১১১*
যুক্তরাষ্ট্র, আমেরিকা
৩১ অগষ্ট, ১৮৯৪
প্রিয় আলাসিঙ্গা,
এইমাত্র আমি ‘বষ্টন ট্রান্সক্রিপ্ট’-এ মান্দ্রাজের সভার প্রস্তাবগুলি অবলম্বন করে একটি সম্পাদকীয় প্রবন্ধ দেখলাম। আমার নিকট ঐ প্রস্তাবগুলির কিছুই পৌঁছায়নি। যদি তোমরা ইতিপূর্বেই পাঠিয়ে থাকো, তবে শীঘ্রই পৌঁছবে। প্রিয় বৎস, এ পর্যন্ত তোমরা অদ্ভুত কর্ম করেছ। কখনও কখনও একটু ঘাবড়ে গিয়ে যা লিখি, তাতে কিছু মনে কর না। মনে করে দেখ, দেশ থেকে ১৫,০০০ মাইল দূরে একলা রয়েছি—গোঁড়া শত্রুভাবাপন্ন খ্রীষ্টানদের সঙ্গে আগাগোড়া লড়াই করে চলতে হয়েছে—এতে কখনও কখনও একটু ঘাবড়ে যেতে হয়। হে বীরহৃদয় বৎস, এইগুলি মনে রেখে কাজ করে যাও। বোধ হয় ভট্টাচার্য মহাশয়ের কাছ থেকে শুনেছ, জি. জি.-র কাছ থেকে একখানি সুন্দর পত্র পেয়েছিলাম। এমন করে ঠিকানাটা লিখেছিল যে, আমি মোটেই বুঝতে পারিনি। তাইতে তার কাছে সাক্ষাৎভাবে জবাব দিতে পারিনি। তবে সে যা যা চেয়েছিল, আমি সব করেছি—আমার ফটোগ্রাফগুলি পাঠিয়েছি ও মহীশূরের রাজাকে পত্র লিখেছি। আমি খেতড়ির রাজাকে একটা ফনোগ্রাফ পাঠিয়েছি, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে প্রাপ্তিস্বীকার-পত্র এখনও পাইনি। খবরটা নিও তো। আমি কুক এণ্ড সন্স, র্যামপার্ট রো, বোম্বাই ঠিকানায় তা পাঠিয়েছি। ঐ সম্বন্ধে সব খবর জিজ্ঞাসা করে রাজাকে একখানা পত্র লিখো। ৮ই জুন তারিখে লেখা রাজার একখানা পত্র পেয়েছি। যদি ঐ তারিখের পর কিছু লিখে থাকেন, তা এখনও পাইনি।
আমার সম্বন্ধে ভারতের কাগজে যা কিছু বেরোবে সেই কাগজখানাই আমায় পাঠাবে। আমি কাগজটাতেই তা পড়তে চাই—বুঝলে? চারুচন্দ্রবাবু, যিনি আমার প্রতি খুব সহৃদয় ব্যবহার করেছেন, তাঁর সম্বন্ধে বিস্তারিত লিখবে। তাঁকে আমার হৃদয়ের ধন্যবাদ জানাবে, কিন্তু—(চুপি চুপি বলছি) দুঃখের বিষয় তাঁর কথা আমার কিছু মনে পড়ছে না। তুমি তাঁর সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ আমায় জানাবে কি? থিওসফিষ্টরা এখন আমায় পছন্দ করছে বটে, কিন্তু এখানে তাদের সংখ্যা সর্বসুদ্ধ ৬৫০ জন মাত্র। তারপর ক্রিশ্চান সায়েণ্টিস্টরা আছেন, তাঁরা সকলেই আমায় পছন্দ করেন। তাঁদের সংখ্যা প্রায় দশ লক্ষ হবে। আমি উভয় দলের সঙ্গেই কাজ করি বটে, কিন্তু কারও দলে যোগ দিই না, আর ভগবৎকৃপায় উভয় দলকেই ঠিক পথে গড়ে তুলব, কারণ তারা কতকগুলো আধা-উপলব্ধ সত্য কপচাচ্ছে বৈ তো নয়।
এই পত্র তোমার কাছে পৌঁছবার পূর্বেই আশা করি নরসিংহ টাকাকড়ি ইত্যাদি সব পাবে।
আমি ‘ক্যাটের’ কাছ থেকে এক পত্র পেলাম, কিন্তু তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একখানা বই লিখতে হয়, সুতরাং তোমার এই পত্রের মধ্যেই তাকে আশীর্বাদ জানাচ্ছি, আর তোমায় স্মরণ করিয়ে দিতে বলছি যে, আমাদের উভয়ের মতামত বিভিন্ন হলেও তাতে কিছু এসে যাবে না—সে একটা বিষয় একভাবে দেখছে, আমি না হয় আর একভাবে দেখছি, এই এক জিনিষকে বিভিন্নভাবে দেখা স্বীকার করে নিলেই তো আমাদের উভয়ের ভাবের এক রকম সমন্বয় হল। সুতরাং বিশ্বাস সে যাই করুক, তাতে কিছু এসে যায় না—কাজ করুক।
