সোসাইটি
146 E 55th Street, নিউ ইয়র্ক
২৩ জুন, ১৯০০
প্রিয় মেরী,
তোমার সুন্দর চিঠিখানির জন্য ধন্যবাদ। খুব ভাল আছি, সুখী আছি—যেমন থাকি। জোয়ারের আগে ঢেউ আসবেই। আমার বেলায়ও তাই। তুমি যে প্রার্থনা করতে যাচ্ছ, তার জন্য আনন্দিত। মেথডিষ্টদের একটা শিবির-সভা ডাক না কেন? তাতে আরও তাড়াতাড়ি ফল হবে নিশ্চয়।
সব রকম ভাবালুতা ও আবেগ দূর করতে আমি বদ্ধপরিকর, আমাকে আর কখনও আবেগ বিহ্বল হতে দেখলে আমার গলায় দড়ি দিও। আমি হলাম অদ্বৈতবাদী; জ্ঞান আমাদের লক্ষ্য—ভাবাবেগ নয়, ভালবাসা নয়, কিছু নয়—কারণ ঐসব জিনিষ ইন্দ্রিয় বা কুসংস্কার বন্ধনের অন্তর্ভুক্ত। আমি সৎস্বরূপ, চিৎস্বরূপ।
গ্রীনএকারে তুমি নিশ্চই বিশ্রামের সুযোগ পাবে। সেখানে আনন্দে ভরপুর হয়ে থাক—এই চাই। আমার জন্য মুহূর্তের দুশ্চিন্তাও কর না। ‘মা’ আমাকে দেখছেন। ভাবাবেগের নরক থেকে তিনি আমাকে উদ্ধার করে আনছেন, উত্তীর্ণ করে দিচ্ছেন বিশুদ্ধ যুক্তিবিচারের আলোকে। তুমি সুখী হও, এই আমার সতত শুভেচ্ছা।
তোমার ভ্রাতা
বিবেকানন্দ
পুনঃ—মার্গট ২৬ তারিখে যাত্রা করবে। সপ্তাহখানেক বা সপ্তাহ-দুয়েক পরে আমিও যেতে পারি। আমার উপরে কারও কোন অধিকার নেই, কারণ আমি আত্মস্বরূপ। কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমার নেই।
বি
তোমার চিঠিটা হজম করতে পারিনি, কারণ গত কয়েকদিন অজীর্ণতা কিছু বেশী রকম ছিল।
বি
সর্ববসময়ে আমার অনাসক্তি বিদ্যমান ছিলই। এক মুহূর্তেই আবার তা এসে গিয়েছে। শীঘ্রই আমি এমন জায়গায় দাঁড়াচ্ছি, যেখানে কোন ভাবালুতা বা হৃদয়াবেগ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
বি