বালাজী, জি. জি., কিডি, ডাক্তার ও আমাদের সব বন্ধুকে আমার ভালবাসা জানাবে, আর যে-সকল স্বদেশহিতৈষী মহাত্মা তাঁদের দেশের জন্য মতবিভিন্নতা গ্রাহ্য না করে সাহসের ও মহৎ অন্তঃকরণের পরিচয় দিয়েছেন, তাঁদেরও আমার হৃদয়ের অগাধ ভালবাসা জানাবে।
একটি ছোটখাট সমিতি প্রতিষ্ঠা কর, তার মুখপত্রস্বরূপ একখানা সাময়িক পত্র বার কর—তুমি তার সম্পাদক হও। কাগজটা বার করবার ও কাজটা আরম্ভ করে দেবার জন্য খুব কমপক্ষে কত খরচা পড়ে, হিসেব করে আমায় জানাবে, আর সমিতিটার নাম ও ঠিকানা জানাবে। আমি তা হলে তার জন্যে টাকা পাঠাব—শুধু তাই নয়, আমেরিকার আরও অনেককে ধরে তাঁরা যাতে বছরে মোটা চাঁদা দেন, তা করব। কলিকাতায়ও ঐ রকম করতে বল। আমাকে ব—র ঠিকানা পাঠাবে। সে বেশ ভাল ও মহৎ লোক। সে আমাদের সঙ্গে মিশে বেশ সুন্দর কাজ করবে।
তোমাকে সমস্ত জিনিষটার ভার নিতে হবে, সর্দার হিসাবে নয়, সেবকভাবে—বুঝলে? এতটুকু কর্তৃত্বের ভাব দেখালে লোকের মনে ঈর্ষার ভাব জেগে উঠবে—তাতে সব মাটি হয়ে যাবে। যে যা বলে, তাইতে সায় দিয়ে যাও; কেবল চেষ্টা কর—আমার সব বন্ধুদের একসঙ্গে জড়ো করে রাখতে। বুঝলে? আর আস্তে আস্তে কাজ করে তার উন্নতির চেষ্টা কর। জি.জি. ও অন্যান্য যাদের এখনই রোজগার করবার প্রয়োজন নেই, তারা এখন যেমন করছে তেমনি করে যাক অর্থাৎ চারিদিকে ভাব ছড়াক। জি.জি. মহীশূরে বেশ কাজ করছে। এই রকমই তো করতে হবে। মহীশূর কালে আমাদের একটা বড় আড্ডা হয়ে দাঁড়াবে।
আমি এখন আমার ভাবগুলি পুস্তকাকারে লিপিবদ্ধ করব ভাবছি—তারপর আগামী শীতে সারা দেশটা ঘুরে সমিতি স্থাপন করব। এ একটা মস্ত কার্যক্ষেত্র, আর এখানে যত কাজ হতে থাকবে, ততই ইংলণ্ড এই ভাব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হবে। হে বীরহৃদয় বৎস, এতদিন পর্যন্ত বেশ কাজ করেছ। প্রভু তোমাদের ভেতর সব শক্তি দিবেন।
আমার হাতে এখন ৯০০০৲ টাকা আছে—তার কতকটা ভারতের কাজ আরম্ভ করে দেবার জন্য পাঠাব, আর এখানে অনেককে ধরে তাদের দিয়ে বাৎসরিক ও ষাণ্মাসিক বা মাসিক হিসাবে টাকাকড়ি পাঠাবার বন্দোবস্ত করব। এখন তুমি সমিতিটা খুলে ফেল ও কাগজটা বের করে দাও এবং আর আর আনুষঙ্গিক বা আবশ্যক, তার তোড়জোড় কর। এ ব্যাপারটা খুব অল্প লোকের ভেতর গোপন রেখো; সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু মান্দ্রাজে একটা মন্দির করবার জন্য মহীশূর ও অন্যান্য স্থান থেকে টাকা তোলবার চেষ্টা কর—তাতে একটা পুস্তকালয় থাকবে, অফিস ও ধর্মপ্রচারকদের অর্থাৎ যদি কোন সন্ন্যাসী বা বৈরাগী এসে পড়ে, তাদের জন্য কয়েকটা ঘর থাকবে। এইরূপে আমরা ধীরে ধীরে কাজে অগ্রসর হব।
সদা স্নেহাবদ্ধ
বিবেকানন্দ
পুঃ—তুমি তো জান টাকা রাখা—এমন কি, টাকা ছোঁয়া পর্যন্ত আমার পক্ষে বড় মুশকিল। উহা আমার পক্ষে বেজায় বিরক্তিকর আর ওতে মনকে বড় নীচু করে দেয়। সেই কারণে কাজের দিকটা এবং টাকাকড়ি-সংক্রান্ত ব্যাপারটার বন্দোবস্ত করবার জন্য তোমাদিগকে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে একটা সমিতি স্থাপন করতেই হবে। এখানে আমার যে-সব বন্ধু আছেন, তাঁরাই আমার সব টাকাকড়ির বন্দোবস্ত করে থাকেন—বুঝলে? এই ভয়ানক টাকাকড়ির হাঙ্গামা থেকে রেহাই পেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচব। সুতরাং যত শীঘ্র তোমরা সঙ্ঘবদ্ধ হতে পার এবং তুমি সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ হয়ে আমার বন্ধু ও সহায়কদের সঙ্গে সাক্ষাৎভাবে পত্রাদি ব্যবহার করতে পার, ততই তোমাদের ও আমার—উভয় পক্ষের মঙ্গল। এইটি শীগগির করে ফেলে আমাকে লেখো। সমিতির একটা অসাম্প্রদায়িক নাম দিও—আমার মনে হচ্ছে ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ নামটা হলে মন্দ হয় না। ঐ নামটা দিলে তাতে হিন্দুদের মনে কোন আঘাত না দিয়ে বৌদ্ধদেরও আমাদের দিকে আকৃষ্ট করবে। ‘প্রবুদ্ধ’ শব্দটার ধ্বনিতেই (‘প্র+বুদ্ধ’) ‘বুদ্ধের’ অর্থাৎ গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে ‘ভারত’ জুড়লে হিন্দুধর্মের সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের সম্মিলন বোঝাতে পারে। যাই হোক, আমাদের সকল বন্ধুদের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ কর—তাঁরা যা ভাল বিবেচনা করেন।
মঠে আমার গুরুভাইদেরও এইরূপে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজকর্ম করতে বলবে, তবে টাকাকড়ির কাজ সব তোমাকেই করতে হবে। তাঁরা সন্ন্যাসী, তাঁরা টাকাকড়ি ঘাঁটা পছন্দ করবেন না। আলাসিঙ্গা, জেনে রেখো ভবিষ্যতে তোমায় অনেক বড় বড় কাজ করতে হবে। অথবা তুমি যদি ভাল বোঝ, কতকগুলি বড়লোককে ধরে তাদের রাজী করিয়ে সমিতির কর্মকর্তারূপে তাদের নাম প্রকাশ করবে। আসল কাজ করতে হবে তোমাকে—তাদের নামে অনেক কাজ হবে। তোমার যদি সাংসারিক কাজকর্ম খুব বেশী থাকে এবং তার দরুন যদি এ-সব করবার তোমার সময় না থাকে, তবে জি. জি. সমিতির এই বৈষয়িক দিকটার ভার নিক—আর আমি আশা করি, পেট চালাবার জন্যে যাতে কলেজের কাজের ওপর তোমায় নির্ভর না করতে হয়, তার চেষ্টা করব। তা হলে তুমি নিজে উপোস না করে আর পরিবারদের উপোস না করিয়ে সর্বান্তঃকরণে এই কাজে নিযুক্ত হতে পারবে। কাজে লাগো, বৎস, কাজে লাগো। কাজের কঠিন ভাগটা অনেকটা সিধে হয়ে এসেছে। এখন প্রতি বৎসর কাজ গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যাবে। আর তোমরা যদি কোনরকমে কাজটা চালিয়ে যেতে পার, তাহলে আমি ভারতে ফিরে গেলে কাজের দ্রুত উন্নতি হতে থাকবে। তোমরা যে এতদূর করেছ, এই ভেবে খুব আনন্দ কর। যখন মনে নিরাশ ভাব আসবে, তখন ভেবে দেখো, এক বছরের ভেতর কত কাজ হয়েছে। আমরা নগণ্য অবস্থা থেকে উঠেছি—এখন সমগ্র জগৎ আমাদের দিকে আশায় চেয়ে রয়েছে। শুধু ভারত নয়, সমগ্র জগৎ আমাদের কাছ থেকে বড় বড় জিনিষ আশা করছে। নির্বোধ মিশনরীরা, ম— ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিগণ কেহই সত্য, প্রেম ও অকপটতার শক্তিকে বাধা দিতে পারবে না। তোমাদের কি মন মুখ এক হয়েছে? তোমরা কি মৃত্যুভয় পর্যন্ত তুচ্ছ করে নিঃস্বার্থভাবে থাকতে পার? তোমাদের হৃদয়ে প্রেম আছে তো? যদি এইগুলি তোমাদের থাকে, তবে তোমাদের কোন কিছুকে—এমন কি মৃত্যুকে পর্যন্ত ভয় করবার দরকার নেই। এগিয়ে যাও, বৎসগণ। সমগ্র জগৎ জ্ঞানালোক চাইছে—উৎসুক নয়নে তার জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কেবল ভারতেই সে জ্ঞানালোক আছে—ইন্দ্রজাল, মূক অভিনয় বা বুজরুকিতে নয়, আছে প্রকৃত ধর্মের মর্মকথায়, উচ্চতম আধ্যাত্মিক সত্যের মহিমময় উপদেশে। জগৎকে সেই শিক্ষার ভাগী করবার জন্যই প্রভু এই জাতটাকে নানা দুঃখদুর্বিপাকের মধ্যে দিয়েও আজ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখন সময় হয়েছে। হে বীরহৃদয় যুবকগণ, তোমরা বিশ্বাস কর যে, তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। কুকুরের ‘ঘেউ ঘেউ’ ডাকে ভয় পেও না—এমন কি আকাশ থেকে প্রবল বজ্রাঘাত হলেও ভয় পেও না—খাড়া হয়ে ওঠ, ওঠ, কাজ কর।
তোমাদের
বিবেকানন্দ
১১২*
[মিঃ ল্যাণ্ডস্বার্গকে৬১ লিখিত]
বেল ভিউ হোটেল, বষ্টন
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
অভিন্নহৃদয়েষু,
তুমি কিছু মনে করিও না, গুরু হিসাবে তোমাকে উপদেশ দিবার অধিকার আমার আছে বলিয়াই আমি জোর করিয়া বলিতেছি যে, তুমি নিজের ব্যবহারের জন্য কিছু বস্ত্রাদি অবশ্য ক্রয় করিবে, কারণ এগুলির অভাব এদেশে কোন কাজ করার পক্ষে তোমার প্রতিবন্ধকস্বরূপ হইয়া দাঁড়াইবে। একবার কাজ শুরু হইয়া গেলে অবশ্য তুমি ইচ্ছামত পোষাক পরিধান করিতে পার, তাহাতে কেহ কোন আপত্তি করিবে না।
আমাকে ধন্যবাদ দিবার কোন প্রয়োজন নাই, কারণ ইহা আমার কর্তব্যমাত্র। হিন্দু আইন অনুসারে শিষ্যই সন্ন্যাসীর উত্তরাধিকারী, যদি সন্ন্যাসগ্রহণের পূর্বে তাহার কোন পুত্রও জন্মিয়া থাকে, তথাপি সে উত্তরাধিকারী নহে। এ সম্বন্ধ খাঁটি আধ্যাত্মিক সম্বন্ধ—ইয়াঙ্কির ‘অভিভাবকগিরি’ ব্যবসা নহে, বুঝিতেই পারিতেছ।
তোমার সাফল্যের জন্য প্রার্থনা ও আশীর্বাদ করি। ইতি
তোমাদের
বিবেকানন্দ
১১৩*
[মিস মেরী হেলকে লিখিত]
হোটেল বেল ভিউ
বীকন ষ্ট্রীট, বষ্টন
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
প্রিয় ভগিনী,
আজ সকালে তোমার প্রীতিপূর্ণ পত্রখানি পেলাম। প্রায় সপ্তাহখানেক হল এই হোটেলে আছি। আরও কিছুকাল বষ্টনে থাকব। গাউন তো এতগুলো রয়েছে, সেগুলি বয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। এনিস্কোয়ামে যখন খুব ভিজে যাই, তখন পরনে ছিল সেই ভাল কালো পোষাক—যেটি তোমার খুব পছন্দ। মনে হয়, এটি আর নষ্ট হচ্ছে না; আমার নির্গুণ ব্রহ্মধ্যান এর ভিতরেও প্রবিষ্ট হয়েছে! গ্রীষ্মকাল খুব আনন্দে কাটিয়েছ জেনে বিশেষ খুশী হলাম। আমি তো ভবঘুরের মত ঘুরেই বেড়াচ্ছি। এবহিউ-লিখিত তিব্বতদেশীয় ভবঘুরে লামাদের বর্ণনা সম্প্রতি পড়ে খুব আমোদ পেলাম—আমাদের সন্ন্যাসী-সম্প্রদায়ের যথার্থ চিত্র। লেখক বলেন এরা অদ্ভুত লোক, খুশীমত এসে হাজির হয়, যার সঙ্গে হোক, খায়—নিমন্ত্রিত বা অনিমন্ত্রিত। যেখানে খুশী থাকবে, যেখানে খুশী চলে যাবে। এমন পাহাড় নেই যা তারা আরোহণ করেনি, এমন নদী নেই যা তারা অতিক্রম করেনি। তাদের অবিদিত কোন জাতি নেই, অকথিত কোন ভাষা নাই। লেখকের অভিমত, যে শক্তিবশে গ্রহগুলি সদা ঘূর্ণায়মান তারই কিয়দংশ ভগবান্ এদের দিয়ে থাকবেন। আজ এই ভবঘুরে লামাটি লেখবার আগ্রহ দ্বারা আবিষ্ট হয়ে সোজা একটি দোকানে গিয়ে লেখবার যাবতীয় উপকরণ সহ বোতাম-লাগানো কাঠের ছোট দোয়াত সমেত একটি পোর্টফোলিও কিনে এনেছে। শুভ সঙ্কল্প। মনে হয়, গত মাসে ভারত হতে প্রচুর চিঠিপত্র এসেছে। আমার দেশবাসিগণ আমার কাজের এরূপ তারিফ করায় খুব খুশী হলাম। তারা যথেষ্ট করেছে। আর কিছু তো লেখবার দেখতে পাচ্ছি না। অধ্যাপক রাইট, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা খুব খাতির যত্ন করেছিলেন, সর্বদা যেমন করে থাকেন। ভাষায় তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারছি না। এ পর্যন্ত সবই ভাল যাচ্ছে। তবে একটু বিশ্রী সর্দি হয়েছিল। এখন প্রায় নেই। অনিদ্রার জন্য ক্রিশ্চান সায়েন্স অনুসরণ করে বেশ ফল পেয়েছি। তোমরা সুখী হও। ইতি
চিরস্নেহশীল ভ্রাতা
বিবেকানন্দ
পুঃ—মাকে জানিও, এখন আর কোট চাই না।
বি
১১৪*
[মিসেস ওলি বুলকে লিখিত]
হোটেল বেল ভিউ
বীকন ষ্ট্রীট, বষ্টন
১৯ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
মা সারা,
আমি তোমাকে মোটেই ভুলে যাইনি। তুমি কি মনে কর, আমি কখনও এতটা অকৃতজ্ঞ হতে পারি? তুমি আমাকে তোমার ঠিকানা দাওনি, তবু মিস ফিলিপ্স্ ল্যাণ্ডসবার্গকে প্রেরিত সংবাদ থেকে তোমার খবর পাচ্ছি। বোধ হয় মান্দ্রাজ থেকে আমায় যে অভিনন্দন পাঠিয়েছে, তা তুমি দেখেছ। আমি তোমাকে পাঠাবার জন্য খানকতক পাঠাচ্ছি ল্যাণ্ডসবার্গের কাছে।
হিন্দু সন্তান কখনও মাকে টাকা ধার দেয় না, সন্তানের ওপর মায়ের সর্ববিধ অধিকার আছে, সন্তানেরও মায়ের ওপর। সেই তুচ্ছ ডলার কটি আমাকে ফিরিয়ে দেবার কথা বলাতে তোমার ওপর আমার বড় রাগ হয়েছে। তোমার ধার আমি কোন কালে শুধতে পারব না।
এখন আমি বষ্টনের কয়েক জায়গায় বক্তৃতা দিচ্ছি। এখন চাই এমন একটা জায়গা, যেখানে বসে আমার ভাবরাশি লিপিবদ্ধ করতে পারি। বক্তৃতা যথেষ্ট হল, এখন আমি লিখতে চাই। আমার বোধ হয়, তার জন্য আমাকে নিউ ইয়র্কে যেতে হবে। মিসেস গার্নিস আমার প্রতি বড়ই সদয় ব্যবহার করেছিলেন এবং তিনি সদাই আমায় সাহায্য করতে ইচ্ছুক। আমি মনে করছি, তাঁর ওখানে গিয়ে বসে বসে বই লিখব।
তোমার সদা স্নেহাস্পদ
বিবেকানন্দ
পুঃ—অনুগ্রহ করে আমায় লিখবে, গার্নসিরা শহরে ফিরেছে, না এখনও ফিশকিলে আছে। ইতি
বি